ফাঁসির দড়ি সরকারের হাতে by ইলিয়াস সরকার

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার ক্ষমতা এখন সরকারের হাতে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ২০(৩) ধারা এ কথাই বলে। সরকার যেদিন চাইবে, সেদিনই মানবতাবিরোধী এ অপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।
 
কারণ, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন তথা ফৌজদারি আইন ও সাক্ষ্য আইন প্রযোজ্য হবে না।এমনটাই মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য করা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ২০(৩) ধারা ধারায় বলা আছে, এই আইনের আওতায় পাওয়া দণ্ড কার্যকর হবে সরকারের আদেশ মতে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়ক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের মতে, কাদের মোল্লার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর এখন তা কখন, কিভাবে কার্যকর করা হবে তার এখতিয়ার এখন সরকারের। ট্রাইব্যুনালস আইনের ২০(৩) ধারা অনুযায়ী সরকার আদেশের মাধ্যমে যে কোনো সময় এ রায় কার্যকর করতে পারবে।

তবে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় পুর্নবিবেচনার সুযোগ রয়েছে। ১৯৮৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রুলস পার্ট-৬ এ বলা আছে, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা যাবে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ রায় ঘোষণা বলতে এখানে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার দিন থেকে বোঝানো হয়েছে।

সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে (আপীল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা) রয়েছে, ‘সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের ওপর থাকবে’।

এদিকে আবদুল কাদের মোল্লা তার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন কি পারবেন না, তা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

একদিকে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, এ রায়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করার সুযোগ নেই।

অপরদিকে আসামিপক্ষ বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে তারা রিভিউ আবেদন করবেন।

তবে কারাসূত্র জানিয়েছে, রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের সুযোগ না থাকলে যেদিন রায়ের কপি কারগারে পৌঁছাবে, সেদিনই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার (সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী) আবেদন করতে পারবেন।  মৃত্যুদণ্ড মওকুফ চেয়ে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে এবং রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলে, নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দিনই ফাঁসিতে ঝোলানো হবে কাদের মোল্লাকে।  কারাবিধি অনুসারে, এ সময়সীমা পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার ২১ থেকে ২৮ দিন। 

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী নানা নৃশংস অপরাধের দায়ে মঙ্গলবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে চূড়ান্ত এ রায় প্রদান করেন সর্বোচ্চ আদালত।

No comments

Powered by Blogger.