চট্টগ্রামে জামায়াত শিবিরের তাণ্ডব- ১৫ গাড়িতে আগুন, দিনভর সংঘর্ষ
আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের
প্রতিবাদে চট্টগ্রামে দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। গতকাল সকাল
থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে তারা অন্তত ১৫/২০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
এই
সময় শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্কের। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু জায়গায় পুলিশের
সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায়
ঘোষণার পর প্রথম ঘটনাটি ঘটে নগরীর এনায়েত বাজার এলাকায়। সকাল সাড়ে ১০টায়
তিনপুলের মাথা নামক স্থানে হঠাৎ করেই জড়ো হন জামায়াত-শিবিরের অন্তত ৫০/৬০
জন নেতা-কর্মী। তারা রাস্তায় নেমেই শুরু করে গাড়ি ভাঙচুর। ককটেল বিস্ফোরণের
আওয়াজও শোনা যায়। বেলা সাড়ে ১১টায় মিছিল নিয়ে তারা কাজীর দেউড়ি এলাকার
দিকে এগিয়ে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা
একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি
করলে ছত্রভঙ্গ শিবির কর্মীরা এই সময় দুই পুলিশ সদস্যকে একা পেয়ে বেধড়ক
মারধর করে। জামায়াত কর্মীরা সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের একটি ভ্যানেও
অগ্নিসংযোগ করে। দিগ্বিদিক ছুটতে গিয়ে তাদের রোষানলে পড়েন যাত্রীবাহী আরও
৭টি গাড়ি। ডার মধ্যে ছিল প্রাইভেটকার ও সিএনজি। পুলিশ জানিয়েছে, শিবির
কর্মীদের হামলায় আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন আলীম ও প্রতাপ। এদের মধ্যে আলীম
এসআই ও প্রতাপ নায়েক পদে রয়েছেন। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে
তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১৮ জনকে আটক করেছে। নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার
(কোতোয়ালি) মির্জা সায়েম মাহমুদ গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানান, ‘শিবির
কর্মীরা বেপরোয়া ছিল। তারা চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বাধা দেয়ায় দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেছে।’ এদিকে গতকাল সন্ধ্যায়
মানবজমিনের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে মহানগর জামায়াতের নেতারা তাদের অবস্থান
ব্যাখ্যা করেছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও
চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ
জামায়াতকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার জন্য জামায়াতকে ধ্বংস করতে চায়।
জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে
সরকার। এদেশের জনগণ এ হত্যার ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করবে। এদেশের জনগণের আওয়ামী
লীগের প্রতি কোন আস্থা নেই। এ সরকার গণহত্যার সরকার। ইসলামবিরোধী সরকার।
ক্ষমতায় এসে সরকার ইসলাম নির্মূলের জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
নগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাসহ সকল শীর্ষ
নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে আগামী (আজ) ১৮ ও ১৯শে সেপ্টেম্বর টানা ৪৮
ঘণ্টার হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। জামায়াতের
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাসহ সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দের
মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত এক
বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। কোতোয়ালি থানার
রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে শুরু করে এক বিক্ষোভ মিছিল এনায়েত বাজার মোড়ে গিয়ে
শেষ হয়। মিছিল শেষে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জামায়াত নেতা আবু মুনয়িম, এম
ছিদ্দিকুর রহমান, ছাত্রশিবির নগর দক্ষিণ সভাপতি এম এইচ সোহেল, নগর উত্তর
সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ। বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর শীর্র্ষ
নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল সফল করার লক্ষ্যে
চট্টগ্রাম নগর জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশি হামলার তীব্র
নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারি।
No comments