মাটির নিচে অন্য এক ভুবন by ইশরাক পারভীন খুশি
প্রথমবারের
মতো প্লেনে চড়ছি। রানওয়েতে প্লেনের দৌড়ান আর তারপর ভোঁ করে উড়বার সময়
কানে ভীষণ ধাপা লাগা। বাকিটা সময় দীর্ঘ ক্লান্তিকর ও একঘেঁয়েমি। আকাশের এত
উঁচুতে উঠেও মনে হয় ড্রইং রুমেই বসে আছি। তবে উচ্চ আর মধ্যবিত্তের ড্রইং
রুম বলা যেতে পারে। ইকনোমিক ক্লাস, চাপা চাপা সারি সারি সিট, সামনের সিটের
পেছনে ছোট টিভি স্ক্রিন যেখানে হিন্দি ইংরেজি মুভি, গেম, গান শোনা ইত্যাদির
ব্যবস্থা আছে। হেড ফোন, ঠান্ডায় উষ্ণতা পেতে রয়েছে কম্বল। আকাশের ওপরে
রাত-দিন প্রায় একরকম। কারণ, চারপাশ বন্ধ। দিনে ইচ্ছে করলে জানালা দিয়ে
বাইরে চোখ রাখা যায়। মনে হবে, মেঘের ওপর ভাসছি। নিচে মহাসাগর অথবা
পর্বতমালা, বন-জঙ্গল। হঠাৎ দু-একবার ঝাঁকুনি ছাড়া সবটাই নির্ভেজাল বদ্ধ ঘরে
বসে ঝিমুনি। ট্রেনে চড়লে মায়ের কোলের যে দোলটা লাগে তাতে দুচোখের পাতা
খুলে রাখা দায়। কিন্ত প্লেনে এক ফোঁটা ঘুমও আসেনি। যাহোক একদিকে প্রিয়জন
ফেলে আসা অন্যদিকে প্রিয়জনের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলাম পুরো সময়।
একসময় হিথ্রো পার হলাম। প্রাণ ভোমরা আমাকে সাদর সম্ভাষণ করে বাড়ি অভিমুখী
হলো। জীবনে নতুন চমক শুরু সেখান থেকেই।
বিলাতে গিয়ে প্রথম চমক আমার কাছে পাতাল রেল। লন্ডনের আন্ডার গ্রাউন্ডে টিউব ইস্টিশন। মাটির নিচে সে এক অন্য ভুবন। ঝকঝকে তকতকে হাজার রঙের মেলা। মাটির এত এত নিচে যেন রূপকথার এক নগরী। চলন্ত সিঁড়ি নিচে নামতেই থাকে নামতেই থাকে তারপর এ-গলি, সে-গলি ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে কত কিছুর পশরা যে চোখে পড়বে তার ইয়ত্তা নেই।
কেউ হয়তো গিটার নিয়ে আপন মনে গান করছে। সামনে গিটারের ঢাকনাটা খোলা যাতে ভালোলাগলে ভালোবেসে দুচার পয়সা ছড়িয়ে দিতে পারি। কেউ হয়তো ধুমধাড়াক্কা গান ছেড়ে ধুমধাড়াক্কা ডিস্কো ড্যান্স করছে, কেউ করুণ সুরে বাজাচ্ছে ভায়োলিন। এসব তাদের রুজি রোজগারের ধান্ধা। মন চাইলে পয়সা দিতে হবে না হয় বিনে পয়সায় গানটা চলতি পথে একটু শুনে কৃপণতা দেখিয়ে চলে যাওয়া যায় তাতে কেউ বাদ সাধবে না।
ছড়ানো ছিটানো নানান বার্গার আর কফি শপ। হাঁটতে হাঁটতে, কাজ করতে করতে খেয়ে নেয়া যায় পছন্দসই। বার্গার কিং, ম্যকডোনাল্ড, কেএফসি থেকে শুরু করে স্টারবাক্স, কোস্টা কতই না কফি শপ। কফির গন্ধে মনটা নেচে উঠে। এক কাপ কফি না কিনে ট্রেনের উঠতে মন সায় দেয়না। তারপর শপিং করতে চাই? জামাকাপড় জুতো, সাজসজ্জা, অলঙ্কার এমনকি বইয়ের দোকানও আছে ঝলমলে সাজে সজ্জিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এত এত পাতাল রেল এত অলিগলি তারপরও প্রথমবারের জন্য হলেও পথ হারানোর ভয় নেই। আমার মতো কুয়োর ব্যাঙ যে কিনা ঢাকা শহরে একা একটা নতুন জায়গা খুঁজে পেতে অক্ষম সে-ও প্রথমদিনেই লন্ডনের ম্যাপ বুঝে গেল। এ-পর্যন্ত যে শহরেই ঘুরেছি লন্ডনের মতো রাস্তার ম্যাপ দেখিনি। এত সুন্দর আর সহজ করে আঁকিবুকি পাতাল রেল ম্যাপে আঁকা। চোখের সামনে যেন পুরো শহর দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয়। আর তা নতুন যে কোন আগন্তুককে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। যাহোক ঐ প্রথম পাতাল রেলে চড়ে হোয়াইট চ্যাপেল নামক স্থানে এলাম নতুন জীবনের দিশা পেতে।
