ধরপাকড় দেশে দেশে টার্গেটে বাংলাদেশী by মনির হোসেন
মধ্যপ্রাচ্য ও আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে পাড়ি জমানো বাংলাদেশীদের বেশির ভাগের দিন কাটাতে হচ্ছে পুলিশি ধরপাকড় আতঙ্কে। এ ক্ষেত্রে টার্গেটে পড়েছেন শুধু বাংলাদেশীরা। ইতোমধ্যে শ্রমবান্ধব দেশ মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে শত শত বাংলাদেশী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটছে। তাদের মধ্যে যারা দেশ থেকে টাকা নিয়ে যেতে পারছেন তারা দালালদের সহযোগিতায় আউট পাস অথবা ট্র্যাভেল পাস সংগ্রহ করে খালি হাতে দেশে ফিরছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে। অবৈধ শ্রমিক ধরতে গিয়ে বৈধ শ্রমিকেরাও মারাত্মক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সাথে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করছেন দেশে দেশে থাকা ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি দেশে শ্রমিক রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এর মধ্যে সরকারিভাবে জি টু জি পদ্ধতিতে লোক যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। এই দেশটিতে বৈধভাবে শ্রমিক যাওয়ার পাশাপাশি অবৈধভাবে শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে ‘প্রফেশনাল ভিসার’ নামে শ্রমিক যাচ্ছেন বেশি। এ ক্ষেত্রে একাধিক সিন্ডিকেট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিমানবন্দর পার করার ব্যবস্থা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই। এর জের ধরে ওই দেশটিতে থাকা বৈধ বাংলাদেশীর পাশাপাশি বর্তমানে অবৈধ বাংলাদেশীর সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মালয়েশিয়া সরকারও অবৈধভাবে অবস্থান করা শ্রমিক আটকে প্রতিদিন ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ধরপাকড়ের কারণে দেশটির কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো ভরে গেছে। শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, এই চিত্র বিরাজ করছে বর্তমানে কুয়েত, কাতার, ওমান, জর্দান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ে। দুবাইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষ গ্রেফতারের পাশাপাশি নারীশ্রমিক গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত তিন দিনে প্রায় ৮০ জন নারীশ্রমিক ধরা পড়ে দেশটির কারাগারে আটক রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শ্রমবান্ধব দেশগুলোতে পুলিশি ধরপাকড় অভিযানের প্রথম টার্গেটে রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রবাসী সাংবাদিক শেখ আহমাদুল কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার কারাগার থেকে গত বুধবার ২৬ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা প্রত্যেকে অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করার অভিযোগে কারাভোগ শেষে দেশে ফেরত গেছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন মালয়েশিয়া সরকারের ৬পি-এর আওতায় দেশটির পুলিশ, রেলা ও ইমিগ্রেশন অবৈধ বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিক গ্রেফতারে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অপারেসি অভিযান চালাচ্ছে। রাস্তায় যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকেই আটক করে কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। বৈধ-অবৈধ তারা দেখছে না। সন্দেহ হলেই ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। যারা ব্লানজার (ঘুষ) দিতে পারছে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর ঘুষ না পেলেই ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিদিন ট্রলার ও আকাশপথে শত শত লোক মালয়েশিয়ায় ঢুকছে। তার মতে, বর্তমানে বহু শ্রমিক মালয়েশিয়ার ১১টি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এসব কর্মীকে মুক্ত করে ট্র্যাভেল পাসে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। অথচ অন্য দেশের হাইকমিশন দূতাবাস ঠিকই তাদের শ্রমিকদের খোঁজখবর নিচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইদানীং যারা ট্যুরিস্ট ও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসছে সেগুলোর ভিসাও জাল বলে ইমিগ্রেশনের কাছে ধরা পড়ছে। এই সংখ্যা ৪০০-৫০০ হবে। শেখ আহমাদুল কবির বলেন, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে দুই লাখ ৬৪ হাজার বৈধ শ্রমিকের পর আরো ৪০ হাজার শ্রমিক বৈধতা পেয়েছে। এ ছাড়াও দেশটিতে নানাভাবে আরো চার লাখ অবৈধ শ্রমিক অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেই ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে পাচ্ছেন না। পাসপোর্ট জটিলতা ও ভিসা রিনিউ না হলে আগামী জানুয়ারি মাসেই তিন লাখ বাংলাদেশী অবৈধ হয়ে যাবেন। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যেতে পারে। যদিও অবৈধ শ্রমিকদের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাভেল পাস উন্মুক্ত থাকবে বলে দেশটির ইমিগ্রেশন থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার হাইকমিশন বরাবরের মতো বলছে, ‘যারা অবৈধ তারা কেন এখনো অবস্থান করছে। তারা চলে গেলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
