অ্যাজমা সম্পর্কে সবাই সচেতন হোন by ডা: মোকসুদ বিল্লাহ
প্রতি
বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার ‘বিশ্ব অ্যাজমা দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। এর মূল
উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল,
অ্যাজমাকে রোধ করা।
১৯৯৮ সালে GINA (Global Initiative for Asthma) নামক প্রতিষ্ঠান স্পেনের বার্সেলোনাতে ৩৫টিরও বেশি দেশ নিয়ে সর্বপ্রথম ‘বিশ্ব অ্যাজমা দিবস’ পালন করে। চিকিৎসকদের সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব আরোপ করা, রোগীদের এর উত্তেজক কারণ সম্পর্কে সচেতন করা এবং কিভাবে এটাকে এড়িয়ে চলা যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়াই ছিল দিবসটির উদ্দেশ্য।
বেশির ভাগ দেশেই বিশ্ব অ্যাজমা দিবস পালিত হচ্ছে। চিকিৎসকেরা এক হাজার ৮০০ বছর আগেই অ্যাজমা চিনতে পেরেছিলেন। সর্বপ্রথম গ্রিক চিকিৎসক আরটিয়াস অ্যাজমা সম্পর্কে দ্বিতীয় শতাব্দীতে বর্ণনা দেন। অ্যাজমা শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘আর্জিন’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। অ্যাজমা হলো ফুসফুসের দীর্ঘ দিনের প্রদাহঘটিত রোগ। যার কারণে বুকে সাঁই সাঁই শব্দ, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপবোধ এবং কাশি দেখা দেয়।
এটি মানবদেহের অসংক্রামক রোগগুলোর অন্যতম। এটি বংশগত রোগ। যাদের শ্বাসনালী অ্যালার্জির প্রতি অতিসংবেদনশীল তাদের দেখা দেয় অ্যাজমা। বিশ্বে ৩৩৯ মিলিয়ন লোক অ্যাজমাতে আক্রান্ত এবং প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন এতে মারা যায়। কম ও মাঝারি আয়ের দেশে এর প্রভাব বেশি। ছেলে শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়স্কদের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাজমাতে হঠাৎ করেই মানুষ আক্রান্ত হয়। অ্যাজমাতে শ্বাসনালী চেপে যায়, এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অ্যাজমা তৈরির কারণ হলো অ্যালার্জি। ক্লিমেনস ফন পির্কে নামের একজন অস্ট্রিয়ান শিশু চিকিৎসক ১৯০৬ সালে এই অ্যালার্জি শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন। যেসব জিনিস থেকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয় তাকে বলে ‘অ্যালার্জিন’। অ্যালার্জি হলো নির্বিষ প্রোটিন। যা সাধারণত সুস্থ মানবদেহে কোনো ধরনের সমস্যা করে না। যারা নির্দিষ্ট কোনো অ্যালার্জিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল, তাদের শরীরের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটলেই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণত ফুল, ফুলের পরাগরেণু, ঘাস, গাছপালা, ছত্রাক, বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, বেডিং, কার্পেট, ফার্নিচার, আরশোলা, কৃমি, ইয়েস্ট, ধূমপান, বায়ুমণ্ডলের দূষণ ও ধুলা, ধোঁয়া, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও তারতম্য, ঝড়-বৃষ্টি, কলকারখানার দূষণ, ঠাণ্ডা বাতাস, ঘাম, আইকা, তারপিন, ওয়াশিং পাউডার, সিনথেটিক রাবার, বার্নিশ, প্লাস্টিক, ধাতব পদার্থ : প্লাটিনাম, নিকেল, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, পারফিউম, স্প্রে, অটোমোবাইলের টক্সিন, হাসপাতালের রাবার গ্লাভস, পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি কারণে মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। তা ছাড়া মানসিক দুশ্চিন্তা, উত্তেজিত হওয়া, মানসিক অসুস্থতা, ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য, আবেগ, ব্যায়াম ইত্যাদি কারণেও অ্যাজমা হয়। পোষাপ্রাণী- বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, গরু, ছাগল, প্রাণীর পশম, কবুতর, মুরগি, পাখির পশম, বিভিন্ন ধরনের খাবার- গরুর গোশত, গরুর দুধ, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, সাগরের মাছ, হাঁসের গোশত, বাদাম, শাকসবজি, অ্যালকোহল, কফি, ঝাল জাতীয় খাবার, ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার, ফলের রস, পানীয়, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ এবং অধিক মোটা হওয়ার কারণেও মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।
