গোয়েন্দাজাল-৭: সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা মিশনে মোসাদ by মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১৯৬৬
সাল। দেশের পক্ষ ত্যাগ করেন ইরাকি পাইলট মুনির রেডফা। তিনি মিগ-২১ উড়িয়ে
নিয়ে চলে যান ইসরাইলে। তাকে ও তার পরিবারকে উদ্ধারে সহযোগিতা করে মোসাদ। এর
নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ডায়মন্ড’। পাইলট রেডফার পুরো পরিবারকে সফলতার সঙ্গে
ইরাক থেকে পাচার করে নিয়ে যাওয়া হয় ইসরাইলে। মিগ-২১ যুদ্ধবিমান সম্পর্কে
তথ্য ভাগাভাগি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ইরাকে চালানো হয় অপারেশন স্ফিঙ্কস।
এর উদ্দেশ্য ইরাকের ওসিরাক পারমাণনিক চুল্লী সম্পর্কে উচ্চমাত্রায় স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া। এ জন্য মোসাদ ইরাকের একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে ফ্রান্সে তাদের কাজে যুক্ত করে।
১৯৯০ এর দশকের কথা। এ সময় মোসাদ একটি অপারেশন চালায় ইরাকে। এর নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ব্রাম্বল বুশ টু’। ওই সময়ে জর্ডান থেকে সায়েরাত মাতকাল কমান্ডোরা ইরাকে প্রবেশ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ইরাকের তখনকার প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা। কোথায় এ ঘটনা ঘটবে তা সনাক্ত করতে চেষ্টা করা হয় ওই অপারেশনের মাধ্যমে।
১৯৯৭ সালের ৩০ শে জুলাই। এদিন জেরুজালেমে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এর জন্য দায়ী করা হয় হামাসকে। এ হামলায় নিহত হন ১৬ ইসরাইলি নাগরিক। তখন জর্ডানে হামাসের প্রতিনিধিত্ব করেন খালেদ মাশাল। তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমুলক অপারেশন অনুমোদন করেন ইসরাইলের তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ১৯৯৭ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বরে খালেদ মাশালের কানে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এরপর জর্ডান কর্তৃপক্ষ মোসাদের দু’জন এজেন্টকে আটক করে। তারা কানাডার পর্যটক হিসেবে অবস্থান করছিলেন জর্ডানে। এ ঘটনায় ইসরাইল দূতাবাসের ছয় জনকে আটক করা হয়। তাদেরকে মুক্ত করার জন্য ইসরাইল একজন চিকিৎসককে পাঠায় জর্ডানের রাজধানী আম্মানে। তিনি আম্মানে গিয়ে খালেদ মাশালের দেহের বিষক্রিয়া নষ্ট করার চিকিৎসা দেন। ফলে খালেদ মাশালকে হত্যা মিশনে ব্যর্থ হয় মোসাদ। উল্টো এর ফলে তারা হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ও ধর্মীয় নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শুধু শেখ আহমেদ ইয়াসিনই নয়, একই সঙ্গে বেশ কিছু হামাস সদস্যের মুক্তির পথ বেরিয়ে আসে। মোসাদের এমন কর্মকান্ডে যখন তোলপাড় চলছে চারদিক, ক্ষোভের আগুন জ্বলছে জর্ডানে তখন ২৯ শে সেপ্টেম্বর আম্মান উড়ে যান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। উদ্দেশ্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে জর্ডানের বাদশা হোসেনের কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু এর পরিবর্তে তার সঙ্গে সাক্ষাত করলেন বাদশার ভাই ক্রাউন প্রিন্স হাসান।
গোয়েন্দা ও অপারেশনাল অপারেশনের সহযোগিতা হিসেবে ১৯৭৩ সালে বৈরুত ঘেরাও করে অপারেশন স্প্রিং অব ইয়ুথ নামের স্পেশাল ফোর্সেস। বাসাম আবু শরীফ নামে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফ্রালেস্টাইন (পিএফএলপি) সদস্যকে পাঠানো হয় একটি চিঠি বোমা। তাতে আবু শরীফ মারাত্মক আহত হন। বেঁচে যান অল্পের জন্য। অভিযানের অংশ হিসেবে ১৯৭৯ সালের ২২ শে জানুয়ারি বৈরুতে গাড়িবোমা হামলা হয়। এর লক্ষ্য ছিলেন ব্লাক সেপ্টেম্বর নেতা আলী হাসান সালামেহ। তাকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়। ১৯৭২ সালে গাড়িবোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ফিলিস্তিনি লেখক ও পিএফএলপি’র শীর্ষ স্থানীয় সদস্য ঘাসান কানাফানিকে। ১৯৯২ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল আব্বাস আল মুসাবিকে হত্যায় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ দেয়া হয়। ২০০২ সালে বৈরুতে পিএফএলপি-জিসির সামরিক শাখার নেতা জিহাদ আহমেদ জিবরিলকে হত্যায় মোসাদ জড়িত বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে ২০০৩ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহ সদস্য আলী হোসেন সালেহকে হত্যা করেছে মোসাদ। ২০০৪ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র এক নেতা গালেব আওয়ালিকে হত্যা করা হয়। ২০০৬ সালে সিডনে প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ-এর নেতা মাহমুদ আল মাজজুবকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া লেবাননে বিরাট একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে মোসাদ এমনটা সন্দেহ করা হয়। তাদের এই নেটওয়ার্কে যোগ দিয়েছে দ্রুজ, খ্রিস্টান, সুন্নী মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন, লেবানন সরকারের কিছু কর্মকর্তা। হিজবুল্লাহর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে এবং হিজবুল্লাহর রেভ্যুলুশনারি গার্ডের উপদেষ্টাদের ওপর নজর রাখতে দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের। ধারণা করা হয় ১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধের সময় থেকেই তারা সেখানে সক্রিয়। হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় লেবাননের নিরাপত্তা বিভাগগুলো ২০০৯ সালে বড় ধরনের একটি অভিযান পরিচালনা করে। ইসরাইলের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করে এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় একশ গুপ্তচরকে। ২০০৬ সালে লেবাননের সেনাবাহিনী একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পায়। এরা লেবাননের বেশকিছু মানুষ ও ফিলিস্তিনি বহু নেতাকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পক্ষে হত্যা করেছে।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ইরাকে চালানো হয় অপারেশন স্ফিঙ্কস।
এর উদ্দেশ্য ইরাকের ওসিরাক পারমাণনিক চুল্লী সম্পর্কে উচ্চমাত্রায় স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়া। এ জন্য মোসাদ ইরাকের একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে ফ্রান্সে তাদের কাজে যুক্ত করে।
১৯৯০ এর দশকের কথা। এ সময় মোসাদ একটি অপারেশন চালায় ইরাকে। এর নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ব্রাম্বল বুশ টু’। ওই সময়ে জর্ডান থেকে সায়েরাত মাতকাল কমান্ডোরা ইরাকে প্রবেশ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ইরাকের তখনকার প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা। কোথায় এ ঘটনা ঘটবে তা সনাক্ত করতে চেষ্টা করা হয় ওই অপারেশনের মাধ্যমে।
১৯৯৭ সালের ৩০ শে জুলাই। এদিন জেরুজালেমে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এর জন্য দায়ী করা হয় হামাসকে। এ হামলায় নিহত হন ১৬ ইসরাইলি নাগরিক। তখন জর্ডানে হামাসের প্রতিনিধিত্ব করেন খালেদ মাশাল। তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমুলক অপারেশন অনুমোদন করেন ইসরাইলের তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ১৯৯৭ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বরে খালেদ মাশালের কানে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এরপর জর্ডান কর্তৃপক্ষ মোসাদের দু’জন এজেন্টকে আটক করে। তারা কানাডার পর্যটক হিসেবে অবস্থান করছিলেন জর্ডানে। এ ঘটনায় ইসরাইল দূতাবাসের