এরাই সময়ের সাহসী সন্তান by মাসুদ মজুমদার
৫ জানুয়ারির পর দেশে কার্যত গণতন্ত্র অনুপস্থিত। সবক’টি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আড়ষ্ট। সরকার বৈধতা পাওয়ার যুদ্ধে নেমেছে। ভিন্ন মত ও বিরোধী দল দমন সরকারের মিশন। একচ্ছত্র ক্ষমতাচর্চা তাদের ভিশন। নিজেরাই নিজেদের খোঁড়া গর্তে বারবার পড়ে যাচ্ছে। বিব্রত হচ্ছে নিজেদের কারণে। তাই দৃষ্টি ফেরাতে বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। তা ছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না করলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অগণতান্ত্রিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সরকার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এই শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তির পথ রোধ করে দাঁড়ায়। এ ধরনের অপকর্মে ব্যবহৃত হয় তরুণসমাজ। তাদের আবেগ-উচ্ছ্বাসকে অপব্যবহার করেই শাসকেরা প্রশান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষ দমনে, ভিন্ন মত দলনে সাফল্য লাভের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে।
কাল থেকে ভাবছি, একটি সরকার কতটা নির্লজ্জ হলে শহীদ মিনার নিয়েও কদর্য রাজনৈতিক খেলা খেলতে পারে। দলীয় রাজনীতি বিষাক্ত ছোবল এবং মতান্ধ রাজনীতি ঘৃণার লালা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার প্রমাণ দিলো এ সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। বিশেষত প্রক্টর যখন বিষাক্ত রাজনীতি ও দূষিত চিন্তাকে আশকারা দিতে কার্পণ্য করেন না, তখন ভাবতে কষ্ট লাগে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলাম। এটাই আমাদের স্বকীয় জাতিসত্তার সৌধ নির্মাণের প্রেরণা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দু’টি নামসর্বস্ব সংগঠনের অনুমতি নেয়ার কথা জানালেও শহীদ মিনারে দেখা গেল অন্তত ২০টি সংগঠনের ব্যানার। ব্যানারসর্বস্ব একটি সংগঠনের সমাবেশ থেকে দেশের বিশিষ্ট নয়জন নাগরিককে শহীদ মিনারে ‘অবাঞ্ছিত‘ ঘোষণা দেয়া হলো। তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টানিয়ে প্রতিহতেরও ডাক দেয়া হলো। বাস্তবে শহীদ মিনার চত্বর ছিল সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগ্রাহ্য উপস্থিতি। অন্যরা পোঁ ধরেছেন, আশ্রয় প্রশ্রয় উপভোগ করে নিজেদের দেউলে অবস্থানের জানান দিয়েছেন মাত্র। নাই রাজনীতির শরীরে কলঙ্ক লেপন করেছেন।
শহীদ মিনার কেলেঙ্কারির এই নাটক শহীদ মিনারে মঞ্চস্থ হলেও গ্রিনরুম ছিল অন্যত্র। প্রযোজনা ও পরিচালনায় ছিল সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা। গণজাগরণ মঞ্চের সরকারপ বলে পরিচিত অংশ ছাড়াও সাথে ছিল মঞ্চের সাথে জড়িত পাঁচটি বাম ছাত্রসংগঠন। এ ছাড়া ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ নামেও কাউকে কাউকে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট সাতটি সংগঠনও রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই সব ক’টি সংগঠন মহাজোটভুক্ত দলগুলোর শরিক দলের অঙ্গ ও ছাত্রসংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সঠিক হলে এদের মধ্যে একটি ব্যানারধারীরা কর্তৃপ থেকে অনুমতি নেয় কর্মসূচি পালনের জন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলছেন, একটি সংগঠনকে কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাকিদের অনুমতি দেয়া হয়নি।
অধ্যাপক পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে গেল কি গেল নাÑ এ নিয়ে আমাদের উৎসাহ কম; কিন্তু সংগঠনগুলোর নেতারা দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যে বক্তব্য রাখেন, সেটা কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়। টেলিভিশন টকশোর জনপ্রিয় আলোচকদের প্রতিহতের ডাক দিয়ে শহীদ মিনারে ব্যানার প্রদর্শন করে অখ্যাত একটি সংগঠন। সবাই জানেন এদের শক্তির উৎস কী। দেশবরেণ্য ওইসব বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্পর্কে ব্যানারে লেখা ছিলÑ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সুশীল নামধারী বুদ্ধিবেশ্যাদের প্রতিহত করুন। তাদের ভাষায় অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আমেনা মহসিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক ও টকশো আলোচক নূরুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সিনিয়র সাংবাদিক ও টকশো আলোচক গোলাম মোর্তজা ও আইনজীবী ড. তুহিন মালিক গং বুদ্ধির সতীত্ব হারিয়েছেন!
