ইয়াবাবিরোধী যুদ্ধে ব্যর্থ হচ্ছে বুলেট
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে গত জুন মাসে ক্ষমতায় বসেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। ক্ষমতায় এসেই তিনি মাদকের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু করেছেন। সেই যুদ্ধে মাত্র দুই মাসে ২ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া মাদকের বিরুদ্ধে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করেছে। দেশটি মাদক চোরাচালানের দায়ে কয়েকজনকে ফাঁসিও দিয়েছে। এশিয়ার আরও দুই দেশ থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে মাদকসেবীদেরও দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এশিয়াজুড়ে মেথইমফেটামাইন বা মেথ নামের সস্তা এবং ভয়াবহ নেশাদ্রব্যের রমরমা অবস্থা। এই মেথ দিয়েই ‘ইয়াবা’ নামের ওষুধটি তৈরি হয়। থাই ভাষায় এই নামটির অর্থ ‘উত্তেজক ওষুধ’। মাদকের করালগ্রাস থামাতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার নিরাময় পন্থায় না গিয়ে বুলেট ব্যবহারের মতো কঠোর পন্থা নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কঠোর পন্থা ভালোর চেয়ে মন্দই বয়ে আনবে। জিওফ মোনাহান লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে ৩০ বছর ধরে কাজ করেছেন। এরপর রাশিয়ায় এইচআইভি/এইডস বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাশিয়ার অতি কঠোর মাদক নীতির প্রভাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট দুতার্তে মাদকের বিরুদ্ধে যে কঠোর নীতি নিয়েছেন, এর ফলে সন্ত্রাসী তৎপরতা কেবল বাড়বেই।
মাদক চোরাচালানিদের বিশাল নেটওয়ার্কের মূলোৎপাটন করা সম্ভব হবে না।’ জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ-সংক্রান্ত দপ্তরের (ইউএনওডিসি) হিসাব অনুযায়ী, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০০৯ সালে ১১ টন মেথ উদ্ধার হয়। ২০১৩ সালে উদ্ধার হওয়া মেথের পরিমাণ ছিল ৪২ টন। ইউএনওডিসি বলছে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার নয়টি দেশে এই মেথ ‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগ সৃষ্টিকারী মাদক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এশিয়ার দেশগুলোর সরকারের অকার্যকর ব্যবস্থার কারণে এই মাদক ব্যবহারের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তাঁদের কথা, সরকারের মাদক নীতি কেবল কঠোরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর ফলে মাদক ব্যবহারকারীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তাতে মাদকের বিপুল ব্যবহার যেমন কমেনি, তেমনি মাদক ব্যবসার নেপথ্য নায়কদের ধরা সম্ভব হয়নি। ইউএনওডিসি বলেছে, শুধু ২০১৩ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মেথের ব্যবসার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ইউএনওডিসির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান জেরেমি ডগলাস বলেন, ‘আমি বলতে পারব না সর্বশেষ কখন কোনো বড় মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার কথা আমি শুনেছি।’
No comments