বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থমন্ত্রীকে
বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছেন পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অন্যথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদ্ভূত পরিস্থিতির
দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। গতকাল
বিকেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে এ
দাবি করা হয়।
এ দিকে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্পর্কে দেয়া অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা এবং ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান। তারা বলেন, সপ্তম বেতনকাঠামোতে সচিবদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ গ্রেড-১-এ। শুধু মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব গ্রেড-১-এ থাকলেও একটি অতিরিক্ত ভাতা পেতেন।
তারা আরো বলেন, সদ্য ঘোষিত অষ্টম বেতন স্কেলে গ্রেড-১-এর ওপরে আরো দু’টি বিশেষ ধাপ থাকায় এবং সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় অধ্যাপকেরা আর কোনো দিনই গ্রেড-১ প্রাপ্ত হবেন না। প্রকারান্তরে শিক্ষকদের চার ধাপ অবনমন করা হয়েছে। ঘোষিত বেতনকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনোটিই গ্রহণ করা হয়নি, এমনকি দাবি পূরণের বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়নি।
শিক্ষক নেতৃদ্বয় বলেন, অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে শিক্ষকদের বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের সম্পর্কে আরো কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যা শুধু অনভিপ্রেতই নয় অসংলগ্নও বটে। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে অন্যান্যের ক্ষেত্রেও অযাচিত, বিরূপ ও হাস্যকর মন্তব্য করে বর্তমান সরকারের ইমেজ ক্ষুণœ করেছেন। অতীতে তিনি স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং এখনো তার স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি বিধায় তিনি এ রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন।
তারা বলেন, শিক্ষকদের সম্পর্কে তার এহেন মন্তব্য বাংলাদেশের শিক্ষা পরিবারের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এই অবস্থায় তারা অর্থমন্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। অন্যথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
নেতৃদ্বয় প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা ও মর্যাদাগত বৈষম্যের বিষয়টি নিরসনে প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং তাদের সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা করে অনতিবিলম্বে ঈপ্সিত সব দাবিদাওয়া পূরণ করবে। অন্যথায় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে লাগাতার কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়ে দেন।
অন্য দিকে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষকেরা মন্ত্রীর বক্তব্যের পর দাবি আদায় হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সেখানে এক সাক্ষাৎকারে নয়া দিগন্তকে বলেন, অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তার কাছ থেকে এ ধরনের অসংলগ্ন বক্তব্য প্রত্যাশা করিনি। তিনি বলেন, আমরা আশা করি অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্য তুলে নেবেন।
দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বক্তব্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, তিনি যদি থাকেন আমাদের ভয় দাবি আদায় না-ও হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভায় বসে তাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলেও এ সময় তিনি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
মাস্টার্সের ছাত্র অর্ণব ঘোষ নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর। অর্থমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য অনাকাক্সিক্ষত। এখনই তিনি যদি সংযত না হন তাহলে সরকার এবং তার নিজের জন্যও বিষয়টি বিব্রতকর হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিকদের পূর্বঘোষিত চার দফা দাবি হলো : অবিলম্বে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং এ জন্য বেতন কমিশন গঠন, সব বৈষম্য দূরীকরণপূর্বক সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতনভাতা সিনিয়র সচিবের সমতুল্য করা এবং অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতনকাঠামো ক্রমানুসারে নির্ধারণ করা, রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত করা এবং প্রযোজ্য েেত্র সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা শিকদের েেত্রও নিশ্চিত করা।
অর্থমন্ত্রীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান ঢাবি শিক্ষক সমিতির
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল রাতে শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদের এক জরুরি সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব ও পদোন্নতির কোনো নীতিমালা নেই’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এ রকম অবিবেচনাপ্রসূত ও অসংলগ্ন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
আরো জানানো হয়, মন্ত্রী হিসেবে নেয়া শপথে তিনি বলেছিলেন, ‘অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি কোনো আচরণ করবেন না।’ অথচ তার বর্ণনা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী হিসেবে নেয়া তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে শিক্ষকেরা মনে করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মন্ত্রী হিসেবে থাকার সব নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছেন। তাই শিক্ষকেরা তাকে অবিলম্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাবি সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা কর্মবিরতির পালন করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে জাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাহী কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকেরা দুই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন।
জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ফলে কোনো বিভাগেই কাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
অনেক শিক্ষার্থীই সকালে কাস করতে এসে ফিরে যান।
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন সকাল সাড়ে ৮টায় নতুন কলা ভবনে কাস করতে এস জানতে পারেন ‘কোনো কাস হবে না’। তিনি বলেন, ‘আজ চারটি কাস হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু একটিও হবে না।’
‘বছর শেষ হতে যাচ্ছে; কিন্তু আমাদের মাত্র ৪০ শতাংশ কাস হয়েছে। এখন এভাবে কাস না হলে নিশ্চত সেশনজটে পড়ব’Ñ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
জানা যায়, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কাস হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড-৩-এ রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, সচিবদের রাখা হয়েছে গেড-১-এ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা আন্দোলনে নামেন।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে রাবি শিক্ষকদের মানববন্ধন
