৩ মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৪৬: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য by রুদ্র মিজান
বন্দুকযুদ্ধে,
পুলিশ ও কারা হেফাজতে মৃত্যু থামছে না কিছুতেই। সম্প্রতি রাজনৈতিক
পরিস্থিতি সহিংস না হলেও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন
পর্যায়ের অপরাধীরা নিহত হচ্ছে বন্দুকযুদ্ধ ও কারা হেফাজতে। গত তিন মাসে
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৬ জন। কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।
সবেচেয় বেশি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে পুলিশের সঙ্গে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র
সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। গ্রেপ্তারের আগেই তিন মাসে বন্দুকযুদ্ধে
র্যাবের সঙ্গে কথিত নিহত হয়েছে ১৪ ও পুলিশের সঙ্গে ১০ জন। এ ছাড়াও ডিবি
পুলিশের সঙ্গে তিন, নৌ-পুলিশের সঙ্গে এক ও বিজিবি’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে
নিহত হয়েছেন একজন। গ্রেপ্তারের পরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই,
পুলিশের সঙ্গে ১১ ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে দুই জন।
পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে একজন।
সুস্থ মানুষ। রিমান্ডে নেয়ার আগে কোর্টে কথাও বলেছি। কিন্তু রিমান্ড থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় সে আর সুস্থ নেই। কেঁদে কেঁদে বলেছে, ভাইরে আমারে অনেক টর্চার করছে। তারপর দিন সকালে খবর পেলাম সে আর নেই। তাকে ওরা রিমান্ডে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। কথাগুলো বলছিলেন রিমান্ড শেষে কারাগারে নিহত ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের স্বজন নিয়ামত। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ই মার্চ। তিন দিন রিমান্ডের পর কারাগারে মারা যান ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলন। রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকলেও এই ছাত্রনেতার মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। ২৩শে মার্চ রাজধানীর মিরপুরের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন হাসান। এই যুবক পীরেরবাগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ডিবি’র পরিদর্শক জালাল উদ্দিন হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি। পুলিশ জানিয়েছে, জালাল হত্যার আসামি হাসানকে গ্রেপ্তারের জন্য ওই এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে একজনকে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সম্প্রতি সমাজে উদ্বেগ দেখা দিয়েছি ধর্ষণ নিয়ে। একের পর এক ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। এক শ্রেণির লম্পটের লালসার শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোরীরা। গত ৩১শে মার্চ দিবাগত রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় র?্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ধর্ষণ মামলার আসামি রহিম উদ্দিন। তার আগে গত ২০শে ফেব্রুয়ারি চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে র?্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ধর্ষণ মামলার আরেক আসামি আনু মিয়া।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন উজ্জ্বল মিয়া নামে এক ব্যক্তি। রাতেই ময়মনসিংহের সাহেব কাচারি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত উজ্জ্বল পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি।
জানা গেছে, উজ্জ্বল রিকশা চালাতেন। এর মধ্যেই গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে যান তিনি। মাদকসেবী উজ্জ্বলের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে গৌরিপুর থানায় একটি জিডি করেছিলেন তার ছোট ভাই কাঞ্চন। গত ২৭শে মার্চ ওই জিডির তদন্ত করতে তাদের গৌরিপুরের জেলখানা রোডের বাড়িতে যান এসআই আসাদুজ্জামান। পুলিশ অভিযোগ করেছে, ওই সময়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এসআই আসাদুজ্জামানকে আঘাত করেন উজ্জ্বল। গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদুজ্জামানকে প্রথমে ময়মনসিংহে বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, উজ্জ্বল মিয়া পলাতক ছিলেন। তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সাহেব কাচারি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় উজ্জ্বল ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য গুলি ছুঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। পরে সেখানে উজ্জ্বলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এভাবে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটছে বন্দুকযুদ্ধে। বিচারের আগেই লাশ হচ্ছে অপরাধী। এই মৃত্যু থামছে না কিছুতেই।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, রাষ্ট্রকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতে হবে। আইনের প্রতি আস্থা থাকলে, আইনানুগ বিচার হলে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড কমে যাবে। কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও কমে যাবে। মানুষ অপরাধ করতে ভয় পাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত আসামিকে নিরাপদে আদালতে সোপর্দ করা। তাকে সুরক্ষা দেয়া। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বিচার পাওয়া আসামির অধিকার। মনে রাখতে হবে, অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না। বরং আরেকটি অন্যায়ের জন্ম হয়। আমরা কোনোভাবেই ধর্ষণ, জঙ্গি তৎপরতা, সহিংসতা সমর্থন করি না। একইভাবে অপরাধীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাও সমর্থন করতে পারি না। স্বাধীন, সভ্য রাষ্ট্রে এটি চলতে পারে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
