সুদান থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন এক লাখ মানুষ: জাতিসংঘ
সুদান ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সংকট ডেকে আনতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। নড়বড়ে অর্থনীতি সুদানেরও। আগে থেকেই দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে যুদ্ধের কারণে সেখানে বিভিন্ন সহায়তা পণ্য সরবরাহে বাধা পড়ছে।
সুদানের এই পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত প্রতিবেশী মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। আজ মঙ্গলবার জাপানের একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধের প্রভাব পুরো অঞ্চলে পড়তে পারে। যুদ্ধ থামাতে সুদানের দুই বাহিনীকে আলোচনায় বাসানোর বিষয়েও আগ্রহও দেখিয়েছেন তিনি।
সুদানে এই যুদ্ধের শুরু গত ১৫ এপ্রিল, ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্ব থেকে। একদিকে সেনাবাহিনী, অন্যদিকে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। একসময় মিত্র ছিল দুই বাহিনী। ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তারা। কিন্তু আরএসএফকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।
তুমুল যুদ্ধের মধ্যে আজ সুদান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রধান মার্টিন গ্রিফিথসের। আর জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গতকাল সোমবার জানিয়েছে, সুদানের তুলনামূলক নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে আবার কাজ শুরু করছে তারা। সংঘাতের কারণে কিছুদিন সহায়তা কর্ম বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাদের।
সুদানের চলমান যুদ্ধে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ ঘিরে মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসির মতো একই শঙ্কা ডব্লিউএফপির পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মাইকেল ডানফোর্ডের। তাঁর ভাষায়, ‘ঝুঁকির বিষয়টা হলো, এই যুদ্ধ শুধু সুদানকে একটা সংকটে ফেলতে যাচ্ছে না। এটি একটি আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হতে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার দেওয়া হিসাব বলছে, ১ লাখ মানুষ সুদান ছাড়ার পাশাপাশি, দেশটির অভ্যন্তরে আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাড়ি জমিয়েছে। এখনো অনেকে দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, শেষ পর্যন্ত ৮ লাখ মানুষ সুদান ছাড়তে পারে।
প্রাণ বাঁচাতে সুদান ছাড়তে চাওয়া এমনই একজন আয়শা ইব্রাহিম দাউদ। পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে একটি ভাড়ার গাড়িতে করে খার্তুম থেকে উত্তরাঞ্চলের ওয়াদি হালফা শহরে পৌঁছেছেন তিনি। সেখানে অন্য নারী ও শিশুদের সঙ্গে গাদাগাদি করে একটি ট্রাকে করে পৌঁছেছেন মিসর সীমান্তে।
আয়শা বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই জটিল। মিসরে ঢুকতে অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। আমাদের দুর্ভোগ নজিরবিহীন। তবে দেশ ছাড়তে আমরা গুলির শব্দ, গরমের মধ্যে ট্রাকের পেছনে গাদাগাদি করে থাকা—সবকিছুই সহ্য করতে পারব।’
No comments