রাবি সংবাদদাতা জানান, মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বেলা ১১টায় সিনেট ভবনের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মহা: রেজাউল করিমের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বেতন কাঠামোর বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকদের জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এই ন্যায্য আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, তা রীতিমতো শিষ্টাচারবহির্ভূত।
এ সময় মানববন্ধনে রাবির সাবেক প্রভিসি প্রফেসর নুরুল্লাহ, ইবির সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার পান্ডে, প্রফেসর ড. এনামুল হক, প্রফেসর শাতিল সিরাজসহ দুই শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং র্যালি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। প্রশাসনিক ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো: আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসীর সঞ্চালনায় ওই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. অরুণ কুমার দেব, প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিু, প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্রফেসর ড. সেলিনা আকতার, প্রফেসর ড. ইকবাল শাহীন খান, প্রফেসর মো: জাকির হোসেন, এ কে এম তফজল হক, এ বি এম আবু নোমান, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে কাস-পরীক্ষা বর্জন করে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান সাক্ষরিত বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এ সময় তারা কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ জানাবেন।
বলা হয়, ‘অর্থমন্ত্রীকে অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। অন্যথায় তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য কাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে। শিক্ষক সমিতির এক জরুরি সাধারণ সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ দিকে গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে নিন্দা প্রকাশ করেছে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি।
জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় বেতন কাঠামো অনুমোদিত হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের হঠকারী বক্তব্যের আলোকে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যায়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সাধারণ সভার আয়োজন করে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবালের সঞ্চালনায় ওই সভায় গতকাল বেলা দেড়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের কাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জরুরি ওই সভায় ১৩২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরে কোনো ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’
টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো পতাকা উত্তোলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএসআরএম বিভাগের প্রফেসর ও ডিন ও প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স অনুষদের ডিন ও প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. মতিউর রহমান, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. পিনাকী দে, অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরজাহান খাতুন, সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাদিফুর রহমান, বিজিই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আশরাফ হোসাইন তালুকদার ও প্রভাষক আলী নেওয়াজ বাহার প্রমুখ।
পাবনা সংবাদদাতা জানান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। বেলা ১১টায় কাসবর্জন করে কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন শিক্ষকেরা। এ সময় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আওয়াল কবির জয়, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ প্রমুখ।
এ দিকে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্পর্কে দেয়া অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা এবং ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান। তারা বলেন, সপ্তম বেতনকাঠামোতে সচিবদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ গ্রেড-১-এ। শুধু মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব গ্রেড-১-এ থাকলেও একটি অতিরিক্ত ভাতা পেতেন।
তারা আরো বলেন, সদ্য ঘোষিত অষ্টম বেতন স্কেলে গ্রেড-১-এর ওপরে আরো দু’টি বিশেষ ধাপ থাকায় এবং সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় অধ্যাপকেরা আর কোনো দিনই গ্রেড-১ প্রাপ্ত হবেন না। প্রকারান্তরে শিক্ষকদের চার ধাপ অবনমন করা হয়েছে। ঘোষিত বেতনকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনোটিই গ্রহণ করা হয়নি, এমনকি দাবি পূরণের বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়নি।
শিক্ষক নেতৃদ্বয় বলেন, অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে শিক্ষকদের বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের সম্পর্কে আরো কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যা শুধু অনভিপ্রেতই নয় অসংলগ্নও বটে। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে অন্যান্যের ক্ষেত্রেও অযাচিত, বিরূপ ও হাস্যকর মন্তব্য করে বর্তমান সরকারের ইমেজ ক্ষুণœ করেছেন। অতীতে তিনি স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং এখনো তার স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি বিধায় তিনি এ রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন।
তারা বলেন, শিক্ষকদের সম্পর্কে তার এহেন মন্তব্য বাংলাদেশের শিক্ষা পরিবারের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এই অবস্থায় তারা অর্থমন্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। অন্যথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
নেতৃদ্বয় প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা ও মর্যাদাগত বৈষম্যের বিষয়টি নিরসনে প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং তাদের সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা করে অনতিবিলম্বে ঈপ্সিত সব দাবিদাওয়া পূরণ করবে। অন্যথায় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে লাগাতার কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়ে দেন।
অন্য দিকে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষকেরা মন্ত্রীর বক্তব্যের পর দাবি আদায় হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সেখানে এক সাক্ষাৎকারে নয়া দিগন্তকে বলেন, অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তার কাছ থেকে এ ধরনের অসংলগ্ন বক্তব্য প্রত্যাশা করিনি। তিনি বলেন, আমরা আশা করি অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্য তুলে নেবেন।
দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বক্তব্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, তিনি যদি থাকেন আমাদের ভয় দাবি আদায় না-ও হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভায় বসে তাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলেও এ সময় তিনি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
