পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে হাজারো মানুষ by কাজী তানভীর মাহমুদ
ভাঙছে পদ্মার পাড়, বাড়ছে আতঙ্ক |
বর্ষা
মৌসুমের শুরুতেই রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। গত কিছু দিনে
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বিঘা ফসলি ও আবাদি জমি। আতঙ্কে ভিটেমাটি
ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে অনেক পরিবার। ভাঙনের তীব্রতা বেশি সদর উপজেলার
সিলিমপুর, মহাদেবপুর ও গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের
বিভিন্ন পয়েন্টে। অন্য কোথাও সরে যাওয়ার অবস্থা না থাকায় এসব এলাকার
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়টা বেশি। তবে শুধু সদর ও গোয়ালন্দ
নয়, বাকি তিন উপজেলার ভাঙন-ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আগে
ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা, সদর উপজেলার বরাট, অন্তরমোড়, গোদারবাজার, সিলিমপুর ও মহাদেবপুর, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ও কালিকাপুর এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া, কোনাগ্রাম, গয়েশপুর এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার সিলিমপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেলা জিও ব্যাগসহ অন্তত একশ’ মিটার এলাকা ধসে নদীতে বিলীন হয়েছে।
সিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা জহুরা বেগম বলেন, ‘নদীর ভাঙন যেভাবে দেখা দিয়েছে, এবছর আর বসতবাড়িতে থাকা সম্ভব না। নদীর শোঁ শোঁ শব্দে ভয়ে সন্তানদের নিয়ে রাতের বেলায় ঘুমাতে পারছি না। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি আমাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে গেলো।’
একই এলাকার গৃহবধূ ফুলজান বিবি বলেন, ‘প্রতিবছর নদী ভাঙে। আবার সরকার কাজও করে। কাজ মজবুত হয় না বলে ফের ভাঙন শুরু হয়। আমার বাড়ি দুই বার ভেঙেছে। এবছর যাওয়ার আর জায়গা নেই। কোথাও জমিজমা নেই যে, সেখানে বাড়ি করবো।’
সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছবদুল হোসেন বলেন, ‘ঝুঁকিতে রয়েছে সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত চার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, আর কয়েকদিন ভাঙলেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিতে হবে।’
গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম খাঁ বলেন, ‘নিজেদের বাড়ির কাছে দুই বিঘার একটু বেশি জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। একবিঘার মতো জমির ধান কাটতে পারলেও বাকি একবিঘা নদীতে বিলীন হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও পদ্মায় পানি বাড়ায় পাড় ভাঙছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে বাড়িঘরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা সিরাজ খান বলেন, ‘ঘন ঘন ঝড়-বৃষ্টির কারণে নদী উত্তাল। ঢেউ পাড়ে এসে আঘাত করছে। আর তখনই পাড় ভাঙছে। এভাবেই গত এক সপ্তাহে অনেকের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনরোধের দাবি জানিয়ে আসছি। এখনই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বর্ষা মৌসুমে আরও অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
অপরদিকে পদ্মার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর মজলিশপুর, কাশেমপুর, মহিদাপুর গ্রামের আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এর উজান ও ভাটিতে ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছে শত শত পরিবার। এ ছাড়া, দেবগ্রাম ইউনিয়নের কউয়ালজানি ও দেবগ্রামে নদী তীরের ফসলি জমিতে ভাঙন শুরু হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন জানান, ইউনিয়নের চর বরাট, ছোট জলো, গোড়া মারা ও কাওয়ালজানির আংশিক মৌজা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই চারটি মৌজার পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় অন্তত ৫০ একর আবাদি কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
রাজবাড়ী পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার ভাঙনরোধে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুরু হয়েছে শহররক্ষা বাঁধ ফেইজ-২ প্রকল্পের কাজ। শহরের গোদার বাজার থেকে ২ দশমিক ৫ কি.মি. উজান এবং ৩ কি.মি. ভাটি এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৪ কি.মি. এলাকা এ প্রকল্পের আওতায় থাকবে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে। খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ আবার ডিবিএল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত করেছে। রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ ফেইজ-২ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ৩১ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিবিএল-এর প্রকৌশলী মো. ইউনুস হোসেন বলেন, ‘এই কাজ করতে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে নদীতে যে স্রোত, তাতে আমাদের ফেলা বালুর বস্তা টিকবে না। তারপরও আমাদের পর্যাপ্ত বালুর বস্তা তৈরি করা আছে। তাৎক্ষণিক সেই বস্তাগুলো নদীতে ফেলা হবে।’
