অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে আশরাফুলের by তারেক মাহমুদ
শাহাদাত হোসেনের একটা বাউন্সারে খুব জোরে পুল করলেন মাহমুদউল্লাহ। নেটের পাশে দাঁড়ানো কোচ জেমি সিডন্সের সেটা পছন্দ হলো। তার পরও পরের বলে শটে জোরটা আরও বেশি চাইলেন তিনি, ‘কাম অন...ইউ আর আ বিগ ম্যান। হিট দ্য বল হার্ড।’
কোচের চাওয়ার শেষ কখনোই থাকে না। কিন্তু চাওয়া অনুযায়ী সবই কি দেওয়া সম্ভব? জেমি সিডন্সের পরীক্ষাগারে এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ান কোচ অনেক বড় বাজি ধরেছেন আশরাফুলকে নিয়ে। তিনি বদলে দিতে চান আশরাফুলের ব্যাটিংয়ের মৌলিকতম দিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় আট বছর ধরে আশরাফুলের ব্যাটের যে ‘ব্যাক লিফট’ ছিল, গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কীভাবে যেন বদলে গেল সেটা। কোচ জেমি সিডন্স আশরাফুলের এই দুই ব্যাক লিফটই বাদ দিয়ে আনতে চাচ্ছেন নতুনত্ব। কোচের চাওয়ায় আশরাফুলও রাজি। বলছেন, ‘এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারিনি। তবে কোচের দেখানো ব্যাক লিফট আমাকে সাহায্যই করছে মনে হচ্ছে। শট খেলতে আরও বেশি সময় পাচ্ছি এখন।’
বদলটা কী? কোচ সিডন্সের ‘টেকনিক্যাল’ ব্যাখ্যা, ‘আশরাফুল এখন ব্যাট প্রথমে নিচে নামিয়ে তারপর ওপরে ওঠায়। এরপর আবার সেটা নামিয়ে এনে শট খেলে। আমি চাইছি ওর ব্যাক লিফটটা হোক মুশফিকুর রহিমের মতো। নিচে-ওপরে-নিচে না করে সরাসরি ওপর থেকে নামিয়ে এনে শট খেলবে। তাতে শট খেলায় আরও বেশি সময় পাবে ও। টাইমিং ভালো হবে, শটে জোর বাড়বে, আর মাঝখানে যে রকম শট খেলার সময় ওর শরীরটা নিচু হয়ে যেত, সেটা আর হবে না।’ কোচের দেখানো পথে হেঁটে আশরাফুলের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা, ‘আমার এতে সমস্যা হচ্ছে না। এই ব্যাক লিফটে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেলে আমার জন্য ভালো হবে। এতে টাইমিংও ভালো হবে। আমি এখন উইকেটে টিকে থেকে খেলতে চাই। সে জন্যও এটা জরুরি।’ আশরাফুল বলছেন, কোচ ব্যাক লিফটের যে জিনিসটা বদলাতে চাচ্ছেন, সেটা জরুরি মনে করেন তিনি নিজেও, ‘আমার ব্যাট কিন্তু আগে ওপর বা নিচ কোনো দিক থেকেই আসত না। ব্যাট ক্রিজে রেখেই খেলতাম। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত টেস্ট সিরিজেই ব্যাট প্রথমে নামতে শুরু করল। ওখানেই ওয়ানডে সিরিজ থেকে সেটা বদলানোর চেষ্টা করছি। কোচের পরামর্শমতো ব্যাট এখন ওপর থেকে আনার চেষ্টা করছি, কিন্তু সফল হচ্ছিলাম না। গত ম্যাচেই (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে) প্রথম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নতুন ব্যাক লিফটে খেললাম।’