এক কামরায় সংসার। বাড়িটিতে তিনটি ফুল ফ্যমিলি ও একটি হাফ ফ্যমিলি মিলেমিশে ভাগাভাগি। একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর যা সবার জন্য। রান্না ঘরও একটি। সবাইকে সমানভাবে সময় ভাগ করা আছে। সকলের সুবিধা মতো নির্দিষ্ট করা সময়ে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। ঠিক করা আছে বাথরুম পরিষ্কার করার দায়িত্ব কার কবে? একটা যৌথ পরিবারের মধ্য সবার নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করে ও মিলেমিশে থাকে অথচ একে অন্যের বিষয়ে নাক গলায় না। আমরা সবাই ছিলাম বাংলাদেশি কিন্তু বিলেতি কায়দায় সভ্য।
হোয়াইট চ্যাপেল বাঙালিদের আখড়া। যথারীতি বাঙালি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বাংলাদেশি সবজি মাছ সবকিছুর পশরা বসে ইস্টিশনের সামনেই। এক পাউন্ডেই পাওয়া যায় শুকনো গোছের এক পেয়ালা সবজি। যা যা খেতে মন চায় তার সবই আছে সে বাজারে। হাতের চুড়ি, গলার মালা, কানের দুল থেকে হিজাব, ওড়না কিছুই বাদ নেই। অবাক হয়েছি চানাচুর মুড়ি মাখা পাওয়া যায় দেখে। চারপাশে বাংলাদেশিরা গিজগিজ করছে। অবশ্য হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় সিলেটী বেশি। বাংলাদেশি দোকানপাটও আছে বিস্তর।
লন্ডন শহরের অন্য এলাকার থেকে এ এলাকার যে পার্থক্য চোখে পড়বে তাহলো এখানে বাংলাদেশিরা থাকে বেশি বলে বাংলায় কথা বলা, বাংলা দোকানপাট যেমন রয়েছে তেমনি কিছু এলাকা বাংলাদেশি কায়দায় নোংরাও রয়েছে। এইটুকুতেই মনে হবে হ্যাঁ বাংলাদেশেই আছি, মায়ের কোল থেকে বেশি দূরে যাইনি।
রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই, কিন্তু সবাই নিয়ম মেনে যেখানে যতটুকু থামা দরকার থামছে। রাস্তার মোড়ে ল্যম্পপোস্টের মতো যে খাম্বা দাঁড়িয়ে সেখানে আছে একটা বাটন। সে বাটনে চাপ দিয়ে দাঁড়ানো মানে আমি রাস্তা পার হব, আমাকে যেতে দাও। সময়মতো বাস, গাড়ি সব দাঁড়িয়ে স্যালুট দিয়ে তোমাকে বলবে মহাশয় এ-পথ এবার তোমার, পার হও। মজার বিষয় লন্ডন শহরে মন কেড়েছে একটি বিষয়ের জন্য। তাহলো ল্যামúোস্টগুলোতে দুটো করে ফুল গাছের ঝাকা ঝুলে আছে। আর রাস্তার মাঝে ও পাশের ফুটপাতের কোথাও কোথাও যেন ফুলদানি বানিয়ে তাতে ফুল গাছের সারি দিয়ে তোরা বানিয়ে রেখেছে। দেখলে মনে হবে, একি রাস্তা নাকি আমার বাগান বাড়ি? গোটা শহরই যেন বাড়ির মতো সজ্জা নিয়ে তোমাকে আগলে রেখেছে।
বিলাতে গিয়ে প্রথম চমক আমার কাছে পাতাল রেল। লন্ডনের আন্ডার গ্রাউন্ডে টিউব ইস্টিশন। মাটির নিচে সে এক অন্য ভুবন। ঝকঝকে তকতকে হাজার রঙের মেলা। মাটির এত এত নিচে যেন রূপকথার এক নগরী। চলন্ত সিঁড়ি নিচে নামতেই থাকে নামতেই থাকে তারপর এ-গলি, সে-গলি ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে কত কিছুর পশরা যে চোখে পড়বে তার ইয়ত্তা নেই।
কেউ হয়তো গিটার নিয়ে আপন মনে গান করছে। সামনে গিটারের ঢাকনাটা খোলা যাতে ভালোলাগলে ভালোবেসে দুচার পয়সা ছড়িয়ে দিতে পারি। কেউ হয়তো ধুমধাড়াক্কা গান ছেড়ে ধুমধাড়াক্কা ডিস্কো ড্যান্স করছে, কেউ করুণ সুরে বাজাচ্ছে ভায়োলিন। এসব তাদের রুজি রোজগারের ধান্ধা। মন চাইলে পয়সা দিতে হবে না হয় বিনে পয়সায় গানটা চলতি পথে একটু শুনে কৃপণতা দেখিয়ে চলে যাওয়া যায় তাতে কেউ বাদ সাধবে না।
