উন্নয়নবান্ধব বাজেটের প্রত্যাশায় by মইনুল ইসলাম
বাজেট শুধুই সরকারের আগামী অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলিত পরিমাণের দলিল হলে এ নিয়ে এত মাতামাতি হতো না। প্রকৃত প্রস্তাবে এতে সরকারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দর্শনেরও প্রতিফলন প্রত্যাশিত বলে বাজেট উপস্থাপনের আগে ও পরে বাজেট নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় প্রতিবছর। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রায় আড়াই বছরের মাথায় তৃতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হবে কাল ৯ জুন। এই প্রেক্ষাপটে কিছু আলোচনা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করছি।
১. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো মানব উন্নয়নের মূল ক্ষেত্রগুলোতে বাজার ব্যর্থতার স্বীকৃত বিষয়টিকে ফোকাসে নিয়ে এই দুটি খাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও ব্যয়কে বাজেট বরাদ্দের যৌক্তিক অনুপাতের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রদান;
২. জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সড়ক-জনপথ, রেলপথ, নৌপথ, নদী খনন, স্যানিটেশন, পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাকার ভৌত ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ঘাটতি নিরসনকে অগ্রাধিকার প্রদান;
৩. বাজারব্যবস্থা এবং ব্যক্তি খাতনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কর্তৃক সৃষ্ট আয় ও সম্পদ বৈষম্য নিরসন এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণকামী নিরাপত্তা জাল (Safety net) সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণ;
৪. প্রতিরক্ষা, সিভিল প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতে সরকারি ব্যয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে উন্নয়ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের অনুপাত ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধির মাধ্যমে পাবলিক বিনিয়োগের আয়তন বৃদ্ধিকরণ ও বৈদেশিক খয়রাত নির্ভরতা হ্রাসকরণ;
৫. বাজেটের পরোক্ষ কর নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে আয়কর ও সম্পদ করকে সরকার রাজস্ব আহরণের প্রধান সূত্রে রূপান্তরকরণ এবং
৬. সরকারি ভর্তুকি ব্যবস্থাকে সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সমাজের পিছিয়ে পড়া উৎপাদনশীল কৃষক-শ্রমিকের কল্যাণে নিয়োজিত করা।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর আলোকেই বলা যাবে, বাজেট সত্যিকার অর্থে উন্নয়নবান্ধব বাজেট হওয়ার পথে এগোচ্ছে, নাকি গতানুগতিকতার বৃত্তে আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থাটা ওপরের মূল উন্নয়ন চাহিদাগুলোর আলোকে পর্যালোচনা করলে চিত্রটা হতাশাব্যঞ্জক মনে হবে।
১. শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপির অনুপাত হিসেবে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এই অনুপাত ২.০৭ শতাংশে নামিয়ে ফেলেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এই হার ২.৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু UNESCO জাতিসংঘের সব সদস্যদেশকে আহ্বান জানিয়েছে এই হারকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করার জন্য। তাই আমাদের প্রথম দাবি, ২০১১-১২ সালের বাজেটে এই হারকে অন্তত ৪ শতাংশে পৌঁছানো হোক। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদেরও দাবি এটা। বর্তমান সরকারের সাফল্যের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হোক শিক্ষা সংস্কার। অতএব, শিক্ষার জন্য সরকারি ব্যয়কে জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণাটা অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের বাজেট বক্তৃতার সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘোষণা হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
২. এ দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাও বড়ই নাজুক। ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ক্লিনিকের প্রসার, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অমানবিক মুনাফাবাজি এবং সরকারি হাসপাতাল-ডিসপেনসারি-ক্লিনিকগুলোর বেসামাল অব্যবস্থা এ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাজারীকরণের রক্তচোষা ঘোষণাকে ফুটিয়ে তুলছে। সম্প্রতি প্রকাশিত খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে এহেন বাজারীকরণের রাশ টেনে ধরার সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেল না। তবু আমরা আশা করতে চাই, পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে আগামী বছরের মধ্যেই পুরোপুরি সচল ও কার্যকর করার জন্য বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানো হবে। প্রতি জেলায় সরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটি করে পূর্ণাঙ্গ নার্সিং কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা এবারের বাজেট বক্তৃতায় একটি আশা জাগানো ব্যাপার হতে পারে।
