আইন সংস্কারের সুপারিশ বিবেচনায় নিন
একটি গবেষণার ভিত্তিতে ভূমিসংক্রান্ত আইনি সমস্যার সমাধানে যেসব সুপারিশ পাওয়া গেছে, তা অবিলম্বে সরকারি মনোযোগের দাবি রাখে। জমি নিয়ে একটি মামলার বিরোধ নিষ্পত্তিতে বর্তমানে গড়ে প্রায় সাড়ে নয় বছর সময় লাগে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের নেতৃত্বে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ ১১টি বেসরকারি সংস্থা চার বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণার পর ভূমিসংক্রান্ত ১৪৬টি আইন বিশ্লেষণ করে যথার্থই বলেছে যে এসব আইন না পাল্টাতে পারলে দরিদ্র, প্রান্তিক ও নারীর ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা কখনোই সম্ভব হবে না। ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে দেশের অধস্তন আদালতে যে ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন, তার অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে ভূমিবিরোধের সঙ্গে জড়িত। ২০১২ সালে পরিচালিত টিআইবি জরিপে উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল, দেশের শতকরা ৫৪ দশমিক ৮ ভাগ গৃহস্থ উৎকোচের বিনিময়ে ভূমিসেবা গ্রহণ করেছেন। ১২ মাসে তঁাদের দেওয়া ঘুষের পরিমাণ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি।
তাই বেসরকারিভাবে হলেও ভূমি সমস্যা নিরসনে এই গবেষণালব্ধ ফলাফলকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। অনেক সময় বেসরকারি সংস্থার সুপারিশকে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দেওয়া আমাদের আমলাতান্ত্রিক জনপ্রশাসনের একটি বৈশিষ্ট্য। আমরা আশা করব, এই গবেষণা ও এর সুপারিশগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং তা প্রথাগত আমলাতান্ত্রিক নিস্পৃহতার মধ্যে পড়বে না। বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পক্ষে ভূমিসংক্রান্ত বিরোধের ভার বহন করা অসম্ভবের পর্যায়ে চলে গেছে। এ সমস্যা জনপ্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গ্রাম আদালত ও সার্বিকভাবে সমগ্র বিচার বিভাগকে ন্যুব্জ করে ফেলছে। সেমিনারে ভূমিমন্ত্রী এই সমস্যার জন্য সামরিক শাসকদেরই শুধু দায়ী করেছেন। কিন্তু একে আর বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। সামাজিক সংহতি বিনষ্ট, সহিংসতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ভূমি বিরাট ভূমিকা রাখছে। গবেষণার ভিত্তিতে করা সুপারিশমালা অবিলম্বে বিচার-বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করা হোক।
No comments