এ ছাড়াও অ্যাজমা হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে সিজারিয়ান, টিকা দেয়া, রাস্তার পাশে বসবাসকারী শিশু, যে সব শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে, অল্প বয়সী মায়েদের শিশু এবং যে মায়েরা গর্ভকালীন ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করে তারা এতে আক্রান্ত হয়। কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি, যেমন- Gastro-esophageal reflux, ডায়াবেটিস মেলিটাস, লিভার ডিজিজ ইত্যাদি। বর্তমানে মোবাইল ফোন, টিভি থেকেও অনেকে অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে।
অ্যাজমা থেকে বাঁচার জন্য অ্যালার্জিনকে এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালার্জিক খাবার খাওয়া যাবে না। কিন্তু বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা। খাবারে কারো অ্যালার্জি আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট খাদ্যের লঘু দ্রবণ জিভের তলায় কয়েক ফোঁটা দিয়ে দেখা হয়, জিভ বা ঠোঁটের কোণ স্ফীত হলো কি না।
অ্যাজমা থেকে বাঁচতে হলে রোগীকে অবশ্যই এর উত্তেজক কারণ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে এবং এগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতে হবে। কার্পেট এবং তুলা বা পশমের তৈরি জিনিসপত্র বাসাবাড়িতে রাখা উচিত হবে না। যে সব পোষা প্রাণীর পশম, ধুলাবালু উত্তেজক কারণ হিসেবে ভূমিকা রাখে, সেগুলো বাদ দিতে হবে। পোষা প্রাণী এড়িয়ে চলতে হবে, ধূমপান বাদ দিতে হবে, ধূমপানের গন্ধ যেন নাকে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিদিন বালিশের কভার, তোয়ালে, বিছানার চাদর পরিষ্কার করতে হবে। সম্পূর্ণ বাড়ি সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করতে হবে। বায়ুদূষণ, কলকারখানার ধোঁয়া এবং অন্যান্য উত্তেজক ধোঁয়া এড়িয়ে চলতে হবে। ফ্লোরে এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ঘুমানো বন্ধ করতে হবে। শ্বাসনালী ভালো রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খেতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার অভ্যাস করতে হবে। ইতিবাচক মনোভাবে মানিয়ে চলতে হবে। ভরা পেটে ঘুমানো ঠিক নয়।
অ্যাজমা হলে বাড়িতে থাকা অবস্থায় রোগীকে মুখের মাধ্যমে শ্বাস নিতে বলতে হবে। অল্প করে বারবার নরমাল পানি পান করতে বলতে হবে, যাতে কফ তরল হয়ে বের হতে পারে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে এ ধরনের পরিবেশে থাকতে বলতে হবে। কথা বলা, হাসাহাসি এবং উত্তেজিত হওয়া পরিহার করে, চলাফেরা এড়িয়ে স্থির হয়ে বসে থাকবে অথবা তার যে অবস্থায় ভালো লাগে সে অবস্থায় থাকবে। যদি রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে, অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে, চোখ মুখ নীল বর্ণ হয়ে যেতে থাকে, খুবই অস্থিরতা অনুভব করে, নাড়ি বাড়তে থাকে, প্রচুর ঘাম হতে থাকে, একটা লাইন কথা একেবারে বলতে না পারে, তন্দ্রা খুবই অনুভব করে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়ও অ্যাজমার ভালো ওষুধ আছে। যেমন- ব্রায়োনিয়া, আর্সেনিক অ্যালবাম, পালসেটিলা, স্পঞ্জিয়া, একোনাইট, নাক্স ভম, সালফার ইত্যাদি। স্টেরয়েডবিহীন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত, শক্তিকৃত এবং একক ওষুধের মাধ্যমে অ্যাজমা রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এ জন্য দরকার দক্ষ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক।