৩. ভৌত ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো খাতের সংকটজনক ঘাটতি ও বিপর্যয়কর অপ্রতুলতা বর্তমান পর্যায়ে এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং যোগাযোগ খাতের সংকট জনজীবনকে যেমনি বিপর্যস্ত করে দিয়েছে, তেমনি উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোরও দক্ষতাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে চলেছে। স্বল্পমেয়াদি রেন্টাল বিদ্যুতের মাধ্যমে আগামী এক বছরে বিদ্যুতের মারাত্মক লোডশেডিং সহনশীল পর্যায়ে কমিয়ে আনার আশাবাদ সৃষ্টি হলেও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি সরকার। কয়লানীতি নিয়ে টালবাহানা থামছে না। সংসদে খসড়া কয়লানীতি নিয়ে আলোচনা করতে বাধা কোথায়? গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনের পিএসসির শর্ত গোপন রাখার কী দরকার? এগুলো নিয়ে খোলামেলা জাতীয় সংলাপ সন্দেহ ও অবিশ্বাসের অবসান ঘটাতে সহায়ক হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথাই শুধু শোনা যাচ্ছে। সৌরবিদ্যুতের উৎপাদনকে বাজেটে ভর্তুকির আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? কৃষি খাতে সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প প্রতিষ্ঠার ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নিয়ে ‘সৌর প্যানেল’ স্থাপনের ব্যয়ের ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা হোক। বাকি ব্যয় সুবিধাভোগী ভূমিমালিক ও কৃষকেরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে বহন করবেন, পাম্প পরিচালনার ব্যয়ও তাঁরা বহন করবেন। শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি নয় মাস যেহেতু বাড়িঘরের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সৌরবিদ্যুতের প্যানেলগুলোর বিকল্প ব্যবহার নামমাত্র বাড়তি খরচে করা সম্ভব হবে, তাই পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য সৌরবিদ্যুৎ দেশকে একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দেবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চাই। শহরাঞ্চলেও সৌর প্যানেল স্থাপনকে উৎসাহিত করতে সৌর প্যানেল উৎপাদনের যাবতীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জাম আমদানিকে করমুক্ত ঘোষণা করা হোক। গৃহস্থালি ব্যবহারে গ্যাস সিলিন্ডারের যাবতীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জামকে করমুক্ত আমদানি সুবিধা দেওয়া হোক।
৪. যোগাযোগব্যবস্থায় রেলওয়ে বর্তমান সরকারের আমলে আরও স্থবির হয়ে পড়েছে। রেলওয়েকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাবটা কোথায় আটকে আছে? ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল ওয়ে করা, ঢাকা-লাকসাম কর্ড লাইন স্থাপন, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ননস্টপ আরও দুটি ট্রেন চালু করা—এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার স্বার্থে আলাদা রেল মন্ত্রণালয় নিঃসন্দেহে সময়ের দাবি।
৫. বর্তমানে সরকারের রাজস্ব বাজেটের ৫৮ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করা হচ্ছে সিভিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতের মতো অনুৎপাদনশীল সরকারি খাতে। এই তিনটি প্রধান খাতের সরকারি ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা না গেলে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (ADP) বৈদেশিক ঋণ ও অনুদাননির্ভরতা সহজে কমানো যাবে না। সংসদে প্রতিরক্ষা নীতি ও প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় বাধা কোথায়? আমরা কি আগামী ১০ বছরে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আকার-আয়তন এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করতে পারি না? উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিন মাসের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে দেশে একটি প্রয়োজনীয় আকারের ‘রিজার্ভ সশস্ত্র বাহিনী’ কি গড়ে তোলা যায় না?
