বিশ্বাসঘাতক গানম্যান by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
বাংলায় এর সমান্তরাল অর্থ দেহরক্ষী। বিশেষ
বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিতে সরকার থেকেই গানম্যান দেয়া হয়।
আবার কেউ বা নিজ খরচে গানম্যান চেয়ে নেন।
গানম্যানের হাতে
নিরাপত্তার ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হন তারা। অনেক ক্ষেত্রেই গানম্যান হয়ে ওঠেন
ছায়াসঙ্গী। কাছাকাছি থাকতে থাকতে প্রায়ই হৃদয়ের খুব কাছের মানুষও হয়ে ওঠেন
গানম্যানরা। হয়ে ওঠেন ভরসারস্থল। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র
বদরউদ্দিন আহমদ কামরানেরও একজন গানম্যান ছিলেন।
চলতি বছরের জুন মাসের ২৯ তারিখ। সিলেট নগরীর তালতলা থেকে মহানগর ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে ৪ লাখ টাকা। এ ঘটনায় কাওসার নামে একজনকে আটক করে ৫৪ ধারায় কোর্টে চালানও দেয়া হয়। কাওসার শিবগঞ্জ লামাপাড়ার বুলু মিয়ার ছেলে। ডিবির ভাষ্যমতে, সফল এ অভিযানের নির্দেশনা দেন সিলেট মেট্রো পুলিশের সহকারী এডিসি নূরে আলম, অভিযান পরিচালনা করেন এসআই জাকির হোসেন, এএসআই সন্তু শীল, কনস্টেবল শতদল (ডিবির সাবেক ক্যাশিয়ার)।
সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের গানম্যান প্রীতেশ তালুকদার। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ছায়া হয়ে ছিলেন মেয়রের সঙ্গে। নগর ভবনের পাশেই তালতলা এলাকায় তার বাস। বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন কামরান ও তার পরিবারের। বিশ্বস্ততার পরীক্ষায় উন্নীত সেই প্রীতেশের কাছেই গচ্ছিত ছিল সাবেক মেয়র কামরানের আড়াই কোটি টাকা। সিটি নির্বাচনের সময় জমা রাখা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার বেঁচে যাওয়া অংশ এটি। প্রীতেশের মাধ্যমেই এ তথ্য পৌঁছে যায় এডিসি নূরে আলমের কাছে। পরিকল্পনা করেন দু’জনে মিলেই।
২৯শে জুন ২০১৩। প্রীতেশের কাছে থাকা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের টাকাগুলো নগরীর আম্বরখানাস্থ হোটেল ব্রিটানিয়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা। পরিকল্পনামাফিক প্রীতেশ নিজে না গিয়ে টাকার ব্যাগ দিয়ে পাঠান কাওসার নামের এক যুবককে দিয়ে। তবে ব্যাগে টাকার পুরোটা ছিল না। ছিল ৪ ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগ রয়ে যায় প্রীতেশের কাছেই। ছকমতোই তালতলায় ডিবি পুলিশের হাতে পাকড়াও হন কাওসার, তখন রাত ৮টা। উদ্ধার দেখানো হয় চার লাখ টাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করছে, অভিযানে উদ্ধার হয় ৬৩ লাখ টাকা। বাকি ৫৯ লাখ টাকা ভাগাভাগি হয় সিলেট মেট্রোপুলিশের একেবারে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত। পুলিশের হাতে ৬৩ লাখ টাকা গেলেও কামরান জানেন খোয়া গেছে তার পুরো আড়াই কোটি টাকাই। যদিও কামরান তা কখনওই স্বীকার করেননি।
ভাগের টাকায় মন ভরেনি নূরে আলমের। পরদিন তিনি ডেকে পাঠান প্রীতেশকে। দাবি করেন আরও ২০ লাখ টাকা। বাগে আনতে না পেরে শাস্তির ভয় দেখান প্রীতেশকে। আকারে ইঙ্গিতে প্রাণনাশেরও ভয় দেখান। আতঙ্কিত প্রীতেশ শরণাপন্ন হন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির। জমা দেন একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে নূরে আলমের সঙ্গে তার কথোপকথনের বর্ণনা দেন প্রীতেশ। নূরে আলম বলেন, ‘প্রীতেশ তুমি খুব সেয়ানা হয়ে গেছ। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কেউ একা টাকা খেয়ে হজম করতে পারে না।’ প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে বিস্মিত প্রীতেশ বিষয়টি বুঝতে না পেরে নূরে আলমকে প্রশ্ন করলে জবাব আসে- ‘আমার সঙ্গে সাবেক মেয়র সাহেবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ১০ বার কথা হইছে, তুমি উনার গানম্যান হিসেবে কর্তব্যরত ছিলা, সেই সুবাদে তোমার কাছে রাখা উনার অনেক টাকা-পয়সা আছে। তুমি উনার সঙ্গে বেইমানি করেছ। অতএব তুমি একা খেয়ে হজম করতে পারবে না। অর্ধেক দিয়ে দাও বাকিগুলা আমি দেখছি।’
