বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল থেকে প্রতি বছর বিক্রি হচ্ছে হাজারো ‘যৌনদাসী’
বাংলাদেশ,
ভারত ও নেপাল থেকে প্রতি বছর হাজারো নারীকে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে
দেয়া হচ্ছে। এসব নারীর স্থান হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা সহ বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে। সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের ‘দাস-বাজার’ আর ‘যৌন কারাগারে’
নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তাদের অনেকে। পাচারকারী এ চক্রের ট্রানজিট পয়েন্ট হলো
নয়াদিল্লি, মুম্বই ও কলকাতা। ভারতের অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক দীর্ঘ
প্রতিবেদনে ভয়াবহ এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে
এয়ারলাইন্স ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। কয়েক মাস আগে ২৪ বছরের নেপালি যুবতী
রিমাকে (ছদ্মনাম) তার পিতা-মাতা এক দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। তার
গন্তব্য হতে চলেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দাস বাজারে। ২৭শে জুলাই রিমা সহ আরও ছয়
জনকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার সময় আটক করা হয় দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী
বিমানবন্দরে। এ ঘটনার পর বিভিন্ন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ডেস্কগুলোকে মানব
পাচারের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়। পাচারকারী চক্রও এতে সতর্ক হয়ে নারীদের
প্রথমে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মরক্কো ও ব্যাংকক পাঠাচ্ছে। পরে সেখান থেকে
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভিসা নিয়ে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি
অনেক বড় একটি পাচারকারী চক্রের তথ্য উঠে এসেছে। এতে সম্পৃক্ত রয়েছে এয়ার
ইন্ডিয়ার দুই কর্মকর্তা মনিষ গুপ্ত ও কপিল কুমার। তারা বোর্ডিং পাস ইস্যু
করতো। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাই সফররত পাচারের শিকার ৭৬ নেপালি মেয়েকে
উদ্ধার করে দিল্লি পুলিশ। এদিকে, ২রা সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’
দিল্লি পুলিশকে সতর্কবার্তায় জানায় যে, বাংলাদেশী মেয়েদের নয়াদিল্লি থেকে
পাচার করা হচ্ছে। র’-এর ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘ভারতভিত্তিক ৩১শে আগস্টে
এক চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের এক নারীবিষয়ক সহযোগীকে জানানো হয়েছে যে, সে
নয়াদিল্লিতে প্রয়োজনীয় সব যোগাযোগ সম্পন্ন করেছে। এর মাধ্যমে সে
বাংলাদেশীদের জন্য কুয়েত, সৌদি আরব ও দুবাইয়ের ভিসা নিতে সক্ষম হবে।
পাচারকারীদের বড় একটি সক্রিয় চক্র নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো দিল্লি
পুলিশ, ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন ও বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার
নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে, মে মাসে নেপালের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো দেশটির
যেসব মেয়ে ও নারীকে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের কাছে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে পাচার করা
হয়েছে সে সম্পর্কিত তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিয়েছে। নেপালের
পুলিশ সংস্থাগুলো আরও জানিয়েছে যে, এসব নারীকে ভারতের মধ্য দিয়ে পাচার করা
হচ্ছে; বিশেষ করে দিল্লি দিয়ে। রিমা ঘটনার পর বিস্তারিত তদন্তে আরও উঠে আসে
যে, দিল্লিতে আরও নেপালি মেয়েদের আনা হয়েছে। তাদের মহিপালপুরে রাখা হয়েছে।
পুলিশ ২৫শে জুলাই একটি অভিযান চালিয়ে নেপালি দুই এজেন্ট বিষ্ণু তামাং ও
দয়া রামকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ২১ জন নেপালি মেয়ে ও নারীকে। এদের
বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তাদের গন্তব্য ছিল দুবাই। গ্রেপ্তারকৃত
এজেন্টরা জানিয়েছে, আগের দুই মাসে তারা ৭ শতাধিক নারীকে পাচার করেছে। আর
জনপ্রতি তারা কমিশন পেয়েছে ৫ হাজার রুপি। গত বছর পুলিশ উদ্ধার করেছে ২৩৫
নারীকে। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ১৬০। এর মধ্যে নেপালি নারী ৪৩ জন। ২০১২ সালে
দিল্লি পুলিশ উদ্ধার করেছে ১৮৫ নারীকে। এর মধ্যে ৪২ জন নেপালি। এ বছর পুলিশ
দিল্লি থেকে আটক করেছে ৬২ মানবপাচারকারীকে। এর মধ্যে ৮ জন নারী। গত বছর
আটক করেছে ১৯৯ জনকে। এর মধ্যে ৩১ জনই নারী। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৮৬
জন। এর মধ্যে ৪০ জনই নারী। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ পরিসংখ্যান বলে যে,
দিল্লি পুলিশ গত দু’বছর পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ছিল নমনীয় অবস্থানে। দিল্লি
পুলিশের একটি সূত্র বলেছেন, কোন মেয়ের বয়স ১৮ বছরের অধিক তা নির্ধারণ করা
তাদের কাছে খুবই কঠিন বিষয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারীরা নিরাপত্তা
রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন
করছে। তাই কোন দেশ থেকে নারীদের পাচার করতে হলে তারা সরাসরি সেই দেশ থেকে
পাচার করে না। প্রথমে তারা অন্য একটি দেশে কাজের টোপ দিয়ে নিয়ে যায়। সেখান
থেকে তাদেরকে পাচার করে। যেমন কাঠমান্ডু থেকে পশ্চিম আফ্রিকার কোন দেশে
সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। আরও একটি তথ্য আছে। যেসব মেয়ে পাচার করা হয় উচ্চ
মূল্যে তাদেরকে নেয়া হয় কাঠমান্ডু থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম মেলচি ও
সিন্ধুপাল চক শহর থেকে। এসব স্থানের মেয়ের গায়ের রঙ ফর্সা থাকে। তাদের
চেহারা সুন্দর হয়। ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের হাতে এসেছে এমন একটি প্রামাণ্য
ডকুমেন্ট। ডকুমেন্টে দেখা গেছে, ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে উদ্ধার করা
নারীদের মধ্যে নেপালি মেয়েই বেশি। ওদিকে ক্রমবর্ধমান হারে অপরাধ বাড়ছে
উপজাতি প্রধান এলাকা ঝাড়খণ্ডের জুমলা, লোহারদাগা, খুন্তি ও সিমদেগায়।
জলপাইগুঁড়ি, কুচবিহার, মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশির ভাগ
পাচারকারীর সঙ্গে রয়েছে হোটেলের সম্পর্ক।
No comments