আশরাফুলের ব্যাটিং যাঁরা দীর্ঘদিন খুব কাছ থেকে দেখে আসছেন, তাঁরা এই পরিবর্তনের পক্ষে না বিপক্ষে? অনুসন্ধানে পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আশরাফুলের প্রায় সব ব্যাটিং-কীর্তির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হাবিবুল বাশার পুরো ব্যাপারটা আশরাফুলের ওপর ছেড়ে দিয়েও বললেন, ‘কোচ তার একজন ব্যাটসম্যানের বাটিংয়ে এ রকম সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনতে চাইতেই পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা ব্যাটসম্যানেরই। তবে আমি বলব, আশরাফুল গত ৮-৯ বছর ধরে কোনো সমস্যা ছাড়াই ওভাবে খেলে আসছিল। টাইমিং বা সময় কম পাওয়ার সমস্যা তো ওর কখনোই ছিল না।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতগুলো বছর পার করে দেওয়ার পরও আশরাফুল এখনো যাঁকে ‘গুরু’র মর্যাদা দেন, সেই কোচ ওয়াহিদুল গনি অবশ্য সরাসরি সংঘর্ষে যেতে চাইলেন না সিডন্সীয় তত্ত্বের সঙ্গে। কারণটা পরিষ্কারই—ওয়াহিদুল নিজেও তো এখন বোর্ডের কোচ! তার পরও ব্যক্তিগত মতামতটুকু তিনি দিয়েছেন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকেই, ‘শেষ কথা হলো, ব্যাটসম্যান রান পাচ্ছে কি না। আশরাফুল জাতীয় দলে খেলে, জাতীয় দলের কোচ তাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করলে সে ব্যাপারে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে সে পরিকল্পনায় ব্যাটসম্যান স্বচ্ছন্দ বোধ করছে কি না এবং তাতে কাজ হচ্ছে কি না, সেটাই আসল ব্যাপার।’
ব্যাটিং টেকনিকের দিক থেকে অনেকের কাছেই উদাহরণ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান অবশ্য পুরোপুরিই সমর্থন করছেন সিডন্সকে, ‘মাঝখানে দেখেছি শট খেলার সময় আশরাফুলের শরীর নিচু হয়ে যাচ্ছে। এই সিরিজে তা দেখছি না। আমিও মনে করি শট খেলার সময় ব্যাট ওপর থেকেই আসা উচিত। তবে সেটা পয়েন্ট বা অন্য কোনো দিক থেকে নয়, নামতে হবে স্লিপের দিক থেকে।’ তবে উপসংহারে রকিবুল একমত হাবিবুল আর ওয়াহিদুলের সঙ্গে, ‘শেষ কথাটা ব্যাটসম্যানকেই বলতে হবে। ব্যাটসম্যান কী চায়...? আর সবকিছু যে ব্যাকরণ মেনে হবে তা তো না! জাভেদ মিয়াঁদাদের ব্যাটিংয়ের অনেক কিছুই ব্যাকরণের বাইরে ছিল। তার পরও তিনি এক কিংবদন্তি, টেস্টে সাড়ে ৮ হাজারের ওপর রান।’
আশরাফুলের বিনোদনদায়ী ব্যাটিং দেখে অভ্যস্ত অনেকেরই ক্ষোভ—সেই মারকাটারি ব্যাটিংটা হারিয়ে যাচ্ছে তাঁর ব্যাট থেকে। ব্যাপারটা আশরাফুলও বোঝেন এবং বলেন, দর্শক-সমর্থকদের এই দাবিই তাঁর বদলে যাওয়ার পথে বড় অন্তরায় হচ্ছে, ‘সমর্থকেরা হয়তো আমার এই খেলাটা পছন্দ করছে না। যখন বাইরে থেকে কথা আসে, চিত্কার আসে, একটু সমস্যা তো হয়ই। তার পরও ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা আনতে এটা সহ্য করতে হবে।’
সব মিলিয়ে আশরাফুলের বদলে যাওয়া ব্যাটিংয়ের রহস্য তাহলে ব্যাক লিফট বদলে যাওয়াই! আশরাফুল মানছেন সত্যটা, ‘আমি আমার ব্যাটিং স্টাইল বদলানোর চেষ্টা করছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে পরপর দুই ম্যাচে ফিফটি করেছিলাম। ওখানেও স্টার্ট ধীর ছিল, পরে কাভার করেছি। আগে শুরুটা দ্রুত করতাম, তারপর দেখা যেত আউট হয়ে যেতাম। এখন চেষ্টা করছি শুরুতে সতর্ক থাকার, তারপর কাভার করার।’
