মধ্যপ্রাচ্য রবার্ট ফিস্ক ফিরে দেখা: সিরিয়া-ইরাক সম্পর্ক
s
বাগদাদ ও দামেস্কে যেন পুরোনো দিন ফিরে এসেছে। আগের মতোই পারস্পরিক দোষারোপ, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটছে, আর সিরিয়া ও ইরাক কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান যেন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সিরিয়া দুজন ইরাকি বাথপন্থীকে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি একটি আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের দাবি করেছেন। মালিকির অভিযোগ, সেই দুই ব্যক্তি বাগদাদে আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে ১০০ বেসামরিক মানুষ হত্যা করেছেন। সিরিয়া এতে ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছে, দেশটি সব সময় ‘অন্যায়’ আচরণের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল।
সাদ্দাম হোসেন ও হাফিজ আল-আসাদ ২০ বছর আগে দামেস্ক ও বাগদাদে বোমা হামলাকারী পাঠিয়েছিলেন একে অন্যের শহরকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এখন মালিকি এবং হাফিজের পুত্র বাশার পরস্পরকে আক্রমণ করছেন। উপজাতীয় সংযোগ, ঐতিহাসিক সম্পর্ক, আরব ঐক্যের প্রতি ‘ভ্রাতৃসুলভ’ ভালোবাসা—এসবের জন্য মনে হয় যেন দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সময়ে সময়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিতে থাকবে।
সাদ্দাম-হাফিজ যুগে তাঁরা একে অন্যের বোমা হামলকারীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতেন। সিরিয়ার দালালদের দেখা যেত বাগদাদের কোনো রাস্তায় ঝুলছে, বাতাসে মৃদু দুলত তাদের দেহ। দামেস্কেও একই অবস্থা হতো সাদ্দামের পাঠানো খুনিদের। এখনকার দিনগুলো আরেকটু সভ্য হয়েছে। এমন বোমা হামলাকারী আর দেখা যায় না। ইরাক এখন কোনো বোমা হামলাকারী আটক করে না। কিন্তু সিরিয়া যখন নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে জাহির করে, ইরাক তখন আন্তর্জাতিক আইনের দাবি জানায়।
তবে সিরিয়ার স্মৃতি অপেক্ষাকৃত ভালো। দুই দেশের শত্রুভাবাপন্ন বাথ পন্থার পুরোনো দিনগুলোতে সাদ্দামের ক্রোধানল থেকে বাঁচতে মালিকি ও ইরাকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি দামেস্কে আশ্রয় চান। হাফিজ তাঁদের প্রতি সদয় হন, তাঁদের ‘আরব জাতির মাতা’ সিরিয়ায় স্বাগত জানান (দেশটি নিজেকে এ নামে ডাকতে পছন্দ করে)। অন্তত সেই সময়টাতে তাঁরা হাফিজের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন। আজ সিরিয়াবাসী এই যুগলকে সেই উদার সহযোগিতা ও তাঁদের ভণ্ডামির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে বিলম্ব করে না।
সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন আল-থাউরা সংবাদপত্র ঘোষণা করেছে, ‘অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা ও মৃত্যুর হুমকি থেকে বাঁচতে কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে সিরিয়া কখনো তাঁকে হস্তান্তর করে না।’ এটি আরও বলেছে, ‘... তাঁরা (মালিকি ও তালাবানি) জানেন, তাঁদের ভাগ্য কী ঘটত যদি সিরিয়ার এমন রাজনৈতিক নৈতিকতা থাকত।’ সাদ্দামের বাথ পার্টির উচ্চপদস্থ সদস্য মহামেদ আল-ইউনিস ও সাতাম ফারহান দামেস্কে নেই—এমন কথা সিরিয়া বলেনি। কিন্তু বাগদাদে বোমা বিস্ফোরণে তাঁদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ চেয়েছে দেশটি। দামেস্ক মনে করে, এই প্রমাণ দেওয়া ইরাকের পক্ষে কঠিন হবে।
কিন্তু সিরিয়া যে ভণ্ডামির নিন্দা করে, তার দেখা মিলবে সীমান্তের উভয় পারেই। সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে বেড়া ও পর্যবেক্ষণ চৌকি নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত সিরীয় জেনারেলের সঙ্গে আমার সাক্ষাত্ হয়েছিল। তিনি মনে করেন, ইরাকে বিদ্রোহীদের যাতায়াত বন্ধ করার জন্য এটি এক আন্তরিক প্রচেষ্টা। অথচ লেবাননের এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর পরিবারের সঙ্গে আমার সর্বশেষ সাক্ষাতে সেই বোমা হামলাকারীর চাচা আমাকে জানিয়েছেন, ‘সে ইরাকে গিয়েছিল, কারণ লেবানন সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলি শত্রুর ওপর আক্রমণ করার চেয়ে সিরিয়া সীমান্ত পার হয়ে ইরাকে গিয়ে আমেরিকার সেনাদের ওপর আক্রমণ করা সহজ ছিল।’