লেখক : অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ; নির্বাহী পরিচালক : ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা।
১৯৯৮ সালে GINA (Global Initiative for Asthma) নামক প্রতিষ্ঠান স্পেনের বার্সেলোনাতে ৩৫টিরও বেশি দেশ নিয়ে সর্বপ্রথম ‘বিশ্ব অ্যাজমা দিবস’ পালন করে। চিকিৎসকদের সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব আরোপ করা, রোগীদের এর উত্তেজক কারণ সম্পর্কে সচেতন করা এবং কিভাবে এটাকে এড়িয়ে চলা যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়াই ছিল দিবসটির উদ্দেশ্য।
বেশির ভাগ দেশেই বিশ্ব অ্যাজমা দিবস পালিত হচ্ছে। চিকিৎসকেরা এক হাজার ৮০০ বছর আগেই অ্যাজমা চিনতে পেরেছিলেন। সর্বপ্রথম গ্রিক চিকিৎসক আরটিয়াস অ্যাজমা সম্পর্কে দ্বিতীয় শতাব্দীতে বর্ণনা দেন। অ্যাজমা শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘আর্জিন’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। অ্যাজমা হলো ফুসফুসের দীর্ঘ দিনের প্রদাহঘটিত রোগ। যার কারণে বুকে সাঁই সাঁই শব্দ, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপবোধ এবং কাশি দেখা দেয়।
এটি মানবদেহের অসংক্রামক রোগগুলোর অন্যতম। এটি বংশগত রোগ। যাদের শ্বাসনালী অ্যালার্জির প্রতি অতিসংবেদনশীল তাদের দেখা দেয় অ্যাজমা। বিশ্বে ৩৩৯ মিলিয়ন লোক অ্যাজমাতে আক্রান্ত এবং প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন এতে মারা যায়। কম ও মাঝারি আয়ের দেশে এর প্রভাব বেশি। ছেলে শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়স্কদের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাজমাতে হঠাৎ করেই মানুষ আক্রান্ত হয়। অ্যাজমাতে শ্বাসনালী চেপে যায়, এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অ্যাজমা তৈরির কারণ হলো অ্যালার্জি। ক্লিমেনস ফন পির্কে নামের একজন অস্ট্রিয়ান শিশু চিকিৎসক ১৯০৬ সালে এই অ্যালার্জি শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন। যেসব জিনিস থেকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয় তাকে বলে ‘অ্যালার্জিন’। অ্যালার্জি হলো নির্বিষ প্রোটিন। যা সাধারণত সুস্থ মানবদেহে কোনো ধরনের সমস্যা করে না। যারা নির্দিষ্ট কোনো অ্যালার্জিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল, তাদের শরীরের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটলেই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণত ফুল, ফুলের পরাগরেণু, ঘাস, গাছপালা, ছত্রাক, বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, বেডিং, কার্পেট, ফার্নিচার, আরশোলা, কৃমি, ইয়েস্ট, ধূমপান, বায়ুমণ্ডলের দূষণ ও ধুলা, ধোঁয়া, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও তারতম্য, ঝড়-বৃষ্টি, কলকারখানার দূষণ, ঠাণ্ডা বাতাস, ঘাম, আইকা, তারপিন, ওয়াশিং পাউডার, সিনথেটিক রাবার, বার্নিশ, প্লাস্টিক, ধাতব পদার্থ : প্লাটিনাম, নিকেল, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, পারফিউম, স্প্রে, অটোমোবাইলের টক্সিন, হাসপাতালের রাবার গ্লাভস, পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি কারণে মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। তা ছাড়া মানসিক দুশ্চিন্তা, উত্তেজিত হওয়া, মানসিক অসুস্থতা, ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য, আবেগ, ব্যায়াম ইত্যাদি কারণেও অ্যাজমা হয়। পোষাপ্রাণী- বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, গরু, ছাগল, প্রাণীর পশম, কবুতর, মুরগি, পাখির পশম, বিভিন্ন ধরনের খাবার- গরুর গোশত, গরুর দুধ, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, সাগরের মাছ, হাঁসের গোশত, বাদাম, শাকসবজি, অ্যালকোহল, কফি, ঝাল জাতীয় খাবার, ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার, ফলের রস, পানীয়, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ এবং অধিক মোটা হওয়ার কারণেও মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।
