মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে আসলে কী হচ্ছে?
আগামী
১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়া প্রচলিত নিয়মে বাংলাদেশ থেকে আর জনশক্তি
নেবেনা৷ কিন্তু নতুন পদ্ধতি কী হবে তাও স্পষ্ট নয়৷ আর যারা এরইমধ্যে
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে তাদেরই বা কি হবে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা বুঝতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে৷ কারণ এনিয়ে ২১ আগস্ট বাংলাদেশকে চিঠি দেয়া হলেও ঈদের ছুটি ও বন্ধের কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরবর্তী অবস্থা জানতে যোগাযোগ এখনো করা হয়নি৷ তবে সেপ্টেম্বরে এনিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বেঠক আছে বলে জানা গেছে৷
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার যুগ্ম সম্পাদক শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে এসপিপিএ (অনলাইন সিস্টেম) পদ্ধতিতে জনশক্তি নেয়৷ তারা তাদের চিঠিতে বলেছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পদ্ধতিতে দেশটি বাংলাদেশ থেকে আর জনশক্তি নেবেনা৷ কিন্তু তারা কোথাও বলেনি যে তারা ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেবে৷ তারা এখনকার পদ্ধতির পরিবর্তে একটি ইউনিফর্ম সিস্টেম ডেভেলেপ করবে৷''
এরইমধ্যে একটি বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷ কারণ প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের ভিসা হয়েছে৷ আরো ৪০ হাজারের মত শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ তাদের কী হবে? তারা কি যেতে পারবেন, না তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷
শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘‘বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে৷ এটা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের বিষয়৷ তবে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তাহচ্ছে এখনো শ্রমিকদের ভিসা অনুমোদন করছে৷ ফ্লাইট শিডিউল ঠিক আছে৷ যাদের ফ্লাইট আছে তারা যেতে পারছেন৷''
২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর জন্য ১০টি রিক্রুটিং এজেন্টকে এককভাবে ক্ষমতা দেয়া হয়৷ তারা অনলাইন ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে (এসপিপিএ) লোক পাঠায়৷ এই সিস্টেমের নাম দেয়া হয় জি টু জি প্লাস৷ ১০টি বাদে অন্যকোনো রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক গেছে মালয়েশিয়ায়৷ আরো পাইপ লাইনে আছে এক লাখের মত৷
কিন্তু এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ গত জুনে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার-এর অনলাইন সংস্করণে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘মালয়েশিয়ায় লোক পাঠিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র৷ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় একজন শ্রমিক পাঠাতে খরচ হয় দুই হাজার রিঙ্গিত৷ আর বাংলাদেশি একটি চক্র নিচ্ছে ২০ হাজার রিঙ্গিত৷ এভাবে দুই বছরে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ২০০ কোটি রিঙ্গিত৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় চার হাজার কোটি টাকারও বেশি৷
সংবাদে এই চক্রের হোতা হিসেবে বাংলাদেশের মন্ত্রী মর্যাদার একজন ব্যক্তির কথা বলা হয়৷ প্রতিবেদনে তার নাম প্রকাশ না করে আরো বলা হয়, ওই ব্যক্তির বয়স কমবেশি ৫০ বছর৷ আর তিনি ১৫ বছর আগে এক মালয়েশীয় নারীকে বিয়ে করেন৷
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি সই হয়৷ ওই চুক্তির অধীনে সরকারের বাইরেও শ্রমিক নিয়োগের জন্য ১০টি কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ এর আগে সরকারই কেবল জনশক্তি পাঠাতে পারত৷ ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণেই চুক্তি সই হয়৷ তার ছত্রছায়ায়ই এই ১০টি রিক্রুটিং কোম্পানি রাতারাতি গজিয়ে ওঠে৷ হাজার কোটি টাকার এই মানবপাচার ব্যবসাকে ‘বৈধতা' দেওয়ার পেছনে তার ভূমিকাই প্রধান৷ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই এসব কোম্পানি গড়ে তোলা হয়৷ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার এই কেলেঙ্কারিকে নতুন ধাপে নিয়ে গেছেন এই মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি৷
শ্রমিক পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াকে সহজ করতে এবং ১০টি কোম্পানির স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে এসপিপিএ নামে অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে৷ বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিবন্ধন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করতে হয়৷ এসপিপিএ অনুসারে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে মালয়েশীয় কোম্পানিকে ৩০৫ রিঙ্গিত দিতে হয়৷ এই নিবন্ধন ব্যবস্থা পরিচালনা করে বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি৷ এসপিপিএ-র সংগৃহীত অর্থ চলে যায় বেস্টিনেটের কাছে৷ ১০টি কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়োগ কর্তাদের কাছে শ্রমিকদের বণ্টন কাজের জন্য এই অর্থ নেয় বেস্টিনেট৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া যেতে ওই দেশগুলোর শ্রমিকদের বাংলাদেশের তুলনায় কম টাকা দিতে হয়৷ ওই দেশগুলোর শ্রমিকদের খরচ পড়ে আড়াই হাজার রিঙ্গিতের মতো৷
