হাসিনা-মোদি তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক হচ্ছে নেপালে by মিজানুর রহমান
সব
প্রস্তুতি সম্পন্ন। ২৫ ঘণ্টার সফরে কাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপাল
যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য কাঠমান্ডুর বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান। কিন্তু
সেখানে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে। তাহলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক। চলতি বছরের শেষদিকে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ওই নির্বাচনের আগে সম্ভবত ঢাকা-দিল্লি শীর্ষ
পর্যায়ে এটাই হতে যাচ্ছে শেষ বৈঠক। কূটনৈতিক অঙ্গনে বলাবলি আছে- ওই বৈঠকের
গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পরই ঢাকার তরফে প্রধানমন্ত্রীর কাঠমান্ডু সফর
চূড়ান্ত করা হয়। অবশ্য সফরটি নিয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
আসেনি। আজ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন।
তবে দু’দিন আগে (২৭শে আগস্ট) সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস সফর বিষয়ে একটি রিপোর্ট করেছে। তাতে বিমসটেক সম্মেলন এবং আয়োজক রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সেখানে রহস্যজনকভাবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। কাল বিকালে বৈঠকটি হচ্ছে- এটি নিশ্চিত করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি সফরের সময় ক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসও তা-ই বলছেন। তার ভাষ্য হলো ‘বৈঠক হবে লেইট আফটারনুনে। আমি তাই জানি। বিস্তারিত ঢাকাই ভালো বলতে পারবে।’ কিন্তু সেই বৈঠকে কী থাকছে? টকিং পয়েন্টস তো তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে জানার চেষ্টা করা হলে এক কর্মকর্তা বলেন- আমি জানি, আপনিও জানেন, ঢাকা-দিল্লি বৈঠক টকিং পয়েন্টস ধরে হয় না। এর বাইরেও কথা হয়। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আর সেই বৈঠক যদি হয় শীর্ষ নেতৃত্বের, দুই প্রধানমন্ত্রীর, তা হলো নিশ্চিতভাবেই সেখানে অনেক বিষয় আসবে, যা টকিং পয়েন্টস-এ থাকবে না। আগে বৈঠক হোক, তারপর বলা যাবে তারা কী নিয়ে কথা বললেন। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন- টকিং পয়েন্টস তৈরি হয় গৎবাঁধা ফরমেটে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বৈঠকে বসেন তখন সেগুলো গৌণ হয়ে যায়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে তো টকিং পয়েন্টস এর কোনো পাত্তাই থাকে না। আলোচনা ভিন্নমাত্রা পায়! ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, টকিং পয়েন্টস এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ই কম-বেশি উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তিস্তা, রোহিঙ্গা, সীমান্ত সমস্যা, নিরাপত্তা বাণিজ্য সব বিষয়ই থাকছে। তবে কোনো কিছুতেই বিশেষ ফোকাস রাখা হয়নি। ভারতের তরফে আসাম ইস্যু আসতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ঢাকার ওই কর্মকর্তা বলেন-আমরা যে ধারণা পেয়েছি তাতে বিষয়টি উঠবে বলে মনে হয় না। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়? দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের বিষয়ে জানতে বৈঠক শেষ হওয়ার পর মিডিয়া ব্রিফিং পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে!