আসলে ইরাক ও সিরিয়ার বাথপন্থীদের মধ্যে সব সময় সহিষ্ণু, অর্থপূর্ণ, কখনো কখনো বোঝাপড়ার সম্পর্ক ছিল। এমনকি সাদ্দামের শাসনামলেও এ অবস্থা ছিল। এই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল আফলাক ছিলেন সিরীয় খ্রিষ্টান, যাঁর শেষ জীবন কেটেছে ইরাকে। তাঁর পরিবারের মতে, ২০০৩ সালে আমেরিকার হামলায় তাঁর সমাধির ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে সমাধিটি আমেরিকা-নিয়ন্ত্রিত গ্রিন জোনে অবস্থিত। বাথপন্থীরা যেমন সবাই ‘ভাই’, আল-ইউনিস ও ফারহানও তেমনি ‘ভাই’—যাঁরা ইরাকে অবস্থানরত আমেরিকানদের সামরিক কৌশল ও মালিকির বাহিনীর বিষয়ে সিরিয়ার দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা তত্পরতায় অবশ্যই নতুন কিছু যুক্ত করতে পারেন।
কিন্তু সিরিয়ার রাজনৈতিক অখণ্ডতার প্রশংসা করে আল-থাউরার ভাষ্য পাঠ করা দরকার ইতিহাসের ওপর দৃষ্টি রেখে। মৃত্যুর হুমকিতে থাকা কাউকে সিরিয়া কখনো হস্তান্তর করে না, দেশটি এমন দাবি করে। অথচ আমরা কি দেখিনি আবদুল্লাহ ওসালান নামের সেই কুর্দি গেরিলা নেতাকে? সিরিয়া তাঁকে নানাভাবে সহায়তা করেছিল। তুরস্কের কাছ থেকে তাঁর জীবন বিপন্ন ছিল। কিন্তু তুরস্ক যখন আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিল, তত্ক্ষণাত্ ওসালানকে দামেস্ক ছেড়ে যেতে বলা হলো। আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রা করার পর, তুরস্কের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতেই তাঁকে কি ধরা পড়তে হয়নি? আজ পর্যন্ত তাঁকে তুরস্কের কারাগারে পচতে হচ্ছে।
(ইংরেজি থেকে অনূদিত)
* রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতা।
জেলেজীবন
শমসের আলী, রবিউল ইসলাম, শরিফুজ্জামান শরিফ, এ এস এম আতীকুর রহমান ও রোবায়েত ফেরদৌস
নতুন জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি
সিরিয়া দুজন ইরাকি বাথপন্থীকে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি একটি আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের দাবি করেছেন। মালিকির অভিযোগ, সেই দুই ব্যক্তি বাগদাদে আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে ১০০ বেসামরিক মানুষ হত্যা করেছেন। সিরিয়া এতে ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছে, দেশটি সব সময় ‘অন্যায়’ আচরণের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আশ্রয়স্থল ছিল।
সাদ্দাম হোসেন ও হাফিজ আল-আসাদ ২০ বছর আগে দামেস্ক ও বাগদাদে বোমা হামলাকারী পাঠিয়েছিলেন একে অন্যের শহরকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এখন মালিকি এবং হাফিজের পুত্র বাশার পরস্পরকে আক্রমণ করছেন। উপজাতীয় সংযোগ, ঐতিহাসিক সম্পর্ক, আরব ঐক্যের প্রতি ‘ভ্রাতৃসুলভ’ ভালোবাসা—এসবের জন্য মনে হয় যেন দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সময়ে সময়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিতে থাকবে।
সাদ্দাম-হাফিজ যুগে তাঁরা একে অন্যের বোমা হামলকারীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতেন। সিরিয়ার দালালদের দেখা যেত বাগদাদের কোনো রাস্তায় ঝুলছে, বাতাসে মৃদু দুলত তাদের দেহ। দামেস্কেও একই অবস্থা হতো সাদ্দামের পাঠানো খুনিদের। এখনকার দিনগুলো আরেকটু সভ্য হয়েছে। এমন বোমা হামলাকারী আর দেখা যায় না। ইরাক এখন কোনো বোমা হামলাকারী আটক করে না। কিন্তু সিরিয়া যখন নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে জাহির করে, ইরাক তখন আন্তর্জাতিক আইনের দাবি জানায়।