ক্লাং ভ্যালিতে বেশ কয়েকটি কোম্পানির কনসালটেন্সি করা একটি কোম্পানির মালিক চিরারা কান্নান দ্য স্টার অনলানকে তখন জানান, এসপিপিএ চালু হওয়ার আগে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের খরচ ছিল অনেক কম৷ আগে শ্রমিকদের ৭ থেকে ৮ হাজার রিঙ্গিত দিতে হতো মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য৷ কিন্তু এখন মধ্যস্থকারীরা বড় অংকের টাকা নেয় শ্রমিকদের কাছ থেকে৷
চিরারা জানান, বাংলাদেশের স্থানীয় গ্রামীণ এলাকার সাব-এজেন্টদের শ্রমিকরা দেয় ২০ হাজার রিঙ্গিত৷ এই সাব-এজেন্টরা আরো অন্তত দু'জন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে সরকারের অনুমোদিত এজেন্টের কাছে যায়৷ আগে যারা সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট ছিল তারা এখন বড় ১০টি কোম্পানির সাব-এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে৷
চিরারা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ অনেক নিয়োগ দাতা কোম্পানিও শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে৷ নিয়োগকৃত প্রত্যেক বাংলাদেশি শ্রমিকের কাছ থেকে অনেক নিয়োগদাতা ১৫০০ রিঙ্গিত করে নিচ্ছেন৷'' এসব কারণে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থাটি কলঙ্কিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন চিরারা৷
জনশক্তি রপ্তানি বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৬ সালে যখন শুধু ১০টি রিক্রুটিং এজন্টকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির অনুমতি দেয় তখন বলা হয়েছিল পর্যায়ক্রমে অন্যান্যরাও সুযোগ পাবে৷ কারণ তার আগে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি৷ তারা একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে৷ অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যায়৷ এক জনের কাছ থেকে তিন-সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়া হয়৷ নানা ফি'র নামে টাকা নেয়া হয়৷ এটার একটা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ কারা এরজন্য দায়ী তাদের চিহ্নত করা দরকার৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার যে তথ্য প্রকাশ হয়েছে তাকে হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কী বলা যায়? তারা প্রকৃত খরচের তিন-চার গুণ বেশি অর্থ নিয়েছেন৷ ওই অর্থ কোথায় গেছে, কাদের কাছে গেছে, তা তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন৷''
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে মালয়েশিয়া সব রিক্রুটিং এজেন্টকে সমান সুযোগ দিতে চায়৷ আর তারা এজন্য একটি ইউনিফর্ম নীতিমালা তৈরি করবে৷ সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তারা বৈঠকও করবে৷ তবে ওটা চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ এনিয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণমমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি৷
সূত্রঃ- DW
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা বুঝতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে৷ কারণ এনিয়ে ২১ আগস্ট বাংলাদেশকে চিঠি দেয়া হলেও ঈদের ছুটি ও বন্ধের কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরবর্তী অবস্থা জানতে যোগাযোগ এখনো করা হয়নি৷ তবে সেপ্টেম্বরে এনিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বেঠক আছে বলে জানা গেছে৷
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার যুগ্ম সম্পাদক শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে এসপিপিএ (অনলাইন সিস্টেম) পদ্ধতিতে জনশক্তি নেয়৷ তারা তাদের চিঠিতে বলেছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পদ্ধতিতে দেশটি বাংলাদেশ থেকে আর জনশক্তি নেবেনা৷ কিন্তু তারা কোথাও বলেনি যে তারা ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেবে৷ তারা এখনকার পদ্ধতির পরিবর্তে একটি ইউনিফর্ম সিস্টেম ডেভেলেপ করবে৷''
এরইমধ্যে একটি বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷ কারণ প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের ভিসা হয়েছে৷ আরো ৪০ হাজারের মত শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ তাদের কী হবে? তারা কি যেতে পারবেন, না তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷
শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘‘বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে৷ এটা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের বিষয়৷ তবে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তাহচ্ছে এখনো শ্রমিকদের ভিসা অনুমোদন করছে৷ ফ্লাইট শিডিউল ঠিক আছে৷ যাদের ফ্লাইট আছে তারা যেতে পারছেন৷''
২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর জন্য ১০টি রিক্রুটিং এজেন্টকে এককভাবে ক্ষমতা দেয়া হয়৷ তারা অনলাইন ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে (এসপিপিএ) লোক পাঠায়৷ এই সিস্টেমের নাম দেয়া হয় জি টু জি প্লাস৷ ১০টি বাদে অন্যকোনো রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক গেছে মালয়েশিয়ায়৷ আরো পাইপ লাইনে আছে এক লাখের মত৷
কিন্তু এই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ গত জুনে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার-এর অনলাইন সংস্করণে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘মালয়েশিয়ায় লোক পাঠিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র৷ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় একজন শ্রমিক পাঠাতে খরচ হয় দুই হাজার রিঙ্গিত৷ আর বাংলাদেশি একটি চক্র নিচ্ছে ২০ হাজার রিঙ্গিত৷ এভাবে দুই বছরে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ২০০ কোটি রিঙ্গিত৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় চার হাজার কোটি টাকারও বেশি৷
সংবাদে এই চক্রের হোতা হিসেবে বাংলাদেশের মন্ত্রী মর্যাদার একজন ব্যক্তির কথা বলা হয়৷ প্রতিবেদনে তার নাম প্রকাশ না করে আরো বলা হয়, ওই ব্যক্তির বয়স কমবেশি ৫০ বছর৷ আর তিনি ১৫ বছর আগে এক মালয়েশীয় নারীকে বিয়ে করেন৷
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি সই হয়৷ ওই চুক্তির অধীনে সরকারের বাইরেও শ্রমিক নিয়োগের জন্য ১০টি কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ এর আগে সরকারই কেবল জনশক্তি পাঠাতে পারত৷ ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণেই চুক্তি সই হয়৷ তার ছত্রছায়ায়ই এই ১০টি রিক্রুটিং কোম্পানি রাতারাতি গজিয়ে ওঠে৷ হাজার কোটি টাকার এই মানবপাচার ব্যবসাকে ‘বৈধতা' দেওয়ার পেছনে তার ভূমিকাই প্রধান৷ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই এসব কোম্পানি গড়ে তোলা হয়৷ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার এই কেলেঙ্কারিকে নতুন ধাপে নিয়ে গেছেন এই মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি৷
শ্রমিক পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াকে সহজ করতে এবং ১০টি কোম্পানির স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে এসপিপিএ নামে অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে৷ বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিবন্ধন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করতে হয়৷ এসপিপিএ অনুসারে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে মালয়েশীয় কোম্পানিকে ৩০৫ রিঙ্গিত দিতে হয়৷ এই নিবন্ধন ব্যবস্থা পরিচালনা করে বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি৷ এসপিপিএ-র সংগৃহীত অর্থ চলে যায় বেস্টিনেটের কাছে৷ ১০টি কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়োগ কর্তাদের কাছে শ্রমিকদের বণ্টন কাজের জন্য এই অর্থ নেয় বেস্টিনেট৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া যেতে ওই দেশগুলোর শ্রমিকদের বাংলাদেশের তুলনায় কম টাকা দিতে হয়৷ ওই দেশগুলোর শ্রমিকদের খরচ পড়ে আড়াই হাজার রিঙ্গিতের মতো৷
ক্লাং ভ্যালিতে বেশ কয়েকটি কোম্পানির কনসালটেন্সি করা একটি কোম্পানির মালিক চিরারা কান্নান দ্য স্টার অনলানকে তখন জানান, এসপিপিএ চালু হওয়ার আগে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের খরচ ছিল অনেক কম৷ আগে শ্রমিকদের ৭ থেকে ৮ হাজার রিঙ্গিত দিতে হতো মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য৷ কিন্তু এখন মধ্যস্থকারীরা বড় অংকের টাকা নেয় শ্রমিকদের কাছ থেকে৷
চিরারা জানান, বাংলাদেশের স্থানীয় গ্রামীণ এলাকার সাব-এজেন্টদের শ্রমিকরা দেয় ২০ হাজার রিঙ্গিত৷ এই সাব-এজেন্টরা আরো অন্তত দু'জন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে সরকারের অনুমোদিত এজেন্টের কাছে যায়৷ আগে যারা সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট ছিল তারা এখন বড় ১০টি কোম্পানির সাব-এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে৷
চিরারা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ অনেক নিয়োগ দাতা কোম্পানিও শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে৷ নিয়োগকৃত প্রত্যেক বাংলাদেশি শ্রমিকের কাছ থেকে অনেক নিয়োগদাতা ১৫০০ রিঙ্গিত করে নিচ্ছেন৷'' এসব কারণে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থাটি কলঙ্কিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন চিরারা৷
জনশক্তি রপ্তানি বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৬ সালে যখন শুধু ১০টি রিক্রুটিং এজন্টকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির অনুমতি দেয় তখন বলা হয়েছিল পর্যায়ক্রমে অন্যান্যরাও সুযোগ পাবে৷ কারণ তার আগে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি৷ তারা একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে৷ অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যায়৷ এক জনের কাছ থেকে তিন-সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়া হয়৷ নানা ফি'র নামে টাকা নেয়া হয়৷ এটার একটা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ কারা এরজন্য দায়ী তাদের চিহ্নত করা দরকার৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার যে তথ্য প্রকাশ হয়েছে তাকে হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কী বলা যায়? তারা প্রকৃত খরচের তিন-চার গুণ বেশি অর্থ নিয়েছেন৷ ওই অর্থ কোথায় গেছে, কাদের কাছে গেছে, তা তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন৷''
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে মালয়েশিয়া সব রিক্রুটিং এজেন্টকে সমান সুযোগ দিতে চায়৷ আর তারা এজন্য একটি ইউনিফর্ম নীতিমালা তৈরি করবে৷ সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তারা বৈঠকও করবে৷ তবে ওটা চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ এনিয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণমমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি৷
সূত্রঃ- DW
No comments