চামড়ার টাকার জন্য ভিক্ষুকদের কান্না by ইব্রাহিম খলিল
বয়স
৭০ ছুঁইছুঁই মাইমুনা খাতুনের। উপার্জন করে খাওয়ানোর মতো ছেলে সন্তান নেই
তার। তার উপর স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে ও তার দুই সন্তান মাইমুনা খাতুনের
কাঁধে। শরীর নিয়েই চলার শক্তি যখন নেই তার; তখনও ভিক্ষা করেই বিধ্বস্ত
সংসার টেনে চলেছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চট্টগ্রামের
পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন তিনি।
সন্ধ্যায় ভিক্ষার কাঁড়া-আকাঁড়া কিছু চাল ও তরিতরকারি নিয়ে ফিরেন। এভাবে
কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে মেয়ে আর নাতি নিয়ে জীবন নির্বাহ করছেন তিনি। এবার
তিনি আশা করেছিলেন কোরবানির চামড়ার দান থেকে কিছু টাকা পেলে মেয়ে ও নাতিদের
একটি করে মোটা কাপড় কিনে দেবেন। বাকি টাকা দিয়ে ভেন্নাপাতার (ছাডাপাতা)
ছানি দিয়ে গড়া ঘরের চালে কিছু টিন দেবেন। যাতে বর্ষার জলে অন্তত কাকভেজা
থেকে রক্ষা পান। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি হলো তার। যেখানে যান সেখানে
চামড়ার টাকা নেই বলে ক্ষমা চান কোরবানি দাতারা। কোরবানি দাতারা নাকি বলেন,
চামড়ার টাকা গরিবের বদলে এবার সরকার গিলে ফেলেছে।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের অভিজাত চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় এক কোরবানি দাতার কাছে চামড়ার টাকা চাইতে গিয়ে নাই কথাটি শুনে অঝোরে কান্না শুরু করেন মাইমুনা খাতুন। যা আশেপাশের অনেক মানুষের নজর কাড়ে। কাঁদতে কাঁদতে উপস্থিত সকলের কাছে এমন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন তিনি। ‘চামড়ার টাকার জন্য এক ভিক্ষুকের কান্নার’ এমন খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার অলিতে-গলিতে। অনেকের সঙ্গে ছুটে গিয়ে কথা হয় ভিক্ষুক মাইমুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ঘরটা বিলের ছাডা পাতা দিয়ে বানানো। একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। তাই ভেবেছিলাম এবার কোরবানির চামড়ার টাকায় ঘরটাতে যতটুকু পারি টিন লাগাবো। আর মেয়ে ও নাতিদের কাপড়- চোপড় নেই। তাদের জন্য একটি করে মোটা কাপড় কিনবো। কিন্তু তা আর হলো না। চামড়ার টাকা তেমন কেউ দিলো না। কয়েকজনে দিয়েছে ১০ টাকা, ২০ টাকা করে। এতে আমার ৫০০ টাকাও হয়নি। এই টাকা দিয়ে তো আর ঘর বানাতে পারবো না। কাপড়ও কিনতে পারবো না। তবে ভিক্ষুক মাইমুনা খাতুন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন কথাগুলো।
তিনি আরো বলেন, গত ৩ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ভিক্ষা করছেন তিনি। স্বামী বেঁচে থাকতে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন। এরমধ্যে যৌতুকের জন্য স্বামী তালাক দিলে দুই নাতিকে নিয়ে মেয়ে আমার কাছে চলে আসে। সেই থেকে ভিক্ষা করে খাই। তবে পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন গরিব হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে ভিক্ষা করি। শহরের মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভিক্ষাও দেয়। ভিক্ষার চালে কোনোরকমে জীবন চলে। কিন্তু চামড়ার টাকা না পেয়ে ঘরটা করতে পারবো না- এই আশঙ্কায় কান্না আসছে বলে জানান তিনি। কোরবানির চামড়ার টাকার জন্য আরো এক ভিক্ষুকের কান্নার খবর পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর আরেক অভিজাত এলাকা নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। সোসাইটির বাসিন্দা চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. কাউছার আলম বিষয়টি জানান। তিনি জানান, নগরীর বলীরহাট থেকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে আসা পঙ্গু ভিক্ষুক বদিউল আলম (৫৮) তার কাছে কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা চান রোববার সকালে। ৫০ টাকা দেয়ায় তিনি কেঁদে ফেলেন। বদিউল আলম প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত আমার বাসায় ভিক্ষা করতে আসেন। এ সময় বদিউল আলম কেঁদে কেঁদে বলেন, স্যার ছেলের জন্য বই কিনবো, আমাকে চামড়া বেচার আরো কিছু টাকা দিন। কিন্তু চামড়ার টাকা তো খুবই কম। সবাইকে ১০ টাকা, ২০ টাকা করে দিয়েছি। আপনাকে বেশি দিয়েছি। এ কথা বলায় সে চোখ মুছতে মুছতে চলে যান। এছাড়া ১০-২০ টাকা দেয়ায় ভিক্ষুকরাও অনেকে মন খারাপ করে চলে গেছেন। দুয়েক জনে চামড়ার টাকার জন্য ঝগড়াও লাগিয়েছেন। একই কথা বলেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির কোরবানিদাতা আবু জাফর, হাজী আবদুল মালেক ও চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম চৌধুরী। তারা বলেন, কোরবানির চামড়ার দাম এবার এতই কম যে, লাখ টাকায় গরু কিনেও ৩০০ টাকায় চামড়া বেচতে হয়েছে। ফলে গরিবদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এই টাকা বিলানো সম্ভব হয়নি। এতে মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন ভিক্ষা করে খাওয়া অচল মানুষগুলো। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম চৌধুরী বলেন, ধনী থেকে খেটে খাওয়া মানুষ সবাইর বেঁচে থাকার একটি পরিকল্পনা থাকে। ভিক্ষুকদেরও রয়েছে। ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলোর ওপর তাদের সকল আশা-প্রত্যাশা। সে হিসেবে এবার কোরবানির চামড়ার টাকা না পেয়ে তাদের সেই আশা-প্রত্যাশায় গুড়ে বালি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ছে। চামড়াজাত পণ্যের দামও বেশি। তাই কোরবানির চামড়ার দাম এভাবে কমিয়ে আনা সরকারের ঠিক হয়নি। এতে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার কোরবানিদাতা মো. রাশেদ বলেন, প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়ার টাকার জন্য ভিক্ষুকরা আসেন। গত বছরও প্রত্যেককে ৫০/১০০ টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু এ বছর ৮৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। যা ২০/৩০ টাকা করে কয়েকজনকে দিতে পেরেছি। আর এ টাকায় খুশি হননি কোনো ভিক্ষুক। বরং চামড়ার টাকা শেষ হওয়ার কথা বলায় অনেকে চোখের জল ফেলেছে। যা খুবই খারাপ লেগেছে। চামড়ার দাম কমিয়ে সরকার পুরোপুরি অমানবিক কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের অভিজাত চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় এক কোরবানি দাতার কাছে চামড়ার টাকা চাইতে গিয়ে নাই কথাটি শুনে অঝোরে কান্না শুরু করেন মাইমুনা খাতুন। যা আশেপাশের অনেক মানুষের নজর কাড়ে। কাঁদতে কাঁদতে উপস্থিত সকলের কাছে এমন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন তিনি। ‘চামড়ার টাকার জন্য এক ভিক্ষুকের কান্নার’ এমন খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার অলিতে-গলিতে। অনেকের সঙ্গে ছুটে গিয়ে কথা হয় ভিক্ষুক মাইমুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ঘরটা বিলের ছাডা পাতা দিয়ে বানানো। একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। তাই ভেবেছিলাম এবার কোরবানির চামড়ার টাকায় ঘরটাতে যতটুকু পারি টিন লাগাবো। আর মেয়ে ও নাতিদের কাপড়- চোপড় নেই। তাদের জন্য একটি করে মোটা কাপড় কিনবো। কিন্তু তা আর হলো না। চামড়ার টাকা তেমন কেউ দিলো না। কয়েকজনে দিয়েছে ১০ টাকা, ২০ টাকা করে। এতে আমার ৫০০ টাকাও হয়নি। এই টাকা দিয়ে তো আর ঘর বানাতে পারবো না। কাপড়ও কিনতে পারবো না। তবে ভিক্ষুক মাইমুনা খাতুন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন কথাগুলো।
