যারা অস্ত্র বেচে, তারা খাবার দেয় না
ওই
যে ছেলেটা সমুদ্রের পানির সঙ্গে ভেসে এসে বালিতে মুখ গুঁজড়ে পড়ে ছিল, ওকে
মারতে আমাদের গত চার বছরে কম করে হলেও চার শো কোটি ডলার খরচা করতে হয়েছে!
কাজেই এই যে সারা পৃথিবীর বিবেক জাগ্রত হলো হঠাৎ, সেটা কিন্তু আমাদের জন্যে
এবং তার খরচ নেহাত কম নয়। আমরা এ ব্যাপারে কখনো কোনো কার্পণ্য করি না বলেই
বিশ্বের লোক বছরভর নিখরচায় এমন আমোদ পায়। বছরে গড়ে ১০০ কোটি ডলার
করদাতাদের দেয়া ভাণ্ডার থেকে আমাদের নিঃশব্দে সরিয়ে ফেলতে হয়েছে সিরিয়ার
গৃহযুদ্ধটাকে চাঙ্গা রাখার জন্যে। তার ওপর আই এস জঙ্গিদের ওপর বিমান–হামলা
করতে দিনে এক কোটি ডলার খরচ হয়। চার বছরে ঠিক ৬,৬৫০ বার এরকম মারমার কাটকাট
বিমান হামলা চালিয়েছি, যার ৩৭% সিরিয়ায় হয়েছে। তার পর আবার সিরিয়া থেকে
আসা শরণার্থীদের দায়ভাগ নিতে হবে? মামার বাড়ির আবদার আর কী! ওই যে হাজার
দেড়েক শরণার্থীকে জায়গা দিয়েছি, আরো সাড়ে ছ’হাজারের আবেদনপত্র গভীর
সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব বলেছি, সেটাই যথেষ্ট। ওদের চোদ্দোগুষ্টির
ভাগ্য।
না, কোনো পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে বসার সময় নেই কারো। কেউ বলছে না, মিথ্যে অজুহাতে আমেরিকা আর ব্রিটেন সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে হামলা না চালালে আল–কায়দার গর্ভ থেকে এই নির্মম ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের জন্ম হতো না। কেউ বলছে না, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার আর সংযুক্ত আরব আমির আমিরাতের মতো আমেরিকার ধামাধরা দেশেরা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লাগাতার মদত না দিয়ে গেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কারণ এখন মূল সমস্যা সিরিয়ার বাস্তুচ্যুত ৪০ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে দেয়া, যারা স্বদেশের গৃহযুদ্ধ এবং আইএস জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য থেকে জান–মাল বাঁচাতে আশপাশের দেশগুলোতে শরণার্থী।
লেবানন, তুরস্ক, মিসর, জর্ডান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে এই বেঘর পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেয়ার। ৯৫% সিরীয় উদ্বাস্তুর চাপ এই পাঁচটা দেশই সামলানোর চেষ্টা করছে। বাকি যে ৫%, তাদের জায়গা দিতেই নাকাল হচ্ছে ইউরোপ। এত তীব্র শরণার্থী–সঙ্কটের মোকাবিলা ইউরোপীয় দেশগুলোকে গত ৭০ বছরে কখনো করতে হয়নি। তবু এর মধ্যে জার্মানি কিছুটা সহানুভূতিশীল। তারা শরণার্থীদের জন্যে দরজা খুলে দিয়েছে এবং বলেছে, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে ৮ লাখ সিরীয় বাস্তুচ্যুত মানুষকে তারা জার্মানিতে থাকার সুযোগ করে দেবে। যেহেতু এই বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্যে সরকারি ব্যবস্থা যথেষ্ট হবে না, তাই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে নাগরিকেরা নিজেদের বাড়তি থাকার জায়গা সাময়িকভাবে ছেড়ে দেন শরণার্থীদের জন্যে। বিনিয়োগ হিসেবে কিনে–রাখা বাড়তি ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে ছুটি কাটানোর কটেজ, সবই এই কাজে লেগে যাবে। জার্মানির দেখাদেখি অস্ট্রিয়াও সিরীয় শরণার্থীদের চাপ ভাগ করে নিতে রাজি হয়েছে।
ইতিহাসের রসিকতাই বলতে হবে, ইউরোপের এই দুই দেশই বিদেশি অভিবাসনকারীদের ব্যাপারে অসহিষ্ণু বলে পরিচিত। এই দুই দেশেই উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তি মাঝে মাঝেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। আর এরাই এখন সিরীয় শরণার্থীদের ব্যাপারে সবচেয়ে সহানুভূতিশীল। সেখানে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম আর নেদারল্যান্ডস এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে যেন তাদের শোয়ার ঘরে ভিখিরি ঢুকে পড়েছে! অথচ ব্যাপারটা মোটেই এরকম নয় যে, সিরিয়ার সমস্যা, আমাদের কী! বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই চারটে দেশ এবং ব্রিটেন এত দিন সিরিয়ায় বিমান–হামলায় আমেরিকাকে সঙ্গ দিয়ে গেছে। আহা, দুষ্টু আই এস জঙ্গিদের নিকেশ করতে হবে না! কিন্তু এখন উদ্বাস্তু–সমস্যার মুখে এরাই সবার আগে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
