প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে আইনাঙ্গনে উদ্বেগ by গোলাম রব্বানী
‘নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের কাছ থেকে সব ক্ষমতা নিয়ে যেতে চাচ্ছে’- প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যে উদ্বিগ্ন আইনজীবী সমাজ। তারা বলছেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি যে বর্তমান সময়ে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য আমাদের সেই অবস্থানকেই সমর্থন করে।
গত ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে একটি বইমেলার উদ্বোধনকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের কাছ থেকে সব ক্ষমতা নিয়ে যেতে চাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, যখনই এ ধরনের কিছু হয়েছে, তখন আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু এখন বিচার বিভাগের দিকে আইনজীবী মহল, নির্বাহী বিভাগ, বিচারপ্রার্থী- সব দিক থেকে যদি আঘাত আসতে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগকে রক্ষা করবে কে?’
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আমরা এর আগে কখনো কোনো প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে শুনিনি। বিষয়টি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য শুভ নয়।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ সব সময় বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে খর্ব করতে চায়। কারণ, বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে চলে তাহলে তারা অন্যায়-অনিয়ম কম করতে পারে। তাদের এসব কাজে স্বাধীন বিচার বিভাগ অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা আছে। কিন্তু নিজস্ব সুবিধার কথা বিবেচনা করে কোনো রাজনৈতিক সরকারই বিচার বিভাগকে কখনো পৃথক করেনি। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে পৃথক করে। এর পর ধীরে ধীরে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা পাচ্ছিল। কিন্তু সে জন্য যে অবকাঠামো, জনবল ও বেতনভাতা দরকার সে ব্যাপারে সব সময় বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হচ্ছিল বিচার বিভাগ। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরও প্রশাসন বিভিন্ন অজুহাতে বিচারকদের বেতনভাতা বৃদ্ধির ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে। অথচ এরই মধ্যে নির্বাহী বিভাগের বেতনভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, বিচার বিভাগ অবহেলিত। এখনো দেশে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি ও পদায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয় করে থাকে। এসব করার কথা সুপ্রিম কোর্টের। কিন্তু সরকার এখানে জনবল দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে আইন মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব পাঠায় তাতে মতামত দেয়া আপিল বিভাগের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য প্রধান বিচারপতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিচার বিভাগ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল, তা খর্ব হতে পারে। আমরা আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির আশঙ্কাকে সমর্থন জানাই। এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি যে, বর্তমান সময়ে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য আমাদের সেই অবস্থানকেই সমর্থন করে। তিনি বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ দেশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ব্যাহত হলে আইনের শাসন যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা-ও থাকবে না। আইনজীবীদের এই নেতা আরো বলেন, আজ দেশে মানবাধিকার কোথায়? আইনের শাসন কোথায়? গণতন্ত্র কোথায়? বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া না হলে এসব কিছুই থাকবে না।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ যে বিচার বিভাগের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা করার চেষ্টা করছে, প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যই তার প্রমাণ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে আইনের শাসন ব্যাহত হবে, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা আইনজীবী সমাজ সব সময় সোচ্চার।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও বিশিষ্ট সংবিধান বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ বলেছেন, আমাদের সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ যতক্ষণ সংশোধন করা না হচ্ছে ততক্ষণ বিচার বিভাগের ওপর বিশেষত অধঃস্তন বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। বর্তমান সরকার যদিও ’৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের কথা বলে আসছে; কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর যখন পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হলো তখন দেখা গেল, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে জেলা জজদের কাছে হস্তান্তর বুঝায়। আসলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো- বিচারিক কাজে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি মঞ্জুর প্রভৃতি বিষয় এককভাবে সুপ্রিম কোর্ট নিয়ন্ত্রণ করবে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে যেন গুরুত্ব দেয়া হয়। সেটি নিশ্চিত করা অত্যাবশক।
গত ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে একটি বইমেলার উদ্বোধনকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের কাছ থেকে সব ক্ষমতা নিয়ে যেতে চাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, যখনই এ ধরনের কিছু হয়েছে, তখন আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু এখন বিচার বিভাগের দিকে আইনজীবী মহল, নির্বাহী বিভাগ, বিচারপ্রার্থী- সব দিক থেকে যদি আঘাত আসতে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগকে রক্ষা করবে কে?’
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আমরা এর আগে কখনো কোনো প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে শুনিনি। বিষয়টি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য শুভ নয়।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ সব সময় বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে খর্ব করতে চায়। কারণ, বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে চলে তাহলে তারা অন্যায়-অনিয়ম কম করতে পারে। তাদের এসব কাজে স্বাধীন বিচার বিভাগ অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা আছে। কিন্তু নিজস্ব সুবিধার কথা বিবেচনা করে কোনো রাজনৈতিক সরকারই বিচার বিভাগকে কখনো পৃথক করেনি। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে পৃথক করে। এর পর ধীরে ধীরে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা পাচ্ছিল। কিন্তু সে জন্য যে অবকাঠামো, জনবল ও বেতনভাতা দরকার সে ব্যাপারে সব সময় বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হচ্ছিল বিচার বিভাগ। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরও প্রশাসন বিভিন্ন অজুহাতে বিচারকদের বেতনভাতা বৃদ্ধির ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে। অথচ এরই মধ্যে নির্বাহী বিভাগের বেতনভাতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, বিচার বিভাগ অবহেলিত। এখনো দেশে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি ও পদায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয় করে থাকে। এসব করার কথা সুপ্রিম কোর্টের। কিন্তু সরকার এখানে জনবল দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে আইন মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব পাঠায় তাতে মতামত দেয়া আপিল বিভাগের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য প্রধান বিচারপতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিচার বিভাগ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল, তা খর্ব হতে পারে। আমরা আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির আশঙ্কাকে সমর্থন জানাই। এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি যে, বর্তমান সময়ে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য আমাদের সেই অবস্থানকেই সমর্থন করে। তিনি বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ দেশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ব্যাহত হলে আইনের শাসন যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা-ও থাকবে না। আইনজীবীদের এই নেতা আরো বলেন, আজ দেশে মানবাধিকার কোথায়? আইনের শাসন কোথায়? গণতন্ত্র কোথায়? বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া না হলে এসব কিছুই থাকবে না।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ যে বিচার বিভাগের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা করার চেষ্টা করছে, প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যই তার প্রমাণ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে আইনের শাসন ব্যাহত হবে, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা আইনজীবী সমাজ সব সময় সোচ্চার।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও বিশিষ্ট সংবিধান বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ বলেছেন, আমাদের সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ যতক্ষণ সংশোধন করা না হচ্ছে ততক্ষণ বিচার বিভাগের ওপর বিশেষত অধঃস্তন বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। বর্তমান সরকার যদিও ’৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের কথা বলে আসছে; কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর যখন পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হলো তখন দেখা গেল, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে জেলা জজদের কাছে হস্তান্তর বুঝায়। আসলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো- বিচারিক কাজে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি মঞ্জুর প্রভৃতি বিষয় এককভাবে সুপ্রিম কোর্ট নিয়ন্ত্রণ করবে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে যেন গুরুত্ব দেয়া হয়। সেটি নিশ্চিত করা অত্যাবশক।
No comments