বিশ্বমন্দায় সংবাদপত্রে পরিবর্তনের হাওয়া
চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত খাত সংবাদপত্র। বিশ্বের এই নতুন অর্থনৈতিক দুর্যোগ মানুষের স্বাভাবিক জীবনাচরণকে ভীষণভাবে ব্যাহত করছে। এই মন্দায় মার্কিনরা সংবাদপত্রকেও ঠিক সে রকম বিলাসী ব্যয় হিসেবে দেখছে।
মন্দার ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অবস্থা তথৈবচ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়ে থাকার কারণে সংবাদ জানার জন্য সংবাদপত্রের ইন্টারনেট সংস্করণকে বেছে নিচ্ছে। কারণ যেখানে পুরো সংবাদপত্রই বিনে পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে কিছু পয়সা খরচ করে মূল পত্রিকা কেনাকে ‘বাজে খরচ’ই মনে করছে তারা। দেশগুলোর অনেক পুরোনো, নামকরা ঐতিহাসিক পত্রপত্রিকার বিক্রি নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে পত্রিকাগুলোতে চলছে এখন কর্মী ছাঁটাই, নতুবা পুরো পত্রিকাটাই বন্ধ করে দেওয়ার অসহায় প্রস্তুতি। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল পোস্ট অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় এ জনপ্রিয় পত্রিকার পাঠকসংখ্যাও নেমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। তবে সিয়াটল শহরের অন্য পত্রিকাগুলো একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলেও নিজেদের একটা নির্দিষ্ট পাঠক শ্রেণীর সমন্বয়ে মিটমিট করে জ্বলে রয়েছে সিয়াটল পোস্ট (পত্রিকাটি সিয়াটল পোস্ট ইন্টেলিজেন্সার নামেও পরিচিত) পত্রিকার সার্কুলেশন। গত মার্চ মাস থেকে সিয়াটল পোস্ট সিয়াটলের বেঁচে থাকা একমাত্র সংবাদপত্র। প্রতিদ্বন্দ্বী আর সব পত্রিকার করুণ পরিণতি দেখে সিয়াটল পোস্ট-এর প্রকাশক ফ্র্যাংক এ ব্লেথেনও তাঁর পত্রিকার অবস্থা যে অন্যসব পত্রিকার মতো হবে না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। অর্থনৈতিক মন্দা মানুষকে এত বাজেভাবে ধাক্কা দিয়েছে যে ‘একমাত্র পত্রিকার শহর’ সিয়াটল যেকোনো সময় পরিণত হতে পারে ‘পত্রিকাবিহীন শহরে’।
তবে মানুষের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। মূল সংবাদপত্রের পাঠকসংখ্যা কমে যাওয়ার পর, পত্রিকাগুলোর রাজস্বে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে পত্রিকার চেহারা, আঙ্গিকে বিভিন্ন ধরনের কাঁটছাট আনতে বাধ্য হয়েছেন মালিক ও প্রকাশকেরা। বিজ্ঞাপনের আয় কমে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক সংবাদপত্রই এখন অনলাইন সংস্করণের পথে হাঁটছে। পত্রিকা বিক্রি কমে গেলেও গত এক বছরে অনলাইন সংস্করণে লগইন অনেকখানি বেড়েছে। কারণ মানুষ এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে সংবাদপত্র ‘বিনা মূল্যে’ পড়ার আনন্দ উপভোগ করছে। সেই হিসাবে পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে অন্যভাবে, অনলাইনের মাধ্যমে। এতে পত্রিকাগুলো অন্যভাবে চিন্তা করছে বেঁচে থাকার। তারা তাদের কর্মকাণ্ডে একটা বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। অনলাইন সংস্করণ, মোরাইল ফোনে সংবাদ সেবা, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে সংবাদপত্রগুলো টিকে থাকার চেষ্টায় রয়েছে। সবচেয়ে আশার কথা তারা তাদের চেষ্টায় সফল। মানুষ ইতিমধ্যেই অনলাইনকে তাদের সংবাদপত্র পাঠের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে।
