আরও একটি স্বপ্নের মৃত্যু by কাজল ঘোষ
সহপাঠীদের সঙ্গে তুলনা |
তুলনার
স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ল ইয়ার হবে। তুলনা ভাবতো, আইন পড়লে দেশের
অন্যায়-অবিচার-অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। মানুষের সেবা করতে পারবে।
সামনের নভেম্বরে পিএসসি। জীবনের এক অধ্যায় শেষ করে পরের ধাপে পা রাখবে।
কিন্তু তুলনার সব স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। তাকে কেড়ে নিল মরণব্যাধি
ডেঙ্গু।
তুলনার পুরো নাম তাসকিয়া সরকার তুলনা।
টিকাটুলির কামরুননেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। ক্লাসের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ছিল। বরাবরই সে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকতো। সহপাঠী নওশিন জাহান জানায়, তুলনা ছিল ক্লাসের হাসিখুশি প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী। সারাক্ষণ ক্লাস মাতিয়ে রাখতো হাসি আর আনন্দে। কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিল। নওশিনের চোখে তখন তুলনার জন্য কান্না। নওশিন বলে, বৃহষ্পতিবার তার জন্মদিন ছিল। কথা ছিল তুলনাকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটবে। হইচই করে ক্লাস মাতাবে সবাই মিলে। কেক নিয়ে বন্ধুরা ক্লাসে হাজিরও হয়েছিল। বন্ধুরা সবার জন্মদিনে এমনটাই করে থাকে। কিন্তু দিনটি সহপাঠীদের কেটেছে উদ্বেগে। তুলনার ডেঙ্গু হওয়ার খবর সবাই ততক্ষণে জেনে গেছে।
মা ফাতেমা আক্তার জানান, স্বপ্ন ছিল মেয়েকে বড় হলে ল পড়াবেন। মেয়ের সাধ পূরণ করবেন। বলতেন, মা তুই বড় হ। আমি তোকে ল ইয়ার বানাবার জন্য যা কষ্ট করা দরকার করব। বাবা মোহাম্মদ স্বপন মিয়া গোপীবাগ বাজারে মাছের ব্যবসায় করেন। গোপীবাগ সপ্তম গলির ৮৯/১ নম্বরে তাদের বাসা।
তুলনার বাবা-মা জানায়, ১৯ আগস্ট সোমবার জ্বর এলে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পরলে প্রথম কদিন বাসায় রেখে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে প্লাটিলেট কমতে থাকলে তাকে নেয়া শাহবাগের বঙ্গবন্ধু পিজি হাসপাতালে। ২২ তারিখ বৃহষ্পতিবার হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলে ভর্তি করা হয়। সেখানকার বিশ তলার ড্রেসিং রুমের এক্সর্টা ১৭ নম্বর বেডে তুলনাকে রেখে চিকিৎসা চললেও ঠিক তিনদিনের মাথায় ২৪ তারিখ শনিবার দুপুরে তারা জানায় অবস্থা ভাল না। এখান থেকে তাকে বাইরে কোথাও আইসিইউতে নেয়ার জন্য।
কিন্তু হাসপাতালের এক রুম থেকে আরেক রুমে, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে কাগজপত্র আর আইসিইউতে নেয়ার তদবির করতেই করতেই হয়রান হয়ে পড়ে তুলনার বাব-মা-স্বজনরা। একটি সিট খালি আছে বললেও বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলে অপেক্ষা করায়।
ওদিকে, ধীরে ধীরে তুলনার শারীরীক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। একসময় তারা জানায়, বাইরে প্রাইভেটে যেখানে আইসিইউ আছে সেখানে নিয়ে যেতে। একসময় পিজি কর্তৃপক্ষ আইসিইউ ব্যবস্থা না করে ডেঙ্গু সেল থেকে রোগীকে শিশু বিভাগে স্থানান্তর করে।
