বৈরিতা ভুলে ওবামাকে বরণ করছে কিউবা
যুদ্ধজাহাজে চড়ে ১৯২৮ সালে কিউবা সফরে গিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ। এর দীর্ঘ ৮৮ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঐতিহাসিক সফরে কিউবায় যাচ্ছেন বারাক ওবামা। বাংলাদেশ সময় গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁর কিউবার মাটিতে পা রাখার কথা। বৈরিতা ভুলে তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি। ৪৮ ঘণ্টার এ সফর ঘিরে কিউবার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো তাঁদের দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান ঘটাতে সম্মত হন। এর আগ পর্যন্ত ওবামার এই সফর অনুষ্ঠানের বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। ১৯৫৯ সালে কিউবায় সংঘটিত বিপ্লবে সে দেশে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারের পতন হলে এ বৈরিতার শুরু। ওবামার সফর উপলক্ষে সাদাপোশাকের পুলিশ নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলেছে রাজধানী হাভানাকে। রাজধানীর সড়কগুলোর জৌলুশ বাড়াতে পিচঢালার কাজে ব্যস্ত ছিলেন গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা। রাউল কাস্ত্রোর পাশাপাশি বারাক ওবামার ছবি-সংবলিত বিভিন্ন স্বাগত চিহ্ন শোভা পাচ্ছে ওল্ড হাভানার এখানে-সেখানে।
গতকাল বিকেলে হাভানায় পৌঁছানোর পরপরই এ এলাকায় ওবামার যাওয়ার কথা। ওবামার এ সফরের মধ্য দিয়ে কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধকালীন বৈরিতার জেরে এক শতাব্দীর বেশি সময় দেশটির সঙ্গে কিউবার সম্পর্ক অস্থির ছিল। সফরে বারাক ওবামার সঙ্গে থাকছেন স্ত্রী মিশেল ওবামা এবং দুই মেয়ে শাসা ও মালিয়া। ওবামা বৈঠক করবেন রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে। তবে রাউলের বড় ভাই ও সাবেক কিউবান নেতা বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হচ্ছে না। জীবনভর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো কিউবার নাগরিকদের সঙ্গেও সফরে সরাসরি কথা বলবেন ওবামা। স্বদেশে বিরোধীসহ অনেককে সন্তুষ্ট করতে কমিউনিস্ট দেশটিকে তাগিদ দেবেন মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের ব্যাপারেও। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো তাঁর এ সফরের অন্যতম লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্রদের চেয়ে কখনো কখনো শত্রুদের সঙ্গেই সমঝোতায় বেশি সফল হতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। যেমন, বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক চুক্তি সইয়ের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। এ প্রেক্ষাপটে কিউবায় ওবামার এ সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পর্দার অন্তরালে প্রায় দেড় বছর ধরে চলা সমঝোতার ফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে গত আগস্টে পাঁচ দশক পর আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হয়। ওবামার এ সফর ওই সমঝোতার এক চূড়ান্ত রূপ বলে মনে করা হচ্ছে।
No comments