আলোচিত বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেরই ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। এদের কেউ কেউ ছিলেন স্বনামধন্য ছাত্রনেতা। ক’জন আছেন ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের অগ্রসেনানি। কেউ কেউ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের বুদ্ধিবৃত্তির জগতে এরা নন্দিতই শুধু নন, জাতিকে স্বপ্ন দেখানোর পথের প্রগতিশীল ও অগ্রসর মানুষ। এদের অপরাধ একটাই, সরকার অনুগত কিংবা গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী এরা কেউ নন। তারা নিজেদের বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা ও দেশভাবনায় এতটা সমুজ্জ্বল যে, এদের কোনো পন্থী হতে হয় না, দলের ব্যানারে মাথা ঢুকাতে হয় না। এরা বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরোধী। গণতন্ত্র তাদের চাওয়া। মানবাধিকার রক্ষা তাদের আরাধনা ও শপথ। আইনের শাসন তাদের কামনা। ভোটের অধিকার, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা আপসহীন। অনাচার-দুরাচার-অপশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এরা সোচ্চার। এদের ঋজু ভাষার মন্তব্য, যাদের সহ্য হয় না তারাই তাদের প্রতিপক্ষ ভাবেন। বর্তমান সরকার এ কারণেই ভিন্নমতের এসব সাহসী মানুষের কণ্ঠরোধের উদ্যোগ নিয়েছে। শহীদ মিনার নাটক তার অংশ। পিয়াস করিম বাহানা মাত্র। সরকার যতই বাহানা সৃষ্টি করুক, দেশ জাতি এদেরই সময়ের সাহসী সন্তান মনে করে। সরকার দৃষ্টি ফেরাতে গিয়ে আবার অস্তিত্বের সঙ্কট বাড়াল। জাতি দেখল তাদের নন্দিত সন্তানেরা আইয়ুব, ইয়াহিয়ার মতো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের কোপানলে পড়েছে। এই সরকারও ইয়াহিয়ার মতো বুদ্ধিজীবীভীতি লালন করতে শুরু করেছে। এটা ধ্বংস কিংবা পতনের আলামত।
কাল থেকে ভাবছি, একটি সরকার কতটা নির্লজ্জ হলে শহীদ মিনার নিয়েও কদর্য রাজনৈতিক খেলা খেলতে পারে। দলীয় রাজনীতি বিষাক্ত ছোবল এবং মতান্ধ রাজনীতি ঘৃণার লালা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার প্রমাণ দিলো এ সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। বিশেষত প্রক্টর যখন বিষাক্ত রাজনীতি ও দূষিত চিন্তাকে আশকারা দিতে কার্পণ্য করেন না, তখন ভাবতে কষ্ট লাগে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলাম। এটাই আমাদের স্বকীয় জাতিসত্তার সৌধ নির্মাণের প্রেরণা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দু’টি নামসর্বস্ব সংগঠনের অনুমতি নেয়ার কথা জানালেও শহীদ মিনারে দেখা গেল অন্তত ২০টি সংগঠনের ব্যানার। ব্যানারসর্বস্ব একটি সংগঠনের সমাবেশ থেকে দেশের বিশিষ্ট নয়জন নাগরিককে শহীদ মিনারে ‘অবাঞ্ছিত‘ ঘোষণা দেয়া হলো। তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টানিয়ে প্রতিহতেরও ডাক দেয়া হলো। বাস্তবে শহীদ মিনার চত্বর ছিল সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগ্রাহ্য উপস্থিতি। অন্যরা পোঁ ধরেছেন, আশ্রয় প্রশ্রয় উপভোগ করে নিজেদের দেউলে অবস্থানের জানান দিয়েছেন মাত্র। নাই রাজনীতির শরীরে কলঙ্ক লেপন করেছেন।