সব নতুনেই নতুন দিনের দেখা মেলে কি না, সেটা দেখার সময় তো থাকলই...।
কোচের চাওয়ার শেষ কখনোই থাকে না। কিন্তু চাওয়া অনুযায়ী সবই কি দেওয়া সম্ভব? জেমি সিডন্সের পরীক্ষাগারে এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ান কোচ অনেক বড় বাজি ধরেছেন আশরাফুলকে নিয়ে। তিনি বদলে দিতে চান আশরাফুলের ব্যাটিংয়ের মৌলিকতম দিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় আট বছর ধরে আশরাফুলের ব্যাটের যে ‘ব্যাক লিফট’ ছিল, গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কীভাবে যেন বদলে গেল সেটা। কোচ জেমি সিডন্স আশরাফুলের এই দুই ব্যাক লিফটই বাদ দিয়ে আনতে চাচ্ছেন নতুনত্ব। কোচের চাওয়ায় আশরাফুলও রাজি। বলছেন, ‘এখনো পুরোপুরি রপ্ত করতে পারিনি। তবে কোচের দেখানো ব্যাক লিফট আমাকে সাহায্যই করছে মনে হচ্ছে। শট খেলতে আরও বেশি সময় পাচ্ছি এখন।’
বদলটা কী? কোচ সিডন্সের ‘টেকনিক্যাল’ ব্যাখ্যা, ‘আশরাফুল এখন ব্যাট প্রথমে নিচে নামিয়ে তারপর ওপরে ওঠায়। এরপর আবার সেটা নামিয়ে এনে শট খেলে। আমি চাইছি ওর ব্যাক লিফটটা হোক মুশফিকুর রহিমের মতো। নিচে-ওপরে-নিচে না করে সরাসরি ওপর থেকে নামিয়ে এনে শট খেলবে। তাতে শট খেলায় আরও বেশি সময় পাবে ও। টাইমিং ভালো হবে, শটে জোর বাড়বে, আর মাঝখানে যে রকম শট খেলার সময় ওর শরীরটা নিচু হয়ে যেত, সেটা আর হবে না।’ কোচের দেখানো পথে হেঁটে আশরাফুলের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা, ‘আমার এতে সমস্যা হচ্ছে না। এই ব্যাক লিফটে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেলে আমার জন্য ভালো হবে। এতে টাইমিংও ভালো হবে। আমি এখন উইকেটে টিকে থেকে খেলতে চাই। সে জন্যও এটা জরুরি।’ আশরাফুল বলছেন, কোচ ব্যাক লিফটের যে জিনিসটা বদলাতে চাচ্ছেন, সেটা জরুরি মনে করেন তিনি নিজেও, ‘আমার ব্যাট কিন্তু আগে ওপর বা নিচ কোনো দিক থেকেই আসত না। ব্যাট ক্রিজে রেখেই খেলতাম। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত টেস্ট সিরিজেই ব্যাট প্রথমে নামতে শুরু করল। ওখানেই ওয়ানডে সিরিজ থেকে সেটা বদলানোর চেষ্টা করছি। কোচের পরামর্শমতো ব্যাট এখন ওপর থেকে আনার চেষ্টা করছি, কিন্তু সফল হচ্ছিলাম না। গত ম্যাচেই (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে) প্রথম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নতুন ব্যাক লিফটে খেললাম।’