৬. ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার, ই-গভর্নেন্স যার একটি প্রস্তাবিত ডাইমেনশন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির চলমান বিপ্লবকে ধারণ করে আগামী ১০ বছরে সিভিল প্রশাসনের আকার-আয়তন কি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলা যায় না? ঔপনিবেশিক কাঠামোর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর এত সব বাহিনীর আজও কী প্রয়োজন? কলম-পেশা কারণিকদের বস্তা বস্তা ফাইল আর নোটিং থেকে জাতির মুক্তি মিলবে না? ফাই-ফরমাশ খাটা আর চা-নাশতা খাওয়ানোর জন্য পিয়ন-আর্দালি ছাড়া সব আধুনিক দেশের প্রশাসন চলতে পারলে আমরা পারব না কেন? সরকারি প্রশাসন স্রেফ নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। কর্মসংস্থান করবে অর্থনীতির উৎপাদনশীল খাত ও প্রতিষ্ঠানগুলো—সরকারের ভূমিকা হবে প্রধানত নিয়ন্ত্রক ও রেফারির। আর রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে আয় ও সম্পদ পুনর্বণ্টন এবং উৎপাদনের বাতাবরণকে নির্বিঘ্ন করা। অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই এবং আমলাতান্ত্রিক শাখা বিস্তারকে কঠোরভাবে রাশ টেনে ধরা গেলে সিভিল প্রশাসন খাতে সরকারি রাজস্ব ব্যয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে আগামী ১০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলা খুবই সম্ভব। এ দেশের আমলাতন্ত্র সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রবাদপ্রতিম। অথচ ড. আকবর আলি খানের নেতৃত্বাধীন রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনকে বর্তমান সরকার গুটিয়ে ফেলতে মোটেও বিলম্ব করল না! দুঃখটা রাখি কোথায়?
৭. সরকারি প্রশাসনিক ব্যয়ের একটা বিশাল অংশ টিএ/ডিএ খাতে ব্যয় হয়, এটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়। টিএ/ডিএসংক্রান্ত বিধিমালাকে সংস্কার করা যায় না? কোন জায়গায় যেতে খরচ কত হয়, তা কি সঠিকভাবে জানা অসম্ভব? জুনিয়র আমলাকেও সরকারি খরচে গাড়ি দৌড়াতে দেব কেন? রিকুইজিশন করা গাড়িতে আমলা-পরিবারের হাওয়া খাওয়ার সংস্কৃতি কবে বন্ধ হবে? সচিব মহোদয়দের সেডান কার দিয়ে ৪০ বছর কাজ চালানোর পর এখন পাজেরো জিপ লাগবে কেন? তাদের পাজেরো দিলে আরও কয়েক শ পাজেরোর ডিমান্ড নোট আসতে মোটেও দেরি হবে না? সশস্ত্র বাহিনীতে চাল-তেল-আটা-ময়দা-চিনির ভর্তুকি কি কিছুটা কমানো একেবারেই অসম্ভব? সরকারি ভর্তুকি ব্যবস্থাকে তেলা মাথায় তেল দেওয়ার কাজে আর কত দিন ব্যবহার করব?
৮. সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ কর-নির্ভরতা বৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেল কেন? ২৮ লাখ TIN ধারী রয়েছে এ দেশে, অথচ আয়কর দিচ্ছে নাকি মাত্র সাড়ে আট লাখ করদাতা! তথ্যপ্রযুক্তি আয়কর প্রশাসনে পৌঁছাতে আর কত দিন লাগবে? জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটা আয়করদাতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা যায় না? ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় আর্থিক লেনদেনে এই নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় তা বিরাট অবদান রাখবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে এ দেশে ২৩ হাজার ২১২ জন কোটিপতি রয়েছেন বলে জানুয়ারি ২০১১-তে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এই কোটিপতিদের কতজন তাঁদের প্রদেয় আয়কর দিচ্ছেন, সে তালিকাটা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা যায় না? সরকারি রাজস্বের ৫০ শতাংশের বেশি যেদিন প্রত্যক্ষ কর থেকে আদায় করা হবে, সে দিনই হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের সত্যিকার গণমুখী রূপান্তরের অন্যতম প্রধান মাইলস্টোন অতিক্রম!
