সাত কলেজ নিয়ে উভয় সংকটে প্রশাসন: ১১ সদস্যের কমিটি গঠন by মুনির হোসেন
সাত
কলেজ নিয়ে উভয় সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিছুদিন পরপর
বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে মাঠে
নামছেন। শিক্ষার্থীদের মিছিল, মিটিং, অবরোধে বিব্রত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসব আন্দোলনের যথেষ্ট যৌক্তিকতাও রয়েছে। বিশেষ করে সাত কলেজের
শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে। তবে এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের সময়ে অসময়ে
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বসে যাওয়ায় বিব্রত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন
বর্তমান প্রশাসন বলছেন, সাত কলেজের অপরিকল্পিত অন্তর্ভুক্তির খেসারত দিতে
হচ্ছে প্রশাসনকে। এর জন্য সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীকে
দায়ী করছেন তারা।
সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত রোববার থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে টানা তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ছাত্রলীগও সাত কলেজের অধিভুক্তিকে একটি ‘আনহ্যাপী ম্যারেজ’ উল্লেখ করে এর ‘পিসফুল ডিভোর্স’ চেয়েছে। অন্যদিকে সেশনজট, ফল বিপর্যয়সহ পাঁচ দফা দাবিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই আন্দোলনে রয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করলেও দাবি আদায়ে কালক্ষেপণ হলে ফের আন্দোলনে যাবে তারা। এ অবস্থায় সংকট সমাধানে গতকাল ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মু. সামাদের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সাত কলেজের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি হয়েছে। তাই সাত কলেজের সুষ্ঠু সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা হয় এই জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে এটির সমাধান করা হবে। সন্ধ্যায় তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় নিয়ে এগুচ্ছি। সব থেকে বড় কথা আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে আগে প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ এরাই হচ্ছে আমাদের প্রথম পাইওরিটি। উদ্বুদ্ধ সমস্যা সমাধানে সুপারিশ করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সাত কলেজের ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। যার কারণে তারা কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের এমন কিছু শাখা রয়েছে যেগুলোর সঙ্গে সাত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ওইসব শাখায়ও লোকবল সংকট আছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ কারণে ভুগছে। এমতাবস্থায় লোকবল বাড়াতে হবে বলে মত এ কর্মকর্তার। জানা গেছে, সাত কলেজের অধিভুক্তির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রশাসনিক ভবনে যেকোনো কাজ করতে গেলে তাদের কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বিভাগে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। যার কারণে তারাও পিছিয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষকরাও সাত কলেজের উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ভাইবা নেয়াসহ অতিরিক্ত চাপে ক্লাসে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। তাছাড়া একজন শিক্ষকের ক্লাস নেয়ার বাইরে গবেষণায় যে সময় দেয়ার কথা তা তারা দিতে পারছেন না। যার কারণে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সনদপত্রের অভিন্নতা তাদের সাত কলেজ বিরোধী করে তুলছে। তারা বলেন, আমরা আসলে সাত কলেজের বিপক্ষে নই, আমরা প্রশাসনের পদ্ধতির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আরো বেশি সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেশনজট, ফল প্রকাশে বিলম্ব, ফল বিপর্যয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করায় ভুগতে হচ্ছে তাদের। বিষয়গুলোর সমাধানে বারবার আন্দোলনে নামলেও এর স্থায়ী সমাধান হয়নি। যার কারণে ফের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে তাদের। সমপ্রতি প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে গণহারে ফেলের অভিযোগ করছে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফেলের চাপ নিতে না পেরে গত ১৬ই জুলাই রাতে বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল বিকালে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সুলতানা পারভীন বৃষ্টি মানবজমিনকে বলেন, সাত