বন্ধুতার শুরু, নাকি স্রেফ চমক? by অ্যালেন ব্যারি ও সালমান মাসুদ
ব্যাপারটা
শুরু হয়েছিল শুক্রবার সকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোনের
মধ্য দিয়ে। তিনি পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ফোন করে বললেন, শুভ
জন্মদিন।
আর তার চার ঘণ্টা পরে দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদি এক আকস্মিক সফরে পাকিস্তানের লাহোর শহরে পদার্পণ করলেন। ব্যাপারটা এত স্বল্প সময়ে ঘটেছে যে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইসলামাবাদ থেকে লাহোরে আসতেই পারেননি।
গত ১২ বছরে এটাই কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পাকিস্তান সফর। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পরমাণু অস্ত্রধর রাষ্ট্র। তাদের মধ্যকার উত্তেজনা মার্কিন নীতিপ্রণেতাদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বহুদিন আগেই। তাঁদের মনের ভয় হচ্ছে, দেশ দুটির মধ্যকার প্রক্সি যুদ্ধ যেকোনো সময়েই প্রকৃত যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ওদিকে মোদি আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন, যার মধ্যে সামরিক সহায়তার ব্যাপারটিও আছে। এ কারণে আবার পাকিস্তানি নেতারা ক্ষুব্ধও হতে পারেন।
এই সফরের মধ্য দিয়ে মোদি এক বার্তা দিলেন, সেটা হলো তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে দ্ব্যর্থক অবস্থান নিয়েছিলেন, সেটাতে পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ এখন তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিলনাত্মক অবস্থান নিয়েছেন, বিরোধাত্মক অবস্থান ত্যাগ করেছেন। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে মোদির প্রশাসন এই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। তারা সন্ত্রাসবাদ ও বাণিজ্য নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য রোডম্যাপ তৈরি করার কথা বলছে।
মোদি পাকিস্তানের ব্যাপারে মিশ্র বার্তা দিয়েছেন। তিনি গত বছর সবাইকে চমকে দিয়ে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজকে আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু এর তিন মাস পর পাকিস্তানি কূটনীতিকের কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার সঙ্গে বৈঠকের সূত্র ধরে তিনি দেশ দুটির উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা আচমকাই বাতিল করে দেন।
ভারতীয় এক সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ বারদারাজন বলেছেন, ‘মোদি একভাবে জানিয়ে দিলেন, ভবিষ্যতে তাঁর আর উল্টো মোড় নেওয়ার আশঙ্কা নেই। তিনি এবার নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ঢংয়ে কাজ শুরু করেছেন, ফলে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তাঁর জন্য আর সহজ হবে না।’
মোদির ওই দিনটা শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে, যেটা বানাতে ভারত নয় কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। এ ছাড়া তিনি আফগানিস্তানের কাছে তিনটি এমআই-২৫ হামলাকারী হেলিকপ্টার হস্তান্তর করেছেন, আর ‘আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর শহীদ পরিবারের সন্তানদের মধ্যে’ ৫০০ জনকে বৃত্তি দিয়েছেন। ফলে পাকিস্তান আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতির ব্যাপারে শঙ্কিত হতেই পারে। মোদি সেখানে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের বারতা নিয়ে গিয়েছিলেন।
মোদির এই সফরের কথা বাইরের লোক প্রথম জানতে পারে তাঁর টুইটার–বার্তা থেকে। তিনি একরকম রীতি-বিবর্জিতভাবে টুইটার বার্তায় লেখেন, ‘আজ দুপুরে লাহোরে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছি, দিল্লি যাওয়ার পথে আমি লাহোরে নামব।’
এরপর মোদি লাহোরের উপকণ্ঠে নওয়াজের ব্যক্তিগত বাসভবনে যান, ওখানে তখন নওয়াজের নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে দুই নেতা প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেন, তঁাদের মধ্যে তখন বেশ হৃদ্যতা লক্ষ করা গেছে। তঁারা দেশ দুটির মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করার অঙ্গীকারও করেন। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অশোক মালিক বলেছেন, মোদির এই আচমকা পাকিস্তান সফরের কারণ হচ্ছে পাকিস্তান নতুন একজনকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মালিক আরও বলেন, মোদি হয়তো সংবাদপত্রে আরও ‘ইতিবাচক শিরোনাম’ হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন।
মালিক বলেন, পশ্চিম ও সৌদি আরবের চাপের কারণে মোদি বুঝতে পেরেছেন, তাঁকে এমন ভাব দেখাতে হবে, যাতে মনে হয় তিনি আলোচনা শুরুর ব্যাপারে আগ্রহী। ওদিকে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত টি সি এ রাঘবন ইসলামাবাদ ত্যাগের আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন এমন পর্যায়ে আছে, যেখান থেকে আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটার সুযোগ আছে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, তিনি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চান। কিন্তু পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক চক্র নওয়াজের আগ্রহের ব্যাপারে সন্দিহান। কারণ, তারা মনে করে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারত মদদ দিচ্ছে। আর তারা কাশ্মীর-বিষয়ক দীর্ঘদিনের বিবাদও মিটিয়ে ফেলতে চায়।
