সব সুখ সুখ নয় by ড. আব্দুস সাত্তার
‘সুখ’ কী তা সবাই জানেন। আর এ জন্য সবাই সুখী হতে চান। কিন্তু সবার ভাগ্যে সুখ আসে না। আবার যাদের ভাগ্যে সুখ আসে, তাদের অনেকেই সুখী হন না। কারণ তারা সুখ পেলেও সুখ ভোগ করতে পারেন না। ফলে তারা হন অসুখী। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন থাকেন যারা, অর্থাৎ যারা রাষ্ট্রপতি তারাও কখনো কখনো অসুখী হওয়ার কথা বলেন। আমাদের দেশের দু’জন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এরূপ অসুখী হওয়ার কথা জানা গেছে। ২০০৬ সালের কথা। বঙ্গভবনের শতবর্ষ (১৯০৫-২০০৫) উপলক্ষে গ্রন্থ রচনার কাজ চলছে। সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। এতে যুক্ত ছিলেন দেশের বিজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিদের অনেকে। আমিও যুক্ত ছিলাম বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ পণ্ডিতদের সাথে। আমার ওপর দায়িত্ব ছিল বঙ্গভবনের ‘অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও অলঙ্করণ বিষয়ে লেখার। এ প্রয়োজনে বঙ্গভবনের অভ্যন্তরে প্রায় সব অংশের কক্ষ এবং গলিপথগুলো বহুবার পরিদর্শন করতে হয়েছে। কয়েক মাস ধরে চলে এ কার্যক্রম। ফলে বহুবার বঙ্গভবনে প্রবেশ করতে হয়েছে আমাদের। বসতে হয়েছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সাথে। কাজের অগ্রগতি বিষয়ে অবহিত করতে হয়েছে তাকে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। সেই সুবাদে তার সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে তার সাথে কাজ করেছি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি এবং ইয়াজউদ্দিন স্যার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা করেছি। কখনো তিনি আমার আগে সভায় উপস্থিত হলে অস্বস্তিবোধ করতেন। আমি সভায় উপস্থিত হলে তিনি যেন প্রাণ ফিরে পেতেন। আমাকে দেখেই স্বভাবসুলভভাবে সরলতার হাসি দিয়ে বলে উঠতেনÑ ‘সাত্তার আসছ? আসো, বসো।’ তার পাশে বসলেই স্বস্তি পেতেন। সেই সরলপ্রাণ প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন বিএনপি জোট সরকারের আমলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেলে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমার মতো অনেকেই তার সান্নিধ্যলাভে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের একপর্যায়ে অর্থাৎ বঙ্গভবনের শতবর্ষ উপলক্ষে গ্রন্থ রচনার সময় আমিসহ কয়েকজন তার সান্নিধ্যলাভের সুযোগ পেয়েছিলাম। সে কথা আগেই উল্লেখ করেছি। গ্রন্থবিষয়ক আলাপ-আলোচনার মধ্যে অন্যদের থেকে একটু আলাদা হলেই তিনি আমার সাথে কথা বলতেন। একবার আওয়ামী লীগপন্থীদের কোনো সমাবেশে আমার মতো গোঁফ ও ঝাঁকড়া চুলওয়ালা কাউকে দেখে তিনি ভেবেছিলেন ওই লোকটি আমি। তিনি বললেন, ওই রকম একজনকে দেখে ভাবলাম, ‘তুমি সেখানে ক্যামনে গেলা। পরে ভালো করে দেখলাম তুমি না।’
আমরা যারা গ্রন্থ রচনার কাজে যুক্ত ছিলাম তারা সবাই মিলে এক দিন বঙ্গভবনের দরবার হলসংলগ্ন বিশাল করিডোরে হাঁটছিলাম। আমি ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি পাশাপাশি হাঁটছি। হঠাৎ তিনি একজনের নাম উচ্চারণ করে বললেন তিনি কি তোমার চেয়ে সিনিয়র? বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন তোমাদের উপাচার্য অমুকের সুপারিশে তাকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করতে সাহায্য করেছি। আমি শুধু তার কথাগুলো শুনলাম। এ বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। তবে এর পর থেকে দীর্ঘ দিন ভেবেছি, এখনো মাঝে মাঝে ভাবিÑ রাষ্ট্রপতি কেন আমার কাছে জানতে চাইলেন যাকে মহাপরিচালক বানানো হয়েছে, তিনি আমার চেয়ে সিনিয়র কি না। পরে অন্যদের কাছ থেকে জেনেছি, যে উপাচার্য সুপারিশ করেছিলেন তিনি নাকি রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, ‘যার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে, তিনি বিএনপির একনিষ্ঠ সেবক। তিনি জাদুঘরের মাহপরিচালকের জন্য অত্যন্ত যোগ্য প্রার্থী। তখন নাকি রাষ্ট্রপতি আমার নামটি উচ্চারণ করেছিলেন। ফলে ওই উপাচার্য রাষ্ট্রপতিকে বুঝিয়েছিলেন, যার জন্য সুপারিশ করছেন, তিনি আমার চেয়ে সিনিয়র।