অনলাইনের উত্থান সংবাদপত্রের অস্তিত্ব কোনোমতে রক্ষা করলেও সংবাদপত্র শিল্পের কর্মী ছাঁটাইকে রোধ করতে পারেনি। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতো পত্রিকাও তাঁদের কর্মী ছাঁটাই রোধ করতে পারেনি। বিশ্বমন্দার আগে নিউইয়র্ক টাইমস-এর বার্তা বিভাগে ৩৭৫ জনের মতো কর্মী কর্মরত ছিলেন। এখন মন্দার পরে নিউইয়র্ক টাইমস কর্মীসংখ্যা ২১০-এ নামিয়ে এনেছে। সিয়াটল পোস্টও এ ব্যাপারে সতর্ক ভূমিকা নিয়েছে। তাঁরাও কর্মী নিয়োগে যথেষ্ট যাচাই-বাছাইয়ের আশ্রয় নিয়েছে। এ ব্যাপারে সিয়াটল পোস্ট-এর নির্বাহী সম্পাদক ডেভিড বোর্ডম্যান বলেন, “কর্মী নিয়োগে আমাদের যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। মন্দার এ সময়ে আমাদের বিলাসিতার সুযোগ নেই। তবে এর মানে এই নয় আমরা আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে কম কর্মী নিয়োগ দেব। এটা তো ঠিক ‘কম’ কখনো ‘বেশি’র জায়গা নিতে পারে না।” তবে সিয়াটল পোস্ট আগের ১৬৫ জন কর্মীর জায়গায় এখন ২০ জন নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ২০ জন কর্মী মূলত অনলাইন পাঠকদের দৈনন্দিন সংবাদ চাহিদা মিটিয়ে চলেছেন। এরাই সংক্ষিপ্ত কলেবরের মূল পত্রিকায় অবদান রাখছেন। এই ২০ জন তাঁদের সংবাদপত্রের সিদ্ধান্তমতো নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করে চলেছেন। এগুলো হলো অপরাধ, আকাশ বিজ্ঞান, খেলাধুলা, রাজনীতি প্রভৃতি।
বৈশ্বিক মন্দা অনেক কিছুর মতো সংবাদপত্র শিল্পকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। তবে এই মন্দা আবার পত্রিকাগুলোর সামনে নতুন পথও খুলে দিয়েছে। সংবাদপত্রের মালিকেরা এখন তাঁদের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বৈচিত্র্য আনার চিন্তা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলতার মুখ দেখেছে। কেবল সংবাদপত্রের খুচরা বিক্রি নয়, সংবাদ নানাভাবে বিক্রি করে যে ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়া যায় তা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই সংবাদপত্রে দিনবদলের পালা হয়তো শুরুই হয়ে গেছে। পুরোনোপন্থীরা এই পরিস্থিতিকে দেখছেন সংবাদপত্রের শনির দশা হিসেবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? একটু অন্যভাবে দেখলে সংবাদপত্র তাঁর ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে। আর নতুনকে গ্রহণ করেই সংবাদপত্র আধুনিক চেহারায় টিকে থাকবে—এ কথা বলাই যায়। নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে নাইর ইকবাল।
মন্দার ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অবস্থা তথৈবচ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়ে থাকার কারণে সংবাদ জানার জন্য সংবাদপত্রের ইন্টারনেট সংস্করণকে বেছে নিচ্ছে। কারণ যেখানে পুরো সংবাদপত্রই বিনে পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে কিছু পয়সা খরচ করে মূল পত্রিকা কেনাকে ‘বাজে খরচ’ই মনে করছে তারা। দেশগুলোর অনেক পুরোনো, নামকরা ঐতিহাসিক পত্রপত্রিকার বিক্রি নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে পত্রিকাগুলোতে চলছে এখন কর্মী ছাঁটাই, নতুবা পুরো পত্রিকাটাই বন্ধ করে দেওয়ার অসহায় প্রস্তুতি। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল পোস্ট অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় এ জনপ্রিয় পত্রিকার পাঠকসংখ্যাও নেমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। তবে সিয়াটল শহরের অন্য পত্রিকাগুলো একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলেও নিজেদের একটা নির্দিষ্ট পাঠক শ্রেণীর সমন্বয়ে মিটমিট করে জ্বলে রয়েছে সিয়াটল পোস্ট (পত্রিকাটি সিয়াটল পোস্ট ইন্টেলিজেন্সার নামেও পরিচিত) পত্রিকার সার্কুলেশন। গত মার্চ মাস থেকে সিয়াটল পোস্ট সিয়াটলের বেঁচে থাকা একমাত্র সংবাদপত্র। প্রতিদ্বন্দ্বী আর সব পত্রিকার করুণ পরিণতি দেখে সিয়াটল পোস্ট-এর প্রকাশক ফ্র্যাংক এ ব্লেথেনও তাঁর পত্রিকার অবস্থা যে অন্যসব পত্রিকার মতো হবে না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। অর্থনৈতিক মন্দা মানুষকে এত বাজেভাবে ধাক্কা দিয়েছে যে ‘একমাত্র পত্রিকার শহর’ সিয়াটল যেকোনো সময় পরিণত হতে পারে ‘পত্রিকাবিহীন শহরে’।