শহীদ মিনার কেলেঙ্কারির এই নাটক শহীদ মিনারে মঞ্চস্থ হলেও গ্রিনরুম ছিল অন্যত্র। প্রযোজনা ও পরিচালনায় ছিল সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা। গণজাগরণ মঞ্চের সরকারপ বলে পরিচিত অংশ ছাড়াও সাথে ছিল মঞ্চের সাথে জড়িত পাঁচটি বাম ছাত্রসংগঠন। এ ছাড়া ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ নামেও কাউকে কাউকে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট সাতটি সংগঠনও রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই সব ক’টি সংগঠন মহাজোটভুক্ত দলগুলোর শরিক দলের অঙ্গ ও ছাত্রসংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সঠিক হলে এদের মধ্যে একটি ব্যানারধারীরা কর্তৃপ থেকে অনুমতি নেয় কর্মসূচি পালনের জন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলছেন, একটি সংগঠনকে কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাকিদের অনুমতি দেয়া হয়নি।
অধ্যাপক পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে গেল কি গেল নাÑ এ নিয়ে আমাদের উৎসাহ কম; কিন্তু সংগঠনগুলোর নেতারা দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যে বক্তব্য রাখেন, সেটা কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় নয়। টেলিভিশন টকশোর জনপ্রিয় আলোচকদের প্রতিহতের ডাক দিয়ে শহীদ মিনারে ব্যানার প্রদর্শন করে অখ্যাত একটি সংগঠন। সবাই জানেন এদের শক্তির উৎস কী। দেশবরেণ্য ওইসব বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্পর্কে ব্যানারে লেখা ছিলÑ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সুশীল নামধারী বুদ্ধিবেশ্যাদের প্রতিহত করুন। তাদের ভাষায় অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আমেনা মহসিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক ও টকশো আলোচক নূরুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সিনিয়র সাংবাদিক ও টকশো আলোচক গোলাম মোর্তজা ও আইনজীবী ড. তুহিন মালিক গং বুদ্ধির সতীত্ব হারিয়েছেন!
আলোচিত বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেরই ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। এদের কেউ কেউ ছিলেন স্বনামধন্য ছাত্রনেতা। ক’জন আছেন ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের অগ্রসেনানি। কেউ কেউ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের বুদ্ধিবৃত্তির জগতে এরা নন্দিতই শুধু নন, জাতিকে স্বপ্ন দেখানোর পথের প্রগতিশীল ও অগ্রসর মানুষ। এদের অপরাধ একটাই, সরকার অনুগত কিংবা গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী এরা কেউ নন। তারা নিজেদের বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা ও দেশভাবনায় এতটা সমুজ্জ্বল যে, এদের কোনো পন্থী হতে হয় না, দলের ব্যানারে মাথা ঢুকাতে হয় না। এরা বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরোধী। গণতন্ত্র তাদের চাওয়া। মানবাধিকার রক্ষা তাদের আরাধনা ও শপথ। আইনের শাসন তাদের কামনা। ভোটের অধিকার, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা আপসহীন। অনাচার-দুরাচার-অপশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এরা সোচ্চার। এদের ঋজু ভাষার মন্তব্য, যাদের সহ্য হয় না তারাই তাদের প্রতিপক্ষ ভাবেন। বর্তমান সরকার এ কারণেই ভিন্নমতের এসব সাহসী মানুষের কণ্ঠরোধের উদ্যোগ নিয়েছে। শহীদ মিনার নাটক তার অংশ। পিয়াস করিম বাহানা মাত্র। সরকার যতই বাহানা সৃষ্টি করুক, দেশ জাতি এদেরই সময়ের সাহসী সন্তান মনে করে। সরকার দৃষ্টি ফেরাতে গিয়ে আবার অস্তিত্বের সঙ্কট বাড়াল। জাতি দেখল তাদের নন্দিত সন্তানেরা আইয়ুব, ইয়াহিয়ার মতো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের কোপানলে পড়েছে। এই সরকারও ইয়াহিয়ার মতো বুদ্ধিজীবীভীতি লালন করতে শুরু করেছে। এটা ধ্বংস কিংবা পতনের আলামত।
No comments