নেপালি ছাত্রী ধর্ষণে সহায়তাকারী শনাক্ত by নুরুজ্জামান লাবু
ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলে মেয়েটিকে তার হোস্টেল থেকে তুলে নেয়া হয়েছিল প্রাইভেট কারে। পরে তাকে নেয়া হয় মোহাম্মদপুরের একটি বাসায়। সেখানে নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশানো কোকাকোলা পান করতে দেয়া হয়েছিল তাকে। মেয়েটি নির্দ্বিধায় তা পান করেন। তারপরই ধীরে ধীরে অচেতন হয়ে পড়েন। যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন বুঝতে পারেন তার সর্বনাশ করেছে দুর্বৃত্তরা।
বন্ধুদের সহায়তায় তিনি ফিরে আসেন মালিবাগের নিজ হোস্টেলে। ঘটনাটি তিনি তার কলেজের অধ্যক্ষকে জানান। ঘটনার পরদিন এ নিয়ে একটি সালিশ বৈঠকও হয়। ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেয়েটি নেপালি দূতাবাসে অভিযোগ করেন। পরে দূতাবাসের পরামর্শে তিন দিন পর মামলা দায়ের করেন রামপুরা থানায়। কিন্তু মেয়েটি সম্ভ্রম হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে একপর্যায়ে পড়াশোনা ছেড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। নিপীড়নের শিকার মেয়েটি মালিবাগের সিটি ডেন্টাল কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আলোচিত এ ঘটনাটি পাঁচ মাস আগে গত ৬ই এপ্রিল ঘটে। তবে এতদিন পুরো বিষয়টি চাপা ছিল। ঘটনার পরপরই পুলিশ ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেপালি নাগরিক অরুণ কুমার চৌধুরীকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছিল। তবে মেয়েটি ধর্ষিত হওয়ার মেডিক্যাল প্রতিবেদন পুলিশের হাতে আসার আগেই সে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়ে যায়। সম্প্রতি ওই মেডিক্যাল ছাত্রীও পড়াশোনা ছেড়ে নেপালে ফিরে গেছেন। এদিকে ধর্ষক ওই নেপালি নাগরিকের বাংলাদেশী সহযোগী সৈয়দ আবু খালিদ ইবনে হাক্কানী ওরফে বাদশাকে (৪৬) শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইকবাল হোছাইন জানান, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টির রহস্য উদঘাটনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় সিটি ডেন্টাল কলেজের নিজস্ব হোস্টেলে থাকতেন। তিনি জ্যোতি দীপ কনসালটেন্সির মাধ্যমে সিটি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। এর মালিক অরুণ কুমার চৌধুরী তার ভিসা সংক্রান্ত সব কাজকর্মে সহায়তা করতেন। গত ৬ই এপ্রিল সকালে অরুণ তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বলে। সকাল ৯টার দিকে তিনি হোস্টেল থেকে বেরিয়ে চৌধুরীপাড়ায় মূল সড়কে এসে অরুণের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তারা একটি রিকশা নেন এবং কিছু পথ হেঁটে যান। পরে সেখানে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে অপেক্ষা করছিল এক বাঙালি ব্যক্তি। মেয়েটি অরুণের সঙ্গে সেই প্রাইভেটকারে ওঠেন। ওই প্রাইভেটকারে চালকসহ তারা চারজন ছিলেন। গাড়িতে অরুণ তাকে একটি ফ্রুটিকা জুস খেতে দেয়। মেয়েটি জুস এক ঢোক খাওয়ার পর বোতলের মুখ খোলা থাকায় সন্দেহ হয়। পরে বাকি অংশ না খেয়ে রেখে দেন ব্যাগে। অরুণ তাকে মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর সড়কের ৮২/২ নম্বর বাসার ষষ্ট তলায় ভাড়া করা ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের ভিসা সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। ওই ফ্ল্যাটে বাঙালি সেই ব্যক্তি গ্লাসে করে কোক এনে প্রথমে অরুণকে দেয়। অরুণ সেই কোক খেতে থাকলে আরেক গ্লাস এনে দেয়া হয় মেয়েটিকে। কোক খাওয়ার পর তাকে নানরুটি ও চিকেনও খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তার চোখজুড়ে ঘুম আসতে থাকে। এর মধ্যে দুবার বমিও করে সে। এরপরের কথা তার আর মনে নেই। অচেতন হয়ে পড়ে মেয়েটি।
থানায় দায়েরকৃত এজাহারে মেয়েটি অভিযোগ করেন, যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে তখন তিনি দেখতে পান বাঙালি ছেলেটি তার মাথা ও মুখমণ্ডল স্পর্শ করছে। মেয়েটি বুঝতে পারেন তাকে অচেতন করার ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে বিষয়টি তিনি শিকদার মেডিক্যালে পড়া বন্ধুদের জানায়। তাদের সহায়তায় সে মালিবাগের হোস্টেলে ফিরে যান। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি গর্ভনিরোধক ওষুধ খান। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, প্রাইভেটকারে অরুণ তাকে ওয়াইন বা অ্যালকোহলে অভ্যস্ত কিনা জিজ্ঞাসা করে। এছাড়া রাতে হোস্টেল থেকে কোন পার্টিতে যেতে পারে কিনা? মেয়েটি না-সূচক জবাব দিলে অরুণ বাঙালি যুবকের সঙ্গে বাংলায় কিছু কথা বলে। সেখানে ৩০ মিনিট এনজয়মেন্ট করার কথা আলাপ করছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এ ঘটনার পরদিন মেয়েটি পুরো বিষয়টি সিটি ডেন্টাল কলেজের চেয়ারম্যান এএসএম বদরুদ্দোজাকে জানান। ৭ই এপ্রিল রাতে সিটি ডেন্টাল কলেজে একটি সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে প্রিন্সিপাল অরুণ চৌধুরী ও হাক্কানী ওরফে বাদশাকে জুতাপেটা করে বিষয়টি মীমাংসা করে। কিন্তু মেয়েটি ৮ই এপ্রিল এ বিষয়ে ঢাকার নেপাল অ্যাম্বাসিতে অভিযোগ দেয়। পরবর্তীতে নেপাল অ্যাম্বাসির পরামর্শে পরদিন ৯ই এপ্রিল সে রামপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর অ্যাম্বাসির পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারীকে জানিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর দিনই রামপুরা থানা পুলিশ আসামি অরুণ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে। মেয়েটিকেও ওই দিন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। এদিকে অরুণকে প্রথমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে চতুর অরুণ পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে। পরবর্তীতে আরও দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এবারও অরুণ মেয়েটি মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে দাবি করে। মেয়েটিকে এমবিবিএসে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু ডেন্টাল কলেজে ভর্তি করানোয় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এদিকে মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯শে এপ্রিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের একদিন পরই ঢাকা মেডিক্যাল থেকে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন আসে। এরপর ডিবির পক্ষ থেকে অরুণকে রিমান্ডের আবেদন করা হলেও আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেনি। উল্টো ২৯শে এপ্রিল অরুণ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে যায়। তদন্ত সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পরপরই মেয়েটিকে গাড়িতে যে জুস খেতে দেয়া হয়েছিল সেই জুসের বাকি অংশ পরীক্ষার জন্য মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। গত ২৮শে এপ্রিল এই পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রুটিকা জুসের সঙ্গে বেনজোডায়াজিপিন যৌগ মেশানো ছিল। এটি একটি নেশাজাতীয় দ্রব্য। এছাড়া ডিবি পুলিশ মোহাম্মদপুরের অরুণের বাসা থেকে ১৪টি নিশাত সিলভার ট্যাবলেট, ৫টি নাইট ফাইটার ট্যাবলেট, ১টি স্যানোগ্রা ট্যাবলেট, জার্মানির তৈরি একটি নিউ সুপার ভেগা স্প্রে ও ৫টি সেডিল ট্যাবলেট উদ্ধার করে। সেডিল বাদে বাকি সব যৌন উত্তেজক ওষুধ বলে জানা গেছে। মেয়েটিকে অচেতন করতে সেডিল ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামিনে বেরিয়ে আসার পরপরই অরুণ দেশ ছেড়ে নেপালে চলে যায় বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। যদিও তার পাসপোর্ট (নং ০৬৫০৮৩৮১) পুলিশ জব্দ করে রেখেছে। ঘটনার পরপরই অরুণের সহযোগী হাক্কানী ওরফে বাদশাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে। সূত্র জানায়, হাক্কানী ওরফে বাদশা মোহাম্মদপুরের অরুণের বাসার পাশের বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার ছিল। ওই বিল্ডিংটি শমরিতা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার হয়। ঘটনার পর সে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সাব-ইন্সপেক্টর শরীফ রফিকুল ইসলাম জানান, তারা হাক্কানীর বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করে ফেলেছেন। যে কোন সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি। হাক্কানী গ্রেপ্তার হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অরুণকে ধরতে ইন্টারপোলে আবেদন করা হবে: ভয়াবহ এ গণধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত নেপালি নাগরিক অরুণ কুমার চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ২৬শে আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলে অরুণ কুমার চৌধুরীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে আবেদন করেছেন। খুব শিগগিরই অরুণকে গ্রেপ্তার করতেও আবেদন করা হবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অরুণের জব্দ করা পাসপোর্টের সূত্র ধরে জানা গেছে, অরুণ কুমার চৌধুরীর বাবার নাম যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী। তার স্থায়ী ঠিকানা হলো নেপালের মাইট্রি এলাকার দামাইমাদাই-২-এ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় বিদেশী নাগরিক ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় দেশের ইমেজ জড়িত। যদিও প্রধান অভিযুক্তও বিদেশী নাগরিক। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
