‘আগামী নির্বাচন হবে রিমোট কন্ট্রোলে’ - এবিএম মূসা
বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেছেন, আগামী
নির্বাচন হবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী যদি কুষ্টিয়ার
ভেড়ামারা থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন
করতে পারেন তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনও রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে করা
যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমাকে বিভিন্ন জন টেলিফোনে জিজ্ঞাসা
করেন আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে। এ কথার জবাবে কোন উত্তর না পেয়ে আমি তাদের
বলি আগামী নির্বাচন হবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে। গতকাল ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী
মিলনায়তনে প্রবীণ এই সাংবাদিককে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই এসোসিয়েশন
(ডিইউএমসিজেএএ) এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাবি গণযোগাযোগ ও
সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার
সম্পাদক সাংবাদিক মাহবুবুল আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বাংলাদেশ ফেডারেল
সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং ডেইলি নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন
আহমেদ, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাবি
সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান প্রমুখ।
এবিএম মূসা তার বক্তব্যে আরও বলেন, আমাকে লোকজন টেলিফোনে কিছুদিন আগে প্রশ্ন করতেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি কয়টা আসন পাবে? এক সময় প্রশ্ন করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কয়টা এবং বিএনপি কয়টা আসন পাবে? এরপর প্রশ্ন আসতে থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কয়টা আসন পাবে? এখন প্রশ্ন করছেন নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে। আমি তাদেরকে বলেছি নির্বাচন হবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, কয়েকটা টেলিভিশনের টক শোতে যাওয়া নিয়ে আমাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তারপরও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ আমাকে আমন্ত্রণ করেছে। তবে তারা আমাকে অনুরোধ করে বলেছেন আমি যাতে সংযত কথাবার্তা বলি। আমি আমার মতোই কথা বলে গেছি। বাসায় ফেরার পর তারা জানিয়েছেন, তাদের যায় যায় অবস্থা। তখন আমি তাদেরকে বলি সংযত কথা বলাতেই এ অবস্থা আর অসংযত কথা বললে কি হতো চিন্তা করে দেখো। এবিএম মূসা বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু পেশাগত দিক থেকে এটা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে সাংবাদিকতার মান আজ কমে গেছে। এটা অনেকটা হ-য-ব-র-ল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি চাই সংবাদ। মানুষের এখন সময় কম। তাই তার দরকার সংবাদটা। তার সময় থাকলে সে ব্যাখ্যা সহকারে পড়বে। এখন ‘কাট-ছাঁট’ সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে। তারপরও আমি সাংবাদিকতা নিয়ে আশাবাদী।
তিনি বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সমস্যা উৎসাহের অভাব। প্রবীণরা নবীনদেরকে সাংবাদিকতার সঠিক শিক্ষা দিতে চান না। আর নবীনরাও সঠিক পদ্ধতি শিখতে চান না। সংবাদ রচনার সময় সাংবাদিকদের মনে রাখতে হবে যে সংবাদ আর সাহিত্য এক জিনিস নয়। অনেকে আজকাল ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করতে গিয়ে সংবাদ লেখার পরিবর্তে সাহিত্য রচনা করে বসেন। একটি প্রথম সারির দৈনিকে চার কলামব্যাপী খেলার সংবাদ ছাপা হলো। সংবাদটি পড়ে আমি যথেষ্ট সাহিত্যরস উপভোগ করলেও খেলার ফলাফল কি তা জানতে পারলাম না। পরে আমি ওই সাংবাদিককে ফোন করি তোমার লেখা তো পড়লাম কিন্তু খেলার ফলাফল তো পেলাম না। এবিএম মূসা সংবর্ধনা গ্রহণ করে বলেন, আমি বিস্মিত, আমি বিমোহিত, আমি আনন্দিত আবার আমি বিব্রতবোধও করছি। কেননা প্রথম, দ্বিতীয় প্রজন্ম চলে গেছে। তৃতীয় প্রজন্ম এসে আমাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। আর