নাজিব সরে দাঁড়াক : মাহাথির

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সরাসরি পদত্যাগ দাবি করেছেন দেশটির সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো কুয়ালালামপুরে বিক্ষোভে উপস্থিত হয়ে মাহাথির বলেন, ‘আমি শুধু চাই নাজিব সরে দাঁড়াক।’ খবর মালয় মেইল অনলাইনের। আর্থিক কেলেংকারির জেরে নাজিবের পদত্যাগ ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দেয় মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংগঠন বেরসিহ। বেরসিহ-৪ নামের দু’দিনের এ বিক্ষোভ প্রতিবাদের তিন লক্ষাধিক মানুষ রাজধানী কুয়ালালামপুরে জড়ো হয়। এতে উপস্থিত হন মাহাথির মোহাম্মদ। তবে আয়োজকদের সব দাবির সঙ্গে একমত নন তিনি। মাহাথির বলেন, অনেক মানুষ আমার কাছে জানতে চায়, আমি বেরসিহ’র আন্দোলন সমর্থন করি কিনা। আমি চীনাদের পক্ষে কিনা। কিন্তু আমরা এখানে এসেছি, অন্য কোনো প্রসঙ্গে নয়। আমরা মালয়, চীনা, ভারতীয়, ইবান, কাদযান, যা-ই হোক না কেন, আমাদের একটাই দাবি নাজিবের পদত্যাগ।’ ৯০ বছর বয়সী মাহাথির আরও বলেন, ‘সুশাসন ফেরানোর একমাত্র পথ, নাজিবের পদত্যাগ। তিনি আমাদের আইনি সীমা লংঘন করেছেন।’ এর আগে মাহাথিরকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ‘বেরসিহ-৪ কি পরিস্থিতি বদলাতে পারবে? গেম চেঞ্জার হবে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, তবে এটাই সর্বশেষ বিকল্প হতে পারে।’ 
এদিকে, মালয়েশিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ট্রাম্প কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন নাজিব রাজাকের দল। আগামী অক্টোবরে ১০ লাখ সমর্থকের উপস্থিতিতে পাল্টা বিক্ষোভ হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা। সোমবার রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (আমনো) একাংশের প্রধান জামাল ইউনুস বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর সরকার সমর্থক ১০ লাখ রেড শার্ট কর্মী নিয়ে কুয়ালালামপুরে সমাবেশ করা হবে। এটা হবে বেরসিহ বিক্ষোভকারীদের জবাব। এতে প্রমাণিত হবে, নাজিবের প্রতি এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন রয়েছে। এদিকে, ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি বিক্ষোভকারীদের হুশিয়ার করে বলেছেন, ‘আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীদের বড় বিক্ষোভে নাজিব সরকার ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছে বলে হামিদির এ বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে। বারনামা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, হলুদ টি-শার্ট পরা নতুন করে ১২ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে সরকার। বিক্ষোভের আগে হলুদ টি-শার্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এদিকে কুয়ালালামপুরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় কেনা খাবার খেয়ে ১৬ জন বিক্ষোভকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে খাদ্যে বিষ মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা। তারা এ ষড়যন্ত্রকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’ বলে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
‘মাহাথির চাইলে সব কিছুই সম্ভব’
মালয়েশিয়ার এখনও শেষ সিদ্ধান্ত এবং আশার জায়গা সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি চাইলে সব কিছুই সম্ভব। শুধু তার মনকে স্থির করতে হবে। মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত আইনজীবী ও অধিকার কর্মী দাতুক আম্বিগা রোববার এসব কথা বলেছেন। আম্বিগা দেশটির আগের নির্বাচনী সংস্কার গ্র“প বেরসিহ-২-এর সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। টানা ২২ বছর শাসন করে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যান। মালয়দের কাছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদিও তার শাসনামলে সরকাবিরোধী যেকোনো বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করেছিলেন বলে সমালোচকরা বলে থাকেন। আর্থিক কেলেংকারি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে নাজিব রাজাকের পদত্যাগ দাবিতে বেরসিহ-৪-এর বিক্ষোভে মাহাথির মোহাম্মাদের পূর্ণ সক্রিয়তা আশা করে আম্বিগা বলেন, ‘মালয়েশিয়ার নাগরিক হিসেবে শুধু নয়, একজন প্রভাবশালী লোক হিসেবে আমাদের আন্দোলনে তাকে স্বাগতম। কিন্তু তার শুধু উপস্থিতিই আশা করি না। আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে তা বাস্তবায়নে সক্রিয় হতে হবে। তিনি চাইলে মালয়েশিয়ায় অনেক কিছুই সম্ভব। দেশ এখনও স্বপ্ন দেখতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট হতে যাচ্ছে যে, যেকোনো কিছুই সম্ভব।’ বেরসিহ-৪ এর আয়োজনে বিক্ষোভকারীরা নাজিবের পদত্যাগসহ সরকারি অর্থব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দাবি করেছে।

No comments

Powered by Blogger.