পাউবো রাজবাড়ীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ভাঙনকবলিত গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও সদর উপজেলার মহাদেবপুর এলাকায় কাজ চলছে। এ ছাড়া, জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, ইতোমধ্যে ৮ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার নদী ভাঙনরোধে কাজ চলছে। আরও ১৭ কিলোমিটারের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। আমরা আশাবাদী, বাকি অংশের কাজও তাড়াতাড়ি শুরু হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা, সদর উপজেলার বরাট, অন্তরমোড়, গোদারবাজার, সিলিমপুর ও মহাদেবপুর, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ও কালিকাপুর এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া, কোনাগ্রাম, গয়েশপুর এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার সিলিমপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেলা জিও ব্যাগসহ অন্তত একশ’ মিটার এলাকা ধসে নদীতে বিলীন হয়েছে।
সিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা জহুরা বেগম বলেন, ‘নদীর ভাঙন যেভাবে দেখা দিয়েছে, এবছর আর বসতবাড়িতে থাকা সম্ভব না। নদীর শোঁ শোঁ শব্দে ভয়ে সন্তানদের নিয়ে রাতের বেলায় ঘুমাতে পারছি না। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি আমাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে গেলো।’
একই এলাকার গৃহবধূ ফুলজান বিবি বলেন, ‘প্রতিবছর নদী ভাঙে। আবার সরকার কাজও করে। কাজ মজবুত হয় না বলে ফের ভাঙন শুরু হয়। আমার বাড়ি দুই বার ভেঙেছে। এবছর যাওয়ার আর জায়গা নেই। কোথাও জমিজমা নেই যে, সেখানে বাড়ি করবো।’
সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছবদুল হোসেন বলেন, ‘ঝুঁকিতে রয়েছে সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত চার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, আর কয়েকদিন ভাঙলেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিতে হবে।’
গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম খাঁ বলেন, ‘নিজেদের বাড়ির কাছে দুই বিঘার একটু বেশি জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। একবিঘার মতো জমির ধান কাটতে পারলেও বাকি একবিঘা নদীতে বিলীন হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও পদ্মায় পানি বাড়ায় পাড় ভাঙছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে বাড়িঘরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।’
একই এলাকার বাসিন্দা সিরাজ খান বলেন, ‘ঘন ঘন ঝড়-বৃষ্টির কারণে নদী উত্তাল। ঢেউ পাড়ে এসে আঘাত করছে। আর তখনই পাড় ভাঙছে। এভাবেই গত এক সপ্তাহে অনেকের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনরোধের দাবি জানিয়ে আসছি। এখনই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বর্ষা মৌসুমে আরও অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
অপরদিকে পদ্মার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর মজলিশপুর, কাশেমপুর, মহিদাপুর গ্রামের আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এর উজান ও ভাটিতে ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছে শত শত পরিবার। এ ছাড়া, দেবগ্রাম ইউনিয়নের কউয়ালজানি ও দেবগ্রামে নদী তীরের ফসলি জমিতে ভাঙন শুরু হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন জানান, ইউনিয়নের চর বরাট, ছোট জলো, গোড়া মারা ও কাওয়ালজানির আংশিক মৌজা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই চারটি মৌজার পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় অন্তত ৫০ একর আবাদি কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
রাজবাড়ী পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার ভাঙনরোধে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুরু হয়েছে শহররক্ষা বাঁধ ফেইজ-২ প্রকল্পের কাজ। শহরের গোদার বাজার থেকে ২ দশমিক ৫ কি.মি. উজান এবং ৩ কি.মি. ভাটি এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৪ কি.মি. এলাকা এ প্রকল্পের আওতায় থাকবে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে। খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ আবার ডিবিএল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত করেছে। রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ ফেইজ-২ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ৩১ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিবিএল-এর প্রকৌশলী মো. ইউনুস হোসেন বলেন, ‘এই কাজ করতে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে নদীতে যে স্রোত, তাতে আমাদের ফেলা বালুর বস্তা টিকবে না। তারপরও আমাদের পর্যাপ্ত বালুর বস্তা তৈরি করা আছে। তাৎক্ষণিক সেই বস্তাগুলো নদীতে ফেলা হবে।’
পাউবো রাজবাড়ীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ভাঙনকবলিত গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও সদর উপজেলার মহাদেবপুর এলাকায় কাজ চলছে। এ ছাড়া, জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, ইতোমধ্যে ৮ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার নদী ভাঙনরোধে কাজ চলছে। আরও ১৭ কিলোমিটারের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। আমরা আশাবাদী, বাকি অংশের কাজও তাড়াতাড়ি শুরু হবে।’
No comments