কলেজের মধ্যে আমরাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কোন একটি বিষয়ে সবাই ভালো করবে না, খারাপ করতেই পারে। কিন্তু এত খারাপ কিভাবে করে? আবার যখন দেখি আমাদের মধ্যেই অনেক অনিয়মিত শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, আবার নিয়মিতরা নন-প্রমোটেড। তখন এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতেই পারে। আমরা মনে করি খাতায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে। তারা সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করেননি। যার কারণে গণহারে ফেল। তিনি বলেন, তার বিভাগে সাত কলেজের ১ হাজার ৭৭ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে ৫৩০ জন ছাড়া সবাই নন-প্রমোটেড। আবার যারা প্রমোটেড হয়েছেন তাদেরও অনেককে ইমপ্রুভমেন্ট দিতে হবে। যারা প্রমোটেড হতে পারেননি তাদের বলা হচ্ছে প্রথম বর্ষের সঙ্গে আবার ভর্তি হতে। কিন্তু ফলাফল দিতেই সাত মাস বিলম্ব করায় এখন তারা প্রথম বর্ষের ক্লাসগুলোও মিস করছেন। বৃষ্টি নামে এক ছাত্রী বলেন, আমরা এর প্রতিকার চাই। কলেজটির একই শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের ছাত্রী সালমা আক্তার মিলি মানবজমিনকে বলেন, আমাদের বিভাগের সাত কলেজের যারা প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ ছাড়া সবাই অনুত্তীর্ণ হয়েছে। ইডেন কলেজে মাত্র ২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমরা খারাপ স্টুডেন্ট হতে পারি, কিন্তু এত খারাপ নই। আমি মনে করি শিক্ষকরা খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেননি বলে আজ আমাদের এ অবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষার আগে বলা হয়নি যে যারা ২ (স্কেল-৪) পয়েন্টের কম পাবে তারা নন-প্রমোটেড। ফলাফলের পর এমনটা বলা হচ্ছে। এখন আমরা কি করবো? আমরা এমন নিয়ম জানতাম না। আবার ইনকোর্স না থাকায়ও অনেকে ফেল করছেন। সাত কলেজের আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আবু বকর সিদ্দিক মানবজমিনকে বলেন, আমরা চতুর্মুখী সমস্যার মধ্যে রয়েছি। আমাদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সেশনজট। এছাড়াও ফল প্রকাশে বিলম্ব, ফল বিপর্যয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করা, ঢাবির শিক্ষকদের দিয়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন আমাদের সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় দু’বছর করে সেশনজটে পড়েছেন। সম্প্রতি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়ও কোনো ব্যাঘাত হবে না। তিনি বলেন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা এখনও ম্যানুয়েল পদ্ধতি অনুসরণ করছি। তবে শিগগিরই এর ডিজিটালাইজেশন করা হবে। তখন দ্রুত ফল প্রকাশ করতে পারব আমরা।
সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত রোববার থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে টানা তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ছাত্রলীগও সাত কলেজের অধিভুক্তিকে একটি ‘আনহ্যাপী ম্যারেজ’ উল্লেখ করে এর ‘পিসফুল ডিভোর্স’ চেয়েছে। অন্যদিকে সেশনজট, ফল বিপর্যয়সহ পাঁচ দফা দাবিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই আন্দোলনে রয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করলেও দাবি আদায়ে কালক্ষেপণ হলে ফের আন্দোলনে যাবে তারা। এ অবস্থায় সংকট সমাধানে গতকাল ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মু. সামাদের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সাত কলেজের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি হয়েছে। তাই সাত কলেজের সুষ্ঠু সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা হয় এই জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে এটির সমাধান করা হবে। সন্ধ্যায় তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় নিয়ে এগুচ্ছি। সব থেকে বড় কথা আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে আগে প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ এরাই হচ্ছে আমাদের প্রথম পাইওরিটি। উদ্বুদ্ধ সমস্যা সমাধানে সুপারিশ করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সাত কলেজের ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। যার কারণে তারা কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের এমন কিছু শাখা রয়েছে যেগুলোর সঙ্গে সাত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ওইসব শাখায়ও লোকবল সংকট আছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ কারণে