লন্ডন গেলেন খালেদা জিয়া
চিকিৎসা
ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে লন্ডন গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও
২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গত রাত সাড়ে ৯টায় এমিরেটস
এয়ারলাইন্সের (ফ্লাইট নম্বর-৫৮৫) একটি বিমানে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন
তিনি। আজ ভোরে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছবেন বিরোধী জোটের এই শীর্ষ নেতা।
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দলের সিনিয়র
ভাইস চেয়ারম্যান ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির
শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অভ্যর্থনা জানানোর কথা রয়েছে। এর আগে রাত ৮টা ১০
মিনিটে তিনি গুলশানের বাসা থেকে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে পৌঁছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গুলশান থেকে
বিমানবন্দর পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দেন। দলের তরফে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে,
লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের বড় ছেলে
তারেক রহমান, পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমান এবং ছোট ছেলে
প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান, দুই কন্যা জাফিয়া রহমান ও
জাহিয়া রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ ৮ বছর পর পারিবারিক আবহে ঈদুল আজহা উদযাপন
করবেন খালেদা জিয়া। দেশের বাইরে এবারই সপরিবারে প্রথমবারের মতো ঈদ করছেন
তিনি। উল্লেখ্য, গত প্রায় ৮ বছর ধরে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন তারেক
রহমান। তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেও পরবর্তীতে আইনি জটিলতার কারণে ফেরা
হয়নি। নির্দেশ সত্ত্বেও আদালতে হাজিরা না দেয়ায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে
কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এছাড়া, লন্ডনে পড়াশোনা
করছেন তার মেয়ে জায়মা রহমান। এদিকে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত
রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই কন্যা লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। তারাও প্রায় ৮ বছর
ধরে মালয়েশিয়ায় বাস করছেন। সম্প্রতি ও লেভেল পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের পর
কোকোর বড় মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডনে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া লন্ডনের অভিজাত
এলাকা গ্রিন পার্কের রিডস হোটেল বা ক্যানারি ওয়ার্ফের হোটেল রেডিসনে উঠবেন।
দুটি হোটেলেই পৃথক দুটি বুকিংসহ তার অন্যান্য সফরসূচির কাজ ইতিমধ্যে
সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল
জানান, ব্যক্তিগত সফরে খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন। এ সফরের উদ্দেশ্য চোখ ও
পায়ের চিকিৎসা এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো। ইতিমধ্যেই বেগম
জিয়ার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছেন তার পুত্রবধূ ডা.
জুবাইদা রহমান। তিনি নিজেই তার শাশুড়ির চিকিৎসার বিষয়ে সমন্বয় ও দেখভাল
করবেন। সফর শেষে আগামী ১লা অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এদিকে বিএনপি নেতারা জানান, খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ায় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ
তিনটি পদ চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদের দায়িত্বে
থাকা নেতারা একযোগে বিদেশে অবস্থান করছেন। এতে দলের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত
নেয়ার মতো কোন শীর্ষ নেতা দেশে নেই। দুই সপ্তাহ লন্ডনে থাকবেন খালেদা জিয়া।
তবে এই সময়ের মধ্যে দল পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া
হয়নি। তবে খালেদা জিয়া অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান এবং যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানের
সমন্বয়ে একটি টিম করে দল পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি দলটির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে
ফেরার জন্য বলেছেন খালেদা জিয়া। আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার
সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ফিরলে ওই টিমে তিনিও যুক্ত হবেন। ওদিকে খালেদা জিয়ার
সঙ্গে এবার সফর সঙ্গী হিসেবে নেই নেতারা। তার সঙ্গে গেছেন একজন একান্ত সচিব
ও একজন গৃহকর্মী। তবে দলের একাধিক সূত্র জানায়, দেশ থেকে চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুক্তরাষ্ট্রে
অবস্থানরত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকসহ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা লন্ডনে তার সঙ্গে যোগ
দেবেন। এছাড়াও নিজস্ব উদ্যোগে দলের কয়েকজন নেতা একই ফ্লাইটে লন্ডন যাওয়ার
কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লন্ডন সফরকালে খালেদা জিয়া চোখ ও পায়ের
চিকিৎসা নেবেন। এ সফরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যবর্তী নির্বাচনের
প্রেক্ষাপট, দল পুনর্গঠন, পরবর্তী করণীয় ও নির্বাচন নিয়ে একান্তে কথা বলবেন
বিএনপি শীর্ষ দুই নেতা। চূড়ান্ত করবেন আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা ও
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। গুরুত্বপূর্ণ এ সফরে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকালে মিট
দ্য প্রেস, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও নাগরিক সংবর্ধনা, ঈদ
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি বৃটেনের মূলধারার
কয়েকজন রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, বৃটিশ সরকারের পররাষ্ট্র
দপ্তরের উচ্চপদস্থ কয়েক কর্মকর্তাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে
খালেদা জিয়ার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে এগিয়ে দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর
চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, দলের
মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান
সোহেল, সাবেক মহিলা এমপি হেলেন জেরিন খান ও শাম্মী আকতারসহ বিএনপি ও অঙ্গ
দলের নেতাকর্মীরা।
No comments