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক আসন্ন বৈঠক বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবেই দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে। গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন সফরে মোদির সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। সেখানে তিস্তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছিল। ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বিমসটেক’-এর চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অংশ নিতে গত ৪ঠা আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে বিশেষ আমন্ত্রণ জানান নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। তার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। ওই সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচারেরও যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে হাসিনা-মোদি বৈঠক নিয়ে কলকাতার বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকাও রিপোর্ট করেছে। রিপোর্টে বলা হয়- শেষ মুহূর্তে কোনো পরিবর্তন না হলে কাঠমান্ডুতে আরও একবার মুখোমুখি হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উভয়ের বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশের ভোটের আগে বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে আঞ্চলিক রাজনীতি।
ভারতে আসামের চলতি এনআরসি বিতর্কের আঁচ ঢাকাতেও পড়েছে। যদিও ভারতের তরফে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ভোটের মুখে ঢাকার স্পর্শকাতরতার দিকটি অবশ্যই দিল্লি বিবেচনায় রাখছে। ভারতের তরফ থেকে এমন কিছু করা হবে না, যাতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার লিখেছে- আসন্ন বৈঠকটিতে এবার খোদ মোদি এনআরসি নিয়ে কথা বলবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। তাঁকে আশ্বস্ত করা হবে। পাশাপাশি মোদি এ কথাও জানাবেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকাকে দোয়ারে দোয়ারে ঘুরতে হবে না। নয়া দিল্লি বিষয়টি নিয়ে সর্বতোভাবে ঢাকার পাশে রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভারতের পরবর্তী সাহায্য পাঠানোর বিষয়টি ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিয়েও বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হবে বলে কলকাতার ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির বিস্তারিত: বাসস জানিয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামিট অব দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) ৪র্থ সম্মেলনে যোগ দিতে দুইদিনের সরকারি সফরে আগামী বৃহস্পতিবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৭টি আঞ্চলিক দেশের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করা।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেদিনই নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বিমানটির নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামস বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। অভ্যর্থনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রাসহকারে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হবে। নেপাল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই অবস্থান করবেন। সফরের প্রথমদিনই প্রধানমন্ত্রী নেপালের রাষ্ট্রপতির বাসভবন শিতল নিবাসে দেশের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবি ভাণ্ডারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে নেপালের রাষ্ট্রপতির দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকালে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠেয় ৪র্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেবেন।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজের উন্নয়নের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপালের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের তিন বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অনুশীলন এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও মতবিনিময় করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্থানীয় হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে তাঁদের সম্মানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি আয়োজিত নৈশভোজেও যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার অপরাহ্নে দেশে ফিরবেন। এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ই জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্যদিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং অন্য দু’টি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড। প্রাথমিকভাবে ৪টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল। যার সংক্ষিপ্ত নাম ছিল ‘বিআইএসটি-ইসি’ (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন)। ১৯৯৭ সালের ২২শে ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি বিশেষ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই জোটে মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এর নতুন নামকরণ হয় ‘বিআইএমএসটি-ইসি’ (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা অ্যান্ড থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন)।
৬ষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে (ফেব্রুয়ারি-২০০৪, থাইল্যান্ড) নেপাল এবং ভুটান অন্তর্ভুক্ত হলে জোটের নতুন নামকরণ হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)।’ এই ধরনের একটি জোট গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিশ্বায়নের আগ্রাসন মোকাবিলা করে আঞ্চলিক সম্পদ এবং ভৌগোলিক সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে সকলের স্বার্থে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।
তবে দু’দিন আগে (২৭শে আগস্ট) সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস সফর বিষয়ে একটি রিপোর্ট করেছে। তাতে বিমসটেক সম্মেলন এবং আয়োজক রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সেখানে রহস্যজনকভাবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। কাল বিকালে বৈঠকটি হচ্ছে- এটি নিশ্চিত করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি সফরের সময় ক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসও তা-ই বলছেন। তার ভাষ্য হলো ‘বৈঠক হবে লেইট আফটারনুনে। আমি তাই জানি। বিস্তারিত ঢাকাই ভালো বলতে পারবে।’ কিন্তু সেই বৈঠকে কী থাকছে? টকিং পয়েন্টস তো তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে জানার চেষ্টা করা হলে এক কর্মকর্তা বলেন- আমি জানি, আপনিও জানেন, ঢাকা-দিল্লি বৈঠক টকিং পয়েন্টস ধরে হয় না। এর বাইরেও কথা হয়। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আর সেই বৈঠক যদি হয় শীর্ষ নেতৃত্বের, দুই প্রধানমন্ত্রীর, তা হলো নিশ্চিতভাবেই সেখানে অনেক বিষয় আসবে, যা টকিং পয়েন্টস-এ থাকবে না। আগে বৈঠক হোক, তারপর বলা যাবে তারা কী নিয়ে কথা বললেন। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন- টকিং পয়েন্টস তৈরি হয় গৎবাঁধা ফরমেটে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বৈঠকে বসেন তখন সেগুলো গৌণ হয়ে যায়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে তো টকিং পয়েন্টস এর কোনো পাত্তাই থাকে না। আলোচনা ভিন্নমাত্রা পায়! ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, টকিং পয়েন্টস এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ই কম-বেশি উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তিস্তা, রোহিঙ্গা, সীমান্ত সমস্যা, নিরাপত্তা বাণিজ্য সব বিষয়ই থাকছে। তবে কোনো কিছুতেই বিশেষ ফোকাস রাখা হয়নি। ভারতের তরফে আসাম ইস্যু আসতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ঢাকার ওই কর্মকর্তা বলেন-আমরা যে ধারণা পেয়েছি তাতে বিষয়টি উঠবে বলে মনে হয় না। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়? দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের বিষয়ে জানতে বৈঠক শেষ হওয়ার পর মিডিয়া ব্রিফিং পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে!