এক পর্যায়ে নূরে আলম হুমকিও দেন প্রীতেশকে, ‘তোর বাঁচতে হবে না। তোর বিরুদ্ধে পুলিশ এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্ট্যান্ড নিয়েছে, শান্তিতে চাকরি করতে পারবে না। সাবেক মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা হইছে। উনার হাত অনেক লম্বা। যে কোন সময় প্রাণে মেরে ফেলে গুম করে ফেলবে।’
প্রীতেশের আতঙ্কের প্রকাশ ঘটে প্রতিবেদনের একেবারে শেষে- ‘আমি যদি মারা যাই তাইলে এর কারণ বলার সুযোগ পাবো না বিদায়। আপনার মাধ্যমে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবগতির জন্যে অত্র ফাঁড়িতে হাজির হয়ে আপনার বরাবর তথ্য প্রতিবেদন দাখিল করিলাম।’
‘টাকা উদ্ধারকাণ্ডে’র পর কয়েক দফা বদলি হয়ে প্রীতেশ এখন সিআইডিতে। মোবাইল ফোনে মানবজমিন কথা বলে তার সঙ্গে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ একবাক্যে অস্বীকার করেন তিনি। প্রশ্ন করেন, এত আত্মীয়স্বজন থাকতে আমার কাছে সাবেক মেয়র মহোদয়ের টাকা থাকবে কেন? তিনি তথ্য দেন, নির্বাচনের পাঁচ দিন আগেই সাবেক মেয়রের গানম্যান হিসেবে তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে। তিনি এককথায় টাকার মালিকানা অস্বীকার করেন। বলেন, এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। নির্বাচন-পূর্ব অপপ্রচারের ধারাবাহিকতায়ই একটি মহল এখনও আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে। কামরান জানান, ঘটনার দিন দু’জন সাংবাদিকের কাছ থেকে একই প্রশ্নের মুখোমুখি হলে তিনি কোতোয়ালি থানার ওসির কাছে ফোন দেন। ওসিও জানতে চেয়েছিলেন টাকা তার বা সিটি করপোরেশনের কিনা। তিনি সবাইকেই না সূচক জবাব দিয়েছিলেন। কামরানের তথ্যমতে, ওসি তাকে টাকার অঙ্ক ১৯ লাখ বলে জানিয়েছিলেন। কামরান বলেন, টাকা মেরে দেবে আর আমি বসে থাকবো এটা হাস্যকর ব্যাপার।
চলতি বছরের জুন মাসের ২৯ তারিখ। সিলেট নগরীর তালতলা থেকে মহানগর ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে ৪ লাখ টাকা। এ ঘটনায় কাওসার নামে একজনকে আটক করে ৫৪ ধারায় কোর্টে চালানও দেয়া হয়। কাওসার শিবগঞ্জ লামাপাড়ার বুলু মিয়ার ছেলে। ডিবির ভাষ্যমতে, সফল এ অভিযানের নির্দেশনা দেন সিলেট মেট্রো পুলিশের সহকারী এডিসি নূরে আলম, অভিযান পরিচালনা করেন এসআই জাকির হোসেন, এএসআই সন্তু শীল, কনস্টেবল শতদল (ডিবির সাবেক ক্যাশিয়ার)।
সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের গানম্যান প্রীতেশ তালুকদার। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ছায়া হয়ে ছিলেন মেয়রের সঙ্গে। নগর ভবনের পাশেই তালতলা এলাকায় তার বাস। বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন কামরান ও তার পরিবারের। বিশ্বস্ততার পরীক্ষায় উন্নীত সেই প্রীতেশের কাছেই গচ্ছিত ছিল সাবেক মেয়র কামরানের আড়াই কোটি টাকা। সিটি নির্বাচনের সময় জমা রাখা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার বেঁচে যাওয়া অংশ এটি। প্রীতেশের মাধ্যমেই এ তথ্য পৌঁছে যায় এডিসি নূরে আলমের কাছে। পরিকল্পনা করেন দু’জনে মিলেই।