৯. বাজেটে মানি লন্ডারিং বা কালো টাকা সাদা করার অপসংস্কৃতি বন্ধ করুন। শেয়ারবাজারে গত দুই বছর সরকারই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কালো টাকাকে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এখন এই ভুল নীতির পরিণতি কী হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়ে গতবারের বাজেট বক্তৃতায় এত আশাবাদ ব্যক্ত করা সত্ত্বেও ফলাফল ‘অশ্বডিম্ব’। ওই বিষয়টাতে আরেকটু মনোযোগ দিন।
পরিশেষে বলব ২০১০-১১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে অযথা সময় ও শ্রম অপচয় একেবারেই বে-ফজুল। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বর্ণ সম্ভাবনার দ্বার খোলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একটা সত্যিকারের উন্নয়নবান্ধব বাজেট বাস্তবায়ন করে আগামী অর্থবছরে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার রাজপথে শামিল হোন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা সরকারের কাছে।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
১. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো মানব উন্নয়নের মূল ক্ষেত্রগুলোতে বাজার ব্যর্থতার স্বীকৃত বিষয়টিকে ফোকাসে নিয়ে এই দুটি খাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও ব্যয়কে বাজেট বরাদ্দের যৌক্তিক অনুপাতের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রদান;
২. জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সড়ক-জনপথ, রেলপথ, নৌপথ, নদী খনন, স্যানিটেশন, পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাকার ভৌত ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ঘাটতি নিরসনকে অগ্রাধিকার প্রদান;
৩. বাজারব্যবস্থা এবং ব্যক্তি খাতনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কর্তৃক সৃষ্ট আয় ও সম্পদ বৈষম্য নিরসন এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণকামী নিরাপত্তা জাল (Safety net) সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণ;
৪. প্রতিরক্ষা, সিভিল প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতে সরকারি ব্যয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে উন্নয়ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের অনুপাত ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধির মাধ্যমে পাবলিক বিনিয়োগের আয়তন বৃদ্ধিকরণ ও বৈদেশিক খয়রাত নির্ভরতা হ্রাসকরণ;
৫. বাজেটের পরোক্ষ কর নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে আয়কর ও সম্পদ করকে সরকার রাজস্ব আহরণের প্রধান সূত্রে রূপান্তরকরণ এবং
৬. সরকারি ভর্তুকি ব্যবস্থাকে সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সমাজের পিছিয়ে পড়া উৎপাদনশীল কৃষক-শ্রমিকের কল্যাণে নিয়োজিত করা।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর আলোকেই বলা যাবে, বাজেট সত্যিকার অর্থে উন্নয়নবান্ধব বাজেট হওয়ার পথে এগোচ্ছে, নাকি গতানুগতিকতার বৃত্তে আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থাটা ওপরের মূল উন্নয়ন চাহিদাগুলোর আলোকে পর্যালোচনা করলে চিত্রটা হতাশাব্যঞ্জক মনে হবে।
১. শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপির অনুপাত হিসেবে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এই অনুপাত ২.০৭ শতাংশে নামিয়ে ফেলেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এই হার ২.৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু UNESCO জাতিসংঘের সব সদস্যদেশকে আহ্বান জানিয়েছে এই হারকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করার জন্য। তাই আমাদের প্রথম দাবি, ২০১১-১২ সালের বাজেটে এই হারকে অন্তত ৪ শতাংশে পৌঁছানো হোক। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদেরও দাবি এটা। বর্তমান সরকারের সাফল্যের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হোক শিক্ষা সংস্কার। অতএব, শিক্ষার জন্য সরকারি ব্যয়কে জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণাটা অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের বাজেট বক্তৃতার সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘোষণা হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
২. এ দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাও বড়ই নাজুক। ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ক্লিনিকের প্রসার, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অমানবিক মুনাফাবাজি এবং সরকারি হাসপাতাল-ডিসপেনসারি-ক্লিনিকগুলোর বেসামাল অব্যবস্থা এ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাজারীকরণের রক্তচোষা ঘোষণাকে ফুটিয়ে তুলছে। সম্প্রতি প্রকাশিত খসড়া স্বাস্থ্যনীতিতে এহেন বাজারীকরণের রাশ টেনে ধরার সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেল না। তবু আমরা আশা করতে চাই, পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে আগামী বছরের মধ্যেই পুরোপুরি সচল ও কার্যকর করার জন্য বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানো হবে। প্রতি জেলায় সরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটি করে পূর্ণাঙ্গ নার্সিং কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা এবারের বাজেট বক্তৃতায় একটি আশা জাগানো ব্যাপার হতে পারে।