চতুর্থ প্রজন্ম এসে উঁকি দিচ্ছে। এসময় তিনি অনেক স্মৃতিচারণামূলক কথা বলেন। তিনি এখনও নিজেকে তরুণ মনে করেন বলে জানান। এজন্য সমপ্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি যাননি- যেখানে প্রবীণ সাংবাদিকদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সাংবাদিকতার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং যাপিত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে নিজের আত্মজীবনী লিখছেন বলেও জানান তিনি। বক্তব্যের শেষে তিনি রবীন্দ্রনাথের গান থেকে উচ্চারণ করে বলেন, ‘তোমাদের এই হাসি খেলার মাঝে আমি যে গান গেয়েছিলাম সেই কথাটি মনে রেখো।’
শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত: শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হলেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা। গতকাল সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান। ১১টা ৩৭ মিনিটে অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন। এরপর এবিএম মূসার সম্মানে স্বাগত সংগীত পরিবেশন করেন মাহমুদা খান কাকলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাশ। এরপর বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবিএম শামসুল হক। এবিএম মূসার সংবর্ধনা উপলক্ষে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। এসময় এবিএম মূসাকে স্মারক ও উত্তরী প্রদান করেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মীর মাসরুর জামান।
সাংবাদিকদের অভিভাবক ও দিকনির্দেশক: এবিএম মূসার সাংবাদিকতার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, তিনি সাংবাদিকদের অভিভাবক ও দিকনির্দেশক। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এবিএম মূসার সময়ে আজকের দিনের মতো এত ইলেকট্রনিক মিডিয়া না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার কর্মে, তার আচরণে, তার কথায় সব সময় অটল ও অনড়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম বলেন, এবিএম মূসা প্রথিতযশা ও অনন্য সাংবাদিক। তিনি সত্যের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠতার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি সত্য কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। তিনি এখনও তরুণ। কিভাবে নিউজ ম্যানেজমেন্ট করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি তার কলাম পড়ি। টিভিতে টক শো দেখি। চিন্তা করি কিভাবে একজন নির্ভীক সাংবাদিক তার মতামত প্রকাশ করে যাচ্ছেন। নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবিএম মূসা জীবন্ত কিংবদন্তি। জীবন্ত অভিধান। মূসা ভাইয়ের ভয়ে আমি ডেইলি অবজারভারে যোগ দিতে চাইনি। মূসা ভাই অবজারভারে নিউজ এডিটর থাকার কারণেই ভয়ে আমি ‘পূর্বদেশ’ পত্রিকায় যোগ দিতে চেয়েছিলাম। আমি ডেইলি অবজারভারে যোগ দিয়ে দেখি অন্য এক মূসা ভাই। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি ১০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট জমা দেই। আমার সামনেই মূসা ভাই ৫ পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে দেন। মনটা খারাপ হয়ে যায়। পরের দিন রিপোর্টটি আমার নামেই ছাপা হয়। দেখি অন্যরকম এক রিপোর্ট। সেখানে মূসা ভাইয়ের অবদান ৭৫ ভাগ, আমার মাত্র ২৫ ভাগ। তিনি বলেন, ৭০’এর সাইক্লোনের সময় বৃটিশ রয়েল আর্মি আসে পটুয়াখালীতে। আমি যাই রিপোর্টার হিসেবে। অফিসে আসার পর পাকিস্তান আর্মির পিআরও সাদেক সিদ্দিকী অফিসে এসে ইন্ট্রো লিখে দেন। আমি মূসা ভাইকে বিষয়টা খুলে বলি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই ইন্ট্রো ছিঁড়ে ফেলে ওই অফিসারকে ফোন করে বলেন, আর কোনদিন এভাবে ডিকটেট করবেন না। এরপর ২৫শে মার্চের পূর্ব পর্যন্ত ওই অফিসার অবজারভার অফিসে এলে আগে খোঁজ নিয়ে আসতেন মূসা ভাই আছেন কিনা। তিনি একাধারে শিক্ষক এবং অভিভাবক। সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান বলেন, এবিএম মূসা প্রকৃতপক্ষেই একজন শিক্ষক। তাকে আজও আমি নিউজ এডিটর মনে করি। সংবাদ শনাক্ত ও সংগ্রহ করা দু’টি গুণই তার মধ্যে রয়েছে। এখন তিনি কলামনিস্ট ও টক শো’র নিয়মিত বক্তা। আমরা যত কথাই