অটিজম শিশুর ব্যায়াম by ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার: অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এক ধরনের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার; যেখানে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা একসঙ্গে ঘটে। ফলে, ক্রনোলজিক্যাল বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ মনোবিকাশ ঘটে না। এ ধরনের সমস্যায় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, যার সঙ্গে মানসিক বিকাশগত জটিলতাও প্রকাশ পায়। এই সমস্যার কারণে জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর আচরণগত এবং মানসিক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে, কথা বলা বা ঠিক মতো শব্দ উচ্চারণ করা, নতুন জিনিস বুঝতে পারা বা শেখা কিংবা সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শিশুর জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
অটিজমে কি ঘটে?: অটিজমে আক্রান্ত শিশুর নিউরো ডেভেলপমেন্ট বা মনোবিকাশের সমস্যা হয়। ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারায় শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক হয়।
ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামের প্রয়োজন অপরিসীম।
ব্যায়াম শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে রক্ত সরবরাহ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু এমন ব্যায়ামের প্রয়োজন যে ব্যায়ামের মাধ্যমে অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি হয়ে নিউরো ট্রান্সমিটার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টের কার্যকরী ওষুধের পাশাপাশি সঠিক ব্যায়ামের সমন্বয় ঘটলে চিকিৎসায় দ্রুত সফলতা পাওয়া যায়। এ সকল ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে নামাজের সিজদা পজিশনে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা; মাথায় তেল দিয়ে দীর্ঘ সময় ম্যাসাজ করা এবং অনেক সময় ধরে চিরুনি করা; সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো ইত্যাদি। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে রক্তের চলাচল দ্রুত হলে মস্তিষ্কের নিউরোনের চলাচল বৃদ্ধি পায় যা নিউরো ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করে।
অতএব, অটিজম শিশুর ওষুধের মাধ্যমে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টের বাধাসমূহ অপসারণ, সঠিক খাবার প্রদান এবং উপরোক্ত ব্যায়ামের সমন্বয় ঘটানো সম্ভব হলে দ্রুত মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে। অভিভাবকদের অটিজম শিশুর ব্যায়াম এবং চিকিৎসায় আরও যত্নবান হয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক: ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। গবেষক ও চিকিৎসক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ডা. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০
No comments