‘আইসিইউতে’ রেলওয়ে হাসপাতাল by নাজমুল হুদা
সূত্র জানিয়েছে, বিশাল বড় এই হাসপাতালে মোট ৯৪টি কক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে খালি রুমই রয়েছে ৩৫টি। খালি রুমগুলো তেমন কোনো কাজে আসছে না। হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও এখন শয্যা রয়েছে মাত্র ৪১টি। তাও খালি পড়ে থাকে। গড়ে প্রতিদিন ৫-৬ জন কিংবা তারও কম রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাও দেয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় রোগীশূন্য থাকে শয্যাগুলো। শুধু বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। তবে বহির্বিভাগে দেখা হয় রোগী। প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ই জুলাই পর্যন্ত ৯ হাজার ৪০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই চিকিৎসা শুধু প্রেসক্রিপশন দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সূত্র জানায়, রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে বিশেষায়িত কোনো চিকিৎসক নেই। কেবল ৮ জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। এরমধ্যে গাইনি, আউট ডোর বিভাগে একজন, ইনডোরে একজন এবং জরুরি বিভাগে ২ জন রয়েছেন। এ ছাড়া প্যাথলজি ও রেডিওলজিতে একজন করে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। হাসপাতালটিতে নার্স রয়েছে ৭ জন। সবমিলিয়ে হাসপাতালে ১৩০ জন স্টাফ রয়েছেন। তাদেরকে ঠিকমতো হাসপাতালেও দেখা যায় না। হাসপাতালে ৭টা কেবিন ও ২টা ভিআইপি কেবিন রয়েছে। তাও খালি পড়ে থাকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেবার মধ্যে কেবল এক্সরে করা হয় হাসপাতালটিতে। তাও এনালগ মেশিনে। প্যাথলজি মেশিন থাকলেও রি-এজেন্ট নেই। একটি ডেন্টাল ও ড্রেসিং রুম রয়েছে। এর বাইরে তেমন কোনো চিকিৎসা পান না রোগীরা। এ ছাড়া মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগও নেই কোনো। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও অকেজো পড়ে আছে। রোগী না থাকায় অধিকাংশ ডাক্তারও দুপুরের পরই বাসায় চলে যান।
দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কর্মরত একজন স্টাফ জানিয়েছেন, হাসপাতালে আগে অনেক রোগী আসতো। রোগীদের ৩ বেলা খাবার দেয়া হতো। এখন একবেলাও খাবার দেয়া হয় না। আমার তিন সন্তানের ডেলিভারি এখানে হয়েছে। এখন ডেলিভারি করার মতো উপকরণ নেই; তাই হয় না। আগে ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায়ও রোগীরা থাকতো। এখন পুরো হাসপাতাল নীরব। রেলওয়ে হাসপাতালের এক মেডিকেল অফিসার বলেন, দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে হাসপাতালটি। কয়েক বছর আগেও করোনা পরীক্ষা, ডোপ টেস্ট, এক্সরে, ইসিজি, চক্ষু পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা হতো। এখন রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ডায়াবেটিকস পরীক্ষা ও এক্সরে বাদে কিছুই হয় না। আগে রেলের নিয়োগের ফিটনেস সনদও দিতো এই হাসপাতাল। তবে এখন তাও দেয়া হচ্ছে না। এসব পরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালটি সুনসান থাকার কারণে চুরির ঘটনাও ঘটছে। হাসপাতালে থেকে তিনটা এসি, মোটরসাইকেল, হেলমেট ও মোবাইল চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
এসব ব্যাপারে সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রিপন দাস মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতালটি অনেক পুরনো। এটা চলছে বৃটিশ আমলের সেটআপে। তখনকার জন্য এটি ঠিক ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে সেই সেটআপে কাজ করা সম্ভব না। কারণ এখন চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতা অনেক। ডাক্তারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটা জটিলতা রয়েছে। সেটা ঠিক করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি প্রেষণে আমাদেরকে কিছু চিকিৎসক দেয়ার জন্য। কিছু চিকিৎসক পেলে রোগী বাড়বে। চিকিৎসক না থাকার কারণে রোগী বাড়ে না। আমরা নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বাজেট পেলে সেগুলো কেনা হবে। এ ছাড়া এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য টেকনিশিয়ানও দরকার। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি কিছু পরিবর্তন আমরা করবো। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্পে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত করার কথা ছিল হাসপাতালটিকে। তবে সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারে রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, পিপিপি প্রকল্পের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তার আগে আমরা হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছি।
No comments