তবে মানুষের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। মূল সংবাদপত্রের পাঠকসংখ্যা কমে যাওয়ার পর, পত্রিকাগুলোর রাজস্বে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে পত্রিকার চেহারা, আঙ্গিকে বিভিন্ন ধরনের কাঁটছাট আনতে বাধ্য হয়েছেন মালিক ও প্রকাশকেরা। বিজ্ঞাপনের আয় কমে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক সংবাদপত্রই এখন অনলাইন সংস্করণের পথে হাঁটছে। পত্রিকা বিক্রি কমে গেলেও গত এক বছরে অনলাইন সংস্করণে লগইন অনেকখানি বেড়েছে। কারণ মানুষ এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে সংবাদপত্র ‘বিনা মূল্যে’ পড়ার আনন্দ উপভোগ করছে। সেই হিসাবে পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে অন্যভাবে, অনলাইনের মাধ্যমে। এতে পত্রিকাগুলো অন্যভাবে চিন্তা করছে বেঁচে থাকার। তারা তাদের কর্মকাণ্ডে একটা বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। অনলাইন সংস্করণ, মোরাইল ফোনে সংবাদ সেবা, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে সংবাদপত্রগুলো টিকে থাকার চেষ্টায় রয়েছে। সবচেয়ে আশার কথা তারা তাদের চেষ্টায় সফল। মানুষ ইতিমধ্যেই অনলাইনকে তাদের সংবাদপত্র পাঠের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে।
অনলাইনের উত্থান সংবাদপত্রের অস্তিত্ব কোনোমতে রক্ষা করলেও সংবাদপত্র শিল্পের কর্মী ছাঁটাইকে রোধ করতে পারেনি। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতো পত্রিকাও তাঁদের কর্মী ছাঁটাই রোধ করতে পারেনি। বিশ্বমন্দার আগে নিউইয়র্ক টাইমস-এর বার্তা বিভাগে ৩৭৫ জনের মতো কর্মী কর্মরত ছিলেন। এখন মন্দার পরে নিউইয়র্ক টাইমস কর্মীসংখ্যা ২১০-এ নামিয়ে এনেছে। সিয়াটল পোস্টও এ ব্যাপারে সতর্ক ভূমিকা নিয়েছে। তাঁরাও কর্মী নিয়োগে যথেষ্ট যাচাই-বাছাইয়ের আশ্রয় নিয়েছে। এ ব্যাপারে সিয়াটল পোস্ট-এর নির্বাহী সম্পাদক ডেভিড বোর্ডম্যান বলেন, “কর্মী নিয়োগে আমাদের যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। মন্দার এ সময়ে আমাদের বিলাসিতার সুযোগ নেই। তবে এর মানে এই নয় আমরা আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে কম কর্মী নিয়োগ দেব। এটা তো ঠিক ‘কম’ কখনো ‘বেশি’র জায়গা নিতে পারে না।” তবে সিয়াটল পোস্ট আগের ১৬৫ জন কর্মীর জায়গায় এখন ২০ জন নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ২০ জন কর্মী মূলত অনলাইন পাঠকদের দৈনন্দিন সংবাদ চাহিদা মিটিয়ে চলেছেন। এরাই সংক্ষিপ্ত কলেবরের মূল পত্রিকায় অবদান রাখছেন। এই ২০ জন তাঁদের সংবাদপত্রের সিদ্ধান্তমতো নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করে চলেছেন। এগুলো হলো অপরাধ, আকাশ বিজ্ঞান, খেলাধুলা, রাজনীতি প্রভৃতি।
বৈশ্বিক মন্দা অনেক কিছুর মতো সংবাদপত্র শিল্পকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। তবে এই মন্দা আবার পত্রিকাগুলোর সামনে নতুন পথও খুলে দিয়েছে। সংবাদপত্রের মালিকেরা এখন তাঁদের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বৈচিত্র্য আনার চিন্তা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলতার মুখ দেখেছে। কেবল সংবাদপত্রের খুচরা বিক্রি নয়, সংবাদ নানাভাবে বিক্রি করে যে ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়া যায় তা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই সংবাদপত্রে দিনবদলের পালা হয়তো শুরুই হয়ে গেছে। পুরোনোপন্থীরা এই পরিস্থিতিকে দেখছেন সংবাদপত্রের শনির দশা হিসেবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? একটু অন্যভাবে দেখলে সংবাদপত্র তাঁর ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে। আর নতুনকে গ্রহণ করেই সংবাদপত্র আধুনিক চেহারায় টিকে থাকবে—এ কথা বলাই যায়। নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে নাইর ইকবাল।
No comments