এটা কিন্তু একটা লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার। যে–দেশ যত বেশি অস্ত্র বেচেছে সিরিয়াকে, মদত জুগিয়েছে গৃহযুদ্ধে, তারাই এখন সবচেয়ে কম দায় নিতে চায়। ২০১১ সাল থেকে ৭৭০ কোটি ডলারের মারণাস্ত্র সিরিয়াকে বেচেছে আমেরিকা, দায় নিয়েছে ১৪৩৪ জন শরণার্থীর। বলেছে, খুব বেশি হলে ৮০০০ লোককে আশ্রয় দিতে পারবে ওরা। কানাডা ২৩০০ শরণার্থীকে জায়গা দিচ্ছে, অস্ত্র বেচেছে ৭০ কোটি ডলারের। ব্রিটেন এবং ওই চার ইইউ দেশ প্রায় ৯০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে, এখন চক্ষুলজ্জার খাতিরে আর অনেকটাই জার্মানির চাপে পড়ে কিছু দায়িত্ব নেবে। সবাই মিলে মোট ১৬ হাজার সিরীয়কে সাময়িক আশ্রয় দেবে। সাময়িকই। সিরীয়রা কেউ বিদেশের ফুটপাথে থাকতে চায় না। নিজেদের দেশেই ফিরে যেতে চায়। পারছে না, কী করবে!
তবে এই সঙ্কটকালে খুব ভালো চিনতে পারা গেছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমির আমিরাত, কুয়েত, কাতারকে। এরা এক দিকে সিরিয়ার বাসার আল আসাদের সরকারকে মদত জুগিয়েছে, অন্য দিকে অস্ত্রে, অর্থে মদত করেছে গৃহযুদ্ধে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকার–বিরোধী মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে এবং একই সঙ্গে গোপন সমঝোতা আর সাহায্য চালু রেখেছে আই এস জঙ্গিদের জন্য। আর সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের ঢল শুরু হতেই সবার আগে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এরা। জানিয়ে দিয়েছে, একজন লোকেরও দায় এরা নেবে না। এমনকি আরব দুনিয়ার যে ছোট দেশগুলো শরণার্থীদের দায়িত্ব নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তাদের খুচরো পয়সা দিয়েও সাহায্য করবে না বড়লোক বড়ভাইরা। যদিও সিরিয়ায় পাঠানো তাদের মানবিক ত্রাণসাহায্যের টাকা নানা ঘুরপথে শেষ পর্যন্ত আইএস জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে যায় বলে খবর। এমন একটা অবিশ্বাসের পৃথিবীতে বেঁচে থেকেই বা কী করত বেচারি আয়লান কুর্দি! বরং, ও মরে বেঁচেছে।
সূত্র : আজকাল
না, কোনো পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে বসার সময় নেই কারো। কেউ বলছে না, মিথ্যে অজুহাতে আমেরিকা আর ব্রিটেন সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে হামলা না চালালে আল–কায়দার গর্ভ থেকে এই নির্মম ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের জন্ম হতো না। কেউ বলছে না, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার আর সংযুক্ত আরব আমির আমিরাতের মতো আমেরিকার ধামাধরা দেশেরা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লাগাতার মদত না দিয়ে গেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কারণ এখন মূল সমস্যা সিরিয়ার বাস্তুচ্যুত ৪০ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে দেয়া, যারা স্বদেশের গৃহযুদ্ধ এবং আইএস জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য থেকে জান–মাল বাঁচাতে আশপাশের দেশগুলোতে শরণার্থী।