মাস্টার্সের ছাত্র অর্ণব ঘোষ নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর। অর্থমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য অনাকাক্সিক্ষত। এখনই তিনি যদি সংযত না হন তাহলে সরকার এবং তার নিজের জন্যও বিষয়টি বিব্রতকর হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিকদের পূর্বঘোষিত চার দফা দাবি হলো : অবিলম্বে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং এ জন্য বেতন কমিশন গঠন, সব বৈষম্য দূরীকরণপূর্বক সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতনভাতা সিনিয়র সচিবের সমতুল্য করা এবং অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতনকাঠামো ক্রমানুসারে নির্ধারণ করা, রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত করা এবং প্রযোজ্য েেত্র সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা শিকদের েেত্রও নিশ্চিত করা।
অর্থমন্ত্রীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান ঢাবি শিক্ষক সমিতির
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল রাতে শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদের এক জরুরি সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব ও পদোন্নতির কোনো নীতিমালা নেই’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এ রকম অবিবেচনাপ্রসূত ও অসংলগ্ন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
আরো জানানো হয়, মন্ত্রী হিসেবে নেয়া শপথে তিনি বলেছিলেন, ‘অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি কোনো আচরণ করবেন না।’ অথচ তার বর্ণনা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মন্ত্রী হিসেবে নেয়া তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে শিক্ষকেরা মনে করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মন্ত্রী হিসেবে থাকার সব নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছেন। তাই শিক্ষকেরা তাকে অবিলম্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাবি সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা কর্মবিরতির পালন করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে জাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাহী কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকেরা দুই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন।
জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ফলে কোনো বিভাগেই কাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
অনেক শিক্ষার্থীই সকালে কাস করতে এসে ফিরে যান।
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন সকাল সাড়ে ৮টায় নতুন কলা ভবনে কাস করতে এস জানতে পারেন ‘কোনো কাস হবে না’। তিনি বলেন, ‘আজ চারটি কাস হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু একটিও হবে না।’
‘বছর শেষ হতে যাচ্ছে; কিন্তু আমাদের মাত্র ৪০ শতাংশ কাস হয়েছে। এখন এভাবে কাস না হলে নিশ্চত সেশনজটে পড়ব’Ñ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
জানা যায়, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কাস হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড-৩-এ রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, সচিবদের রাখা হয়েছে গেড-১-এ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা আন্দোলনে নামেন।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে রাবি শিক্ষকদের মানববন্ধন
রাবি সংবাদদাতা জানান, মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বেলা ১১টায় সিনেট ভবনের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মহা: রেজাউল করিমের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বেতন কাঠামোর বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকদের জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এই ন্যায্য আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, তা রীতিমতো শিষ্টাচারবহির্ভূত।
এ সময় মানববন্ধনে রাবির সাবেক প্রভিসি প্রফেসর নুরুল্লাহ, ইবির সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার পান্ডে, প্রফেসর ড. এনামুল হক, প্রফেসর শাতিল সিরাজসহ দুই শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং র্যালি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। প্রশাসনিক ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো: আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসীর সঞ্চালনায় ওই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. অরুণ কুমার দেব, প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিু, প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্রফেসর ড. সেলিনা আকতার, প্রফেসর ড. ইকবাল শাহীন খান, প্রফেসর মো: জাকির হোসেন, এ কে এম তফজল হক, এ বি এম আবু নোমান, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে কাস-পরীক্ষা বর্জন করে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান সাক্ষরিত বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এ সময় তারা কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ জানাবেন।
বলা হয়, ‘অর্থমন্ত্রীকে অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। অন্যথায় তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য কাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে। শিক্ষক সমিতির এক জরুরি সাধারণ সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ দিকে গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে নিন্দা প্রকাশ করেছে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি।
জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় বেতন কাঠামো অনুমোদিত হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের হঠকারী বক্তব্যের আলোকে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যায়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সাধারণ সভার আয়োজন করে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবালের সঞ্চালনায় ওই সভায় গতকাল বেলা দেড়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের কাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জরুরি ওই সভায় ১৩২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরে কোনো ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’
টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো পতাকা উত্তোলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএসআরএম বিভাগের প্রফেসর ও ডিন ও প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স অনুষদের ডিন ও প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. মতিউর রহমান, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. পিনাকী দে, অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরজাহান খাতুন, সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাদিফুর রহমান, বিজিই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আশরাফ হোসাইন তালুকদার ও প্রভাষক আলী নেওয়াজ বাহার প্রমুখ।
পাবনা সংবাদদাতা জানান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। বেলা ১১টায় কাসবর্জন করে কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন শিক্ষকেরা। এ সময় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আওয়াল কবির জয়, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ প্রমুখ।
No comments