জম্মু ও কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের ভাষ্য অত্যুক্তি by এম কে ভদ্রকুমার
গত
১৩ আগস্ট দিল্লির দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে জম্মু ও
কাশ্মীরের ঘটনাবলী নিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য, আবেদনময় কূটনৈতিক ভাষ্য
উপস্থাপনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ভারতীয় ভাষ্য প্রধানত ভারতবাসীর জন্য। জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি বেশ ‘স্বাভাবিক’ বলে উপস্থাপন করাটা বেশ অদ্ভুত বিষয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের শ্রীনগরের এক রাস্তার কোণায় কাশ্মীরী মুসলিমদের সাথে মাটন বিরিয়ানি উপভোগ করার ছবিটি আসলে চর্বিত চর্বণ।
স্থূল প্রচারণা হৃদয়-মন জয় করতে পারে না। যৌক্তিক ভাষ্য প্রয়োজন। সাধারণভাবে জানা বিষয় যে কাশ্মীরী মুসলিমদের মধ্যে সরকারি পদক্ষেপটির গ্রহণযোগ্যতা তেমন নেই।
ভারতের ভাষ্যটি বিদেশে প্রচারের বিষয়টি আনতে হলে ভারত সরকারকে অবশ্যই স্পর্শকাতরতার বিষয়টি মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে হবে। কারণ এর সাথে আন্তর্জাতিক আইন আর জাতিসংঘ সনদ জড়িত।
সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ের উদ্যোগের সুযোগটি গ্রহণ করতে পারত যদি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার কথাটি বলার সাথে সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার সর্বোত্তম স্বার্থে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সব পার্থক্য নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিতেন।
অবশ্য এ ধরনের দুর্দান্ত উদ্যোগের জন্য কল্পনাশক্তি, দূরদৃষ্টি ও বিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এর চেয়েও বেশি প্রয়োজন নেতৃত্বের পর্যায়ে রাজনৈতিক সাহস। রাষ্ট্রযন্ত্র ও কূটনীতিতে ঘাটতি ভয়াবহ।
আত্ম-শক্তিতে বলীয়ান মনোভাবে হবে না। চীনা স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ইয়ির সাথে বেইজিংয়ে বৈঠক করার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটির দিকে নজর দিন। তাতে ভারতের অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে নিম্নোক্তভাবে:
প্রথমত, সংবিধান সংশোধন ‘ভারতের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং ‘দেশের একান্ত নিজস্ব অধিকার।‘
দ্বিতীয়ত, জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের (লাদাখের মর্যাদা পরিবর্তনসহ) লক্ষ্য হলো আরো ভালো সুশাসন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা।
তৃতীয়ত, সরকারি পদক্ষেপের ফলে ভারতের সাথে বৈদেশিক সীমান্ত বা চীনের সাথে সত্যিকারের নিয়ন্ত্রণ রেখার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এবং চতুর্থত, ভারত অতিরিক্ত কোনো ভূখণ্ডগত দাবি করেনি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সময়ের গোলযোগ বৃদ্ধি নিয়ে চীনা উদ্বেগকে ভারত পাত্তাই দেয়নি। চীন বলেছিল যে কাশ্মীর পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে এমন কোনো একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত হবে না, কাশ্মীর ইস্যুটি এই অঞ্চলের উপনিবেশ ইতিহাস থেকে সৃষ্ট এবং জাতিসংঘ সনদ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রস্তাব এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে যথাযথভাবে সামাল দেয়া উচিত। চীন এতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে যে ভারত আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য দেশে বলদর্পী মনোভাব প্রকাশ করায় দেশে তা বেশ ভালো লাগলেও বিদেশে এমনকি চানক্যপুরী এলাকার কূটনৈতিক অংশেও কেবল হাসি তামাশা ও বিদ্রূপের সৃষ্টি করবে।