মহা বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ওই উপাচার্য মহোদয় সুপারিশ করে যাকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করেছিলেন তিনি কট্টর বিএনপিবিদ্বেষী! তিনি ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে দেশের অবস্থা কতটা সঙ্কটাপন্ন হবে সে বিষয়ে জাতিকে জানান দিতে নোংরা কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। তিনি যে বিএনপিবিদ্বেষী, তার আরো প্রমাণ রয়েছে। তিনি জাদুঘরের মহাপরিচালক হওয়ার পর জাদুঘর প্রযতœ বোর্ডের সব বিএনপিপন্থী সদস্যকে বাদ দিয়ে বিএনপিবিদ্বেষী ও কট্টর আওয়ামীপন্থীদের সদস্য করেছিলেন। উল্লেখ্য, যে উপাচার্য তাকে মহাপরিচালক করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছিলেন, সেই উপাচার্য তখন জাদুঘর প্রযতœ বোর্ডের চেয়ারম্যান। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, উভয়েই যোগসাজশে বিএনপিবিরোধীদের জাদুঘরের সদস্য করেছিলেন! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এই বিএনপিবিরোধীদের সমন্বয়ে গঠিত প্রযতœ বোর্ডের কমিটিকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। জাদুঘরের সেই মহাপরিচালক পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বিএনপির বিরোধিতা করেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল কাগজ পত্রিকায় তার দীর্ঘ বিবৃতির এক স্থানে বলেছেনÑ ‘সর্বস্তরে দলীয়করণের যে মহোৎসবে বিএনপি অবতীর্ণ হয়েছিল, এই ধারায় কামাল লোহানীর মতো বিদগ্ধ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অপসারণ করে মোবারককে মহাপরিচালকের পদে আসীন করা হয়।... জাতীয়তাবাদী সরকারের এই দোসরকে আজই সরিয়ে যথার্থ লোককে এই প্রতিষ্ঠানে (শিল্পকলা একাডেমি) বসানো হোক’। এখানেই শেষ নয়, আওয়ামী লীগের শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সাথে মঞ্চে বসে তিনি যে আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক, সেটি প্রমাণ করেছেন। এত সব স্পষ্ট তথ্য ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরলপ্রাণ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বিভ্রান্ত করে বিএনপিবিদ্বেষীকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করা হয়েছিল।
প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়ে খুশি হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি যে কঠোর নিয়মের মধ্য থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন, সে বিষয়টি তার নানা কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
এক দিন তিনি বললেন, নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকার কারণে নিজেকে বড্ড পরাধীন মনে হয়। মনে হয়, আমি সোনার খাঁচায় বন্দী। কয়েক দিন ধরে ইচ্ছে হচ্ছে, নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারে গিয়ে কচুর লতি কিনে আনি। কিন্তু যেতে পারি না। নিজে বাজার করার অভ্যাস। অথচ এখন এটা সম্ভব হচ্ছে না। এত দিন তোমাদের সঙ্গ পেতাম। এখন পাই না। এসব কারণে নিজেকে বন্দী মনে হয়। মনে হয়, আমি বঙ্গভবনের চার দেয়ালের মধ্যে কয়েদি। কত সরল হলে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও খোলা মনে এমন কথা বলতে পারেন প্রিয় পাঠক নিশ্চয়ই সে বিষয়ে অনুমান করতে পারছেন। অথচ তার সীমাহীন সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত করে শেষ জীবনে তাকে মহা সঙ্কটে ফেলে দিয়েছিলেন। ফলে তাকে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে হাবুডুবু খেতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে, তিনি তার সরলতার খেসারত দিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি আওয়ামী জোট সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গভবনের খাঁচায় আমি বন্দী। তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মতোই আক্ষেপ করে বলেছেনÑ ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমার পক্ষে এখন আর আগের মতো মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা বলা সম্ভব হয় না।... বঙ্গভবনে ভালোভাবেই থাকা-খাওয়া করছি। কিন্তু আমাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। বঙ্গভবনের খাঁচায় আমি বন্দী, এটাই হলো বড় দুঃখ (নয়া দিগন্ত, ১৮-৯-১৪)।