মালয়েশিয়ার মতোই ধরপাকড় অভিযান চলছে কুয়েতের রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। গতকাল শুক্রবার কুয়েতের প্রবাসী এক সাংবাদিক নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশীরা পুলিশি ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছে। জেলেও যাচ্ছে। আবার কাউকে পাঠানো হচ্ছে দেশে। অবৈধ শ্রমিক আটকের পাশাপাশি বৈধ শ্রমিকেরা এখন হয়রানি হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা গাড়িচালকের পেশায় রয়েছেন তারা। এ ছাড়া এখানে বেশির ভাগ অপরাধের সাথে বাংলাদেশীদের নাম উঠছে। এতে ুব্ধ এখানকার পুলিশও, যার কারণে ধরপাকড়ের টার্গেটে রয়েছে শুধু বাংলাদেশীরাই। এ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে কুয়েত সরকারের ওপর কৌশলে চাপ প্রয়োগ করা উচিত। নতুবা দিন দিন পুলিশি আতঙ্ক থেকে বাংলাদেশীদের রেহাই মিলবে না। একই চিত্র বিরাজ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ের বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘ দিন ধরে দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিক আটক অভিযান চললেও সাম্প্রতিক সময়ে নারীকর্মী গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে।
গতকাল দুবাই থেকে প্রবাসী আব্দুস ছালাম সাকিল নয়া দিগন্তকে বলেন, গত তিন দিনে আল নাহাদা, জামাল আবদুল নাসির, আবু সাহারা আল তাউর ন্যাশনাল পেইন্ট এলাকায় আবুধাবি স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ অভিযান চালায়। গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ২০ মিনিটে আন নাহাদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকার ফতুল্লা পঞ্চবটি এলাকার নাসিমা নামে এক নারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। পরে নাসিমার স্বীকারোক্তি মোতাবেক উল্লিখিত স্থান থেকে টানা তিন দিন অভিযান চালিয়ে ৮০ নারীকর্মীকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে আবুধাবি স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই এসব নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইদানীং পুরুষ শ্রমিক ধরা পড়ার সংখ্যা কমলেও নারীশ্রমিক ধরা পড়ছেন বেশি। তিনি বলেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমাতে দূতাবাস থেকে ক্যাম্পেইন অভিযান শুরু হওয়ায় অপরাধের মাত্রা এখন কমেছে।
জানা গেছে, কুয়েত, দুবাই মালয়েশিয়ার মতো ওমানেও বর্তমানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে প্রায় তিন হাজারের মতো বাংলাদেশী শ্রমিক কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে দেশেও প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীরা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিদেশে পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে কী পরিমাণ বাংলাদেশী শ্রমিক প্রতিদিন দেশে ফিরে আসছেন এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে গতকাল শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ওসি আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এর সঠিক হিসাব তার জানা নেই। এরপর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা এসেছেন বলে তিনি পরে ফোন দিতে বলেন। পরে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত ওসি মোস্তফা নুর ই বাহার এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে এই প্রশ্নটা জটিল। যদিও আমাদের নিষেধ করা আছে মিডিয়ার সাথে কোনো কথা বলতে, তাই এ ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি দেশে শ্রমিক রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এর মধ্যে সরকারিভাবে জি টু জি পদ্ধতিতে লোক যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। এই দেশটিতে বৈধভাবে শ্রমিক যাওয়ার পাশাপাশি অবৈধভাবে শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে ‘প্রফেশনাল ভিসার’ নামে শ্রমিক যাচ্ছেন বেশি। এ ক্ষেত্রে একাধিক সিন্ডিকেট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিমানবন্দর পার করার ব্যবস্থা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই। এর জের ধরে ওই দেশটিতে থাকা বৈধ বাংলাদেশীর পাশাপাশি বর্তমানে অবৈধ বাংলাদেশীর সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মালয়েশিয়া সরকারও অবৈধভাবে অবস্থান করা শ্রমিক আটকে প্রতিদিন ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ধরপাকড়ের কারণে দেশটির কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো ভরে গেছে। শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, এই চিত্র বিরাজ করছে বর্তমানে কুয়েত, কাতার, ওমান, জর্দান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ে। দুবাইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষ গ্রেফতারের পাশাপাশি নারীশ্রমিক গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত তিন দিনে প্রায় ৮০ জন নারীশ্রমিক ধরা পড়ে দেশটির কারাগারে আটক রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শ্রমবান্ধব দেশগুলোতে পুলিশি ধরপাকড় অভিযানের প্রথম টার্গেটে রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রবাসী সাংবাদিক শেখ আহমাদুল কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার কারাগার থেকে গত বুধবার ২৬ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা প্রত্যেকে অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করার অভিযোগে কারাভোগ শেষে দেশে ফেরত গেছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন মালয়েশিয়া সরকারের ৬পি-এর আওতায় দেশটির পুলিশ, রেলা ও ইমিগ্রেশন অবৈধ বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিক গ্রেফতারে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অপারেসি অভিযান চালাচ্ছে। রাস্তায় যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকেই আটক করে কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। বৈধ-অবৈধ তারা দেখছে না। সন্দেহ হলেই ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। যারা ব্লানজার (ঘুষ) দিতে পারছে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর ঘুষ না পেলেই ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিদিন ট্রলার ও আকাশপথে শত শত লোক মালয়েশিয়ায় ঢুকছে। তার মতে, বর্তমানে বহু শ্রমিক মালয়েশিয়ার ১১টি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এসব কর্মীকে মুক্ত করে ট্র্যাভেল পাসে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। অথচ অন্য দেশের হাইকমিশন দূতাবাস ঠিকই তাদের শ্রমিকদের খোঁজখবর নিচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইদানীং যারা ট্যুরিস্ট ও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসছে সেগুলোর ভিসাও জাল বলে ইমিগ্রেশনের কাছে ধরা পড়ছে। এই সংখ্যা ৪০০-৫০০ হবে। শেখ আহমাদুল কবির বলেন, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে দুই লাখ ৬৪ হাজার বৈধ শ্রমিকের পর আরো ৪০ হাজার শ্রমিক বৈধতা পেয়েছে। এ ছাড়াও দেশটিতে নানাভাবে আরো চার লাখ অবৈধ শ্রমিক অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেই ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে পাচ্ছেন না। পাসপোর্ট জটিলতা ও ভিসা রিনিউ না হলে আগামী জানুয়ারি মাসেই তিন লাখ বাংলাদেশী অবৈধ হয়ে যাবেন। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যেতে পারে। যদিও অবৈধ শ্রমিকদের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাভেল পাস উন্মুক্ত থাকবে বলে দেশটির ইমিগ্রেশন থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার হাইকমিশন বরাবরের মতো বলছে, ‘যারা অবৈধ তারা কেন এখনো অবস্থান করছে। তারা চলে গেলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
মালয়েশিয়ার মতোই ধরপাকড় অভিযান চলছে কুয়েতের রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। গতকাল শুক্রবার কুয়েতের প্রবাসী এক সাংবাদিক নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন বাংলাদেশীরা পুলিশি ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছে। জেলেও যাচ্ছে। আবার কাউকে পাঠানো হচ্ছে দেশে। অবৈধ শ্রমিক আটকের পাশাপাশি বৈধ শ্রমিকেরা এখন হয়রানি হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা গাড়িচালকের পেশায় রয়েছেন তারা। এ ছাড়া এখানে বেশির ভাগ অপরাধের সাথে বাংলাদেশীদের নাম উঠছে। এতে ুব্ধ এখানকার পুলিশও, যার কারণে ধরপাকড়ের টার্গেটে রয়েছে শুধু বাংলাদেশীরাই। এ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে কুয়েত সরকারের ওপর কৌশলে চাপ প্রয়োগ করা উচিত। নতুবা দিন দিন পুলিশি আতঙ্ক থেকে বাংলাদেশীদের রেহাই মিলবে না। একই চিত্র বিরাজ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ের বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘ দিন ধরে দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিক আটক অভিযান চললেও সাম্প্রতিক সময়ে নারীকর্মী গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে।
গতকাল দুবাই থেকে প্রবাসী আব্দুস ছালাম সাকিল নয়া দিগন্তকে বলেন, গত তিন দিনে আল নাহাদা, জামাল আবদুল নাসির, আবু সাহারা আল তাউর ন্যাশনাল পেইন্ট এলাকায় আবুধাবি স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ অভিযান চালায়। গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ২০ মিনিটে আন নাহাদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঢাকার ফতুল্লা পঞ্চবটি এলাকার নাসিমা নামে এক নারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। পরে নাসিমার স্বীকারোক্তি মোতাবেক উল্লিখিত স্থান থেকে টানা তিন দিন অভিযান চালিয়ে ৮০ নারীকর্মীকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে আবুধাবি স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই এসব নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইদানীং পুরুষ শ্রমিক ধরা পড়ার সংখ্যা কমলেও নারীশ্রমিক ধরা পড়ছেন বেশি। তিনি বলেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমাতে দূতাবাস থেকে ক্যাম্পেইন অভিযান শুরু হওয়ায় অপরাধের মাত্রা এখন কমেছে।
জানা গেছে, কুয়েত, দুবাই মালয়েশিয়ার মতো ওমানেও বর্তমানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে প্রায় তিন হাজারের মতো বাংলাদেশী শ্রমিক কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে দেশেও প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীরা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিদেশে পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে কী পরিমাণ বাংলাদেশী শ্রমিক প্রতিদিন দেশে ফিরে আসছেন এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে গতকাল শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ওসি আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এর সঠিক হিসাব তার জানা নেই। এরপর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা এসেছেন বলে তিনি পরে ফোন দিতে বলেন। পরে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত ওসি মোস্তফা নুর ই বাহার এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে এই প্রশ্নটা জটিল। যদিও আমাদের নিষেধ করা আছে মিডিয়ার সাথে কোনো কথা বলতে, তাই এ ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
No comments