পাকিস্তানের অধিকাংশ বিরোধী নেতাই মোদির এই আকস্মিক সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা আশা করেছেন, এর ফলে দেশদুটির মধ্যকার সম্পর্ক বেশ দ্রুতই উন্নত হবে। আবার অনেকেই বলেছেন, পাকিস্তানের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেডরিখ এস পারদি স্কুল অব গ্লোবাল স্টাডিজের ডিন আদিল নাজাম বলেছেন, এই সফরকে অতিমূল্যায়ন করলে বিপদ হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ, তবে ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। আর মিছে আশায় বুক বাঁধলে মানুষকে হতাশ হতে হয়।’
এর আগে শেষবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অটল বিহারি বাজপেয়ি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে ২০০৪ সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, সেবার তিনি তৎকালীন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আবার ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ি এক ঐতিহাসিক দ্বিপক্ষীয় সফরে পাকিস্তান গিয়েছিলেন, দুই দেশের মধ্যে বাস চলাচল শুরু হলে উদ্বোধনী বাসযাত্রায় তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তখন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের এক নেতা এই সফরকে ‘অঘোষিত, অভূতপূর্ব ও অরাষ্ট্রনায়কোচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
আর এবারও কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, ‘গত ৬৭ বছরে কোনো প্রধানমন্ত্রী এভাবে অন্য কোনো দেশে যাননি। তো মোদি কি পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ভেঙে দিতে পারবেন বা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় অংশগ্রহণকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন?’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কী আশ্বাস নিয়ে আসছেন। এই প্রক্রিয়া কি পাকিস্তানের প্রকৃত ক্ষমতা চক্র— আইএসআই ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনুমোদন করেছে? পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তারা কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইরত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিচ্ছে।
ইসলামাবাদের এক টক শো উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মঈন পীরজাদা বলেছেন, ‘পুতিনের সঙ্গে সাত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং আফগান গোয়েন্দা সংস্থাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মোদি পাকিস্তান সফর করে নিজের কঠোর ভাবমূর্তিকে একটু নরম করার চেষ্টা করলেন মাত্র।’ সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অস্ত্র চুক্তি ও আফগানিস্তানে মোদির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
অ্যালেন ব্যারি: মার্কিন সাংবাদিক।
সালমান মাসুদ: পাকিস্তানি সাংবাদিক।
আর তার চার ঘণ্টা পরে দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদি এক আকস্মিক সফরে পাকিস্তানের লাহোর শহরে পদার্পণ করলেন। ব্যাপারটা এত স্বল্প সময়ে ঘটেছে যে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইসলামাবাদ থেকে লাহোরে আসতেই পারেননি।
গত ১২ বছরে এটাই কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পাকিস্তান সফর। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পরমাণু অস্ত্রধর রাষ্ট্র। তাদের মধ্যকার উত্তেজনা মার্কিন নীতিপ্রণেতাদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বহুদিন আগেই। তাঁদের মনের ভয় হচ্ছে, দেশ দুটির মধ্যকার প্রক্সি যুদ্ধ যেকোনো সময়েই প্রকৃত যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ওদিকে মোদি আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন, যার মধ্যে সামরিক সহায়তার ব্যাপারটিও আছে। এ কারণে আবার পাকিস্তানি নেতারা ক্ষুব্ধও হতে পারেন।
এই সফরের মধ্য দিয়ে মোদি এক বার্তা দিলেন, সেটা হলো তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে দ্ব্যর্থক অবস্থান নিয়েছিলেন, সেটাতে পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ এখন তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিলনাত্মক অবস্থান নিয়েছেন, বিরোধাত্মক অবস্থান ত্যাগ করেছেন। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে মোদির প্রশাসন এই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। তারা সন্ত্রাসবাদ ও বাণিজ্য নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য রোডম্যাপ তৈরি করার কথা বলছে।
মোদি পাকিস্তানের ব্যাপারে মিশ্র বার্তা দিয়েছেন। তিনি গত বছর সবাইকে চমকে দিয়ে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজকে আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু এর তিন মাস পর পাকিস্তানি কূটনীতিকের কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার সঙ্গে বৈঠকের সূত্র ধরে তিনি দেশ দুটির উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা আচমকাই বাতিল করে দেন।
ভারতীয় এক সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ বারদারাজন বলেছেন, ‘মোদি একভাবে জানিয়ে দিলেন, ভবিষ্যতে তাঁর আর উল্টো মোড় নেওয়ার আশঙ্কা নেই। তিনি এবার নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ঢংয়ে কাজ শুরু করেছেন, ফলে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তাঁর জন্য আর সহজ হবে না।’