তবে সিরিয়ার স্মৃতি অপেক্ষাকৃত ভালো। দুই দেশের শত্রুভাবাপন্ন বাথ পন্থার পুরোনো দিনগুলোতে সাদ্দামের ক্রোধানল থেকে বাঁচতে মালিকি ও ইরাকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি দামেস্কে আশ্রয় চান। হাফিজ তাঁদের প্রতি সদয় হন, তাঁদের ‘আরব জাতির মাতা’ সিরিয়ায় স্বাগত জানান (দেশটি নিজেকে এ নামে ডাকতে পছন্দ করে)। অন্তত সেই সময়টাতে তাঁরা হাফিজের কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন। আজ সিরিয়াবাসী এই যুগলকে সেই উদার সহযোগিতা ও তাঁদের ভণ্ডামির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে বিলম্ব করে না।
সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন আল-থাউরা সংবাদপত্র ঘোষণা করেছে, ‘অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা ও মৃত্যুর হুমকি থেকে বাঁচতে কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে সিরিয়া কখনো তাঁকে হস্তান্তর করে না।’ এটি আরও বলেছে, ‘... তাঁরা (মালিকি ও তালাবানি) জানেন, তাঁদের ভাগ্য কী ঘটত যদি সিরিয়ার এমন রাজনৈতিক নৈতিকতা থাকত।’ সাদ্দামের বাথ পার্টির উচ্চপদস্থ সদস্য মহামেদ আল-ইউনিস ও সাতাম ফারহান দামেস্কে নেই—এমন কথা সিরিয়া বলেনি। কিন্তু বাগদাদে বোমা বিস্ফোরণে তাঁদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ চেয়েছে দেশটি। দামেস্ক মনে করে, এই প্রমাণ দেওয়া ইরাকের পক্ষে কঠিন হবে।
কিন্তু সিরিয়া যে ভণ্ডামির নিন্দা করে, তার দেখা মিলবে সীমান্তের উভয় পারেই। সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে বেড়া ও পর্যবেক্ষণ চৌকি নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত সিরীয় জেনারেলের সঙ্গে আমার সাক্ষাত্ হয়েছিল। তিনি মনে করেন, ইরাকে বিদ্রোহীদের যাতায়াত বন্ধ করার জন্য এটি এক আন্তরিক প্রচেষ্টা। অথচ লেবাননের এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর পরিবারের সঙ্গে আমার সর্বশেষ সাক্ষাতে সেই বোমা হামলাকারীর চাচা আমাকে জানিয়েছেন, ‘সে ইরাকে গিয়েছিল, কারণ লেবানন সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলি শত্রুর ওপর আক্রমণ করার চেয়ে সিরিয়া সীমান্ত পার হয়ে ইরাকে গিয়ে আমেরিকার সেনাদের ওপর আক্রমণ করা সহজ ছিল।’
আসলে ইরাক ও সিরিয়ার বাথপন্থীদের মধ্যে সব সময় সহিষ্ণু, অর্থপূর্ণ, কখনো কখনো বোঝাপড়ার সম্পর্ক ছিল। এমনকি সাদ্দামের শাসনামলেও এ অবস্থা ছিল। এই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল আফলাক ছিলেন সিরীয় খ্রিষ্টান, যাঁর শেষ জীবন কেটেছে ইরাকে। তাঁর পরিবারের মতে, ২০০৩ সালে আমেরিকার হামলায় তাঁর সমাধির ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে সমাধিটি আমেরিকা-নিয়ন্ত্রিত গ্রিন জোনে অবস্থিত। বাথপন্থীরা যেমন সবাই ‘ভাই’, আল-ইউনিস ও ফারহানও তেমনি ‘ভাই’—যাঁরা ইরাকে অবস্থানরত আমেরিকানদের সামরিক কৌশল ও মালিকির বাহিনীর বিষয়ে সিরিয়ার দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা তত্পরতায় অবশ্যই নতুন কিছু যুক্ত করতে পারেন।
কিন্তু সিরিয়ার রাজনৈতিক অখণ্ডতার প্রশংসা করে আল-থাউরার ভাষ্য পাঠ করা দরকার ইতিহাসের ওপর দৃষ্টি রেখে। মৃত্যুর হুমকিতে থাকা কাউকে সিরিয়া কখনো হস্তান্তর করে না, দেশটি এমন দাবি করে। অথচ আমরা কি দেখিনি আবদুল্লাহ ওসালান নামের সেই কুর্দি গেরিলা নেতাকে? সিরিয়া তাঁকে নানাভাবে সহায়তা করেছিল। তুরস্কের কাছ থেকে তাঁর জীবন বিপন্ন ছিল। কিন্তু তুরস্ক যখন আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিল, তত্ক্ষণাত্ ওসালানকে দামেস্ক ছেড়ে যেতে বলা হলো। আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রা করার পর, তুরস্কের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতেই তাঁকে কি ধরা পড়তে হয়নি? আজ পর্যন্ত তাঁকে তুরস্কের কারাগারে পচতে হচ্ছে।
(ইংরেজি থেকে অনূদিত)
* রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতা।
জেলেজীবন
শমসের আলী, রবিউল ইসলাম, শরিফুজ্জামান শরিফ, এ এস এম আতীকুর রহমান ও রোবায়েত ফেরদৌস
নতুন জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি
No comments