লেবানন, তুরস্ক, মিসর, জর্ডান এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে এই বেঘর পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেয়ার। ৯৫% সিরীয় উদ্বাস্তুর চাপ এই পাঁচটা দেশই সামলানোর চেষ্টা করছে। বাকি যে ৫%, তাদের জায়গা দিতেই নাকাল হচ্ছে ইউরোপ। এত তীব্র শরণার্থী–সঙ্কটের মোকাবিলা ইউরোপীয় দেশগুলোকে গত ৭০ বছরে কখনো করতে হয়নি। তবু এর মধ্যে জার্মানি কিছুটা সহানুভূতিশীল। তারা শরণার্থীদের জন্যে দরজা খুলে দিয়েছে এবং বলেছে, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে ৮ লাখ সিরীয় বাস্তুচ্যুত মানুষকে তারা জার্মানিতে থাকার সুযোগ করে দেবে। যেহেতু এই বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্যে সরকারি ব্যবস্থা যথেষ্ট হবে না, তাই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে নাগরিকেরা নিজেদের বাড়তি থাকার জায়গা সাময়িকভাবে ছেড়ে দেন শরণার্থীদের জন্যে। বিনিয়োগ হিসেবে কিনে–রাখা বাড়তি ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে ছুটি কাটানোর কটেজ, সবই এই কাজে লেগে যাবে। জার্মানির দেখাদেখি অস্ট্রিয়াও সিরীয় শরণার্থীদের চাপ ভাগ করে নিতে রাজি হয়েছে।
ইতিহাসের রসিকতাই বলতে হবে, ইউরোপের এই দুই দেশই বিদেশি অভিবাসনকারীদের ব্যাপারে অসহিষ্ণু বলে পরিচিত। এই দুই দেশেই উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তি মাঝে মাঝেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। আর এরাই এখন সিরীয় শরণার্থীদের ব্যাপারে সবচেয়ে সহানুভূতিশীল। সেখানে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম আর নেদারল্যান্ডস এমন একটা ভাব দেখাচ্ছে যেন তাদের শোয়ার ঘরে ভিখিরি ঢুকে পড়েছে! অথচ ব্যাপারটা মোটেই এরকম নয় যে, সিরিয়ার সমস্যা, আমাদের কী! বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই চারটে দেশ এবং ব্রিটেন এত দিন সিরিয়ায় বিমান–হামলায় আমেরিকাকে সঙ্গ দিয়ে গেছে। আহা, দুষ্টু আই এস জঙ্গিদের নিকেশ করতে হবে না! কিন্তু এখন উদ্বাস্তু–সমস্যার মুখে এরাই সবার আগে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
এটা কিন্তু একটা লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার। যে–দেশ যত বেশি অস্ত্র বেচেছে সিরিয়াকে, মদত জুগিয়েছে গৃহযুদ্ধে, তারাই এখন সবচেয়ে কম দায় নিতে চায়। ২০১১ সাল থেকে ৭৭০ কোটি ডলারের মারণাস্ত্র সিরিয়াকে বেচেছে আমেরিকা, দায় নিয়েছে ১৪৩৪ জন শরণার্থীর। বলেছে, খুব বেশি হলে ৮০০০ লোককে আশ্রয় দিতে পারবে ওরা। কানাডা ২৩০০ শরণার্থীকে জায়গা দিচ্ছে, অস্ত্র বেচেছে ৭০ কোটি ডলারের। ব্রিটেন এবং ওই চার ইইউ দেশ প্রায় ৯০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে, এখন চক্ষুলজ্জার খাতিরে আর অনেকটাই জার্মানির চাপে পড়ে কিছু দায়িত্ব নেবে। সবাই মিলে মোট ১৬ হাজার সিরীয়কে সাময়িক আশ্রয় দেবে। সাময়িকই। সিরীয়রা কেউ বিদেশের ফুটপাথে থাকতে চায় না। নিজেদের দেশেই ফিরে যেতে চায়। পারছে না, কী করবে!
তবে এই সঙ্কটকালে খুব ভালো চিনতে পারা গেছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমির আমিরাত, কুয়েত, কাতারকে। এরা এক দিকে সিরিয়ার বাসার আল আসাদের সরকারকে মদত জুগিয়েছে, অন্য দিকে অস্ত্রে, অর্থে মদত করেছে গৃহযুদ্ধে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকার–বিরোধী মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে এবং একই সঙ্গে গোপন সমঝোতা আর সাহায্য চালু রেখেছে আই এস জঙ্গিদের জন্য। আর সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের ঢল শুরু হতেই সবার আগে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এরা। জানিয়ে দিয়েছে, একজন লোকেরও দায় এরা নেবে না। এমনকি আরব দুনিয়ার যে ছোট দেশগুলো শরণার্থীদের দায়িত্ব নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তাদের খুচরো পয়সা দিয়েও সাহায্য করবে না বড়লোক বড়ভাইরা। যদিও সিরিয়ায় পাঠানো তাদের মানবিক ত্রাণসাহায্যের টাকা নানা ঘুরপথে শেষ পর্যন্ত আইএস জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে যায় বলে খবর। এমন একটা অবিশ্বাসের পৃথিবীতে বেঁচে থেকেই বা কী করত বেচারি আয়লান কুর্দি! বরং, ও মরে বেঁচেছে।
সূত্র : আজকাল
No comments