মোদির ওই দিনটা শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে, যেটা বানাতে ভারত নয় কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। এ ছাড়া তিনি আফগানিস্তানের কাছে তিনটি এমআই-২৫ হামলাকারী হেলিকপ্টার হস্তান্তর করেছেন, আর ‘আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর শহীদ পরিবারের সন্তানদের মধ্যে’ ৫০০ জনকে বৃত্তি দিয়েছেন। ফলে পাকিস্তান আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতির ব্যাপারে শঙ্কিত হতেই পারে। মোদি সেখানে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের বারতা নিয়ে গিয়েছিলেন।
মোদির এই সফরের কথা বাইরের লোক প্রথম জানতে পারে তাঁর টুইটার–বার্তা থেকে। তিনি একরকম রীতি-বিবর্জিতভাবে টুইটার বার্তায় লেখেন, ‘আজ দুপুরে লাহোরে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছি, দিল্লি যাওয়ার পথে আমি লাহোরে নামব।’
এরপর মোদি লাহোরের উপকণ্ঠে নওয়াজের ব্যক্তিগত বাসভবনে যান, ওখানে তখন নওয়াজের নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে দুই নেতা প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেন, তঁাদের মধ্যে তখন বেশ হৃদ্যতা লক্ষ করা গেছে। তঁারা দেশ দুটির মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করার অঙ্গীকারও করেন। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অশোক মালিক বলেছেন, মোদির এই আচমকা পাকিস্তান সফরের কারণ হচ্ছে পাকিস্তান নতুন একজনকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মালিক আরও বলেন, মোদি হয়তো সংবাদপত্রে আরও ‘ইতিবাচক শিরোনাম’ হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন।
মালিক বলেন, পশ্চিম ও সৌদি আরবের চাপের কারণে মোদি বুঝতে পেরেছেন, তাঁকে এমন ভাব দেখাতে হবে, যাতে মনে হয় তিনি আলোচনা শুরুর ব্যাপারে আগ্রহী। ওদিকে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত টি সি এ রাঘবন ইসলামাবাদ ত্যাগের আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন এমন পর্যায়ে আছে, যেখান থেকে আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটার সুযোগ আছে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, তিনি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চান। কিন্তু পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক চক্র নওয়াজের আগ্রহের ব্যাপারে সন্দিহান। কারণ, তারা মনে করে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারত মদদ দিচ্ছে। আর তারা কাশ্মীর-বিষয়ক দীর্ঘদিনের বিবাদও মিটিয়ে ফেলতে চায়।
পাকিস্তানের অধিকাংশ বিরোধী নেতাই মোদির এই আকস্মিক সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা আশা করেছেন, এর ফলে দেশদুটির মধ্যকার সম্পর্ক বেশ দ্রুতই উন্নত হবে। আবার অনেকেই বলেছেন, পাকিস্তানের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেডরিখ এস পারদি স্কুল অব গ্লোবাল স্টাডিজের ডিন আদিল নাজাম বলেছেন, এই সফরকে অতিমূল্যায়ন করলে বিপদ হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ, তবে ক্ষুদ্র পদক্ষেপ। আর মিছে আশায় বুক বাঁধলে মানুষকে হতাশ হতে হয়।’
এর আগে শেষবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অটল বিহারি বাজপেয়ি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে ২০০৪ সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, সেবার তিনি তৎকালীন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আবার ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ি এক ঐতিহাসিক দ্বিপক্ষীয় সফরে পাকিস্তান গিয়েছিলেন, দুই দেশের মধ্যে বাস চলাচল শুরু হলে উদ্বোধনী বাসযাত্রায় তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তখন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের এক নেতা এই সফরকে ‘অঘোষিত, অভূতপূর্ব ও অরাষ্ট্রনায়কোচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
আর এবারও কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, ‘গত ৬৭ বছরে কোনো প্রধানমন্ত্রী এভাবে অন্য কোনো দেশে যাননি। তো মোদি কি পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ভেঙে দিতে পারবেন বা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় অংশগ্রহণকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন?’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কী আশ্বাস নিয়ে আসছেন। এই প্রক্রিয়া কি পাকিস্তানের প্রকৃত ক্ষমতা চক্র— আইএসআই ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনুমোদন করেছে? পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তারা কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইরত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিচ্ছে।
ইসলামাবাদের এক টক শো উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মঈন পীরজাদা বলেছেন, ‘পুতিনের সঙ্গে সাত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং আফগান গোয়েন্দা সংস্থাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মোদি পাকিস্তান সফর করে নিজের কঠোর ভাবমূর্তিকে একটু নরম করার চেষ্টা করলেন মাত্র।’ সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অস্ত্র চুক্তি ও আফগানিস্তানে মোদির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
অ্যালেন ব্যারি: মার্কিন সাংবাদিক।
সালমান মাসুদ: পাকিস্তানি সাংবাদিক।
No comments