জাপানে বিশাল ছাত্রবিক্ষোভ

জাপানে নতুন নিরাপত্তা বিলের প্রতিবাদ জানাতে
গতকাল রাজধানী টোকিওতে পার্লামেন্ট ভবনের
বাইরে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। রয়টার্স
জাপানে নতুন একটি বিলের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার দেশটির পার্লামেন্টের বাইরে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিলে জাপানের সেনাদের আবার বিদেশে গিয়ে লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নিরাপত্তানীতির বিরুদ্ধে জনগণের অবিশ্বাসের চিত্র ফুটে উঠল। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের। ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র বিধ্বস্ত হওয়ার পর ২০১২ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর টোকিওতে গতকাল সবচেয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ হলো। আয়োজকেরা জানান, এতে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক অংশ নেন। দেশজুড়ে একই ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে নতুন ওই বিলের সম্ভাব্য চূড়ান্ত অনুমোদন সামনে রেখে বড় ধরনের ওই বিক্ষোভ হলো। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন ছাত্র ও তরুণেরা। বিক্ষোভকারীরা জাপানের শান্তিপূর্ণ সংবিধান রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাঁরা ‘যুদ্ধের জন্য আইন নয়’, ‘এখনই বিল পরিত্যাগ করো’, ‘আবে পদত্যাগ করো’ প্রভৃতি লেখা-সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন। পার্লামেন্ট ভবনের মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায় যে পুলিশের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এরপর একে একে দল বেঁধে বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হতে রাস্তায় নেমে পড়েন। পার্লামেন্ট ভবনের কাছের একটি পার্কও বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়। বিক্ষোভ সমাবেশে বিরোধী দলের নেতাসহ প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ রিউচি সাকামোতোও অংশ নেন। চার বছরের শিশু ছেলেকে নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন ফ্রান্সে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ৪৪ বছর বয়সী নাওকো হিরামাতসু। তিনি বলেন, ‘টিভির সামনে বসে থেকে এবং শুধু অভিযোগ করে কোনো ফল হবে না।
আমি যদি অ্যাকশনে না যাই এবং এটা যদি বন্ধ করতে না পারি তবে ভবিষ্যতে আমি আমার সন্তানদের কাছে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারব না।’ গত ১৬ জুলাই দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দেশের নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তন-সংক্রান্ত দুটি বিতর্কিত বিল অনুমোদন দেয়। এই প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে। আগামী মাসে চলতি অধিবেশনে ওই বিল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর চলতি অধিবেশন শেষ হবে। ওই বিল অনুমোদিত হলে জাপানি সেনারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবার বিদেশে গিয়ে লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, আত্মরক্ষা ব্যতীত জাপান তার বাহিনী ব্যবহার করে কোনো সংঘাত সমাধান করতে পারবে না। তবে নতুন আইনে জাপানের মিত্ররা যদি হামলার সম্মুখীন হয় তবে ‘যৌথ আত্মরক্ষায়’ দেশটি তার বাহিনীকে ব্যবহার করার অনুমোদন দেবে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, জাপানকে রক্ষায় এই পরিবর্তন জরুরি। তবে গণমাধ্যমের জরিপের ফল অনুযায়ী, জাপানের অর্ধেকের বেশি লোক এই বিলের বিরোধী। আবের বিরোধীরা বলছেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের চালানো দূরবর্তী যুদ্ধে জাপানকে শরিক করবে। অনেক আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিল সংবিধানবিরোধী। জাপানের বৃহত্তম বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপানের প্রধান কাতসুয়া ওকাদা গতকালের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘সরকারকে আমাদের বোঝানো প্রয়োজন যে জনগণের ক্রোধ ও সংকট বোঝার ক্ষমতা রয়েছে। আসুন বিলটি পরিত্যাগ করতে একসঙ্গে কাজ করি।’ ওই বিলের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রায়ই ছোটখাটো বিক্ষোভ সমাবেশ হয়ে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.