এ ছাড়াও অ্যাজমা হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে সিজারিয়ান, টিকা দেয়া, রাস্তার পাশে বসবাসকারী শিশু, যে সব শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে, অল্প বয়সী মায়েদের শিশু এবং যে মায়েরা গর্ভকালীন ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করে তারা এতে আক্রান্ত হয়। কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি, যেমন- Gastro-esophageal reflux, ডায়াবেটিস মেলিটাস, লিভার ডিজিজ ইত্যাদি। বর্তমানে মোবাইল ফোন, টিভি থেকেও অনেকে অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে।
অ্যাজমা থেকে বাঁচার জন্য অ্যালার্জিনকে এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালার্জিক খাবার খাওয়া যাবে না। কিন্তু বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা। খাবারে কারো অ্যালার্জি আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট খাদ্যের লঘু দ্রবণ জিভের তলায় কয়েক ফোঁটা দিয়ে দেখা হয়, জিভ বা ঠোঁটের কোণ স্ফীত হলো কি না।
অ্যাজমা থেকে বাঁচতে হলে রোগীকে অবশ্যই এর উত্তেজক কারণ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে এবং এগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতে হবে। কার্পেট এবং তুলা বা পশমের তৈরি জিনিসপত্র বাসাবাড়িতে রাখা উচিত হবে না। যে সব পোষা প্রাণীর পশম, ধুলাবালু উত্তেজক কারণ হিসেবে ভূমিকা রাখে, সেগুলো বাদ দিতে হবে। পোষা প্রাণী এড়িয়ে চলতে হবে, ধূমপান বাদ দিতে হবে, ধূমপানের গন্ধ যেন নাকে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিদিন বালিশের কভার, তোয়ালে, বিছানার চাদর পরিষ্কার করতে হবে। সম্পূর্ণ বাড়ি সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করতে হবে। বায়ুদূষণ, কলকারখানার ধোঁয়া এবং অন্যান্য উত্তেজক ধোঁয়া এড়িয়ে চলতে হবে। ফ্লোরে এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ঘুমানো বন্ধ করতে হবে। শ্বাসনালী ভালো রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খেতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার অভ্যাস করতে হবে। ইতিবাচক মনোভাবে মানিয়ে চলতে হবে। ভরা পেটে ঘুমানো ঠিক নয়।
অ্যাজমা হলে বাড়িতে থাকা অবস্থায় রোগীকে মুখের মাধ্যমে শ্বাস নিতে বলতে হবে। অল্প করে বারবার নরমাল পানি পান করতে বলতে হবে, যাতে কফ তরল হয়ে বের হতে পারে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে এ ধরনের পরিবেশে থাকতে বলতে হবে। কথা বলা, হাসাহাসি এবং উত্তেজিত হওয়া পরিহার করে, চলাফেরা এড়িয়ে স্থির হয়ে বসে থাকবে অথবা তার যে অবস্থায় ভালো লাগে সে অবস্থায় থাকবে। যদি রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে, অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে, চোখ মুখ নীল বর্ণ হয়ে যেতে থাকে, খুবই অস্থিরতা অনুভব করে, নাড়ি বাড়তে থাকে, প্রচুর ঘাম হতে থাকে, একটা লাইন কথা একেবারে বলতে না পারে, তন্দ্রা খুবই অনুভব করে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়ও অ্যাজমার ভালো ওষুধ আছে। যেমন- ব্রায়োনিয়া, আর্সেনিক অ্যালবাম, পালসেটিলা, স্পঞ্জিয়া, একোনাইট, নাক্স ভম, সালফার ইত্যাদি। স্টেরয়েডবিহীন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত, শক্তিকৃত এবং একক ওষুধের মাধ্যমে অ্যাজমা রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এ জন্য দরকার দক্ষ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক।
লেখক : অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ; নির্বাহী পরিচালক : ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা।
No comments