ছয় জনকে আটক করা হয়। তাদেরকে মুক্ত করার জন্য ইসরাইল একজন চিকিৎসককে পাঠায় জর্ডানের রাজধানী আম্মানে। তিনি আম্মানে গিয়ে খালেদ মাশালের দেহের বিষক্রিয়া নষ্ট করার চিকিৎসা দেন। ফলে খালেদ মাশালকে হত্যা মিশনে ব্যর্থ হয় মোসাদ। উল্টো এর ফলে তারা হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ও ধর্মীয় নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শুধু শেখ আহমেদ ইয়াসিনই নয়, একই সঙ্গে বেশ কিছু হামাস সদস্যের মুক্তির পথ বেরিয়ে আসে। মোসাদের এমন কর্মকান্ডে যখন তোলপাড় চলছে চারদিক, ক্ষোভের আগুন জ্বলছে জর্ডানে তখন ২৯ শে সেপ্টেম্বর আম্মান উড়ে যান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। উদ্দেশ্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে জর্ডানের বাদশা হোসেনের কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু এর পরিবর্তে তার সঙ্গে সাক্ষাত করলেন বাদশার ভাই ক্রাউন প্রিন্স হাসান।
গোয়েন্দা ও অপারেশনাল অপারেশনের সহযোগিতা হিসেবে ১৯৭৩ সালে বৈরুত ঘেরাও করে অপারেশন স্প্রিং অব ইয়ুথ নামের স্পেশাল ফোর্সেস। বাসাম আবু শরীফ নামে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফ্রালেস্টাইন (পিএফএলপি) সদস্যকে পাঠানো হয় একটি চিঠি বোমা। তাতে আবু শরীফ মারাত্মক আহত হন। বেঁচে যান অল্পের জন্য। অভিযানের অংশ হিসেবে ১৯৭৯ সালের ২২ শে জানুয়ারি বৈরুতে গাড়িবোমা হামলা হয়। এর লক্ষ্য ছিলেন ব্লাক সেপ্টেম্বর নেতা আলী হাসান সালামেহ। তাকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়। ১৯৭২ সালে গাড়িবোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ফিলিস্তিনি লেখক ও পিএফএলপি’র শীর্ষ স্থানীয় সদস্য ঘাসান কানাফানিকে। ১৯৯২ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল আব্বাস আল মুসাবিকে হত্যায় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ দেয়া হয়। ২০০২ সালে বৈরুতে পিএফএলপি-জিসির সামরিক শাখার নেতা জিহাদ আহমেদ জিবরিলকে হত্যায় মোসাদ জড়িত বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে ২০০৩ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহ সদস্য আলী হোসেন সালেহকে হত্যা করেছে মোসাদ। ২০০৪ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র এক নেতা গালেব আওয়ালিকে হত্যা করা হয়। ২০০৬ সালে সিডনে প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ-এর নেতা মাহমুদ আল মাজজুবকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া লেবাননে বিরাট একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে মোসাদ এমনটা সন্দেহ করা হয়। তাদের এই নেটওয়ার্কে যোগ দিয়েছে দ্রুজ, খ্রিস্টান, সুন্নী মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন, লেবানন সরকারের কিছু কর্মকর্তা। হিজবুল্লাহর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে এবং হিজবুল্লাহর রেভ্যুলুশনারি গার্ডের উপদেষ্টাদের ওপর নজর রাখতে দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের। ধারণা করা হয় ১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধের সময় থেকেই তারা সেখানে সক্রিয়। হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় লেবাননের নিরাপত্তা বিভাগগুলো ২০০৯ সালে বড় ধরনের একটি অভিযান পরিচালনা করে। ইসরাইলের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করে এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় একশ গুপ্তচরকে। ২০০৬ সালে লেবাননের সেনাবাহিনী একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পায়। এরা লেবাননের বেশকিছু মানুষ ও ফিলিস্তিনি বহু নেতাকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পক্ষে হত্যা করেছে।
No comments