১৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এক টাকাও বেতন পাননি
সুকুমার সাহা |
ঝিনাইদহের
পি ডি আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ছিলেন সুকুমার সাহা। তিনি এই
বিদ্যালয়ে ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতা শেষে অবসরে যান। কিন্তু এই ১৫ বছরে তিনি এক
টাকাও বেতন পাননি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সুকুমারকে বিনা বেতনে পাঠদান করতে হয়েছে। তাঁর জন্ম ১৯৫৮ সালে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত ফণীন্দ্রনাথ সাহা ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার প্রয়োজনে ফণীন্দ্রনাথ ১৯৬৭ সালে চলে আসেন ঝিনাইদহে। এই শহরের মদনমোহন পাড়ায় বসবাস শুরু করেন। আজও বাবার রেখে যাওয়া সেই বাড়িতেই সুকুমার বসবাস করছেন।
সুকুমার বলেন, বিএসসি কোর্স শেষে বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন তিনি। বাবার তখন মুদিদোকান ছিল। ১৯৮৯ সালে তিনি পৃথক দোকান নেন। কালীগঞ্জ শহরের বিমল কুমার সাহার মেয়ে উৎপলা সাহাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। তাঁদের ঘরে আসে সজীব কুমার সাহা ও দীপ্ত সাহা নামের দুই সন্তান। বর্তমানে তারা দুজনই পড়ালেখা করছে। সুকুমার আরও জানান, ১৯৭৫ সালে ঝিনাইদহ নিউ একাডেমি থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি ও ১৯৮১ সালে বিএসসি কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮২ সালে এমএসসি কোর্স করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়ালেখা করে পারিবারিক সমস্যার কারণে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে এসে বাবার ও নিজের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। এরই মধ্যে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিঘলগ্রাম গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় পি ডি আর (পীড়াগাতি-দিঘলগ্রাম-রূপদাহ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এখানে পড়ানোর জন্য কোনো গণিতের শিক্ষক পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁকে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে তাঁকে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যান। কিন্তু এই চাকরির সময়ে তিনি কোনো বেতন পাননি। এমনকি বিদ্যালয়টি হতদরিদ্র এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেখানেও তেমন আয় ছিল না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তিনি কিছুই পাননি। আবার প্রতিষ্ঠানে বেশি সময় দেওয়ায় নিজে কোনো প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গেও যুক্ত হননি। এরই মধ্যে আরও ভালো পাঠদানের স্বার্থে ২০০৯ সালে তিনি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন।
সুকুমার দুঃখ করে বলেন, কর্মজীবন শেষ করলেন বেতন ছাড়া। যাওয়ার সময়ও কিছুই পেলেন না। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সামনে মুখ দেখাতে এখন খুব কষ্ট হয়। স্ত্রী উৎপলা একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বাড়িতে কিছু বাচ্চা পড়ান স্ত্রী। স্ত্রীর টাকায় চলে সংসার। তাঁর এই কঠিন জীবন নিয়ে কারও কি কিছুই করার নেই—এ প্রশ্ন সুকুমারের।
ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আকরামুল কবির জানান, কিছু শিক্ষানুরাগী ২০০০ সালে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ২৪৫ জন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে। আটজন শিক্ষক আর তিনজন কর্মচারী রয়েছে প্রতিষ্ঠানে। রয়েছে সাতটি শ্রেণিকক্ষ, একটি শিক্ষকদের কক্ষ ও একটি শিক্ষার্থী কমন রুম। পীড়াগাতি, দিঘলগ্রাম, রূপদাহ, মান্দারতলা, করিমপুর ও আশুরহাট গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। এ পর্যন্ত তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ১০টি ব্যাচ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এখান থেকে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি পাসের হার। এরপরও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি। যে কারণে সুকুমারকে বেতন ছাড়াই চলে যেতে হয়েছে। আরও কয়েকজন আছেন, তাঁদের অবস্থাও একই। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিওভুক্ত না হলে ওই শিক্ষকদের অবস্থাও সুকুমারের মতো হবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ খান জানান, এসব শিক্ষক নিয়ে তাঁদের কিছুই করা ও বলার নেই। তবে শিক্ষকেরা উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, কিছু হয় কি না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সুকুমারকে বিনা বেতনে পাঠদান করতে হয়েছে। তাঁর জন্ম ১৯৫৮ সালে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত ফণীন্দ্রনাথ সাহা ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার প্রয়োজনে ফণীন্দ্রনাথ ১৯৬৭ সালে চলে আসেন ঝিনাইদহে। এই শহরের মদনমোহন পাড়ায় বসবাস শুরু করেন। আজও বাবার রেখে যাওয়া সেই বাড়িতেই সুকুমার বসবাস করছেন।
