হাতে ফুল চোখে পানি শোকাকুল জুরাইন by শুভ্র দেব
চোখ
বেয়ে অঝোর ধারায় পড়ছে পানি। হাতে একগুচ্ছ ফুল। নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন
নাতনির কবরের দিকে। ৭৫ বছর বয়সী হাজেরা খাতুন এসেছিলেন প্রিয় নাতনি হেলেনার
কবর জিয়ারত করতে। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় শুধু হেলেনাই নন, মারা গেছেন
নাতির স্ত্রীও। দুজনই হাজেরা খাতুনের খুব আদরের ছিলেন। হাজেরা মানবজমিনকে
বলেন, আমার নাতনি হেলেনার সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়েছিল ঘটনার
আগের রাতেই। ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে হেলেনা আমাকে বলেছিলো নানী আগামী মাসে
বেতন পেয়ে তোমাকে কিছু টাকা পাঠাবো। সেই টাকা দিয়ে তুমি চিকিৎসা করিয়ে নিও।
ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবা আর আমাদের জন্য দোয়া করবা। হেলেনা বলেন, এই ছিল
আমার নাতনির সঙ্গে শেষ কথা। তার ওই কথাগুলো আজও আমার কানে বেজে ওঠে। সে
হয়তো আর ফিরে আসবে না কিন্তু তার ওই কথাগুলো মরার দিন পর্যন্ত আমার মনে
থাকবে।
আমার নাতবউ সুলতানা পারভিনও আমাকে অনেক পছন্দ করতো। নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিতো। কিন্তু আজ তারা অনেক দূরে চলে গেছে। তাদের সঙ্গে থাকা অনেক স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সময় পেলে তাদের কবরে এসে বসে থাকি। আজকে ফুল কিনে তাদের কবরে দিতে চেয়েছিলাম। টাকার অভাবে সেটা আর সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিবেশী একজনের সহযোগিতায় কটা ফুল নিয়ে এসেছি।
গতকাল ছিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৫ বছর। ২০১৩ সালের এই দিনে ঘটে যায় ইতিহাসের এক ভয়াবহ ঘটনা। সেদিন সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা নামের ৮তলা ভবন ধসে পড়ে। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল পোশাক খাতে কর্মরত ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন আরো ১ হাজার ১৬৯ জন। এদের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে ২৯১ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরে ডিএনএ পরীক্ষা করে স্বজনরা কিছু কবর শনাক্ত করেছিলেন। তবে শনাক্ত হয়নি কিছু কবর। লাশও মিলেনি বেশ কয়েকজনের। তাদের স্বজনরা এখনো জানেন না তাদের প্রিয়জনের কি অবস্থা হয়েছিল। তাই প্রতি বছর ২৪শে এপ্রিল এলেই জুরাইন কবরস্থানে ছুটে আসেন স্বজনরা। প্রিয়জনের কবরে জিয়ারত করতে আসেন কেউ কেউ। কেউ আবার বেওয়ারিশ কবরে খোঁজেন স্বজনের অস্তিত্ব।
রুবি আক্তার আদরের ছোট বোন রোজিনার কবর দেখতে এসেছিলেন। অশ্রুসজল চোখে বিড় বিড় করে বলছিলেন ও আমার কলিজার টুকরা বোন ছিল। আমরা দুজনেই পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। আবার একই বাসায় থাকতাম। সেদিন সকালে আমরা দুজনই একসঙ্গে কাজে বের হয়েছিলাম। কাজের ব্যস্ততায় হঠাৎ খবর আসে রানা প্লাজা ভেঙে পড়েছে। তখন যেন আকাশ ভেঙে মাথায় পড়লো। কারণ আমার ছোট বোন ওই ভবনের ভেতরেই আছে। তারপর থেকে আর রোজিনার খবর পাইনি। রুবি বলেন, উদ্ধারকর্মীরা যখন একে একে জীবিত ও মরদেহ উদ্ধার করছিল তখন ভাবতাম এখন বুঝি আমার বোনকে পাওয়া যাবে। একে একে সবাইকে উদ্ধার করা হলো। কিন্তু আমার বোনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে জুরাইন কবর স্থানে এসে তার কবরের সন্ধান পাই। শুধু নিহতদের স্বজনরাই নয়, রানা প্লাজার ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করতে আরো এসেছিলেন পোশাক কারখানার মালিক সমিতির সংগঠন বিজিএমইএ’র একটি প্রতিনিধিদল। তাদের মধ্যে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির, পরিচালক আনম সাইফুদ্দিন, আশিকুর রহমান তুহিন ছিলেন। এ ছাড়া, নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নিউ জেনারেশন গ্রুপ শ্রমিক কর্মচারী ও জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, রি রোলিং স্ট্রিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম। সবাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া করেছেন।