ছড়ানো ছিটানো নানান বার্গার আর কফি শপ। হাঁটতে হাঁটতে, কাজ করতে করতে খেয়ে নেয়া যায় পছন্দসই। বার্গার কিং, ম্যকডোনাল্ড, কেএফসি থেকে শুরু করে স্টারবাক্স, কোস্টা কতই না কফি শপ। কফির গন্ধে মনটা নেচে উঠে। এক কাপ কফি না কিনে ট্রেনের উঠতে মন সায় দেয়না। তারপর শপিং করতে চাই? জামাকাপড় জুতো, সাজসজ্জা, অলঙ্কার এমনকি বইয়ের দোকানও আছে ঝলমলে সাজে সজ্জিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এত এত পাতাল রেল এত অলিগলি তারপরও প্রথমবারের জন্য হলেও পথ হারানোর ভয় নেই। আমার মতো কুয়োর ব্যাঙ যে কিনা ঢাকা শহরে একা একটা নতুন জায়গা খুঁজে পেতে অক্ষম সে-ও প্রথমদিনেই লন্ডনের ম্যাপ বুঝে গেল। এ-পর্যন্ত যে শহরেই ঘুরেছি লন্ডনের মতো রাস্তার ম্যাপ দেখিনি। এত সুন্দর আর সহজ করে আঁকিবুকি পাতাল রেল ম্যাপে আঁকা। চোখের সামনে যেন পুরো শহর দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয়। আর তা নতুন যে কোন আগন্তুককে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। যাহোক ঐ প্রথম পাতাল রেলে চড়ে হোয়াইট চ্যাপেল নামক স্থানে এলাম নতুন জীবনের দিশা পেতে।
এক কামরায় সংসার। বাড়িটিতে তিনটি ফুল ফ্যমিলি ও একটি হাফ ফ্যমিলি মিলেমিশে ভাগাভাগি। একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর যা সবার জন্য। রান্না ঘরও একটি। সবাইকে সমানভাবে সময় ভাগ করা আছে। সকলের সুবিধা মতো নির্দিষ্ট করা সময়ে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। ঠিক করা আছে বাথরুম পরিষ্কার করার দায়িত্ব কার কবে? একটা যৌথ পরিবারের মধ্য সবার নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করে ও মিলেমিশে থাকে অথচ একে অন্যের বিষয়ে নাক গলায় না। আমরা সবাই ছিলাম বাংলাদেশি কিন্তু বিলেতি কায়দায় সভ্য।
হোয়াইট চ্যাপেল বাঙালিদের আখড়া। যথারীতি বাঙালি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বাংলাদেশি সবজি মাছ সবকিছুর পশরা বসে ইস্টিশনের সামনেই। এক পাউন্ডেই পাওয়া যায় শুকনো গোছের এক পেয়ালা সবজি। যা যা খেতে মন চায় তার সবই আছে সে বাজারে। হাতের চুড়ি, গলার মালা, কানের দুল থেকে হিজাব, ওড়না কিছুই বাদ নেই। অবাক হয়েছি চানাচুর মুড়ি মাখা পাওয়া যায় দেখে। চারপাশে বাংলাদেশিরা গিজগিজ করছে। অবশ্য হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় সিলেটী বেশি। বাংলাদেশি দোকানপাটও আছে বিস্তর।
লন্ডন শহরের অন্য এলাকার থেকে এ এলাকার যে পার্থক্য চোখে পড়বে তাহলো এখানে বাংলাদেশিরা থাকে বেশি বলে বাংলায় কথা বলা, বাংলা দোকানপাট যেমন রয়েছে তেমনি কিছু এলাকা বাংলাদেশি কায়দায় নোংরাও রয়েছে। এইটুকুতেই মনে হবে হ্যাঁ বাংলাদেশেই আছি, মায়ের কোল থেকে বেশি দূরে যাইনি।
রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই, কিন্তু সবাই নিয়ম মেনে যেখানে যতটুকু থামা দরকার থামছে। রাস্তার মোড়ে ল্যম্পপোস্টের মতো যে খাম্বা দাঁড়িয়ে সেখানে আছে একটা বাটন। সে বাটনে চাপ দিয়ে দাঁড়ানো মানে আমি রাস্তা পার হব, আমাকে যেতে দাও। সময়মতো বাস, গাড়ি সব দাঁড়িয়ে স্যালুট দিয়ে তোমাকে বলবে মহাশয় এ-পথ এবার তোমার, পার হও। মজার বিষয় লন্ডন শহরে মন কেড়েছে একটি বিষয়ের জন্য। তাহলো ল্যামúোস্টগুলোতে দুটো করে ফুল গাছের ঝাকা ঝুলে আছে। আর রাস্তার মাঝে ও পাশের ফুটপাতের কোথাও কোথাও যেন ফুলদানি বানিয়ে তাতে ফুল গাছের সারি দিয়ে তোরা বানিয়ে রেখেছে। দেখলে মনে হবে, একি রাস্তা নাকি আমার বাগান বাড়ি? গোটা শহরই যেন বাড়ির মতো সজ্জা নিয়ে তোমাকে আগলে রেখেছে।
No comments