বন্ধুদের সহায়তায় তিনি ফিরে আসেন মালিবাগের নিজ হোস্টেলে। ঘটনাটি তিনি তার কলেজের অধ্যক্ষকে জানান। ঘটনার পরদিন এ নিয়ে একটি সালিশ বৈঠকও হয়। ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেয়েটি নেপালি দূতাবাসে অভিযোগ করেন। পরে দূতাবাসের পরামর্শে তিন দিন পর মামলা দায়ের করেন রামপুরা থানায়। কিন্তু মেয়েটি সম্ভ্রম হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে একপর্যায়ে পড়াশোনা ছেড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। নিপীড়নের শিকার মেয়েটি মালিবাগের সিটি ডেন্টাল কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আলোচিত এ ঘটনাটি পাঁচ মাস আগে গত ৬ই এপ্রিল ঘটে। তবে এতদিন পুরো বিষয়টি চাপা ছিল। ঘটনার পরপরই পুলিশ ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেপালি নাগরিক অরুণ কুমার চৌধুরীকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছিল। তবে মেয়েটি ধর্ষিত হওয়ার মেডিক্যাল প্রতিবেদন পুলিশের হাতে আসার আগেই সে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়ে যায়। সম্প্রতি ওই মেডিক্যাল ছাত্রীও পড়াশোনা ছেড়ে নেপালে ফিরে গেছেন। এদিকে ধর্ষক ওই নেপালি নাগরিকের বাংলাদেশী সহযোগী সৈয়দ আবু খালিদ ইবনে হাক্কানী ওরফে বাদশাকে (৪৬) শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইকবাল হোছাইন জানান, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টির রহস্য উদঘাটনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় সিটি ডেন্টাল কলেজের নিজস্ব হোস্টেলে থাকতেন। তিনি জ্যোতি দীপ কনসালটেন্সির মাধ্যমে সিটি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। এর মালিক অরুণ কুমার চৌধুরী তার ভিসা সংক্রান্ত সব কাজকর্মে সহায়তা করতেন। গত ৬ই এপ্রিল সকালে অরুণ তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বলে। সকাল ৯টার দিকে তিনি হোস্টেল থেকে বেরিয়ে চৌধুরীপাড়ায় মূল সড়কে এসে অরুণের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তারা একটি রিকশা নেন এবং কিছু পথ হেঁটে যান। পরে সেখানে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে অপেক্ষা করছিল এক বাঙালি ব্যক্তি। মেয়েটি অরুণের সঙ্গে সেই প্রাইভেটকারে ওঠেন। ওই প্রাইভেটকারে চালকসহ তারা চারজন ছিলেন। গাড়িতে অরুণ তাকে একটি ফ্রুটিকা জুস খেতে দেয়। মেয়েটি জুস এক ঢোক খাওয়ার পর বোতলের মুখ খোলা থাকায় সন্দেহ হয়। পরে বাকি অংশ না খেয়ে রেখে দেন ব্যাগে। অরুণ তাকে মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর সড়কের ৮২/২ নম্বর বাসার ষষ্ট তলায় ভাড়া করা ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের ভিসা সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। ওই ফ্ল্যাটে বাঙালি সেই ব্যক্তি গ্লাসে করে কোক এনে প্রথমে অরুণকে দেয়। অরুণ সেই কোক খেতে থাকলে আরেক গ্লাস এনে দেয়া হয় মেয়েটিকে। কোক খাওয়ার পর তাকে নানরুটি ও চিকেনও খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তার চোখজুড়ে ঘুম আসতে থাকে। এর মধ্যে দুবার বমিও করে সে। এরপরের কথা তার আর মনে নেই। অচেতন হয়ে পড়ে মেয়েটি।
থানায় দায়েরকৃত এজাহারে মেয়েটি অভিযোগ করেন, যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে তখন তিনি দেখতে পান বাঙালি ছেলেটি তার মাথা ও মুখমণ্ডল স্পর্শ করছে। মেয়েটি বুঝতে পারেন তাকে অচেতন করার ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে বিষয়টি তিনি শিকদার মেডিক্যালে পড়া বন্ধুদের জানায়। তাদের সহায়তায় সে মালিবাগের হোস্টেলে ফিরে যান। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি গর্ভনিরোধক ওষুধ খান। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, প্রাইভেটকারে অরুণ তাকে ওয়াইন বা অ্যালকোহলে অভ্যস্ত কিনা জিজ্ঞাসা করে। এছাড়া রাতে হোস্টেল থেকে কোন পার্টিতে যেতে পারে কিনা? মেয়েটি না-সূচক জবাব দিলে অরুণ বাঙালি যুবকের সঙ্গে বাংলায় কিছু কথা বলে। সেখানে ৩০ মিনিট এনজয়মেন্ট করার কথা আলাপ করছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এ ঘটনার পরদিন মেয়েটি পুরো বিষয়টি সিটি ডেন্টাল কলেজের চেয়ারম্যান এএসএম বদরুদ্দোজাকে জানান। ৭ই এপ্রিল রাতে সিটি ডেন্টাল কলেজে একটি সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে প্রিন্সিপাল অরুণ চৌধুরী ও হাক্কানী ওরফে বাদশাকে জুতাপেটা করে বিষয়টি মীমাংসা করে। কিন্তু মেয়েটি ৮ই এপ্রিল এ বিষয়ে ঢাকার নেপাল অ্যাম্বাসিতে অভিযোগ দেয়। পরবর্তীতে নেপাল অ্যাম্বাসির পরামর্শে পরদিন ৯ই এপ্রিল সে রামপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর অ্যাম্বাসির পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারীকে জানিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর দিনই রামপুরা থানা পুলিশ আসামি অরুণ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে। মেয়েটিকেও ওই দিন পুলিশ হেফাজতে নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। এদিকে অরুণকে প্রথমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে চতুর অরুণ পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে। পরবর্তীতে আরও দুদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এবারও অরুণ মেয়েটি মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে দাবি করে। মেয়েটিকে এমবিবিএসে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু ডেন্টাল কলেজে ভর্তি করানোয় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এদিকে মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯শে এপ্রিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের একদিন পরই ঢাকা মেডিক্যাল থেকে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন আসে। এরপর ডিবির পক্ষ থেকে অরুণকে রিমান্ডের আবেদন করা হলেও আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেনি। উল্টো ২৯শে এপ্রিল অরুণ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে যায়। তদন্ত সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পরপরই মেয়েটিকে গাড়িতে যে জুস খেতে দেয়া হয়েছিল সেই জুসের বাকি অংশ পরীক্ষার জন্য মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। গত ২৮শে এপ্রিল এই পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রুটিকা জুসের সঙ্গে বেনজোডায়াজিপিন যৌগ মেশানো ছিল। এটি একটি নেশাজাতীয় দ্রব্য। এছাড়া ডিবি পুলিশ মোহাম্মদপুরের অরুণের বাসা থেকে ১৪টি নিশাত সিলভার ট্যাবলেট, ৫টি নাইট ফাইটার ট্যাবলেট, ১টি স্যানোগ্রা ট্যাবলেট, জার্মানির তৈরি একটি নিউ সুপার ভেগা স্প্রে ও ৫টি সেডিল ট্যাবলেট উদ্ধার করে। সেডিল বাদে বাকি সব যৌন উত্তেজক ওষুধ বলে জানা গেছে। মেয়েটিকে অচেতন করতে সেডিল ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামিনে বেরিয়ে আসার পরপরই অরুণ দেশ ছেড়ে নেপালে চলে যায় বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। যদিও তার পাসপোর্ট (নং ০৬৫০৮৩৮১) পুলিশ জব্দ করে রেখেছে। ঘটনার পরপরই অরুণের সহযোগী হাক্কানী ওরফে বাদশাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে। সূত্র জানায়, হাক্কানী ওরফে বাদশা মোহাম্মদপুরের অরুণের বাসার পাশের বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার ছিল। ওই বিল্ডিংটি শমরিতা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার হয়। ঘটনার পর সে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সাব-ইন্সপেক্টর শরীফ রফিকুল ইসলাম জানান, তারা হাক্কানীর বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করে ফেলেছেন। যে কোন সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি। হাক্কানী গ্রেপ্তার হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অরুণকে ধরতে ইন্টারপোলে আবেদন করা হবে: ভয়াবহ এ গণধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত নেপালি নাগরিক অরুণ কুমার চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ২৬শে আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলে অরুণ কুমার চৌধুরীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে আবেদন করেছেন। খুব শিগগিরই অরুণকে গ্রেপ্তার করতেও আবেদন করা হবে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অরুণের জব্দ করা পাসপোর্টের সূত্র ধরে জানা গেছে, অরুণ কুমার চৌধুরীর বাবার নাম যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী। তার স্থায়ী ঠিকানা হলো নেপালের মাইট্রি এলাকার দামাইমাদাই-২-এ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় বিদেশী নাগরিক ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় দেশের ইমেজ জড়িত। যদিও প্রধান অভিযুক্তও বিদেশী নাগরিক। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
No comments