সুস্থ মানুষ। রিমান্ডে নেয়ার আগে কোর্টে কথাও বলেছি। কিন্তু রিমান্ড থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় সে আর সুস্থ নেই। কেঁদে কেঁদে বলেছে, ভাইরে আমারে অনেক টর্চার করছে। তারপর দিন সকালে খবর পেলাম সে আর নেই। তাকে ওরা রিমান্ডে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। কথাগুলো বলছিলেন রিমান্ড শেষে কারাগারে নিহত ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের স্বজন নিয়ামত। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ই মার্চ। তিন দিন রিমান্ডের পর কারাগারে মারা যান ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলন। রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকলেও এই ছাত্রনেতার মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। ২৩শে মার্চ রাজধানীর মিরপুরের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন হাসান। এই যুবক পীরেরবাগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ডিবি’র পরিদর্শক জালাল উদ্দিন হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি। পুলিশ জানিয়েছে, জালাল হত্যার আসামি হাসানকে গ্রেপ্তারের জন্য ওই এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে একজনকে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সম্প্রতি সমাজে উদ্বেগ দেখা দিয়েছি ধর্ষণ নিয়ে। একের পর এক ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। এক শ্রেণির লম্পটের লালসার শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোরীরা। গত ৩১শে মার্চ দিবাগত রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় র?্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ধর্ষণ মামলার আসামি রহিম উদ্দিন। তার আগে গত ২০শে ফেব্রুয়ারি চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে র?্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ধর্ষণ মামলার আরেক আসামি আনু মিয়া।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন উজ্জ্বল মিয়া নামে এক ব্যক্তি। রাতেই ময়মনসিংহের সাহেব কাচারি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত উজ্জ্বল পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি।
জানা গেছে, উজ্জ্বল রিকশা চালাতেন। এর মধ্যেই গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে যান তিনি। মাদকসেবী উজ্জ্বলের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে গৌরিপুর থানায় একটি জিডি করেছিলেন তার ছোট ভাই কাঞ্চন। গত ২৭শে মার্চ ওই জিডির তদন্ত করতে তাদের গৌরিপুরের জেলখানা রোডের বাড়িতে যান এসআই আসাদুজ্জামান। পুলিশ অভিযোগ করেছে, ওই সময়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এসআই আসাদুজ্জামানকে আঘাত করেন উজ্জ্বল। গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদুজ্জামানকে প্রথমে ময়মনসিংহে বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, উজ্জ্বল মিয়া পলাতক ছিলেন। তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সাহেব কাচারি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় উজ্জ্বল ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য গুলি ছুঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। পরে সেখানে উজ্জ্বলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এভাবে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটছে বন্দুকযুদ্ধে। বিচারের আগেই লাশ হচ্ছে অপরাধী। এই মৃত্যু থামছে না কিছুতেই।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, রাষ্ট্রকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতে হবে। আইনের প্রতি আস্থা থাকলে, আইনানুগ বিচার হলে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড কমে যাবে। কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও কমে যাবে। মানুষ অপরাধ করতে ভয় পাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত আসামিকে নিরাপদে আদালতে সোপর্দ করা। তাকে সুরক্ষা দেয়া। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বিচার পাওয়া আসামির অধিকার। মনে রাখতে হবে, অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না। বরং আরেকটি অন্যায়ের জন্ম হয়। আমরা কোনোভাবেই ধর্ষণ, জঙ্গি তৎপরতা, সহিংসতা সমর্থন করি না। একইভাবে অপরাধীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাও সমর্থন করতে পারি না। স্বাধীন, সভ্য রাষ্ট্রে এটি চলতে পারে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
No comments