জুরাইন কবরের সিনিয়র মহরার হাফিজ মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, জুরাইন কবরের বর্ধিত অংশে রানা প্লাজায় নিহত ২৯১ বেওয়ারিশের মরদেহ দাফনের মধ্য দিয়ে এই অংশের উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৫ই মে প্রথম ৪০টি মরদেহ এখানে আনা হয়েছিল। সেদিন এখানে উপস্থিত সবাই কেঁদেছিল। কান্না ধরে রাখতে পারে নাই কেউ। তার পর ২০ই মে পর্যন্ত বাকি মরদেহগুলো দাফন করা হয়। তবে সবক’টি মরদেহই বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়েছিল। পরে ডিএনএ মিলিয়ে কিছু মরদেহ শনাক্ত করেন নিহতদের স্বজনরা।
নিহতদের স্মরণ করতে এসে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, রানা প্লাজার মতো ঘটনা আর বাংলাদেশে যাতে না ঘটে আমরা সেই লক্ষেই কাজ করছি। তবে যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা মর্মান্তিক। আমরা এই ঘটনায় বায়ার্স ও বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ২৪ কোটি টাকা ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য দিয়েছি। এছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ছাড়াও আহদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানো হচ্ছে। ৩৯ জন আহতদের সিআরপিসহ বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নাছির বলেন, ওই ঘটনায় যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদের কেউ আর এখন বেকার নাই। কারণ এই আড়াই বছরে কেউ চাকরি নিতে আসেনি। এর বাইরে যদি এখনও কেউ বেকার থাকে তবে আমাদের সংগঠনের অফিসে যোগাযোগ করলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে রানা প্লাজায় ওই ঘটনার পর অনেক সাক্ষী হয়ে আছেন জুরাইন কবরস্থানের আশে পাশের বাসিন্দারা। গতকাল তাদের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। তাদেরও অনেকেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
আমার নাতবউ সুলতানা পারভিনও আমাকে অনেক পছন্দ করতো। নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিতো। কিন্তু আজ তারা অনেক দূরে চলে গেছে। তাদের সঙ্গে থাকা অনেক স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সময় পেলে তাদের কবরে এসে বসে থাকি। আজকে ফুল কিনে তাদের কবরে দিতে চেয়েছিলাম। টাকার অভাবে সেটা আর সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিবেশী একজনের সহযোগিতায় কটা ফুল নিয়ে এসেছি।
গতকাল ছিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৫ বছর। ২০১৩ সালের এই দিনে ঘটে যায় ইতিহাসের এক ভয়াবহ ঘটনা। সেদিন সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা নামের ৮তলা ভবন ধসে পড়ে। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল পোশাক খাতে কর্মরত ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন আরো ১ হাজার ১৬৯ জন। এদের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে ২৯১ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরে ডিএনএ পরীক্ষা করে স্বজনরা কিছু কবর শনাক্ত করেছিলেন। তবে শনাক্ত হয়নি কিছু কবর। লাশও মিলেনি বেশ কয়েকজনের। তাদের স্বজনরা এখনো জানেন না তাদের প্রিয়জনের কি অবস্থা হয়েছিল। তাই প্রতি বছর ২৪শে এপ্রিল এলেই জুরাইন কবরস্থানে ছুটে আসেন স্বজনরা। প্রিয়জনের কবরে জিয়ারত করতে আসেন কেউ কেউ। কেউ আবার বেওয়ারিশ কবরে খোঁজেন স্বজনের অস্তিত্ব।
