অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সহযোগিতার কূটনীতি প্রয়োজন by শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান
রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে
আলাপ-আলোচনার কৌশল বা রীতিনীতিই হলো কূটনীতি। পেশাদার কূটনীতিবিদেরা
নির্দিষ্ট বিরতিতে বসে শান্তিরক্ষা, বাণিজ্য, যুদ্ধ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি,
পানিসম্পদের বণ্টন, পরিবেশ, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে
থাকেন।
একটি আন্তর্জাতিক নদীর একই অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর জন্য পানিসম্পদের বণ্টন সাম্প্রতিক সময়ে এবং সুনির্দিষ্ট কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ কমিটি তাদের সাধারণ প্রস্তাবে পানি প্রাপ্তিকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা দেয়। পানি ছাড়া অনেক মৌলিক মানবাধিকারকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পানির ওপর মানুষের অধিকার সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আইিন পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু আইনগতভাবে সবাই এ ঘোষণা মেনে চলতে বাধ্য ছিল না।
বাস্তব অবস্থার দিকে তাকানো যাক। পৃথিবীতে ২৬৩টি নদী অববাহিকা রয়েছে, যা সব মিলিয়ে স্থলভাগের প্রায় অর্ধেকটা দখল করে আছে। ৬০ শতাংশ স্বাদু পানির উৎস এই আন্তর্জাতিক নদীগুলো। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা কেবল বাংলাদেশ নয়, সব দেশেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শত শত কোটি মানুষের খাওয়ার পানি, খাদ্য, জ্বালািন ও শিল্প উৎপাদনের জন্য অভিন্ন এই পানির উৎসের ওপর ক্রমান্বয়ে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুব কম পানিই পাওয়া যাবে, আর প্রায়ই সেটা হবে নিম্নমানের।
হিমালয় অঞ্চলের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানে পানিসম্পদের সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে কাজটি করতে পারে। ভবিষ্যতের এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তির আওতায় যৌথ নদী কমিশন নামে একটি দ্বিপক্ষীয় ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করেন। দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা, পানিসম্পদের বণ্টন, সেচ, বন্যা ও সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য উল্লেখিত চুক্তি অনুযায়ী এই কমিশন গঠন করা হয়। এটি এখন স্বীকৃত যে কমিশনের সমীক্ষা ও প্রতিবেদন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তিতে সরাসরি অবদান রাখে।
হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোর সম্মিলিত উন্নয়ন উদ্যোগ এখানকার মানুষের জন্য নানামুখী সুবিধা বয়ে আনতে সক্ষম। যেমন জলবিদ্যুৎ এবং শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির প্রবাহ বৃদ্ধি। এর ফল হিসেবে সেচের সম্প্রসারণ ঘটবে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেপালে জলাধার গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যা শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানিপ্রবাহ প্রায় এক লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ কিউসেক পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। নেপালে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রাখা হলে সেখান থেকে ৮৩ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই জলাধার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, সেচ-সুবিধার সম্প্রসারণ ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে নৌযান চলাচলের পথ সুগম করার ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ভুটানেরও ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিমাণ জলবিদ্যুৎ শুধু নেপাল-ভুটানের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে এমন নয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুতের চাহিদাও মিটবে।
একটি আন্তর্জাতিক নদীর একই অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর জন্য পানিসম্পদের বণ্টন সাম্প্রতিক সময়ে এবং সুনির্দিষ্ট কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ কমিটি তাদের সাধারণ প্রস্তাবে পানি প্রাপ্তিকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা দেয়। পানি ছাড়া অনেক মৌলিক মানবাধিকারকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পানির ওপর মানুষের অধিকার সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আইিন পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু আইনগতভাবে সবাই এ ঘোষণা মেনে চলতে বাধ্য ছিল না।
বাস্তব অবস্থার দিকে তাকানো যাক। পৃথিবীতে ২৬৩টি নদী অববাহিকা রয়েছে, যা সব মিলিয়ে স্থলভাগের প্রায় অর্ধেকটা দখল করে আছে। ৬০ শতাংশ স্বাদু পানির উৎস এই আন্তর্জাতিক নদীগুলো। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা কেবল বাংলাদেশ নয়, সব দেশেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শত শত কোটি মানুষের খাওয়ার পানি, খাদ্য, জ্বালািন ও শিল্প উৎপাদনের জন্য অভিন্ন এই পানির উৎসের ওপর ক্রমান্বয়ে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুব কম পানিই পাওয়া যাবে, আর প্রায়ই সেটা হবে নিম্নমানের।
হিমালয় অঞ্চলের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানে পানিসম্পদের সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে কাজটি করতে পারে। ভবিষ্যতের এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তির আওতায় যৌথ নদী কমিশন নামে একটি দ্বিপক্ষীয় ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করেন। দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা, পানিসম্পদের বণ্টন, সেচ, বন্যা ও সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য উল্লেখিত চুক্তি অনুযায়ী এই কমিশন গঠন করা হয়। এটি এখন স্বীকৃত যে কমিশনের সমীক্ষা ও প্রতিবেদন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তিতে সরাসরি অবদান রাখে।
হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোর সম্মিলিত উন্নয়ন উদ্যোগ এখানকার মানুষের জন্য নানামুখী সুবিধা বয়ে আনতে সক্ষম। যেমন জলবিদ্যুৎ এবং শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির প্রবাহ বৃদ্ধি। এর ফল হিসেবে সেচের সম্প্রসারণ ঘটবে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেপালে জলাধার গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যা শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানিপ্রবাহ প্রায় এক লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ কিউসেক পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। নেপালে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রাখা হলে সেখান থেকে ৮৩ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই জলাধার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, সেচ-সুবিধার সম্প্রসারণ ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে নৌযান চলাচলের পথ সুগম করার ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ভুটানেরও ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিমাণ জলবিদ্যুৎ শুধু নেপাল-ভুটানের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে এমন নয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুতের চাহিদাও মিটবে।
হিমালয় অববাহিকার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সহায়তায় ২০০৬ সালে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আবুধাবি ডায়ালগ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত (এডিডিজি) এই গ্রুপটি হিমালয় অঞ্চলের সাতটি দেশ তথা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সমন্বয়ে গঠিত। এই গ্রুপটি যত দূর সম্ভব আটটি বৈঠক করেছে। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘দক্ষ ব্যবস্থাপনার আওতায় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত ও জ্ঞানভিত্তিক অংশীদারি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শান্তি, সামাজিক সাদৃশ্য ও টেকসই পরিবেশের স্বার্থে উৎস থেকে সাগর পর্যন্ত হিমালয় থেকে নেমে আসা নদীগুলোর উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়ািদ ‘স্বপ্নকল্প’ গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ একটি নিম্নভূমির ব-দ্বীপ এলাকা, যা হিমালয় থেকে নেমে আসা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা—এই তিন পরাক্রমশালী নদীর টেনে আনা পলিমাটি দিয়ে গঠিত। ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫৪টি ভারতের সঙ্গে এবং তিনটি মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত। ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫১টি নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত। এই তিন পরাক্রমশালী নদীর অববাহিকার আয়তন ১৭২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার, যার মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে।
বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই নদীগুলো ঘিরে আবর্তিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার গঙ্গার পানি চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত পানির অর্থপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় দেশের সব বড় নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের খননকাজের প্রয়োজনীয়তা ইতিমধ্যে অনুভূত হচ্ছে। কারণ, গত পাঁচ বছরে দেশে বড় ধরনের কোনো বন্যা হয়নি। রক্ষা পেয়েছে ফসল, সড়কের মতো স্থাপনা, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে আমরা ভারত, পাকিস্তান, চীন ও থাইল্যান্ডে বেশ কয়েকবার বড় ধরনের বন্যা হতে দেখেছি।
আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনার বেশ কিছু উজ্জ্বল সাফল্যগাথা রয়েছে। যেমন, ১. মেকং রিভার কমিশন (কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম); ২. কনভেনশন অ্যান্ড প্রটেকশন অব দ্য রাইন (ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাঠামোর আওতায় এতে আছে জার্মানি, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, দ্য নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ড); ৩. িনল বেসিন ইনিসিয়েটিভ (মিসর, সুদান, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া, তানজানিয়া, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, ইরিত্রিয়া) পর্যবেক্ষক; এবং ৪. সেনেগাল রিভার বেসিন ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (গিনি, মালি, মৌরিতানিয়া ও সেনেগাল)।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পানিসম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে। এই অঞ্চলের সমৃদ্ধির চাবিকাঠি হলো সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুসরণ করে নদীর অববাহিকা ধরে উন্নয়ন। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজন যুগোপযোগী পদক্ষেপ। আর এর জন্য সংশিষ্ট দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকার প্রয়োজন। এ অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারের এখন পারস্পরিক সমঝোতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হওয়া দরকার। এখন প্রয়োজন হলো সহযোগিতার কূটনীতি।
শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান: সাবেক মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
No comments