রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন্যা নিয়ে সাবেক জাতিসংঘ প্রধানও উদ্বিগ্ন
বাংলাদেশে ঘিঞ্চি ক্যাম্পিগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জীবনে
হুমকি সৃষ্টিকারী মওসুমি বন্যা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগে সামিল হয়েছেন
সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনও।
কক্সবাজারের কুতুপালঙ শিবিরে বুধবার সফরকালে সেখানকার দৃশ্য দেখে বান বলেন, তিনি দুঃখিত ও ভারাক্রান্ত।
মিয়ানমারের দমন অভিযানের পর প্রাণ রক্ষা করতে এই কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
এর আগে বন্যা ও ভূমিধস নিয়ে জাতিসংঘ শিশু সংস্থা ইউনিসেফও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এখান
থেকে চার হাজারের বেশি পরিবারকে সরিয়ে নেয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারী বর্ষণে সাত বছরের একটি ছেলে ডুবে মারা গেছে,
এছাড়া আরো দুই শিশু আহত হয়েছে। ৬০ হাজার শিশুর স্কুল ও অন্যান্য কাজে
ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি অ্যালেন বালান্দি ডমস্যাম বলেন, খারাপ
আবহাওয়ার কারণে ক্যাম্প ও সেখানে বসবাসরত লোকজনের অবস্থা দ্রুত খারাপ
হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে বর্ষণ আরো বাড়তে পারে। তাতে তাদের অবস্থা আরো খারাপ
হতে পারে।
কক্সবাজারের প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। বিশ্ব
খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, উদ্বাস্তুদের ৮০ ভাগ তাদের খাদ্য সহায়তার
ওপর নির্ভরশীল।
বান কাতুপালঙ শিবির পরিদর্শনকালে এপিকে বলেন, এই পরিবেশে শিশুরা কিভাবে
থাকছে, তা চিন্তাও করা যায় না। আমি জানি, এখানে আছে ৫ লাখ শিশু।
বাংলাদেশের বিশাল এলাকা পানির নিচে
নিচু দেশ বাংলাদেশের বিশাল এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনে নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
দেশটিতে ভয়াবহ সাইক্লোনে আক্রান্ত হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তা ও
অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হেগভিত্তিক গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ তথা জিসিএর
প্রধান হিসেবে করণীয় নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ সফর করেন বান কি মুন। তার সাথে
ছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টালিনা জিওজিভা ও
জিসিএর অন্যান্য কমিশনার। ২০১৮ সলে নেদারল্যান্ডে জিসিএর যাত্রা শুরু হয়।
ঢাকা থেকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বান ও
অন্যান্য কর্মকর্তা ১৬ কোটি মানুষের দেশে বিশাল এলাকা দেখতে পান।
বান বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই অন্যতম নাজুক দেশ, আর জলবায়ু পরিবর্তন অনেক কিছুই বেশ দ্রুততার সাথে করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনে অনেক কিছু
বিজ্ঞোজনোচিতভাবে বিনিয়োগ করেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ থেকে শেখার জন্য এখানে
এসেছি। আমরা এই বার্তা বিশ্বের দূর দূরান্তে পৌঁছে দেব।
জিওজিভা মওসুমি বন্যার ক্ষতি ও মৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
কক্সবাজার যাওয়ার পথে কর্মকর্তারা যত দূর চোখ যায়, নিচু জমিতে প্রচুর
পানি দেখেছেন। তবে রাস্তাগুলো উঁচু হওয়ায় বন্যা থেকে লোকজন রক্ষা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বেশি বেশি সবুজ বেষ্টনি লোকজনকে রক্ষা করছে। আমি স্পষ্টভাবেই
ভালোভাবে কৃষিকাজ দেখতে পেয়েছি।
মজবুত আশ্রয়
গত বছর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের জন্য আরো নিরাপদ আশ্রয় নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্বাস্তুদের জন্য আরো মজবুত আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রলম্বিত অবস্থানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন।
কুতুপালঙ হলো বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু শিবির। এখানে ছয় লাখ ২৬ হাজার
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু অবস্থান করছে। তারা গত তিন দশকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের
শিকার হয়েছে।
সর্বশেষ ঢল নামে ২০১৭ সালে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন রাজ্যে
শুদ্ধি অভিযান শুরু করলে সাত লাখের বেশি উদ্বাস্তু এখানে চলে আসে।
No comments