তিনি আরো বলেন, গত ৩ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ভিক্ষা করছেন তিনি। স্বামী বেঁচে থাকতে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন। এরমধ্যে যৌতুকের জন্য স্বামী তালাক দিলে দুই নাতিকে নিয়ে মেয়ে আমার কাছে চলে আসে। সেই থেকে ভিক্ষা করে খাই। তবে পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন গরিব হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে ভিক্ষা করি। শহরের মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভিক্ষাও দেয়। ভিক্ষার চালে কোনোরকমে জীবন চলে। কিন্তু চামড়ার টাকা না পেয়ে ঘরটা করতে পারবো না- এই আশঙ্কায় কান্না আসছে বলে জানান তিনি। কোরবানির চামড়ার টাকার জন্য আরো এক ভিক্ষুকের কান্নার খবর পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর আরেক অভিজাত এলাকা নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। সোসাইটির বাসিন্দা চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. কাউছার আলম বিষয়টি জানান। তিনি জানান, নগরীর বলীরহাট থেকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে আসা পঙ্গু ভিক্ষুক বদিউল আলম (৫৮) তার কাছে কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা চান রোববার সকালে। ৫০ টাকা দেয়ায় তিনি কেঁদে ফেলেন। বদিউল আলম প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত আমার বাসায় ভিক্ষা করতে আসেন। এ সময় বদিউল আলম কেঁদে কেঁদে বলেন, স্যার ছেলের জন্য বই কিনবো, আমাকে চামড়া বেচার আরো কিছু টাকা দিন। কিন্তু চামড়ার টাকা তো খুবই কম। সবাইকে ১০ টাকা, ২০ টাকা করে দিয়েছি। আপনাকে বেশি দিয়েছি। এ কথা বলায় সে চোখ মুছতে মুছতে চলে যান। এছাড়া ১০-২০ টাকা দেয়ায় ভিক্ষুকরাও অনেকে মন খারাপ করে চলে গেছেন। দুয়েক জনে চামড়ার টাকার জন্য ঝগড়াও লাগিয়েছেন। একই কথা বলেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির কোরবানিদাতা আবু জাফর, হাজী আবদুল মালেক ও চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম চৌধুরী। তারা বলেন, কোরবানির চামড়ার দাম এবার এতই কম যে, লাখ টাকায় গরু কিনেও ৩০০ টাকায় চামড়া বেচতে হয়েছে। ফলে গরিবদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এই টাকা বিলানো সম্ভব হয়নি। এতে মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন ভিক্ষা করে খাওয়া অচল মানুষগুলো। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম চৌধুরী বলেন, ধনী থেকে খেটে খাওয়া মানুষ সবাইর বেঁচে থাকার একটি পরিকল্পনা থাকে। ভিক্ষুকদেরও রয়েছে। ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলোর ওপর তাদের সকল আশা-প্রত্যাশা। সে হিসেবে এবার কোরবানির চামড়ার টাকা না পেয়ে তাদের সেই আশা-প্রত্যাশায় গুড়ে বালি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ছে। চামড়াজাত পণ্যের দামও বেশি। তাই কোরবানির চামড়ার দাম এভাবে কমিয়ে আনা সরকারের ঠিক হয়নি। এতে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার কোরবানিদাতা মো. রাশেদ বলেন, প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়ার টাকার জন্য ভিক্ষুকরা আসেন। গত বছরও প্রত্যেককে ৫০/১০০ টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু এ বছর ৮৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। যা ২০/৩০ টাকা করে কয়েকজনকে দিতে পেরেছি। আর এ টাকায় খুশি হননি কোনো ভিক্ষুক। বরং চামড়ার টাকা শেষ হওয়ার কথা বলায় অনেকে চোখের জল ফেলেছে। যা খুবই খারাপ লেগেছে। চামড়ার দাম কমিয়ে সরকার পুরোপুরি অমানবিক কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments