বিজিবি’র অভিযানে সাংবাদিক হত্যার আসামি ওসি গ্রেপ্তার, ছেড়ে দিলো পুলিশ by রাশেদ আহমদ খান

হবিগঞ্জে বিজিবি’র অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ছাত্র আন্দোলনে সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলার আসামি সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসিকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। কিন্তু থানাতে হস্তান্তরের পর তার কাছে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি বলে ছেড়ে দেয় পুলিশ। অন্যদিকে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পরের পত্রে গ্রেপ্তার করা হয়নি জানানোর পর দেখা দেয় ধূম্রজাল। শেষ পর্যন্ত হত্যা মামলার এ আসামিকে ছেড়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিলেট ও হবিগঞ্জের সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ। তবে পুলিশ সুপার বলেছেন বিজিবি লিখিতভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেয়ায় তাকে ছাড়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সোমবার ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে মাধবপুরের মনতলা গ্রামে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালায় বিজিবি টাস্কফোর্স। এ সময় মাধবপুরে নিজ বাড়ি থেকে কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মাধবপুর থানায়। পরে সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় ওসি শিপনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত একটি বার্তা পাঠায় হবিগঞ্জ পুলিশের বিশেষ শাখা। এ বার্তা প্রকাশিত হলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হয়। কিন্তু এরপর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেয়ার খবর চাউর হলে দেখা দেয় নানা আলোচনা। পরে তার কাছে কোনো অস্ত্র না পাওয়ায় এবং বিজিবি’র সহকারী পরিচালক এয়ার হোসেনের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে আরেকটি বার্তা পাঠায় হবিগঞ্জ বিশেষ পুলিশ শাখা। আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে পুলিশ সুপারের একই রকম স্বাক্ষরে পাল্টাপাল্টি বার্তায় ধূম্রজাল ও নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। অনেকে অভিযোগ করেন, মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ বা পুলিশ বিশেষ কারণে হত্যা মামলার আসামি ওই কর্মকর্তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৯শে জুলাই সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর ১৯শে আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আবুল আহসান। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে। মামলার ২ নম্বর আসামি হলো- অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬ নম্বর আসামি করা হয় সে সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান জানান, ভুলে প্রাথমিকভাবে ড্রাফট করা চিঠিটি প্রকাশিত হয়ে যায়। পরে আমরা আসল চিঠিটি প্রকাশ করি। তিনি জানান, ওসি মঈন উদ্দিন সুনামগঞ্জ জেলা হতে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (নং-০৫/২০২২- জগন্নাথপুর) গ্রহণ করলেও এ লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কিনা এবং উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে তাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যান। পরবর্তীতে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। অভিযোগ না থাকায় সোমবার সকাল ১১টার দিকে তাকে বাড়ি চলে যেতে দেয়া হয়। পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের প্রথম যে বার্তাটি প্রকাশ হয়েছে তা ছিল প্রাথমিক ড্রাফট। এটি কীভাবে প্রচার হলো আমি নিজেও জানি না। তবে পরে আমরা মূল বার্তাটি প্রদান করি। প্রকৃতপক্ষে ওসি মঈন উদ্দিন এখনো রাজশাহী রেঞ্জে চাকরিতে সংযুক্ত রয়েছেন। তিনি পলাতক না। তাই হত্যা মামলা বা যেকোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হলে তাকে পাওয়া যাবে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। অন্যদিকে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে ঊর্ধ্বতন মহলের অনুমতি লাগে। তাকে গ্রেপ্তারে এ ধরনের কোনো অনুমতিও ছিল না। মূল কথা বিজিবি তাকে ধরেছে, তারাই আবার লিখিতভাবে জানিয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাকে ছেড়ে দিনে তাদের কোনো আপত্তি নাই। তাই তাকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হয়নি বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.