দিনে দিনে হতাশা বাড়ছে হিলারির
ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ‘নির্ভরতার সমীক্ষা সূচক’ জরিপে শতকরা ৬৬ শতাংশ মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন। এমনকি ২০১৫ সালের শুরুতেও তার প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন ৫০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু সম্প্রতি এই সুদর্শনার দিক থেকে সবাই যেন মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এখন ৫৭ শতাংশ মানুষ বলছেন হিলারির উপর আস্থা রাখা যায় না। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এবিসি নিউজের জরিপে এ তথ্য এসেছে বলে মঙ্গলবার সংবাদ প্রকাশ করেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এছাড়াও একই দিনের দ্য ইকোনমিক টাইমস জানাচ্ছে- দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিবিএস নিউজের জনমত জরিপেও ঠেঁসে গেছেন হিলারি। হিলারি তাদের মূল্যবোধ বোঝেন না বলে দাবি করেছে ৬০ শতাংশ মানুষ। ৬৪ শতাংশ বলছে হিলারি সততায় ঘাটতি আছে এবং তাকে বিশ্বাস করা যায় না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতিবাচক ইমেজকে পুঁজি করে সহজেই হোয়াইট হাউসে যাওয়ার যে স্বপ্ন হিলারি দেখছিলেন সে আশার গুঁড়ে এখন শুধুই বালি।
রাজনীতির ময়দানের চিত্র এখন পুরোটাই আলাদা। তুমুল জনপ্রিয় হিলারির ইমেজটাই এখন নেমে গেছে ‘নেতিবাচক’ ইমেজধারী ট্রাম্পের কাতারে। সাম্প্রতিক সময়ের জনমত জরিপে খুব পাশাপাশি অবস্থান করছেন তারা। অজনপ্রিয়তায় দু’জনেই সমান ৫৭ শতাংশ এবং জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ এগিয়ে- এই হল হালে হিলারির অবস্থা। জনমত জরিপে এগিয়ে থাকলেও ঝুঁকিমুক্ত নন : রিপাবলিকানদের অন্তর্দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মঞ্চে এখন অনেক শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল হিলারির অবস্থান। কিন্তু সেই অবস্থানে নেই তিনি। উল্টো তার অবস্থাও টালমাটাল। উদারপন্থী বলে পরিচিত আরেক ডেমোক্র্যাট প্রার্থী স্যান্ডার্সের তুমুল জনপ্রিয়তাই এর কারণ। জনমত জরিপে ট্রাম্পের তুলনায় ২ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন হিলারি। তবে হিলারির সমর্থকদের ৬০ শতাংশ ব্যক্তিই জানিয়েছেন যে, শুধুমাত্র ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন না বলেই তারা হিলারিকে সমর্থন করছেন। সে হিসেবে ট্রাম্পের পক্ষে স্যান্ডার্সের সমর্থন আরও বেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনে জিততে চাইলে স্যান্ডার্সের ভোটারদের উপর ভরসা করতে হবে হিলারিকে।
কিন্তু সে নিশ্চয়তা তিনি সহসাই পাচ্ছেন না। পাল্টাপাল্টি অক্রমণে ডেমোক্র্যাট শিবিরে এখন জগাখিচুড়ি অবস্থা। ২০১২ সালের নির্বাচনপূর্ব জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনীর তুলনায় ১৫ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সে তুলনায় হিলারির অবস্থা খুব একটা সুবিধাজনক না। অতি গোপনীয় চরম পেশামুখিতা হিলারির পথের কাঁটা : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে জানাচ্ছে যে- দারুণ একটা শুরুর পরেও শেষপর্যন্ত কেঁচে গিয়েছে হিলারির জনপ্রিয়তা। এক্ষেত্রে তার কর্পোরেট ইমেজ এবং জনগণ মানুষের সঙ্গে সখ্যতা না থাকার বিষয়টিতেই তুলে ধরেছে তারা। এছাড়াও হিলারির নির্বাচনী প্রচারণার ভুল কৌশলও তাকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেছে নাগরিক সমাজে। লোকজন বলছে, ‘হিলারির নির্বাচনী প্রমো দেখে তাকে কোনো মানুষ মনে হয় না। ভিনগ্রহের প্রাণী মনে হয়। চাকচিক্যে ভরপুর কিন্তু কোথাও নেই প্রাণবন্ততার ছোঁয়া।’ এছাড়াও ‘শুধুমাত্র’ সমাজের সফলশ্রেণীর সঙ্গেই হিলারি সখ্যতার বিষয়টিতেও কেউ আর ভালো চোখে দেখছে না। মানুষের অভিযোগ, অতিরিক্ত পেশাগততার আড়ালে হিলারির ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগততা খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়াও সাধারণ নাগরিক জীবনযাত্রার সঙ্গে তার চলাফেরা একেবারেই সামঞ্জস্যহীন এবং সবকিছুই গোপনতায় ঠাঁসা বলে জরিপে উঠে এসেছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস বলছে, ব্যয়বহুল নির্বাচনী প্রচারণাই তাকে জনমনে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
ধরি মাছ না ছুঁই পানি এই হল হিলারির অবস্থা : হিলারির সামনে অবারিত সুুযোগ আছে কিন্তু তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এখন ব্যক্তিগত অবস্থানের অস্পষ্টতা। এখন পর্যন্ত তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি যে তিনি বামঘেঁষা রাষ্ট্রপতি হবেন নাকি উদারনীতির পথে হাঁটবেন। এক্ষেত্রে ডোনাল্ট ট্রাম্পের মতো একই সমস্যার সম্মুখীন তিনি। রিপাবলিকান মনোনয়নের ভোটে জিতে এলেও নিজ দলের নেতাদের আস্থা অর্জনে এখনো খাঁবি খাচ্ছেন ট্রাম্প। রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের রক্ষণশীলতা নিয়েও সন্দীহান। দলের আদর্শ রক্ষার্থে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে রীতিমতো নিজের দলেই চাপের মুখে আছেন ট্রাম্প। হিলারিকেও আদর্শিকভাবে কট্টরপন্থী বলে অভিহিত করে নিয়মিতই আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন আরেক ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স। একই সঙ্গে কয়লা নীতির প্রসঙ্গে হিলারিকে পেটি বুর্জোয়া বলতেও তিনি ছাড়ছেন না। রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয়ে অস্পষ্টতা : অভ্যন্তরীণ নীতিতে ক্লিনটনের বামঘেষা উদারনৈতিক আদর্শ এবং সমঝোতার রাজনীতে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন এই সাবেক ফার্স্টলেডি। তিনি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির পক্ষে তবে বৃদ্ধির হার সীমিত, খুব বেশি বৃদ্ধির পক্ষেও না। তিনি সম্পদের উপর কর বাড়াতে চান তবে উদারপন্থীদের দাবির মতো অত্যাধিক হারে না। তিনি ব্যাপক পরিসরে নাগরিক কর্মকাণ্ডে সরকারি অংশগ্রহণের পক্ষে তবে শুধু সেবা হিসেবে নয় বরং অর্থের বিনিময়ে সেবা দেয়ার পক্ষে। পররাষ্ট্র বিষয়েও তিনি ওবামার মতো স্থিরচিত্ত নন। বহির্বিশ্বে অধিক হস্তক্ষেপের পক্ষে তিনি। বণিক প্রীতি নীতির গ্যাঁড়াকল : ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য হিলারি পছন্দনীয় ব্যক্তি হতে পারেন। কারণ তিনি আগে থেকেই ব্যবসায়ীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এই কারণে নিজের দল এবং প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের দ্বারাও উপর্যুপরি আক্রমণের শিকার তিনি। দু’পক্ষই একজোট হয়ে হিলারিকে বলছেন-বণিক শ্রেণীর প্রতিনিধি।
No comments