পি৫-এর কোনো দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে সমর্থন করেনি। এই ইস্যুতে ভারতকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমর্থন করেছে, এমন ন্যূনতম প্রমাণও নেই। এমনকি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, তাস বা নভোস্তির প্রতিবেদন কিংবা স্বাধীন কোনো রুশ সংবাদমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি। কোনো প্রশ্নবিদ্ধ সংস্থা শুক্রবার রাতে দৃশ্যত ভুয়া নিউজ হিসেবেই রুশ সমর্থনের কথা প্রচার করেছে এবং তা পর দিন সকালে ভারতে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচারিত হয়। মর্মান্তিক বিষয়।
সাদামাটাভাবে বলা যায়, ভারতের অবস্থানটি যুক্তিহীন হওয়ায় তা হিতে বিপরীত হবে। কারণ সে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বাস্তবতা হলো কাশ্মীর হলো একটি আন্তর্জাতিক বিরোধ এবং ভারত একতরফাভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে। এটিকে কেউই ভারতের নিজস্ব বিষয় হিসেবে গ্রহণ করবে না।
বিশ্ব জনমত গ্রহণ করে নিয়েছে যে কাশ্মীর বিরোধে পাকিস্তান একটি পক্ষ। ভারত সীমান্ত পরিবর্তন করেছে কিনা তা কোনো বিষয় নয়। আর এলওসি বা এলওএসিতে এর কোনো প্রভাব নেই, বলাটাও ভিত্তিহীন। বিষয়টি যদি এতই সহজ হতো, তবে মোদি সরকার কেন গিলগিট-বাল্টিস্তান দিয়ে যাওয়া সিপিইসিকে হজম করেনি? আমরা কিন্তু তখন ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্বের কথা বলেছি।
বিশ্ব জনমত কেবল এটাই বিশ্বাস করবে যে দিল্লির আসল উদ্দেশ্য হলো জনসংখ্যার ভারসাম্য পরিবর্তন করা অর্থাৎ ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো অঞ্চল থাকবে না।
আধুনিক ইতিহাসে একতরফা কাজ যদি ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ের’ মতো এতই সহজ হতো, তবে কেন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি? হংকংয়ে হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে বেইজিং কেন এত স্পর্শকাতর? যুক্তরাষ্ট্র কেন দক্ষিণ চীন সাগরে নৌচলাচলের স্বাধীনতার ওপর এত জোর দিচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র কেন নর্থ সি রুট ও আর্কটিক রুট নিয়ে ভ্রু কুঁচকাচ্ছে? শ্রীলঙ্কার মহিন্দা রাজাপাকসা কেন তামিল সমস্যাটির এভাবে সমাধান করছেন না?
উট পাখির মতো বালিতে মুখ ঢেকে রাখার নীতি গ্রহণ করে মোদি সরকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতের জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদি, কঠিন সমস্যা সৃষ্টি করল। বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করছেন যে লাদাখের মর্যাদা পরিবর্তন করে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধকে অবিশ্বাস্য রকমের জটিল করা হয়েছে এবং তা এখন নিরসন করা সম্ভব হবে না। ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
এই জটিলতা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো পাকিস্তানের কাছে প্রস্তাব দেয়া যে ভারত এসব মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। সৌভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউই সামনে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতকে ক্ষ্যাপাতে চাইছে না।
সার কথা হলো, পাকিস্তানের সাথে মতপার্থক্য নিরসনে ভারত দ্বিপক্ষীয়বাদের ওপর জোর দিয়ে আসছিল। ভারত এখন তার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার বিষয়টি কাজে লাগাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে আশ্বাস দেয়ার অনেক অবকাশ সবসময়ই থাকে যে কাশ্মীর উপত্যাকাকে উপনিবেশ বানানো হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক এলাকাতেই এমন ব্যবস্থা রয়েছে।