২৯শে জুন ২০১৩। প্রীতেশের কাছে থাকা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের টাকাগুলো নগরীর আম্বরখানাস্থ হোটেল ব্রিটানিয়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা। পরিকল্পনামাফিক প্রীতেশ নিজে না গিয়ে টাকার ব্যাগ দিয়ে পাঠান কাওসার নামের এক যুবককে দিয়ে। তবে ব্যাগে টাকার পুরোটা ছিল না। ছিল ৪ ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগ রয়ে যায় প্রীতেশের কাছেই। ছকমতোই তালতলায় ডিবি পুলিশের হাতে পাকড়াও হন কাওসার, তখন রাত ৮টা। উদ্ধার দেখানো হয় চার লাখ টাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করছে, অভিযানে উদ্ধার হয় ৬৩ লাখ টাকা। বাকি ৫৯ লাখ টাকা ভাগাভাগি হয় সিলেট মেট্রোপুলিশের একেবারে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত। পুলিশের হাতে ৬৩ লাখ টাকা গেলেও কামরান জানেন খোয়া গেছে তার পুরো আড়াই কোটি টাকাই। যদিও কামরান তা কখনওই স্বীকার করেননি।
ভাগের টাকায় মন ভরেনি নূরে আলমের। পরদিন তিনি ডেকে পাঠান প্রীতেশকে। দাবি করেন আরও ২০ লাখ টাকা। বাগে আনতে না পেরে শাস্তির ভয় দেখান প্রীতেশকে। আকারে ইঙ্গিতে প্রাণনাশেরও ভয় দেখান। আতঙ্কিত প্রীতেশ শরণাপন্ন হন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির। জমা দেন একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে নূরে আলমের সঙ্গে তার কথোপকথনের বর্ণনা দেন প্রীতেশ। নূরে আলম বলেন, ‘প্রীতেশ তুমি খুব সেয়ানা হয়ে গেছ। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কেউ একা টাকা খেয়ে হজম করতে পারে না।’ প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে বিস্মিত প্রীতেশ বিষয়টি বুঝতে না পেরে নূরে আলমকে প্রশ্ন করলে জবাব আসে- ‘আমার সঙ্গে সাবেক মেয়র সাহেবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ১০ বার কথা হইছে, তুমি উনার গানম্যান হিসেবে কর্তব্যরত ছিলা, সেই সুবাদে তোমার কাছে রাখা উনার অনেক টাকা-পয়সা আছে। তুমি উনার সঙ্গে বেইমানি করেছ। অতএব তুমি একা খেয়ে হজম করতে পারবে না। অর্ধেক দিয়ে দাও বাকিগুলা আমি দেখছি।’
এক পর্যায়ে নূরে আলম হুমকিও দেন প্রীতেশকে, ‘তোর বাঁচতে হবে না। তোর বিরুদ্ধে পুলিশ এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্ট্যান্ড নিয়েছে, শান্তিতে চাকরি করতে পারবে না। সাবেক মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা হইছে। উনার হাত অনেক লম্বা। যে কোন সময় প্রাণে মেরে ফেলে গুম করে ফেলবে।’
প্রীতেশের আতঙ্কের প্রকাশ ঘটে প্রতিবেদনের একেবারে শেষে- ‘আমি যদি মারা যাই তাইলে এর কারণ বলার সুযোগ পাবো না বিদায়। আপনার মাধ্যমে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবগতির জন্যে অত্র ফাঁড়িতে হাজির হয়ে আপনার বরাবর তথ্য প্রতিবেদন দাখিল করিলাম।’
‘টাকা উদ্ধারকাণ্ডে’র পর কয়েক দফা বদলি হয়ে প্রীতেশ এখন সিআইডিতে। মোবাইল ফোনে মানবজমিন কথা বলে তার সঙ্গে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ একবাক্যে অস্বীকার করেন তিনি। প্রশ্ন করেন, এত আত্মীয়স্বজন থাকতে আমার কাছে সাবেক মেয়র মহোদয়ের টাকা থাকবে কেন? তিনি তথ্য দেন, নির্বাচনের পাঁচ দিন আগেই সাবেক মেয়রের গানম্যান হিসেবে তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে। তিনি এককথায় টাকার মালিকানা অস্বীকার করেন। বলেন, এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। নির্বাচন-পূর্ব অপপ্রচারের ধারাবাহিকতায়ই একটি মহল এখনও আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে। কামরান জানান, ঘটনার দিন দু’জন সাংবাদিকের কাছ থেকে একই প্রশ্নের মুখোমুখি হলে তিনি কোতোয়ালি থানার ওসির কাছে ফোন দেন। ওসিও জানতে চেয়েছিলেন টাকা তার বা সিটি করপোরেশনের কিনা। তিনি সবাইকেই না সূচক জবাব দিয়েছিলেন। কামরানের তথ্যমতে, ওসি তাকে টাকার অঙ্ক ১৯ লাখ বলে জানিয়েছিলেন। কামরান বলেন, টাকা মেরে দেবে আর আমি বসে থাকবো এটা হাস্যকর ব্যাপার।
No comments