ছাত্রদের শিখাই না কেন সাংবাদিকতা হচ্ছে সাহসের কাজ। এবিএম মূসার মধ্যে এটি আছে। তিনি কোনদিন বুড়ো হবেন না। সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আমি দৈনিক সংবাদের নিউজ এডিটর ছিলাম। প্রতিদিন গালি শুনতে হতো। মনটা খারাপ ছিল। একদিন প্রেস ক্লাবে মূসা ভাইকে বিষয়টা খুলে বলি এবং তার পরামর্শ চাই। তিনি আমাকে বলেন, প্রতিদিন যে কাজ করো তা নিজের মতো করেই করবা। আর আগের দিন যেসব শুনেছো পরের দিনই একই রকম কথাবার্তা শুনবা। তিনি বলেন, মূসা ভাই এখনও কোন খবর দেখে ফোন করেন। ভুল ধরিয়ে দেন। আমাদের শিক্ষা দেয়ার লোক মূসা ভাই ছাড়া খুব কমই আছেন। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, অলিউর রহমান প্রমুখ।
এবিএম মূসা তার বক্তব্যে আরও বলেন, আমাকে লোকজন টেলিফোনে কিছুদিন আগে প্রশ্ন করতেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি কয়টা আসন পাবে? এক সময় প্রশ্ন করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কয়টা এবং বিএনপি কয়টা আসন পাবে? এরপর প্রশ্ন আসতে থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কয়টা আসন পাবে? এখন প্রশ্ন করছেন নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে। আমি তাদেরকে বলেছি নির্বাচন হবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, কয়েকটা টেলিভিশনের টক শোতে যাওয়া নিয়ে আমাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তারপরও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ আমাকে আমন্ত্রণ করেছে। তবে তারা আমাকে অনুরোধ করে বলেছেন আমি যাতে সংযত কথাবার্তা বলি। আমি আমার মতোই কথা বলে গেছি। বাসায় ফেরার পর তারা জানিয়েছেন, তাদের যায় যায় অবস্থা। তখন আমি তাদেরকে বলি সংযত কথা বলাতেই এ অবস্থা আর অসংযত কথা বললে কি হতো চিন্তা করে দেখো। এবিএম মূসা বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু পেশাগত দিক থেকে এটা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে সাংবাদিকতার মান আজ কমে গেছে। এটা অনেকটা হ-য-ব-র-ল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি চাই সংবাদ। মানুষের এখন সময় কম। তাই তার দরকার সংবাদটা। তার সময় থাকলে সে ব্যাখ্যা সহকারে পড়বে। এখন ‘কাট-ছাঁট’ সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে। তারপরও আমি সাংবাদিকতা নিয়ে আশাবাদী।
তিনি বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সমস্যা উৎসাহের অভাব। প্রবীণরা নবীনদেরকে সাংবাদিকতার সঠিক শিক্ষা দিতে চান না। আর নবীনরাও সঠিক পদ্ধতি শিখতে চান না। সংবাদ রচনার সময় সাংবাদিকদের মনে রাখতে হবে যে সংবাদ আর সাহিত্য এক জিনিস নয়। অনেকে আজকাল ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করতে গিয়ে সংবাদ লেখার পরিবর্তে সাহিত্য রচনা করে বসেন। একটি প্রথম সারির দৈনিকে চার কলামব্যাপী খেলার সংবাদ ছাপা হলো। সংবাদটি পড়ে আমি যথেষ্ট সাহিত্যরস উপভোগ করলেও খেলার ফলাফল কি তা জানতে পারলাম না। পরে আমি ওই সাংবাদিককে ফোন করি তোমার লেখা তো পড়লাম কিন্তু খেলার ফলাফল তো পেলাম না। এবিএম মূসা সংবর্ধনা গ্রহণ করে বলেন, আমি বিস্মিত, আমি বিমোহিত, আমি আনন্দিত আবার আমি বিব্রতবোধও করছি। কেননা প্রথম, দ্বিতীয় প্রজন্ম চলে গেছে। তৃতীয় প্রজন্ম এসে আমাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। আর চতুর্থ প্রজন্ম এসে উঁকি দিচ্ছে। এসময় তিনি অনেক স্মৃতিচারণামূলক কথা বলেন। তিনি এখনও নিজেকে তরুণ মনে করেন বলে জানান। এজন্য সমপ্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি যাননি- যেখানে প্রবীণ সাংবাদিকদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সাংবাদিকতার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং যাপিত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে নিজের আত্মজীবনী লিখছেন বলেও জানান তিনি। বক্তব্যের শেষে তিনি রবীন্দ্রনাথের গান থেকে উচ্চারণ করে বলেন, ‘তোমাদের এই হাসি খেলার মাঝে আমি যে গান গেয়েছিলাম সেই কথাটি মনে রেখো।’
শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত: শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হলেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা। গতকাল সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান। ১১টা ৩৭ মিনিটে অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন। এরপর এবিএম মূসার সম্মানে স্বাগত সংগীত পরিবেশন করেন মাহমুদা খান কাকলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাশ। এরপর বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবিএম শামসুল হক। এবিএম মূসার সংবর্ধনা উপলক্ষে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। এসময় এবিএম মূসাকে স্মারক ও উত্তরী প্রদান করেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মীর মাসরুর জামান।
সাংবাদিকদের অভিভাবক ও দিকনির্দেশক: এবিএম মূসার সাংবাদিকতার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, তিনি সাংবাদিকদের অভিভাবক ও দিকনির্দেশক। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এবিএম মূসার সময়ে আজকের দিনের মতো এত ইলেকট্রনিক মিডিয়া না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার কর্মে, তার আচরণে, তার কথায় সব সময় অটল ও অনড়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম বলেন, এবিএম মূসা প্রথিতযশা ও অনন্য সাংবাদিক। তিনি সত্যের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য লড়াই করেছেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠতার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি সত্য কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। তিনি এখনও তরুণ। কিভাবে নিউজ ম্যানেজমেন্ট করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি তার কলাম পড়ি। টিভিতে টক শো দেখি। চিন্তা করি কিভাবে একজন নির্ভীক সাংবাদিক তার মতামত প্রকাশ করে যাচ্ছেন। নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবিএম মূসা জীবন্ত কিংবদন্তি। জীবন্ত অভিধান। মূসা ভাইয়ের ভয়ে আমি ডেইলি অবজারভারে যোগ দিতে চাইনি। মূসা ভাই অবজারভারে নিউজ এডিটর থাকার কারণেই ভয়ে আমি ‘পূর্বদেশ’ পত্রিকায় যোগ দিতে চেয়েছিলাম। আমি ডেইলি অবজারভারে যোগ দিয়ে দেখি অন্য এক মূসা ভাই। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি ১০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট জমা দেই। আমার সামনেই মূসা ভাই ৫ পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে দেন। মনটা খারাপ হয়ে যায়। পরের দিন রিপোর্টটি আমার নামেই ছাপা হয়। দেখি অন্যরকম এক রিপোর্ট। সেখানে মূসা ভাইয়ের অবদান ৭৫ ভাগ, আমার মাত্র ২৫ ভাগ। তিনি বলেন, ৭০’এর সাইক্লোনের সময় বৃটিশ রয়েল আর্মি আসে পটুয়াখালীতে। আমি যাই রিপোর্টার হিসেবে। অফিসে আসার পর পাকিস্তান আর্মির পিআরও সাদেক সিদ্দিকী অফিসে এসে ইন্ট্রো লিখে দেন। আমি মূসা ভাইকে বিষয়টা খুলে বলি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই ইন্ট্রো ছিঁড়ে ফেলে ওই অফিসারকে ফোন করে বলেন, আর কোনদিন এভাবে ডিকটেট করবেন না। এরপর ২৫শে মার্চের পূর্ব পর্যন্ত ওই অফিসার অবজারভার অফিসে এলে আগে খোঁজ নিয়ে আসতেন মূসা ভাই আছেন কিনা। তিনি একাধারে শিক্ষক এবং অভিভাবক। সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান বলেন, এবিএম মূসা প্রকৃতপক্ষেই একজন শিক্ষক। তাকে আজও আমি নিউজ এডিটর মনে করি। সংবাদ শনাক্ত ও সংগ্রহ করা দু’টি গুণই তার মধ্যে রয়েছে। এখন তিনি কলামনিস্ট ও টক শো’র নিয়মিত বক্তা। আমরা যত কথাই ছাত্রদের শিখাই না কেন সাংবাদিকতা হচ্ছে সাহসের কাজ। এবিএম মূসার মধ্যে এটি আছে। তিনি কোনদিন বুড়ো হবেন না। সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আমি দৈনিক সংবাদের নিউজ এডিটর ছিলাম। প্রতিদিন গালি শুনতে হতো। মনটা খারাপ ছিল। একদিন প্রেস ক্লাবে মূসা ভাইকে বিষয়টা খুলে বলি এবং তার পরামর্শ চাই। তিনি আমাকে বলেন, প্রতিদিন যে কাজ করো তা নিজের মতো করেই করবা। আর আগের দিন যেসব শুনেছো পরের দিনই একই রকম কথাবার্তা শুনবা। তিনি বলেন, মূসা ভাই এখনও কোন খবর দেখে ফোন করেন। ভুল ধরিয়ে দেন। আমাদের শিক্ষা দেয়ার লোক মূসা ভাই ছাড়া খুব কমই আছেন। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, অলিউর রহমান প্রমুখ।
No comments