৩. ভৌত ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো খাতের সংকটজনক ঘাটতি ও বিপর্যয়কর অপ্রতুলতা বর্তমান পর্যায়ে এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং যোগাযোগ খাতের সংকট জনজীবনকে যেমনি বিপর্যস্ত করে দিয়েছে, তেমনি উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোরও দক্ষতাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে চলেছে। স্বল্পমেয়াদি রেন্টাল বিদ্যুতের মাধ্যমে আগামী এক বছরে বিদ্যুতের মারাত্মক লোডশেডিং সহনশীল পর্যায়ে কমিয়ে আনার আশাবাদ সৃষ্টি হলেও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি সরকার। কয়লানীতি নিয়ে টালবাহানা থামছে না। সংসদে খসড়া কয়লানীতি নিয়ে আলোচনা করতে বাধা কোথায়? গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনের পিএসসির শর্ত গোপন রাখার কী দরকার? এগুলো নিয়ে খোলামেলা জাতীয় সংলাপ সন্দেহ ও অবিশ্বাসের অবসান ঘটাতে সহায়ক হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথাই শুধু শোনা যাচ্ছে। সৌরবিদ্যুতের উৎপাদনকে বাজেটে ভর্তুকির আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? কৃষি খাতে সৌরবিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প প্রতিষ্ঠার ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নিয়ে ‘সৌর প্যানেল’ স্থাপনের ব্যয়ের ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা হোক। বাকি ব্যয় সুবিধাভোগী ভূমিমালিক ও কৃষকেরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে বহন করবেন, পাম্প পরিচালনার ব্যয়ও তাঁরা বহন করবেন। শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি নয় মাস যেহেতু বাড়িঘরের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সৌরবিদ্যুতের প্যানেলগুলোর বিকল্প ব্যবহার নামমাত্র বাড়তি খরচে করা সম্ভব হবে, তাই পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য সৌরবিদ্যুৎ দেশকে একটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দেবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চাই। শহরাঞ্চলেও সৌর প্যানেল স্থাপনকে উৎসাহিত করতে সৌর প্যানেল উৎপাদনের যাবতীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জাম আমদানিকে করমুক্ত ঘোষণা করা হোক। গৃহস্থালি ব্যবহারে গ্যাস সিলিন্ডারের যাবতীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জামকে করমুক্ত আমদানি সুবিধা দেওয়া হোক।
৪. যোগাযোগব্যবস্থায় রেলওয়ে বর্তমান সরকারের আমলে আরও স্থবির হয়ে পড়েছে। রেলওয়েকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাবটা কোথায় আটকে আছে? ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল ওয়ে করা, ঢাকা-লাকসাম কর্ড লাইন স্থাপন, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ননস্টপ আরও দুটি ট্রেন চালু করা—এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার স্বার্থে আলাদা রেল মন্ত্রণালয় নিঃসন্দেহে সময়ের দাবি।
৫. বর্তমানে সরকারের রাজস্ব বাজেটের ৫৮ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করা হচ্ছে সিভিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতের মতো অনুৎপাদনশীল সরকারি খাতে। এই তিনটি প্রধান খাতের সরকারি ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা না গেলে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (ADP) বৈদেশিক ঋণ ও অনুদাননির্ভরতা সহজে কমানো যাবে না। সংসদে প্রতিরক্ষা নীতি ও প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় বাধা কোথায়? আমরা কি আগামী ১০ বছরে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আকার-আয়তন এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করতে পারি না? উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিন মাসের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করে দেশে একটি প্রয়োজনীয় আকারের ‘রিজার্ভ সশস্ত্র বাহিনী’ কি গড়ে তোলা যায় না?
৬. ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার, ই-গভর্নেন্স যার একটি প্রস্তাবিত ডাইমেনশন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির চলমান বিপ্লবকে ধারণ করে আগামী ১০ বছরে সিভিল প্রশাসনের আকার-আয়তন কি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলা যায় না? ঔপনিবেশিক কাঠামোর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর এত সব বাহিনীর আজও কী প্রয়োজন? কলম-পেশা কারণিকদের বস্তা বস্তা ফাইল আর নোটিং থেকে জাতির মুক্তি মিলবে না? ফাই-ফরমাশ খাটা আর চা-নাশতা খাওয়ানোর জন্য পিয়ন-আর্দালি ছাড়া সব আধুনিক দেশের প্রশাসন চলতে পারলে আমরা পারব না কেন? সরকারি প্রশাসন স্রেফ নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। কর্মসংস্থান করবে অর্থনীতির উৎপাদনশীল খাত ও প্রতিষ্ঠানগুলো—সরকারের ভূমিকা হবে প্রধানত নিয়ন্ত্রক ও রেফারির। আর রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে আয় ও সম্পদ পুনর্বণ্টন এবং উৎপাদনের বাতাবরণকে নির্বিঘ্ন করা। অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই এবং আমলাতান্ত্রিক শাখা বিস্তারকে কঠোরভাবে রাশ টেনে ধরা গেলে সিভিল প্রশাসন খাতে সরকারি রাজস্ব ব্যয় ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে আগামী ১০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলা খুবই সম্ভব। এ দেশের আমলাতন্ত্র সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রবাদপ্রতিম। অথচ ড. আকবর আলি খানের নেতৃত্বাধীন রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনকে বর্তমান সরকার গুটিয়ে ফেলতে মোটেও বিলম্ব করল না! দুঃখটা রাখি কোথায়?
৭. সরকারি প্রশাসনিক ব্যয়ের একটা বিশাল অংশ টিএ/ডিএ খাতে ব্যয় হয়, এটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়। টিএ/ডিএসংক্রান্ত বিধিমালাকে সংস্কার করা যায় না? কোন জায়গায় যেতে খরচ কত হয়, তা কি সঠিকভাবে জানা অসম্ভব? জুনিয়র আমলাকেও সরকারি খরচে গাড়ি দৌড়াতে দেব কেন? রিকুইজিশন করা গাড়িতে আমলা-পরিবারের হাওয়া খাওয়ার সংস্কৃতি কবে বন্ধ হবে? সচিব মহোদয়দের সেডান কার দিয়ে ৪০ বছর কাজ চালানোর পর এখন পাজেরো জিপ লাগবে কেন? তাদের পাজেরো দিলে আরও কয়েক শ পাজেরোর ডিমান্ড নোট আসতে মোটেও দেরি হবে না? সশস্ত্র বাহিনীতে চাল-তেল-আটা-ময়দা-চিনির ভর্তুকি কি কিছুটা কমানো একেবারেই অসম্ভব? সরকারি ভর্তুকি ব্যবস্থাকে তেলা মাথায় তেল দেওয়ার কাজে আর কত দিন ব্যবহার করব?
৮. সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ কর-নির্ভরতা বৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেল কেন? ২৮ লাখ TIN ধারী রয়েছে এ দেশে, অথচ আয়কর দিচ্ছে নাকি মাত্র সাড়ে আট লাখ করদাতা! তথ্যপ্রযুক্তি আয়কর প্রশাসনে পৌঁছাতে আর কত দিন লাগবে? জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটা আয়করদাতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা যায় না? ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় আর্থিক লেনদেনে এই নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় তা বিরাট অবদান রাখবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে এ দেশে ২৩ হাজার ২১২ জন কোটিপতি রয়েছেন বলে জানুয়ারি ২০১১-তে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এই কোটিপতিদের কতজন তাঁদের প্রদেয় আয়কর দিচ্ছেন, সে তালিকাটা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা যায় না? সরকারি রাজস্বের ৫০ শতাংশের বেশি যেদিন প্রত্যক্ষ কর থেকে আদায় করা হবে, সে দিনই হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের সত্যিকার গণমুখী রূপান্তরের অন্যতম প্রধান মাইলস্টোন অতিক্রম!
৯. বাজেটে মানি লন্ডারিং বা কালো টাকা সাদা করার অপসংস্কৃতি বন্ধ করুন। শেয়ারবাজারে গত দুই বছর সরকারই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কালো টাকাকে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এখন এই ভুল নীতির পরিণতি কী হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়ে গতবারের বাজেট বক্তৃতায় এত আশাবাদ ব্যক্ত করা সত্ত্বেও ফলাফল ‘অশ্বডিম্ব’। ওই বিষয়টাতে আরেকটু মনোযোগ দিন।
পরিশেষে বলব ২০১০-১১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে অযথা সময় ও শ্রম অপচয় একেবারেই বে-ফজুল। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বর্ণ সম্ভাবনার দ্বার খোলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একটা সত্যিকারের উন্নয়নবান্ধব বাজেট বাস্তবায়ন করে আগামী অর্থবছরে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার রাজপথে শামিল হোন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা সরকারের কাছে।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
No comments