তুলনার অবিভাবকরা জানায়, পিজিতে থাকা অবস্থাতেই সকাল থেকেই তার পেট ফুলে যায়। তীব্র ব্যথা অনুভব করতে থাকে। ডাক্তারদের বারবার বলার পরও এ বিষয়ে কোনও সমাধান দিতে পারেনি ডিউটিরত চিকৎসকরা। একের পর এক প্রেসক্রিপশন দিয়ে ঔষধ আর স্যালাইন আনায়, এটুকুই। কিন্তু রোগী ততক্ষণে ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকে। দুপুর দুটার দিকে পিজির ডেঙ্গু সেল থেকে তাদের জরুরি ভিত্তিতে যেখানে আইসিইউ আছে সেখানে নিয়ে যেতে বলে তাদের কিছু করার নেই বলা হয়।
একদিকে মেয়ের কান্না। অন্যদিকে বাবা-মায়ের উদ্বেগ্ন বাড়তে থাকে। কোথায় পাবে আইসিইউ। আশেপাশে যোগাযোগের চেষ্টা করে আইসিইউ না পেয়ে তারা পিজি থেকে বের হয়ে ছুটে যায় উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। সেখানকার ডিউটি ডাক্তাররা রোগীর অবস্থা দেখে আইসিউই খালি নেই বলে না করে দেয়। সেখান থেকে তুলনার অবিভাবকরা ছুটে যায় বসুন্ধরায় অ্যাপোলো হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে ডাক্তাররা দেখে আইসিইউ নেই বলে অন্যত্র যেতে বলে।
অ্যাপেলো থেকে অ্যাম্বুলন্স তুলনাকে নিয়ে আসে সিদ্বেশ্বরীর ডা. সিরাজুল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে নেয়ার আধঘন্টার মধ্যেই কর্তব্যরতরা রোগীকে অন্য কোথাও নিতে বলে। উপায়ন্তর না দেখে কাছাকাছি মগবাজারে রাশমোনো জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে তারা জানায়, তুলনাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। ততক্ষণে জীবন-মৃত্যুর সঙ্কটে তুলনা। সেখানেই সকল স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে তুলনার। এক আইসিইউ থেকে আরেক আইসিইউতে নেয়ার টানাটানিতে বাঁচার সকল আশা শেষ হয়ে যায়।
দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা এই আট ঘন্টায় তুলনাকে নিয়ে পাঁচবার হাসপাতাল বদল করে তার অবিভাবক। তুলনার অবিভাবকদের ও অভিযোগ, পিজি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হলে তুলনাকে অকালে মরতে হতো না।
তুলনার পুরো নাম তাসকিয়া সরকার তুলনা।
টিকাটুলির কামরুননেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। ক্লাসের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ছিল। বরাবরই সে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকতো। সহপাঠী নওশিন জাহান জানায়, তুলনা ছিল ক্লাসের হাসিখুশি প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী। সারাক্ষণ ক্লাস মাতিয়ে রাখতো হাসি আর আনন্দে। কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিল। নওশিনের চোখে তখন তুলনার জন্য কান্না। নওশিন বলে, বৃহষ্পতিবার তার জন্মদিন ছিল। কথা ছিল তুলনাকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটবে। হইচই করে ক্লাস মাতাবে সবাই মিলে। কেক নিয়ে বন্ধুরা ক্লাসে হাজিরও হয়েছিল। বন্ধুরা সবার জন্মদিনে এমনটাই করে থাকে। কিন্তু দিনটি সহপাঠীদের কেটেছে উদ্বেগে। তুলনার ডেঙ্গু হওয়ার খবর সবাই ততক্ষণে জেনে গেছে।
মা ফাতেমা আক্তার জানান, স্বপ্ন ছিল মেয়েকে বড় হলে ল পড়াবেন। মেয়ের সাধ পূরণ করবেন। বলতেন, মা তুই বড় হ। আমি তোকে ল ইয়ার বানাবার জন্য যা কষ্ট করা দরকার করব। বাবা মোহাম্মদ স্বপন মিয়া গোপীবাগ বাজারে মাছের ব্যবসায় করেন। গোপীবাগ সপ্তম গলির ৮৯/১ নম্বরে তাদের বাসা।
