মৃত্যুকূপ সীতাকুণ্ড শিপইয়ার্ড তিন মাসে নিহত ১২
সীতাকুণ্ডে
সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত জাহাজ ভাঙা শিল্পে তিন মাসে দুর্ঘটনায় ১২ শ্রমিক
নিহত ও আহত হয়েছে প্রায় ২৬ জন শ্রমিক। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে
বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, গত ৩ মাসে সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙা
শিল্পের (শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড) বিভিন্ন ইয়ার্ডে মোট ১২ শ্রমিক দুর্ঘটনায়
নিহত হয়েছে। তবে এসব মৃত্যুর ঘটনায় সীতাকুণ্ড মডেল থানায় সবগুলো অপমৃত্যু
মামলা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা যায়। বিভিন্ন সময়ে এঘটনায় আহত হয়েছে
প্রায় ২৬ জন ইয়ার্ড শ্রমিক। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। কারণ ইয়ার্ডে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই ইয়ার্ড
কর্তৃপক্ষ লাশ ও আহত শ্রমিকদের নিয়ে লুকোচুরি খেলা শুরু করে বলে পাহাড় সমান
অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ফায়ার
সার্ভিস ও থানাকে অবহিত না করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই অনেক সময় লুকোচুরিভাবে নিহত
শ্রমিকের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকদের ইয়ার্ডের ভিতরে প্রবেশে বাধা দেয়ায় তথ্য
সংগ্রহে বিলম্ব ঘটে। আবার অনেক সময় ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের নিকট শ্রমিক নিহতের
ঘটনায় বক্তব্য নিতে গেলে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে নিষেধ
করেন। স্থানীয় ও ইয়ার্ড শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানান, দেশের বিভিন্ন
অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষগুলো একটু সুখের আশায় জীবনের তাগিদে মৃত্যুঝুঁকি
নিয়ে সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙা শিল্পে কর্মে নিয়োজিত হয়। কিন্তু কোন
দুর্ঘটনার শিকার হলে হতদরিদ্র মানুষগুলো পায় না উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ। তারা
অভিযোগ করেন, সরকারি ছুটি ও রাতে কাজ করার নিষেধ থাকলেও প্রায় ইয়ার্ডেই
রাতে ও সরকারি ছুটির দিনে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করে। তাছাড়া
ইয়ার্ডগুলোতে নেই শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম। জাহাজ ভাঙা
শিল্পে দুর্ঘটনার বিষয় জানতে বিএসবিআরএ সভাপতি মো. আবু তাহেরকে ফোন করলে
তিনি কোন মন্তব্য না করে মিটিংয়ে আছেন বলে পরে ফোন করার কথা বলেই লাইন কেটে
দেন। এদিকে সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ইফতেখার হাসান পিপিএম বার
জানান, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে শ্রমিক নিহত হলে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হওয়ার
পর লেবার কোর্টের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়াও
অনেক ইয়ার্ড মালিক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে লাখ দুই লাখ টাকা আর্থিকভাবে
সাহায্য করেন। তবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি কোর্টে রিট হলেও এখনো
কার্যকর হয়নি বলে তিনি জানান।
No comments