হাজার কোটি টাকার চামড়া নষ্টের আশঙ্কা! by ঊর্মি মাহাবুব
একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে ভারতীয় নিম্নমানের লবণ, এ সব নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এ কারণে এবারের কোরবানির ঈদে সংগৃহীত হাজার কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানা যায়, চলতি বছর আগের বছরের কোরবানি ঈদের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি চামড়া সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু, চামড়া বেশি সংগ্রহের খবরও হাসি ফোটাতে পারবে না ব্যবসায়ীদের।
কারণ, হিসেবে বলা হচ্ছে, ভারতীয় নিম্নমানের লবণ চোরাইপথে এসে দেশের বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। তৃণমূল পর্যায়ের চামড়া সংগ্রহকারীরা অপেক্ষাকৃত কম দাম হওয়ায় ভারতীয় লবণ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আর এতে করেই কেবল ২০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। এর মূল্যমান প্রায় ৫শ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কেমিক্যালের উচ্চমূল্যের কারণে চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হওয়ায় আরো ২০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘চলতি বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ৭০ লাখ পিস চামড়া সংগৃহীত হবে। সংগৃহীত এই চামড়ার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘তবে গত বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম কিছুটা কমে গেলেও ভারতীয় নিম্নমানের লবণের কারণে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে; যার দায় নিতে হবে ব্যবসায়ীদের।’
তিনি বলেন, ‘তাছাড়া ঈদের পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ফলে, একদিকে যেমন চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কঠিন হয়ে পড়বে; তেমনি বিদেশের অর্ডারও কমে আসবে। চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।’
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফবিসিসিআই-এর এক পরিচালক বলেন, ‘প্রতি বছর লবণের চাহিদা থেকে প্রায় ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে কোরবানির ঈদে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে দরকার হয়, প্রায় ১০ হাজার টন লবণ। যেহেতু কোরবানি ঈদে চামড়াকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ লবণের প্রয়োজন হয়, সেহেতু লবণ সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, এ অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। তবে বার বার বলার পরও লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারায় এফবিসিসিআই-এর নেতারাও চিন্তিত।’
বরিশালের তৃণমূল পর্যায়ের এক চামড়া ব্যবসায়ী রতন বলেন, ‘আমরা যারা নিজ এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে থাকি, তাদের বেশির ভাগ সময়ই লাভ তো দূরের কথা, খরচই ওঠে না। কারণ, চামড়া কেনার সময় তো সব ভালো দামেই কিনতে হয়। কিন্তু কেনার পর আমরা না পাই মেডিসিন, না পাই চামড়া রাখার উপযুক্ত গুদাম।’
তিনি বলেন, ‘চামড়ার মান ধরে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছুই করার থাকে না।’
এদিকে, চামড়া ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, যে, দুই বছর আগেও লবণের দাম ছিল ৪শ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা বস্তা (৭৫ কেজি)। কিন্তু, বর্তমানে এই লবণের বস্তার দাম দাঁড়িয়েছে ৫১০ টাকা থেকে সাড়ে ৫শ টাকা পর্যন্ত।
গত বছরের কোরবানি ঈদে এই লবণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮শ টাকার ওপর। চলতি বছরের দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও ঈদের দু/একদিন আগে তা আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
No comments