ইলিয়াস–আনসার ফিরবেনই বিশ্বাস দুই পরিবারের by তানভীর সোহেল ও উজ্জ্বল মেহেদী
একদিন
ঠিকই পরিবারের কাছে ফিরবেন বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক
আনসার আলী। বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার চার বছর পরও এই বিশ্বাসে চিড় ধরেনি
ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগমের।
আশায় বুক বেঁধে স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। তিন সন্তানকে
নিয়ে তাহসিনা থাকেন ঢাকার বনানীতে। আর এক সন্তান এবং স্বামীর মা ও
ভাইবোনদের নিয়ে মুক্তা থাকেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের
গমরাগুল গ্রামে। চার বছর আগে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বিএনপির
কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট) ইলিয়াস আলী নিজ বাসায়
যাওয়ার পথে বনানী থেকে নিখোঁজ হন। তাঁর সঙ্গে গাড়িচালক আনসারও নিখোঁজ হন।
আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও একই এলাকার হওয়ায় ইলিয়াসকে চাচা বলে
ডাকতেন আনসার। ইলিয়াসও তাঁকে ভাতিজা বলে ডাকতেন। সম্প্রতি বিএনপির ষষ্ঠ
কাউন্সিলের পর সিলেটের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এখন কোনো পদে নেই ইলিয়াস আলী। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। গতকাল শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন,
তাঁর স্বামী ফিরে আসবেন, এটা তিনি বিশ্বাস করেন। ইলিয়াস আলীর এলাকার
মানুষও এটা বিশ্বাস করে। তিনি এ-ও বলেন, ‘বাস্তব পরিস্থিতি হয়তো ভিন্ন,
অনেকের কাছে অনেক কিছু মনে হতে পারে, তবে বিশ্বাস করি একদিন না একদিন সে
ফিরবেই।’ ৩২ বছরের যুবক আনসার টানা ২০ বছর ইলিয়াস ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে
ছিলেন। দুই বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম তাঁর
গ্রামের একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক। তিনি বলেন,
‘যেখানেই আছেন আনসার, ইলিয়াসের সঙ্গেই আছেন। তাঁরা জীবিত আছেন, একদিন ঠিকই
ফিরবেন।’ ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি
(জিডি) করেছিলেন তাঁর স্ত্রী। এ ছাড়া উচ্চ আদালতে ইলিয়াসের খোঁজ চেয়ে
রিটও করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে পুলিশ কয়েকবার প্রতিবেদন দিয়েছিল।
এখন কী অবস্থায় আছে, সে খবর আর রাখেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘মামলা তো
পুলিশ নিল না। এখন জানি না পুলিশের অগ্রগতি কী?’
ইলিয়াস ও তাঁর গাড়িচালকের নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করে বনানী থানা-পুলিশ। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ২৪টি তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দাখিল করেন থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম। যদিও এসব প্রতিবেদনে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার আগের অবস্থান ও গাড়ির বিবরণগুলো ঘুরেফিরে এসেছে। বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়াহিদুজ্জামান গতকাল বলেন, এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ওই প্রতিবেদনগুলোর পর আর কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের কাছে তথ্য নেই। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্তের ফাইল তাঁর কাছে আসেনি। ইলিয়াসের কাজগুলোও করছেন তাহসিনা: বনানী সিলেট হাউসের সবকিছু আগের মতোই আছে। নেই শুধু ইলিয়াস আলী। বাড়ির নিচের তলায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর। এর আগে এটি ছিল না। চাকরি, তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খবর রাখা, সম্পত্তি দেখাশোনো করতে হয় তাহসিনাকে। এত কিছুর পরও ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা ও গ্রামের বাড়িতে যেতে ভুল করেন না। গত সপ্তাহেও এই এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। থানার কাউন্সিল অনুষ্ঠানে তাঁর ভূমিকা থাকছে। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকার সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। অবশ্য সেখানকার নেতা-কর্মীরাও ইলিয়াসের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রীকে সবকিছুতে ডাকেন। তাহসিনা রুশদীর বললেন, ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিতই যান তিনি। সেখানকার নেতাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখেন। তাঁরা কাউন্সিল, প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কাজে অংশ নিতে বলেন। যেহেতু এগুলো ইলিয়াস আলীর কাজ, তাই তাঁর সাময়িক অনুপস্থিতিতে সেগুলো করেন। ইলিয়াসের দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি কলেজে আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন। ছোট ছেলে লাবিব সারার এইচএসসি পাস করেছেন। একমাত্র মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আনসারের মুঠোফোনে এখনো ফোন করেন স্ত্রী: আনসার আলীর বাবা নেই। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। পরিবারে মা, স্ত্রী, ভাইবোন ছাড়াও রয়েছে তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তান। নিখোঁজ হওয়ার সময় মেয়ে মারিয়া মাহজাবিনের বয়স ছিল তিন বছর, সে এখন সাত। প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে সে। আনসারের মা নূরজাহান বেগম (৬০) বলেন, তাঁর ছেলের বেতনের টাকা প্রতি মাসে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেন। চার বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। এ টাকা আর ছেলের বউয়ের শিক্ষকতার বেতনে চলে সংসার। সংসারে অভাব, টানাপোড়েনের চেয়ে আনসারের কোনো খোঁজ না পাওয়াই স্ত্রী ও মায়ের কাছে সবচেয়ে কষ্টের। স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, গাড়িচালকের চাকরি পাওয়ার পর আনসার ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্বামী নেই, বিষয়টি মানতে নারাজ তিনি। বললেন, হয়তো সরকার বদল হলে তাঁদের খোঁজ মিলবে। মুক্তা বলেন, প্রায়ই তিনি আনসার আলীর মুঠোফোনে ফোন দেন। কখনো বন্ধ আবার কখনো খোলা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘গত পরশু আমার ননদ ফোন দিছইন। আমরা সবাই হুনছি রিং অয়রও, পরে আরেকবার কল দিয়া বন্ধ পাইছি।’
আর মায়ের বিশ্বাস, ‘একটা ঝড়ে আমার পুতরে নিছে। আরেকটা ঝড়ে ফিরাইয়া দিব,এই বিশ্বাস আমার আছে, থাকবই।’
ইলিয়াস ও তাঁর গাড়িচালকের নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করে বনানী থানা-পুলিশ। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ২৪টি তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দাখিল করেন থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মাইনুল ইসলাম। যদিও এসব প্রতিবেদনে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার আগের অবস্থান ও গাড়ির বিবরণগুলো ঘুরেফিরে এসেছে। বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়াহিদুজ্জামান গতকাল বলেন, এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ওই প্রতিবেদনগুলোর পর আর কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের কাছে তথ্য নেই। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্তের ফাইল তাঁর কাছে আসেনি। ইলিয়াসের কাজগুলোও করছেন তাহসিনা: বনানী সিলেট হাউসের সবকিছু আগের মতোই আছে। নেই শুধু ইলিয়াস আলী। বাড়ির নিচের তলায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর। এর আগে এটি ছিল না। চাকরি, তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খবর রাখা, সম্পত্তি দেখাশোনো করতে হয় তাহসিনাকে। এত কিছুর পরও ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা ও গ্রামের বাড়িতে যেতে ভুল করেন না। গত সপ্তাহেও এই এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। থানার কাউন্সিল অনুষ্ঠানে তাঁর ভূমিকা থাকছে। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকার সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। অবশ্য সেখানকার নেতা-কর্মীরাও ইলিয়াসের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রীকে সবকিছুতে ডাকেন। তাহসিনা রুশদীর বললেন, ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিতই যান তিনি। সেখানকার নেতাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখেন। তাঁরা কাউন্সিল, প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কাজে অংশ নিতে বলেন। যেহেতু এগুলো ইলিয়াস আলীর কাজ, তাই তাঁর সাময়িক অনুপস্থিতিতে সেগুলো করেন। ইলিয়াসের দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি কলেজে আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন। ছোট ছেলে লাবিব সারার এইচএসসি পাস করেছেন। একমাত্র মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আনসারের মুঠোফোনে এখনো ফোন করেন স্ত্রী: আনসার আলীর বাবা নেই। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। পরিবারে মা, স্ত্রী, ভাইবোন ছাড়াও রয়েছে তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তান। নিখোঁজ হওয়ার সময় মেয়ে মারিয়া মাহজাবিনের বয়স ছিল তিন বছর, সে এখন সাত। প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে সে। আনসারের মা নূরজাহান বেগম (৬০) বলেন, তাঁর ছেলের বেতনের টাকা প্রতি মাসে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দেন। চার বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। এ টাকা আর ছেলের বউয়ের শিক্ষকতার বেতনে চলে সংসার। সংসারে অভাব, টানাপোড়েনের চেয়ে আনসারের কোনো খোঁজ না পাওয়াই স্ত্রী ও মায়ের কাছে সবচেয়ে কষ্টের। স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, গাড়িচালকের চাকরি পাওয়ার পর আনসার ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্বামী নেই, বিষয়টি মানতে নারাজ তিনি। বললেন, হয়তো সরকার বদল হলে তাঁদের খোঁজ মিলবে। মুক্তা বলেন, প্রায়ই তিনি আনসার আলীর মুঠোফোনে ফোন দেন। কখনো বন্ধ আবার কখনো খোলা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘গত পরশু আমার ননদ ফোন দিছইন। আমরা সবাই হুনছি রিং অয়রও, পরে আরেকবার কল দিয়া বন্ধ পাইছি।’
আর মায়ের বিশ্বাস, ‘একটা ঝড়ে আমার পুতরে নিছে। আরেকটা ঝড়ে ফিরাইয়া দিব,এই বিশ্বাস আমার আছে, থাকবই।’
No comments