কেমন করছেন ট্রুডো?
কানাডার নাটকীয় নির্বাচনে দুই মাস আগে জয়ী হয়েছেন উদারপন্থী নেতা জাস্টিন ট্রুডো। পরাজিত করেছেন প্রায় এক দশক ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী ও রক্ষণশীল নেতা স্টিফেন হার্পারকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর ছেলে জাস্টিন ট্রুডো বিজয়ী ভাষণে কানাডাবাসীকে এক ‘রৌদ্রোজ্জ্বল পথ’ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এরই মধ্যে অফিসে ব্যস্ত ১০টি সপ্তাহ পার করেছেন জাস্টিন। এ কয়টা দিনে কেমন করলেন তিনি? এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করা হয় সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২১-এ হাজির হন ট্রুডো। ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে একটি কাঠামো দাঁড় করানোর অঙ্গীকার করেন তিনি। নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় মন্ত্রিসভার ১৫টি পদে নারীদের নিয়োগ করেছেন ট্রুডো। কেন এটা করেছেন, সে প্রশ্নে এক কথায় জবাব দেন, ‘এটা ২০১৫’। গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ার বাস্তুহারা মানুষের সহায়তায় হাত বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কানাডার এই নেতা। বলেছেন, ২৫ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে কানাডায় আশ্রয় দেওয়া হবে। গত বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ১৩ নভেম্বর প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এ সময় খানিকটা বাড়িয়ে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন চলা বিমান হামলা থেকে কানাডাকে এ বছরই সরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন ট্রুডো।
আরও অঙ্গীকার করেছেন কানাডায় প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ১ হাজার ২০০ নারীর নিখোঁজ হওয়া বা তাঁদের হত্যার ঘটনা পুনরায় তদন্ত শুরু করার। ট্রুডো বা তাঁর উদারপন্থী সরকার কানাডায় কেমন করছে—এ বিষয়ে দেশটির কয়েকজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মত এ রকম: শ্যাটেলাইন ম্যাগাজিনের এডিটর-এট-লার্জ র্যাচেল গাইজের কথায়, ‘এখন পর্যন্ত, বেশ ভালো। এটাও ঠিক, এখনো তাঁকে সত্যিকারের পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। এক বছর পর আমরা তাঁর ব্যাপারে মূল্যায়ন করতে পারব।’ র্যাচেল বলেন, ট্রুডোর মনোভাব স্টিফেন হার্পারের ‘কঠোর নিয়ন্ত্রিত’ মনোভাবের বিপরীত। প্রতীকী আচরণ ও ভাবমূর্তি সম্পর্কে ট্রুডোর ধারণা যথেষ্ট রয়েছে। কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সুবিধা আদায় করতে হয় সেটা জানেন তিনি। সম্ভবত এসব তিনি রপ্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দেখে। টক শোর উপস্থাপক ও বিশ্লেষক ইভান সলোমনের কথায়, ‘ট্রুডোর ঘোষিত কর্মসূচি কানাডায় কয়েক প্রজন্মের মধ্যে উচ্চাভিলাষী। এটা বাস্তবায়নে বিপুল রাজনৈতিক পুঁজিও সঞ্চয় করে রেখেছেন তিনি।’ তবে সলোমনের ধারণা, সবকিছু ছাপিয়ে আগামী দিনে ট্রুডোর সামনে সবচেয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে দেশের অর্থনীতি। ইতিমধ্যে নতুন সরকারের ওপর আস্থা নিয়ে এক জনমত জরিপ চালিয়েছে কানাডার ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন পাবলিক পলিসি। এক হাজার লোকের ওপর চালানো এ জরিপে দেখা গেছে, তাঁদের অধিকাংশই ট্রুডো সরকারের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। একই সঙ্গে ট্রুডোর ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও সন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা।
No comments