সিন্ডিকেটের কবলে বাজার
বাজারে চাহিদা, জোগান ও সরবরাহ ব্যবস্থার সবটাই এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বাজার ব্যবস্থায় এখন সরকারি হস্তক্ষেপ প্রায় শূন্যের কোটায়। আর মনিটরিং থাকলেও তাতে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ এমন নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মুষ্টিমেয় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অস্তিত্বও সবার জানা। এরা গোয়েন্দা নজরদারিতেও চিহ্নিত। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির দাপটে এই সিন্ডিকেট বরাবরই সুরক্ষিত। তাই নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবসায়ীরা। এতে প্রায়শ অস্থির হয়ে উঠছে বাজার। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দোহাই কিংবা যেনতেন ছুতোয় দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করছে এই চক্র। সম্প্রতি দেশে পেঁয়াজের বাজারে অসৎ ব্যবসার প্রতিযোগিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এভাবে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর অনৈতিক তৎপরতার দায় সরকারকে বহন করতে হচ্ছে- যা সাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ওদিকে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার ব্যবসায়ীদের নানাভাবে নীতিগত সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তবে এই অসৎ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে তা ভোক্তার পকেটে যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে ব্যবসায়ীদের যা খুশি তা করার লাইসেন্স নয়। ভোক্তাকে দুর্ভোগে রেখে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক মুনাফা করার সুযোগ দেয়া নয়। একটি সভ্য রাষ্ট্রে এই হীন তৎপরতা চলতে পারে না। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের কোনো আধুনিক এমনকি পুঁজিবাদী অনেক দেশেও বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি থাকে। কারণ মুক্ত বাজারের দোহাই দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা চালানোর অবকাশ কারও নেই।
কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। এ কারণেই আস্কারা পেয়ে বসেছে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। এরা সুযোগ পেলেই বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি ও ক্রেতার সঙ্গে স্বেচ্ছাচারি আচরণ করে। এক প্রশ্নের জবাবে এই বাম নেতা আরও বলেন, বাজার নিযন্ত্রণে সরকারিভাবে উদ্যোগের কথা বলা হয়। বাস্তবে এর বালাই নেই। লোক দেখানো দু-একটি কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তাতে দমানো যায়নি অসৎ তৎপরতা। যদিও সরকারের বাজার সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে খুব বেশি বেগ পোহাতে হয় না। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন নজির নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশে পেঁয়াজের কোনো মজুদ সংকট নেই। চাহিদার তুলনায় মজুদ অনেক বেশি। যেসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, সেগুলোও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম মূল্যে কেনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমদানিকৃত ৩ লাখ টন পেঁয়াজের কাস্টমস নিষ্পত্তি হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দর বেড়ে যাওয়ার আগেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এপরও বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে দাম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যধানে এর দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। আবার সরকারের এক দিনের হস্তক্ষেপে সেটি পাইকারি বাজারেই ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। অর্থাৎ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বাজার। এভাবে শুধু পেঁয়াজ নয়, আদা, রসুন, মসলা, চাল, চিনি, সবজিপণ্য কিংবা মাছ, মাংস ও ডিম সব ভোগ্যপণ্যেরই একই দশা। জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে টনক নড়েছে সরকারের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকদের সমন্বয়ে জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে এই রুদ্ধধার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
No comments