সুকুমার বলেন, বিএসসি কোর্স শেষে বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন তিনি। বাবার তখন মুদিদোকান ছিল। ১৯৮৯ সালে তিনি পৃথক দোকান নেন। কালীগঞ্জ শহরের বিমল কুমার সাহার মেয়ে উৎপলা সাহাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। তাঁদের ঘরে আসে সজীব কুমার সাহা ও দীপ্ত সাহা নামের দুই সন্তান। বর্তমানে তারা দুজনই পড়ালেখা করছে। সুকুমার আরও জানান, ১৯৭৫ সালে ঝিনাইদহ নিউ একাডেমি থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি ও ১৯৮১ সালে বিএসসি কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮২ সালে এমএসসি কোর্স করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়ালেখা করে পারিবারিক সমস্যার কারণে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে এসে বাবার ও নিজের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। এরই মধ্যে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিঘলগ্রাম গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় পি ডি আর (পীড়াগাতি-দিঘলগ্রাম-রূপদাহ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এখানে পড়ানোর জন্য কোনো গণিতের শিক্ষক পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁকে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে তাঁকে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যান। কিন্তু এই চাকরির সময়ে তিনি কোনো বেতন পাননি। এমনকি বিদ্যালয়টি হতদরিদ্র এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সেখানেও তেমন আয় ছিল না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তিনি কিছুই পাননি। আবার প্রতিষ্ঠানে বেশি সময় দেওয়ায় নিজে কোনো প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গেও যুক্ত হননি। এরই মধ্যে আরও ভালো পাঠদানের স্বার্থে ২০০৯ সালে তিনি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন।
সুকুমার দুঃখ করে বলেন, কর্মজীবন শেষ করলেন বেতন ছাড়া। যাওয়ার সময়ও কিছুই পেলেন না। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সামনে মুখ দেখাতে এখন খুব কষ্ট হয়। স্ত্রী উৎপলা একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বাড়িতে কিছু বাচ্চা পড়ান স্ত্রী। স্ত্রীর টাকায় চলে সংসার। তাঁর এই কঠিন জীবন নিয়ে কারও কি কিছুই করার নেই—এ প্রশ্ন সুকুমারের।
ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আকরামুল কবির জানান, কিছু শিক্ষানুরাগী ২০০০ সালে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ২৪৫ জন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে। আটজন শিক্ষক আর তিনজন কর্মচারী রয়েছে প্রতিষ্ঠানে। রয়েছে সাতটি শ্রেণিকক্ষ, একটি শিক্ষকদের কক্ষ ও একটি শিক্ষার্থী কমন রুম। পীড়াগাতি, দিঘলগ্রাম, রূপদাহ, মান্দারতলা, করিমপুর ও আশুরহাট গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। এ পর্যন্ত তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ১০টি ব্যাচ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এখান থেকে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের বেশি পাসের হার। এরপরও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি। যে কারণে সুকুমারকে বেতন ছাড়াই চলে যেতে হয়েছে। আরও কয়েকজন আছেন, তাঁদের অবস্থাও একই। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিওভুক্ত না হলে ওই শিক্ষকদের অবস্থাও সুকুমারের মতো হবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ খান জানান, এসব শিক্ষক নিয়ে তাঁদের কিছুই করা ও বলার নেই। তবে শিক্ষকেরা উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, কিছু হয় কি না।
No comments