সুযোগের জানালা দীর্ঘ সময় খোলা থাকবে না। সব দিক থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি বিস্ফোরণমুখ এবং মানুষের দুর্দশার ভীষণ গর্জন ধেয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আরেকটি পুলাওয়ামা ঘটার পূর্বাভাস মিথ্যা নয়। নয়া দিল্লির জন্য ধ্বংস্তুপ থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নতুন স্থাপত্য নির্মাণ অনেক জটিল কাজ, পাকিস্তানের সাথে সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন পর্যন্ত ভারতীয় ভাষ্য প্রধানত ভারতবাসীর জন্য। জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি বেশ ‘স্বাভাবিক’ বলে উপস্থাপন করাটা বেশ অদ্ভুত বিষয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের শ্রীনগরের এক রাস্তার কোণায় কাশ্মীরী মুসলিমদের সাথে মাটন বিরিয়ানি উপভোগ করার ছবিটি আসলে চর্বিত চর্বণ।
স্থূল প্রচারণা হৃদয়-মন জয় করতে পারে না। যৌক্তিক ভাষ্য প্রয়োজন। সাধারণভাবে জানা বিষয় যে কাশ্মীরী মুসলিমদের মধ্যে সরকারি পদক্ষেপটির গ্রহণযোগ্যতা তেমন নেই।
ভারতের ভাষ্যটি বিদেশে প্রচারের বিষয়টি আনতে হলে ভারত সরকারকে অবশ্যই স্পর্শকাতরতার বিষয়টি মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে হবে। কারণ এর সাথে আন্তর্জাতিক আইন আর জাতিসংঘ সনদ জড়িত।
সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ের উদ্যোগের সুযোগটি গ্রহণ করতে পারত যদি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার কথাটি বলার সাথে সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার সর্বোত্তম স্বার্থে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সব পার্থক্য নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিতেন।
অবশ্য এ ধরনের দুর্দান্ত উদ্যোগের জন্য কল্পনাশক্তি, দূরদৃষ্টি ও বিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এর চেয়েও বেশি প্রয়োজন নেতৃত্বের পর্যায়ে রাজনৈতিক সাহস। রাষ্ট্রযন্ত্র ও কূটনীতিতে ঘাটতি ভয়াবহ।
আত্ম-শক্তিতে বলীয়ান মনোভাবে হবে না। চীনা স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ইয়ির সাথে বেইজিংয়ে বৈঠক করার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটির দিকে নজর দিন। তাতে ভারতের অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে নিম্নোক্তভাবে:
প্রথমত, সংবিধান সংশোধন ‘ভারতের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং ‘দেশের একান্ত নিজস্ব অধিকার।‘
দ্বিতীয়ত, জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের (লাদাখের মর্যাদা পরিবর্তনসহ) লক্ষ্য হলো আরো ভালো সুশাসন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা।
তৃতীয়ত, সরকারি পদক্ষেপের ফলে ভারতের সাথে বৈদেশিক সীমান্ত বা চীনের সাথে সত্যিকারের নিয়ন্ত্রণ রেখার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এবং চতুর্থত, ভারত অতিরিক্ত কোনো ভূখণ্ডগত দাবি করেনি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সময়ের গোলযোগ বৃদ্ধি নিয়ে চীনা উদ্বেগকে ভারত পাত্তাই দেয়নি। চীন বলেছিল যে কাশ্মীর পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে এমন কোনো একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত হবে না, কাশ্মীর ইস্যুটি এই অঞ্চলের উপনিবেশ ইতিহাস থেকে সৃষ্ট এবং জাতিসংঘ সনদ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রস্তাব এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে যথাযথভাবে সামাল দেয়া উচিত। চীন এতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে যে ভারত আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য দেশে বলদর্পী মনোভাব প্রকাশ করায় দেশে তা বেশ ভালো লাগলেও বিদেশে এমনকি চানক্যপুরী এলাকার কূটনৈতিক অংশেও কেবল হাসি তামাশা ও বিদ্রূপের সৃষ্টি করবে।
পি৫-এর কোনো দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে সমর্থন করেনি। এই ইস্যুতে ভারতকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমর্থন করেছে, এমন ন্যূনতম প্রমাণও নেই। এমনকি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, তাস বা নভোস্তির প্রতিবেদন কিংবা স্বাধীন কোনো রুশ সংবাদমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো খবর প্রকাশিত হয়নি। কোনো প্রশ্নবিদ্ধ সংস্থা শুক্রবার রাতে দৃশ্যত ভুয়া নিউজ হিসেবেই রুশ সমর্থনের কথা প্রচার করেছে এবং তা পর দিন সকালে ভারতে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচারিত হয়। মর্মান্তিক বিষয়।