তুলনার বাবা-মা জানায়, ১৯ আগস্ট সোমবার জ্বর এলে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পরলে প্রথম কদিন বাসায় রেখে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে প্লাটিলেট কমতে থাকলে তাকে নেয়া শাহবাগের বঙ্গবন্ধু পিজি হাসপাতালে। ২২ তারিখ বৃহষ্পতিবার হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলে ভর্তি করা হয়। সেখানকার বিশ তলার ড্রেসিং রুমের এক্সর্টা ১৭ নম্বর বেডে তুলনাকে রেখে চিকিৎসা চললেও ঠিক তিনদিনের মাথায় ২৪ তারিখ শনিবার দুপুরে তারা জানায় অবস্থা ভাল না। এখান থেকে তাকে বাইরে কোথাও আইসিইউতে নেয়ার জন্য।
কিন্তু হাসপাতালের এক রুম থেকে আরেক রুমে, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে কাগজপত্র আর আইসিইউতে নেয়ার তদবির করতেই করতেই হয়রান হয়ে পড়ে তুলনার বাব-মা-স্বজনরা। একটি সিট খালি আছে বললেও বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলে অপেক্ষা করায়।
ওদিকে, ধীরে ধীরে তুলনার শারীরীক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। একসময় তারা জানায়, বাইরে প্রাইভেটে যেখানে আইসিইউ আছে সেখানে নিয়ে যেতে। একসময় পিজি কর্তৃপক্ষ আইসিইউ ব্যবস্থা না করে ডেঙ্গু সেল থেকে রোগীকে শিশু বিভাগে স্থানান্তর করে।
তুলনার অবিভাবকরা জানায়, পিজিতে থাকা অবস্থাতেই সকাল থেকেই তার পেট ফুলে যায়। তীব্র ব্যথা অনুভব করতে থাকে। ডাক্তারদের বারবার বলার পরও এ বিষয়ে কোনও সমাধান দিতে পারেনি ডিউটিরত চিকৎসকরা। একের পর এক প্রেসক্রিপশন দিয়ে ঔষধ আর স্যালাইন আনায়, এটুকুই। কিন্তু রোগী ততক্ষণে ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকে। দুপুর দুটার দিকে পিজির ডেঙ্গু সেল থেকে তাদের জরুরি ভিত্তিতে যেখানে আইসিইউ আছে সেখানে নিয়ে যেতে বলে তাদের কিছু করার নেই বলা হয়।
একদিকে মেয়ের কান্না। অন্যদিকে বাবা-মায়ের উদ্বেগ্ন বাড়তে থাকে। কোথায় পাবে আইসিইউ। আশেপাশে যোগাযোগের চেষ্টা করে আইসিইউ না পেয়ে তারা পিজি থেকে বের হয়ে ছুটে যায় উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। সেখানকার ডিউটি ডাক্তাররা রোগীর অবস্থা দেখে আইসিউই খালি নেই বলে না করে দেয়। সেখান থেকে তুলনার অবিভাবকরা ছুটে যায় বসুন্ধরায় অ্যাপোলো হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে ডাক্তাররা দেখে আইসিইউ নেই বলে অন্যত্র যেতে বলে।
অ্যাপেলো থেকে অ্যাম্বুলন্স তুলনাকে নিয়ে আসে সিদ্বেশ্বরীর ডা. সিরাজুল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে নেয়ার আধঘন্টার মধ্যেই কর্তব্যরতরা রোগীকে অন্য কোথাও নিতে বলে। উপায়ন্তর না দেখে কাছাকাছি মগবাজারে রাশমোনো জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে তারা জানায়, তুলনাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। ততক্ষণে জীবন-মৃত্যুর সঙ্কটে তুলনা। সেখানেই সকল স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে তুলনার। এক আইসিইউ থেকে আরেক আইসিইউতে নেয়ার টানাটানিতে বাঁচার সকল আশা শেষ হয়ে যায়।
দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা এই আট ঘন্টায় তুলনাকে নিয়ে পাঁচবার হাসপাতাল বদল করে তার অবিভাবক। তুলনার অবিভাবকদের ও অভিযোগ, পিজি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হলে তুলনাকে অকালে মরতে হতো না।
No comments