ভুলে ভরা নথি রহস্যজনক: ফখরুল
বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে বৃটিশ স্বরাষ্ট্র
বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের একটি চিঠি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে বলে
মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন,
তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ইস্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.
শাহরিয়ার আলম যে নথি প্রকাশ করেছেন, তাতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে। এটি রহস্যজনক।
গতকাল নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা
বলেন। নথিতে থাকা অসংগতি তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের জনগণের
কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন
সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা
তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা এবং ভুলে ভরা এক
লাইনের একটি চিঠি। নথির যেসব স্থানে ভুল করা হয়েছে, বৃটিশ সরকারের পক্ষে এ
ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক। বৃটিশরা এই ধরনের ভুল করতে পারে না। কি বিচিত্র
এই সরকার! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল! আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে দেশবাসীকে জানাতে
চাই, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই
প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ইনশাআল্লাহ। মির্জা আলমগীর
বলেন, তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে
বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের
মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার নথি দেখিয়ে বিনা ভোটে ক্ষমতা
দখলকারী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের
দেয়া বক্তব্য অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি। কি কি কারণে একজন নাগরিক
জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন- এটাও যিনি জানেন না- তেমন একজন
ব্যক্তির শুধু এধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা
জাতির জন্য লজ্জাজনক। দেশবাসী জানেন, বর্তমান সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক
প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় আদালতের অনুমতিক্রমে সুচিকিৎসার জন্য
তারেক রহমান লন্ডনে যান। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে তার
অনুপস্থিতিতে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ
সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী, নেতা-পাতি নেতারা প্রতিনিয়ত
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে যাচ্ছেন। কিন্তু দেশের জনগণ যাতে
তারেক রহমানের জবাব শুনতে না পারে সেজন্য সকল প্রচার মাধ্যমে তার বক্তব্য
প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তিদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত এখন বাংলাদেশে তারেক
রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তিনি বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য
রাজনীতিবিদ, সরকার বিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে
রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার
স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট
জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে
ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার
কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের
অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে
পারবেন। মির্জা আলমগীর বলেন, কাজেই স্রেফ জমা রাখার জন্য বৃটিশ স্বরাষ্ট্র
বিভাগ থেকে তার পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে
তার মাধ্যমে কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের
নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য
হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা
এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, তারেক
রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশের
তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রই কেবল নন, তিনি নিজেও
বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির অন্যতম সর্বোচ্চ একজন জনপ্রিয়
নেতা। বাংলাদেশের এই গর্বিত নাগরিকের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রলাপ বকা এবং
অপপ্রচার চালানো অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি
জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে-
দেশের জনগণ তার জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করছে। আর দেশের মানুষ যখন
দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ-ঠিক সেই সময় এসব অপরাজনীতি দিয়ে
জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা জনগণের ক্ষোভের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম
খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম
মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত
ছিলেন।
No comments