রুবি আক্তার আদরের ছোট বোন রোজিনার কবর দেখতে এসেছিলেন। অশ্রুসজল চোখে বিড় বিড় করে বলছিলেন ও আমার কলিজার টুকরা বোন ছিল। আমরা দুজনেই পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। আবার একই বাসায় থাকতাম। সেদিন সকালে আমরা দুজনই একসঙ্গে কাজে বের হয়েছিলাম। কাজের ব্যস্ততায় হঠাৎ খবর আসে রানা প্লাজা ভেঙে পড়েছে। তখন যেন আকাশ ভেঙে মাথায় পড়লো। কারণ আমার ছোট বোন ওই ভবনের ভেতরেই আছে। তারপর থেকে আর রোজিনার খবর পাইনি। রুবি বলেন, উদ্ধারকর্মীরা যখন একে একে জীবিত ও মরদেহ উদ্ধার করছিল তখন ভাবতাম এখন বুঝি আমার বোনকে পাওয়া যাবে। একে একে সবাইকে উদ্ধার করা হলো। কিন্তু আমার বোনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে জুরাইন কবর স্থানে এসে তার কবরের সন্ধান পাই। শুধু নিহতদের স্বজনরাই নয়, রানা প্লাজার ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করতে আরো এসেছিলেন পোশাক কারখানার মালিক সমিতির সংগঠন বিজিএমইএ’র একটি প্রতিনিধিদল। তাদের মধ্যে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির, পরিচালক আনম সাইফুদ্দিন, আশিকুর রহমান তুহিন ছিলেন। এ ছাড়া, নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নিউ জেনারেশন গ্রুপ শ্রমিক কর্মচারী ও জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, রি রোলিং স্ট্রিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম। সবাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া করেছেন।
জুরাইন কবরের সিনিয়র মহরার হাফিজ মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, জুরাইন কবরের বর্ধিত অংশে রানা প্লাজায় নিহত ২৯১ বেওয়ারিশের মরদেহ দাফনের মধ্য দিয়ে এই অংশের উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৫ই মে প্রথম ৪০টি মরদেহ এখানে আনা হয়েছিল। সেদিন এখানে উপস্থিত সবাই কেঁদেছিল। কান্না ধরে রাখতে পারে নাই কেউ। তার পর ২০ই মে পর্যন্ত বাকি মরদেহগুলো দাফন করা হয়। তবে সবক’টি মরদেহই বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়েছিল। পরে ডিএনএ মিলিয়ে কিছু মরদেহ শনাক্ত করেন নিহতদের স্বজনরা।
নিহতদের স্মরণ করতে এসে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, রানা প্লাজার মতো ঘটনা আর বাংলাদেশে যাতে না ঘটে আমরা সেই লক্ষেই কাজ করছি। তবে যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা মর্মান্তিক। আমরা এই ঘটনায় বায়ার্স ও বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ২৪ কোটি টাকা ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য দিয়েছি। এছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ছাড়াও আহদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানো হচ্ছে। ৩৯ জন আহতদের সিআরপিসহ বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নাছির বলেন, ওই ঘটনায় যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদের কেউ আর এখন বেকার নাই। কারণ এই আড়াই বছরে কেউ চাকরি নিতে আসেনি। এর বাইরে যদি এখনও কেউ বেকার থাকে তবে আমাদের সংগঠনের অফিসে যোগাযোগ করলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে রানা প্লাজায় ওই ঘটনার পর অনেক সাক্ষী হয়ে আছেন জুরাইন কবরস্থানের আশে পাশের বাসিন্দারা। গতকাল তাদের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। তাদেরও অনেকেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
No comments