সাদামাটাভাবে বলা যায়, ভারতের অবস্থানটি যুক্তিহীন হওয়ায় তা হিতে বিপরীত হবে। কারণ সে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বাস্তবতা হলো কাশ্মীর হলো একটি আন্তর্জাতিক বিরোধ এবং ভারত একতরফাভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে। এটিকে কেউই ভারতের নিজস্ব বিষয় হিসেবে গ্রহণ করবে না।
বিশ্ব জনমত গ্রহণ করে নিয়েছে যে কাশ্মীর বিরোধে পাকিস্তান একটি পক্ষ। ভারত সীমান্ত পরিবর্তন করেছে কিনা তা কোনো বিষয় নয়। আর এলওসি বা এলওএসিতে এর কোনো প্রভাব নেই, বলাটাও ভিত্তিহীন। বিষয়টি যদি এতই সহজ হতো, তবে মোদি সরকার কেন গিলগিট-বাল্টিস্তান দিয়ে যাওয়া সিপিইসিকে হজম করেনি? আমরা কিন্তু তখন ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্বের কথা বলেছি।
বিশ্ব জনমত কেবল এটাই বিশ্বাস করবে যে দিল্লির আসল উদ্দেশ্য হলো জনসংখ্যার ভারসাম্য পরিবর্তন করা অর্থাৎ ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো অঞ্চল থাকবে না।
আধুনিক ইতিহাসে একতরফা কাজ যদি ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ের’ মতো এতই সহজ হতো, তবে কেন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি? হংকংয়ে হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে বেইজিং কেন এত স্পর্শকাতর? যুক্তরাষ্ট্র কেন দক্ষিণ চীন সাগরে নৌচলাচলের স্বাধীনতার ওপর এত জোর দিচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র কেন নর্থ সি রুট ও আর্কটিক রুট নিয়ে ভ্রু কুঁচকাচ্ছে? শ্রীলঙ্কার মহিন্দা রাজাপাকসা কেন তামিল সমস্যাটির এভাবে সমাধান করছেন না?
উট পাখির মতো বালিতে মুখ ঢেকে রাখার নীতি গ্রহণ করে মোদি সরকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতের জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদি, কঠিন সমস্যা সৃষ্টি করল। বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করছেন যে লাদাখের মর্যাদা পরিবর্তন করে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধকে অবিশ্বাস্য রকমের জটিল করা হয়েছে এবং তা এখন নিরসন করা সম্ভব হবে না। ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
এই জটিলতা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো পাকিস্তানের কাছে প্রস্তাব দেয়া যে ভারত এসব মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। সৌভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউই সামনে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতকে ক্ষ্যাপাতে চাইছে না।
সার কথা হলো, পাকিস্তানের সাথে মতপার্থক্য নিরসনে ভারত দ্বিপক্ষীয়বাদের ওপর জোর দিয়ে আসছিল। ভারত এখন তার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার বিষয়টি কাজে লাগাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে আশ্বাস দেয়ার অনেক অবকাশ সবসময়ই থাকে যে কাশ্মীর উপত্যাকাকে উপনিবেশ বানানো হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক এলাকাতেই এমন ব্যবস্থা রয়েছে।
সুযোগের জানালা দীর্ঘ সময় খোলা থাকবে না। সব দিক থেকেই জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি বিস্ফোরণমুখ এবং মানুষের দুর্দশার ভীষণ গর্জন ধেয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আরেকটি পুলাওয়ামা ঘটার পূর্বাভাস মিথ্যা নয়। নয়া দিল্লির জন্য ধ্বংস্তুপ থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নতুন স্থাপত্য নির্মাণ অনেক জটিল কাজ, পাকিস্তানের সাথে সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১২ আগস্ট ২০১৯, বেইজিংয়ে চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক |
No comments