আশরাফুলের ব্যাটিং যাঁরা দীর্ঘদিন খুব কাছ থেকে দেখে আসছেন, তাঁরা এই পরিবর্তনের পক্ষে না বিপক্ষে? অনুসন্ধানে পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আশরাফুলের প্রায় সব ব্যাটিং-কীর্তির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হাবিবুল বাশার পুরো ব্যাপারটা আশরাফুলের ওপর ছেড়ে দিয়েও বললেন, ‘কোচ তার একজন ব্যাটসম্যানের বাটিংয়ে এ রকম সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনতে চাইতেই পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা ব্যাটসম্যানেরই। তবে আমি বলব, আশরাফুল গত ৮-৯ বছর ধরে কোনো সমস্যা ছাড়াই ওভাবে খেলে আসছিল। টাইমিং বা সময় কম পাওয়ার সমস্যা তো ওর কখনোই ছিল না।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতগুলো বছর পার করে দেওয়ার পরও আশরাফুল এখনো যাঁকে ‘গুরু’র মর্যাদা দেন, সেই কোচ ওয়াহিদুল গনি অবশ্য সরাসরি সংঘর্ষে যেতে চাইলেন না সিডন্সীয় তত্ত্বের সঙ্গে। কারণটা পরিষ্কারই—ওয়াহিদুল নিজেও তো এখন বোর্ডের কোচ! তার পরও ব্যক্তিগত মতামতটুকু তিনি দিয়েছেন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকেই, ‘শেষ কথা হলো, ব্যাটসম্যান রান পাচ্ছে কি না। আশরাফুল জাতীয় দলে খেলে, জাতীয় দলের কোচ তাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করলে সে ব্যাপারে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে সে পরিকল্পনায় ব্যাটসম্যান স্বচ্ছন্দ বোধ করছে কি না এবং তাতে কাজ হচ্ছে কি না, সেটাই আসল ব্যাপার।’
ব্যাটিং টেকনিকের দিক থেকে অনেকের কাছেই উদাহরণ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান অবশ্য পুরোপুরিই সমর্থন করছেন সিডন্সকে, ‘মাঝখানে দেখেছি শট খেলার সময় আশরাফুলের শরীর নিচু হয়ে যাচ্ছে। এই সিরিজে তা দেখছি না। আমিও মনে করি শট খেলার সময় ব্যাট ওপর থেকেই আসা উচিত। তবে সেটা পয়েন্ট বা অন্য কোনো দিক থেকে নয়, নামতে হবে স্লিপের দিক থেকে।’ তবে উপসংহারে রকিবুল একমত হাবিবুল আর ওয়াহিদুলের সঙ্গে, ‘শেষ কথাটা ব্যাটসম্যানকেই বলতে হবে। ব্যাটসম্যান কী চায়...? আর সবকিছু যে ব্যাকরণ মেনে হবে তা তো না! জাভেদ মিয়াঁদাদের ব্যাটিংয়ের অনেক কিছুই ব্যাকরণের বাইরে ছিল। তার পরও তিনি এক কিংবদন্তি, টেস্টে সাড়ে ৮ হাজারের ওপর রান।’
আশরাফুলের বিনোদনদায়ী ব্যাটিং দেখে অভ্যস্ত অনেকেরই ক্ষোভ—সেই মারকাটারি ব্যাটিংটা হারিয়ে যাচ্ছে তাঁর ব্যাট থেকে। ব্যাপারটা আশরাফুলও বোঝেন এবং বলেন, দর্শক-সমর্থকদের এই দাবিই তাঁর বদলে যাওয়ার পথে বড় অন্তরায় হচ্ছে, ‘সমর্থকেরা হয়তো আমার এই খেলাটা পছন্দ করছে না। যখন বাইরে থেকে কথা আসে, চিত্কার আসে, একটু সমস্যা তো হয়ই। তার পরও ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা আনতে এটা সহ্য করতে হবে।’
সব মিলিয়ে আশরাফুলের বদলে যাওয়া ব্যাটিংয়ের রহস্য তাহলে ব্যাক লিফট বদলে যাওয়াই! আশরাফুল মানছেন সত্যটা, ‘আমি আমার ব্যাটিং স্টাইল বদলানোর চেষ্টা করছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে পরপর দুই ম্যাচে ফিফটি করেছিলাম। ওখানেও স্টার্ট ধীর ছিল, পরে কাভার করেছি। আগে শুরুটা দ্রুত করতাম, তারপর দেখা যেত আউট হয়ে যেতাম। এখন চেষ্টা করছি শুরুতে সতর্ক থাকার, তারপর কাভার করার।’
সব নতুনেই নতুন দিনের দেখা মেলে কি না, সেটা দেখার সময় তো থাকলই...।
No comments