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক আসন্ন বৈঠক বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবেই দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে। গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন সফরে মোদির সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। সেখানে তিস্তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছিল। ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বিমসটেক’-এর চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অংশ নিতে গত ৪ঠা আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে বিশেষ আমন্ত্রণ জানান নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। তার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। ওই সম্মেলনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা এবং থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচারেরও যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে হাসিনা-মোদি বৈঠক নিয়ে কলকাতার বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকাও রিপোর্ট করেছে। রিপোর্টে বলা হয়- শেষ মুহূর্তে কোনো পরিবর্তন না হলে কাঠমান্ডুতে আরও একবার মুখোমুখি হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উভয়ের বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশের ভোটের আগে বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে আঞ্চলিক রাজনীতি।
ভারতে আসামের চলতি এনআরসি বিতর্কের আঁচ ঢাকাতেও পড়েছে। যদিও ভারতের তরফে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ভোটের মুখে ঢাকার স্পর্শকাতরতার দিকটি অবশ্যই দিল্লি বিবেচনায় রাখছে। ভারতের তরফ থেকে এমন কিছু করা হবে না, যাতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার লিখেছে- আসন্ন বৈঠকটিতে এবার খোদ মোদি এনআরসি নিয়ে কথা বলবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। তাঁকে আশ্বস্ত করা হবে। পাশাপাশি মোদি এ কথাও জানাবেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকাকে দোয়ারে দোয়ারে ঘুরতে হবে না। নয়া দিল্লি বিষয়টি নিয়ে সর্বতোভাবে ঢাকার পাশে রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভারতের পরবর্তী সাহায্য পাঠানোর বিষয়টি ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিয়েও বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হবে বলে কলকাতার ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির বিস্তারিত: বাসস জানিয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামিট অব দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) ৪র্থ সম্মেলনে যোগ দিতে দুইদিনের সরকারি সফরে আগামী বৃহস্পতিবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যাচ্ছেন। কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৭টি আঞ্চলিক দেশের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করা।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেদিনই নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বিমানটির নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামস বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। অভ্যর্থনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রাসহকারে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হবে। নেপাল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই অবস্থান করবেন। সফরের প্রথমদিনই প্রধানমন্ত্রী নেপালের রাষ্ট্রপতির বাসভবন শিতল নিবাসে দেশের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবি ভাণ্ডারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে নেপালের রাষ্ট্রপতির দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকালে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠেয় ৪র্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেবেন।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজের উন্নয়নের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপালের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের তিন বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অনুশীলন এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও মতবিনিময় করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্থানীয় হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে তাঁদের সম্মানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি আয়োজিত নৈশভোজেও যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার অপরাহ্নে দেশে ফিরবেন। এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ই জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্যদিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং অন্য দু’টি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড। প্রাথমিকভাবে ৪টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল। যার সংক্ষিপ্ত নাম ছিল ‘বিআইএসটি-ইসি’ (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন)। ১৯৯৭ সালের ২২শে ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি বিশেষ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই জোটে মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এর নতুন নামকরণ হয় ‘বিআইএমএসটি-ইসি’ (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা অ্যান্ড থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন)।
৬ষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে (ফেব্রুয়ারি-২০০৪, থাইল্যান্ড) নেপাল এবং ভুটান অন্তর্ভুক্ত হলে জোটের নতুন নামকরণ হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)।’ এই ধরনের একটি জোট গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিশ্বায়নের আগ্রাসন মোকাবিলা করে আঞ্চলিক সম্পদ এবং ভৌগোলিক সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে সকলের স্বার্থে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।
No comments