মানুষ সুখের জন্য কত কিছুই না করে। সুখ পায়ও। কিন্তু সবার সব সুখ সয় না। সুখ অসুখে কিংবা দুঃখে পরিণত হয়। যেমনটি দুই মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে হয়েছে বলে জানা গেল। আর এটা জানার পর মনে হলোÑ সব সুখ সুখ নয়। অথচ ফুটপাথে খোলা আকাশের নিচে নিঃস্ব মানুষেরা কত সুখেই না ঘুমায়। কত স্বাধীন তারা। কোথাও যেতে, কারো সাথে কথা বলতে কোনো বাধা নেই তাদের।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। সেই সুবাদে তার সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে তার সাথে কাজ করেছি। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি এবং ইয়াজউদ্দিন স্যার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা করেছি। কখনো তিনি আমার আগে সভায় উপস্থিত হলে অস্বস্তিবোধ করতেন। আমি সভায় উপস্থিত হলে তিনি যেন প্রাণ ফিরে পেতেন। আমাকে দেখেই স্বভাবসুলভভাবে সরলতার হাসি দিয়ে বলে উঠতেনÑ ‘সাত্তার আসছ? আসো, বসো।’ তার পাশে বসলেই স্বস্তি পেতেন। সেই সরলপ্রাণ প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন বিএনপি জোট সরকারের আমলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেলে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমার মতো অনেকেই তার সান্নিধ্যলাভে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের একপর্যায়ে অর্থাৎ বঙ্গভবনের শতবর্ষ উপলক্ষে গ্রন্থ রচনার সময় আমিসহ কয়েকজন তার সান্নিধ্যলাভের সুযোগ পেয়েছিলাম। সে কথা আগেই উল্লেখ করেছি। গ্রন্থবিষয়ক আলাপ-আলোচনার মধ্যে অন্যদের থেকে একটু আলাদা হলেই তিনি আমার সাথে কথা বলতেন। একবার আওয়ামী লীগপন্থীদের কোনো সমাবেশে আমার মতো গোঁফ ও ঝাঁকড়া চুলওয়ালা কাউকে দেখে তিনি ভেবেছিলেন ওই লোকটি আমি। তিনি বললেন, ওই রকম একজনকে দেখে ভাবলাম, ‘তুমি সেখানে ক্যামনে গেলা। পরে ভালো করে দেখলাম তুমি না।’
আমরা যারা গ্রন্থ রচনার কাজে যুক্ত ছিলাম তারা সবাই মিলে এক দিন বঙ্গভবনের দরবার হলসংলগ্ন বিশাল করিডোরে হাঁটছিলাম। আমি ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি পাশাপাশি হাঁটছি। হঠাৎ তিনি একজনের নাম উচ্চারণ করে বললেন তিনি কি তোমার চেয়ে সিনিয়র? বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন তোমাদের উপাচার্য অমুকের সুপারিশে তাকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করতে সাহায্য করেছি। আমি শুধু তার কথাগুলো শুনলাম। এ বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। তবে এর পর থেকে দীর্ঘ দিন ভেবেছি, এখনো মাঝে মাঝে ভাবিÑ রাষ্ট্রপতি কেন আমার কাছে জানতে চাইলেন যাকে মহাপরিচালক বানানো হয়েছে, তিনি আমার চেয়ে সিনিয়র কি না। পরে অন্যদের কাছ থেকে জেনেছি, যে উপাচার্য সুপারিশ করেছিলেন তিনি নাকি রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, ‘যার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে, তিনি বিএনপির একনিষ্ঠ সেবক। তিনি জাদুঘরের মাহপরিচালকের জন্য অত্যন্ত যোগ্য প্রার্থী। তখন নাকি রাষ্ট্রপতি আমার নামটি উচ্চারণ করেছিলেন। ফলে ওই উপাচার্য রাষ্ট্রপতিকে বুঝিয়েছিলেন, যার জন্য সুপারিশ করছেন, তিনি আমার চেয়ে সিনিয়র।
মহা বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ওই উপাচার্য মহোদয় সুপারিশ করে যাকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করেছিলেন তিনি কট্টর বিএনপিবিদ্বেষী! তিনি ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে দেশের অবস্থা কতটা সঙ্কটাপন্ন হবে সে বিষয়ে জাতিকে জানান দিতে নোংরা কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। তিনি যে বিএনপিবিদ্বেষী, তার আরো প্রমাণ রয়েছে। তিনি জাদুঘরের মহাপরিচালক হওয়ার পর জাদুঘর প্রযতœ বোর্ডের সব বিএনপিপন্থী সদস্যকে বাদ দিয়ে বিএনপিবিদ্বেষী ও কট্টর আওয়ামীপন্থীদের সদস্য করেছিলেন। উল্লেখ্য, যে উপাচার্য তাকে মহাপরিচালক করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছিলেন, সেই উপাচার্য তখন জাদুঘর প্রযতœ বোর্ডের চেয়ারম্যান। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, উভয়েই যোগসাজশে বিএনপিবিরোধীদের জাদুঘরের সদস্য করেছিলেন! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এই বিএনপিবিরোধীদের সমন্বয়ে গঠিত প্রযতœ বোর্ডের কমিটিকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। জাদুঘরের সেই মহাপরিচালক পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বিএনপির বিরোধিতা করেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল কাগজ পত্রিকায় তার দীর্ঘ বিবৃতির এক স্থানে বলেছেনÑ ‘সর্বস্তরে দলীয়করণের যে মহোৎসবে বিএনপি অবতীর্ণ হয়েছিল, এই ধারায় কামাল লোহানীর মতো বিদগ্ধ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অপসারণ করে মোবারককে মহাপরিচালকের পদে আসীন করা হয়।... জাতীয়তাবাদী সরকারের এই দোসরকে আজই সরিয়ে যথার্থ লোককে এই প্রতিষ্ঠানে (শিল্পকলা একাডেমি) বসানো হোক’। এখানেই শেষ নয়, আওয়ামী লীগের শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সাথে মঞ্চে বসে তিনি যে আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক, সেটি প্রমাণ করেছেন। এত সব স্পষ্ট তথ্য ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরলপ্রাণ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বিভ্রান্ত করে বিএনপিবিদ্বেষীকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করা হয়েছিল।
প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়ে খুশি হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি যে কঠোর নিয়মের মধ্য থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন, সে বিষয়টি তার নানা কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
এক দিন তিনি বললেন, নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকার কারণে নিজেকে বড্ড পরাধীন মনে হয়। মনে হয়, আমি সোনার খাঁচায় বন্দী। কয়েক দিন ধরে ইচ্ছে হচ্ছে, নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারে গিয়ে কচুর লতি কিনে আনি। কিন্তু যেতে পারি না। নিজে বাজার করার অভ্যাস। অথচ এখন এটা সম্ভব হচ্ছে না। এত দিন তোমাদের সঙ্গ পেতাম। এখন পাই না। এসব কারণে নিজেকে বন্দী মনে হয়। মনে হয়, আমি বঙ্গভবনের চার দেয়ালের মধ্যে কয়েদি। কত সরল হলে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও খোলা মনে এমন কথা বলতে পারেন প্রিয় পাঠক নিশ্চয়ই সে বিষয়ে অনুমান করতে পারছেন। অথচ তার সীমাহীন সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত করে শেষ জীবনে তাকে মহা সঙ্কটে ফেলে দিয়েছিলেন। ফলে তাকে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে হাবুডুবু খেতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে, তিনি তার সরলতার খেসারত দিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি আওয়ামী জোট সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গভবনের খাঁচায় আমি বন্দী। তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মতোই আক্ষেপ করে বলেছেনÑ ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমার পক্ষে এখন আর আগের মতো মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা বলা সম্ভব হয় না।... বঙ্গভবনে ভালোভাবেই থাকা-খাওয়া করছি। কিন্তু আমাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। বঙ্গভবনের খাঁচায় আমি বন্দী, এটাই হলো বড় দুঃখ (নয়া দিগন্ত, ১৮-৯-১৪)।
মানুষ সুখের জন্য কত কিছুই না করে। সুখ পায়ও। কিন্তু সবার সব সুখ সয় না। সুখ অসুখে কিংবা দুঃখে পরিণত হয়। যেমনটি দুই মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে হয়েছে বলে জানা গেল। আর এটা জানার পর মনে হলোÑ সব সুখ সুখ নয়। অথচ ফুটপাথে খোলা আকাশের নিচে নিঃস্ব মানুষেরা কত সুখেই না ঘুমায়। কত স্বাধীন তারা। কোথাও যেতে, কারো সাথে কথা বলতে কোনো বাধা নেই তাদের।
No comments