ভুগছে। এমতাবস্থায় লোকবল বাড়াতে হবে বলে মত এ কর্মকর্তার। জানা গেছে, সাত কলেজের অধিভুক্তির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রশাসনিক ভবনে যেকোনো কাজ করতে গেলে তাদের কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বিভাগে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। যার কারণে তারাও পিছিয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষকরাও সাত কলেজের উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ভাইবা নেয়াসহ অতিরিক্ত চাপে ক্লাসে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। তাছাড়া একজন শিক্ষকের ক্লাস নেয়ার বাইরে গবেষণায় যে সময় দেয়ার কথা তা তারা দিতে পারছেন না। যার কারণে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সনদপত্রের অভিন্নতা তাদের সাত কলেজ বিরোধী করে তুলছে। তারা বলেন, আমরা আসলে সাত কলেজের বিপক্ষে নই, আমরা প্রশাসনের পদ্ধতির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আরো বেশি সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেশনজট, ফল প্রকাশে বিলম্ব, ফল বিপর্যয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করায় ভুগতে হচ্ছে তাদের। বিষয়গুলোর সমাধানে বারবার আন্দোলনে নামলেও এর স্থায়ী সমাধান হয়নি। যার কারণে ফের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে তাদের। সমপ্রতি প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে গণহারে ফেলের অভিযোগ করছে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফেলের চাপ নিতে না পেরে গত ১৬ই জুলাই রাতে বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল বিকালে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সুলতানা পারভীন বৃষ্টি মানবজমিনকে বলেন, সাত কলেজের মধ্যে আমরাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কোন একটি বিষয়ে সবাই ভালো করবে না, খারাপ করতেই পারে। কিন্তু এত খারাপ কিভাবে করে? আবার যখন দেখি আমাদের মধ্যেই অনেক অনিয়মিত শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, আবার নিয়মিতরা নন-প্রমোটেড। তখন এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতেই পারে। আমরা মনে করি খাতায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে। তারা সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করেননি। যার কারণে গণহারে ফেল। তিনি বলেন, তার বিভাগে সাত কলেজের ১ হাজার ৭৭ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে ৫৩০ জন ছাড়া সবাই নন-প্রমোটেড। আবার যারা প্রমোটেড হয়েছেন তাদেরও অনেককে ইমপ্রুভমেন্ট দিতে হবে। যারা প্রমোটেড হতে পারেননি তাদের বলা হচ্ছে প্রথম বর্ষের সঙ্গে আবার ভর্তি হতে। কিন্তু ফলাফল দিতেই সাত মাস বিলম্ব করায় এখন তারা প্রথম বর্ষের ক্লাসগুলোও মিস করছেন। বৃষ্টি নামে এক ছাত্রী বলেন, আমরা এর প্রতিকার চাই। কলেজটির একই শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের ছাত্রী সালমা আক্তার মিলি মানবজমিনকে বলেন, আমাদের বিভাগের সাত কলেজের যারা প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ ছাড়া সবাই অনুত্তীর্ণ হয়েছে। ইডেন কলেজে মাত্র ২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমরা খারাপ স্টুডেন্ট হতে পারি, কিন্তু এত খারাপ নই। আমি মনে করি শিক্ষকরা খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেননি বলে আজ আমাদের এ অবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষার আগে বলা হয়নি যে যারা ২ (স্কেল-৪) পয়েন্টের কম পাবে তারা নন-প্রমোটেড। ফলাফলের পর এমনটা বলা হচ্ছে। এখন আমরা কি করবো? আমরা এমন নিয়ম জানতাম না। আবার ইনকোর্স না থাকায়ও অনেকে ফেল করছেন। সাত কলেজের আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আবু বকর সিদ্দিক মানবজমিনকে বলেন, আমরা চতুর্মুখী সমস্যার মধ্যে রয়েছি। আমাদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সেশনজট। এছাড়াও ফল প্রকাশে বিলম্ব, ফল বিপর্যয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করা, ঢাবির শিক্ষকদের দিয়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন আমাদের সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় দু’বছর করে সেশনজটে পড়েছেন। সম্প্রতি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়ও কোনো ব্যাঘাত হবে না। তিনি বলেন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা এখনও ম্যানুয়েল পদ্ধতি অনুসরণ করছি। তবে শিগগিরই এর ডিজিটালাইজেশন করা হবে। তখন দ্রুত ফল প্রকাশ করতে পারব আমরা।
No comments