জানার মধ্যেই রয়ে গেল বাংলাদেশ
সফর ব্যক্তিগত। কিন্তু আলোচনা বিস্তর।
চারদিনে ৯৬ ঘণ্টা। ছুটেছেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। বৈঠক সেরেছেন অনেকের
সঙ্গেই। রুটিনের বাইরেও ছিলেন কেউ কেউ। বলছিলাম এম জে আকবরের কথা।
কংগ্রেসকে ভূমিধস পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতের নেতৃত্বে থাকা বিজেপির জাতীয়
মুখপাত্র। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। রিপোর্টিং শুরু করেছিলেন টাইমস অব ইন্ডিয়ায়।
তেইশ বছরেই সম্পাদক পদে রেকর্ড গড়েন। দ্য টেলিগ্রাফ, এশিয়ান এজ, ইন্ডিয়া
টুডে, সানডে, গার্ডিয়ান, দ্য ডেকান ক্রনিকালে লিখেছেন। তাঁর লেখা ‘নেহেরু’
দুনিয়া কাঁপিয়েছে। ঘনিষ্ঠ ছিলেন গান্ধী পরিবারের সঙ্গেও। সময়ের ব্যবধানে এই
মানুষটিই এখন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র। মিডিয়া সূত্রে বাংলাদেশের অনেকের
সঙ্গেই রয়েছে সখ্য। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে বাংলাদেশের সঙ্গে
ভারতের সম্পর্ক নিয়ে নানা আলোচনা। দীর্ঘদিনের মিত্র কংগ্রেসের বিদায়ে
বাংলাদেশের বিরোধী শিবিরে উৎসাহ আর সরকারের নীরবতায় এ আলোচনাকে আরও
প্রলম্বিত করেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর আর
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দিল্লি সফর এবং নিউ
ইয়র্কে মোদি-হাসিনা বৈঠকের আগে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে এম জে আকবরের সফর
নিয়ে। চার দিনের ঝটিকা এই সফরে তিনি বিএনপি নেতা ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী
আবদুল আওয়াল মিন্টুর বাসায় বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা
আব্বাস ও সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের সঙ্গে। এছাড়াও দলটির স্থায়ী
কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের বাসায় দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। কথা
বলেছেন অন্তত তিনজন সম্পাদকের সঙ্গে। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম,
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের
সঙ্গে। আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দুটি টেলিভিশন, একটি পত্রিকাকে।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আযম নাসিরের
আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। বৈঠকে বসেছিলেন মাওলানা তৈয়বের নেতৃত্বে হেফাজতের
একাংশের নেতাদের সঙ্গে। সফরের শেষ দিন একেবারে শেষ সময়ে বৈঠক সারেন জাতীয়
পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও। একাধিক সাক্ষাৎকার এবং
ঘরোয়া আলাপে এম জে আকবর বর্তমান পরিস্থিতি হলফ করার চেষ্টা করেছেন। বিএনপি
নেতাদের কাছে অন্তত পাঁচ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষত
সীমান্ত এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যক্রম, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে
আইএসআইয়ের কার্যক্রম বন্ধে অবস্থান কি হবে? জামায়াত-জঙ্গিবাদ ইস্যুতে
বিএনপির নীতি কি? জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে বিজেপি মুখপাত্র
জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশকে। বুঝার চেষ্টা করেছেন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন
পরবর্তী রাজনীতি; বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে ভারতের ভূমিকা কি হবে তা
নিয়ে। একাধিক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভারতের অবস্থানও ব্যাখ্যা
করেছেন। ফরেন পলিসি ও ফরেন ডিপ্লোম্যাসি এই দু’প্রক্রিয়াতেই ভারত তাদের
সম্পর্ক এগিয়ে যাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে এটাই মোদ্দাকথা। রাতারাতি
পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের পক্ষে নন মোদি। আধুনিক ও উন্নত চিন্তার মানুষ
মোদি শুধু বাংলাদেশ বা শুধু নেপাল বা শুধু ভুটান এভাবে চিন্তা করছেন না।
তিনি পুরো উপমহাদেশকেই অর্থনৈতিক বলয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিতে চান। নেতৃত্ব
দিতে চান। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চান। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের
পর্যবেক্ষণ অব্যাহত আছে এবং থাকবে। আকবরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এমন একাধিক
ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশকে জানার মধ্য দিয়েই ফিরে গেছেন
তিনি। অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে মোদি
সরকার যে অস্বস্তিতে রয়েছে তার বেশকিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে আকবরের নানা
মূল্যায়নে। যাই হোক বাংলাদেশের ঘূর্ণায়মান রাজনীতির পাল্স বুঝতে চেয়েছেন।
অনেক প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না নিয়েই সফরের ইতি টেনেছেন।
No comments